১৫ ডিসে, ২০১৩

পৃথিবীর বিভিন্ন সময়ের ফিতনাহ এবং ঈমানের পরীক্ষা নিয়ে ভাবনা

ছোটবেলা থেকে আমার মনে কিছু প্রশ্ন ছিলো, সেগুলো কেমন করে যেন ভেতরেই রয়ে গিয়েছিলো। আমার অবাক লাগতো রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা আল-আমিন বলে ডাকত, তারা কেন পরে তার কথাগুলোকে অবিশ্বাস করতে কিংবা এড়িয়ে যেতে পারত? নবীদের জীবনী পড়ে আমি খুবই অবাক হতাম, ফিরাউন কীভাবে এত এত শিশুকে হত্যা করার নির্দেশ দিতে পেরেছিলো? নূহ আলাইহিস সালামের ছেলে কেমন করে ঈমান না এনে থাকতে পারলো? আরেকটু বড় হয়ে পড়লাম ইমাম হাসান-হোসেনকে (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এজিদ-সীমার হত্যা করেছিলো কেমন করে, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ অবলীলায় হত্যা করেছিলো আল্লাহর রাসূলের (সা) সাহাবাদের। আমার অবাক লাগতো হাদিসে পড়া বনী ইসরাইলের সেই ছেলেটার কথা ভেবে, যিনি তার উস্তায এক বৃদ্ধের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করে গোপনে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। পরে বৃদ্ধকে হত্যা করেও সেই ছেলেকে হত্যা করতে পারছিলো না অত্যাচারী শাসক, শেষে "বিসমিল্লাহির রব্বিল গুলাম" বলে হত্যা করার পর যখন অজস্র মানুষ ঈমান আনলো, তখন বিশাল অগ্নিকুন্ডলী বানিতে তাতে ঈমানদারদের ফেলে দেয়া হলো। অথচ খুবাইবকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সবাই মিলে আয়োজন করে কষ্ট দিয়ে দিয়ে কেমন করে হত্যা করতে পারলো? বীরে মাউনার ঘটনাটাও আমাকে খুব কষ্ট দিতো। অবাক লাগতো আব্দুল্লাহ বিন উবাইদের মতন লোকগুলোর কথা ভেবে। রাসূলুল্লাহর (সা) মতন এমন একটা রাহমাত, এমন একটা মানুষকে দেখেও কীভাবে অন্তরে মুনাফিকি নিয়ে থাকা যায়?

৫ ডিসে, ২০১৩

মনের জানালা মাঝে # ৬



(৬০)
অদ্ভুত এক ইগোসম্পন্ন লোকের সমাজ এটা। এখানে ছেলেরা ব্যক্তিত্ব মনে করছে ড্যাম কেয়ার হওয়াতে, মেয়েরা পণ্যের আঙ্গিকে কেয়ারলেস হয়ে অন্যদের কাছে "অ্যাপ্রিশিয়েটেড" হবার মাঝে স্মার্টনেস খুঁজে পাচ্ছে। এখানে কেউ কোমল না, এখানে কেউ বিনয়ী না। এখানে কেউ পারস্পারিক সহানুভূতি আর কোমল কথায় সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। যদি পারতাম, অনেকের পায়ে ধরে অনুরোধ করতাম, ভাই একটু কোমল হও, বিনয়ী হও। এভাবে যাচ্ছেতাইভাবে চলে নিজেদের আখিরাত তো বটেই, দুনিয়াটাও অন্য সবার জন্য ধ্বংসের আর অশান্তিতে ভরে দিচ্ছে।

(৬১)
যদি এমন হয় যে জীবনের ঘটনাগুলো, মানুষগুলো যেন চারপাশ থেকে চেপে ধরেছে, যদি রাগে-ক্ষোভে-যন্ত্রণায় এমন ইচ্ছে করে যে  পারলে ভেঙ্গেচুরে ফেলে দেই সবকিছু...

হ্যাঁ, ঠিক সেইরকম কষ্ট আর যন্ত্রণা হতেই পারে। তবে, তখন ভেবে দেখবেন, রাগ করে লাভ নেই, বরং ক্ষতি। আপনার এই কষ্টের কারণ হতে পারে আপনার আদর্শ, আপনার নীতি, আপনার ভেতরের ভালো যা আছে তার অনড় অবস্থান। যারা ক্রমশ বদলে যায়, তাদের কেউ বাঁকা করতে পারে না। দ্বীন মানতে চাওয়া অনড় মানুষদের অসহায় যন্ত্রণাময় অবস্থার প্রকৃত উদ্ধারকারী আল্লাহ। হয়ত চোখের সামনে কেবলই অকুল পাথার, কোন উপায় নেই সমাধানের, যন্ত্রণাবিনাশের। এমতাবস্থায় আপনার সমস্ত কষ্ট তাকে বলুন, জীবনের হাল তার কাছেই ছেড়ে দেন, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের মালিক। ইনশা আল্লাহ, তিনি পথ দেখাবেন, সমস্যা থেকে বেরিয়ে যাবার সমাধান করে দিবেন। রাগ থেকে দূরে থাকুন। রাগ শুধু গড়ে দেয়া জিনিসকে ধ্বংস করে, কিছু গড়ে দিতে পারে না।

(৬২)
না-দেখা, না-জানা, না-বোঝার জগতটা আছে তাই মানুষ খুব বেশি অসম্পূর্ণ তা বোঝা যায়। আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ, নির্ভরশীল, অসহায়... এসব বুঝতে বেশি জ্ঞান লাগে না, একট ক্ষুদ্র বোধ, অনুভূতি আর উপলব্ধি শক্তি লাগে।

(৬৩)
ফেসবুকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে আমাদের মনগুলো কীভাবেই না পরিবর্তিত আর পথভ্রষ্ট হয়েছে। একটা কিছু হলেই ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার একটা উদগ্র বাসনা ভিতরে কাজ করে। ছবি আপলোড করে লাইক আর কমেন্টে যেন ফুটে উঠে আমার *গ্রহণযোগ্যতা* সবার কাছে, আমার দেখতে কতটুকু সুন্দর লাগে সেটা। একটা কিছু লিখেই অপেক্ষায় থাকি লাইক আর কমেন্টের। যেখানে উদ্দেশ্যগুলো হবার কথা আল্লাহর সন্তুষ্টি। খুব ক্ষীণ একটা লাইনের ওপারে আমাদের অজান্তেই সেটা হয়ে যায় কিছু লাইক আর কমেন্ট প্রাপ্তি...

নিশ্চিত যে জীবন, তাকে জটিল বা ব্যর্থ করে দেয়ার এই অদ্ভুত আয়োজনে আমরা কত আগ্রহেই না যোগ দেই প্রতিদিন। ভালো কাজের সংখ্যা আমাদের এমনিতেই কম। লাইক/কমেন্ট/শেয়ারের লোভ, চ্যাটিং-এ মানুষের সাথে আলাপের আগ্রহ আমাদের কোথায় ঠেলে দিচ্ছে প্রতিদিন... ভেবে দেখেছি কি আপন মনে?

(৬৪)
আমরা জানি মানুষ অন্ধকারের মাঝে আলোর কাঙ্গাল। অন্ধকারের ঝড়ো হাওয়াতে অল্প আলোর উৎসগুলো যেন নিভু নিভু করে। তাইতো, জীবনের কঠিন সময়েও আমাদের উচিত আত্মার আলোকে শক্তিশালী করে জ্বালিয়ে দেয়া।

(৬৫)
ফেসবুকের কথা ভাবলেই কেমন লাগে যেন! বাজে নামের বাজে পেইজ থেকে/ফেইক আইডি থেকে ভালো মেসেজ দেয়ার সাথে আমার মনে পড়ে গোবরের কোটিং দিয়ে কাউকে রঙ্গিন কাগজে মুড়ে যেন উপহার দেয়া। যত সুন্দর দেখতেই হোক তা দুর্গন্ধ ছড়াবেই। 

(৬৬)
সুন্দর হলো সত্য। সত্যই সুন্দর। সুন্দর সংখ্যায় কম হবেই, তাও সত্য। তাতে ভড়কে যাবার কিছু নেই। সুন্দরকে যারা পছন্দ করেন, যারা মূল্য দেন -- তারা খুঁজে নিবেন নিজ দায়িত্বে। আলো জ্বালিয়ে রাখলে, আলোর যাদের প্রয়োজন, তারা সেখানে ছুটে আসবে।

(৬৭)
ভালো মানুষ হওয়াটাই মূল, ভালো কথা ক্রমাগত সঠিকভাবে বলতে পারাটা, ভালো কাজটা যেভাবেই হোক করতে পারাটাই মুখ্য। জীবনের বাকিটা তো এমনিতেই হয়ে যায়, হয়ে যাবেই ইনশা আল্লাহ। সেসব থেমে থাকে না ...

(৬৮)
যখন কাউকে আপনার গল্প বলতে গিয়ে দেখলেন আপনার চোখ আর ভিজে উঠছে না, তখন বুঝবেন আপনি দুঃখ কাটিয়ে উঠেছেন।

(৬৯)
কখনো কখনো আমাদের জীবনে কিছু মানুষকে পেয়ে যাই, পরিস্থিতি আর সময়ের কারণে যাদের জন্য নিঃশব্দ অশ্রু ছাড়া আর কিছু দেয়ার থাকে না।

(৭০)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ সময়ের দু'আ শোনেন, আমাদের মনের কথা জানেন। একদিন আমরা সবাই তার সামনে হাজির হব, তার সান্নিধ্যে পূর্ণ হবো। সেদিন যারা হাসিমুখে থাকবে, তাদের মাঝে প্রিয়জনদের খুঁজে পাওয়ার আনন্দ হয়ত কল্পনাও করতে পারিনা। আল্লাহ যেন সেইদিন সকল মুসলিম ভাই-বোনদের হাসিমুখে থাকার তাওফিক দেন।

১ ডিসে, ২০১৩

রুমী কবিতা (প্রথম কিস্তি)



* * *
এই পথটা তোমার, তুমি পথ চলো একা
তোমার চলার পথে হয়ত কেউ সঙ্গী হবে
কিন্তু তোমার পথটা অন্য কেউ হেঁটে দিবে না।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তুমি হয়ত শাখা-প্রশাখায় যা কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছ, তা শুধু শেকড়েই পাওয়া যায়। ~ রুমী

* * *
শুধুমাত্র এই হৃদয় দিয়েই তুমি আকাশ ছুঁতে পারো।"  -- রুমী

* * *
আঁকড়ে ধরে রাখা আর চলে যেতে দেয়ার এক ভারসাম্য হলো জীবন। ~ রুমী

* * *
গলে যাওয়া বরফের মতন হও। নিজেকে দিয়ে নিজেকে ধুয়ে দাও।" -- রুমী

* * *
দুঃখ করো না। তুমি যা হারাও তা অন্য কোন রূপে তোমার কাছে ফিরে আসে।" -- রুমী

* * *
তোমার চালাকি বিক্রি করে মুগ্ধতা কিনে নিয়ে এসো।" -- রুমী

* * *
কড়া নাড়ো, তিনি তোমায় দরজা খুলে দেবেন
বিলীন হয়ে যাও, তিনি তোমায় সূর্যের মত উজ্জল করবেন
লুটিয়ে পড়ো, তিনি তোমায় বেহেশতে তুলে নেবেন
নিজেকে রিক্ত করো, তিনি তোমায় সবকিছু দিয়ে পূর্ণ করবেন।
 ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তোমার নিজের হৃদয়ের মাধুর্য খুঁজে বের করো, তখন সম্ভবত সবার হৃদয়ের মাধুর্য তুমি খুঁজে পাবে। ~ জালালুদ্দিন রুমী


* * *
খাঁচার বন্দীশালা থেকে তুমি পালিয়েছ,
তোমার ডানা দু'টো তুমি মেলে ধরেছ,
এবার উড়াল দাও।
~ জালালুদ্দিন রুমী

২৮ নভে, ২০১৩

মনের জানালা মাঝে # ৫




(৫০)
অন্যদের সাথে আমাদের তুলনা করার কিছু নেই। আমরা সবাই আল্লাহর স্বতন্ত্র সৃষ্টি। আমাদের যা দেয়া হয়েছে, আমরা যতটুকু জেনেছি ও বুঝেছি -- তার সঠিক ব্যবহারের উপরেই আমাদের তিনি হিসেব করবেন। কাজগুলোতে তিনি প্রসন্ন হলে পুরষ্কার দিবেন, আর অপ্রসন্ন হলে আমরা হবো ক্ষতিগ্রস্ত।

(৫১)
কিছু মানুষ আছে যারা একটা সুন্দর জায়গা খুঁজে বেড়ায়,
কিছু মানুষ আছে যারা একটা জায়গাকে নিজেরাই সুন্দর করে।

(৫২)
ভালোবাসা পাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে নিজে আগে ভালোবাসা।
ভালোবাসা পাওয়ার আশা করে ভালোবাসলে হৃদয়ে চোট পাবেন।

(৫৩)
এমন একজন ভালো মানুষ হতে চেষ্টা করুন যে তা প্রমাণ করতে সময় নষ্ট করে না।

(৫৪)
একটা জিনিস শুনেছিলাম একসময়, ভেবে দেখলাম সত্যিই তাই...

যে আপনাকে ভালোবাসে তার কাছে আপনার ভুলের ব্যাখ্যা দেবার কোন প্রয়োজন হয় না।
যার কাছে আপনার নিজেকে ব্যাখ্যা করতে হয় সে আপনাকে আসলে ভালোবাসে না।

(৫৫)
যা আসার সে আসবেই, যা হবার তা হবেই -- আপনি তাকে স্বাগত জানান বা ঘৃণা করুন তাতে কিছুই হবে না। যা আসবে না, যা হবার নয় তাকে কখনই সাদর সম্ভাসন জানাতে পারবেন না যতই চেষ্টা করুন না কেন।

(৫৬)
হয়ত অনেকেরই এমন হয়। অনেকেই জানেনা তাদের মাঝে কী ভীষণ শক্তি লুকিয়ে আছে, কত সম্ভাবনা আর কত ক্ষমতা প্রতিটি মানুষের প্রাণে, মনে সুপ্ত রয়েছে। ক'জনে খুঁজতে চেয়েছে? ক'জনা নিজেকে বুঝতে পারি আমরা? ক'জনা নিজেকেই নিজে উদ্বোধিত করি?

আমরা কোথায় ছিলাম?

 

এক লোক সুরম্য অটালিকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার বন্ধুকে অভিযোগ করে বললো, 

"যখন এই সম্পদগুলো বন্টন করা হয়েছিলো তখন আমরা কোথায় ছিলাম?" 

বন্ধুটি তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলো এবং বললো, 

"যখন এই অসুস্থতা বন্টন করা হয়েছিলো তখন আমরা কোথায় ছিলাম?"

♥ আলহামদুলিল্লাহ! ♥ 

কৃতজ্ঞ থাকুন, সমস্ত প্রশংসা কেবলই আল্লাহর...  :)

[শাইখ যাহির মাহমুদের পেইজ থেকে সংগৃহীত ও অনূদিত]

একগুচ্ছ অনুবাদ [২]

একদম শেষে আমরা শত্রুদের কথাগুলো মনে ধরে রাখবো না, বরং বন্ধুদের নীরবতাকেই মনে রাখব।" ~ মার্টিন লুথার কিং

 * * *
"জীবনটা হলো বাইসাইকেল চালানোর মতন। ভারসাম্য রাখতে চাইলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।"~ আইনস্টাইন

 * * *
"মানুষ তার ভবিষ্যতকে গড়ে তোলে না। তারা তাদের অভ্যাসগুলোকে গড়ে, আর অভ্যাসগুলো গড়ে তোলে তাদের ভবিষ্যত।"~ মাইক মারডক

 * * *
"একজন সফল ব্যক্তি হলেন তিনি যিনি এমন কিছু অভ্যাস তৈরি করেন যেসব অভ্যাস অসফল ব্যক্তিরা তৈরি করতে পছন্দ করে না।"~  ডোনাল্ড রিগস

 * * *
"আমরা প্রথমে আমাদের অভ্যাসগুলোকে গড়ে তুলি, এবং তারপর অভ্যাসগুলো আমাদের গড়ে তোলে।"~ জন ড্রাইডেন

 * * *
"মোটিভেশন (প্রেষণা) আপনাকে একটা কাজ শুরু করায়, অভ্যাস তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।"~ জিম রন

 * * *
"আমি ব্যর্থ হইনি, আমি ১০০০টি পথ বের করেছি যা সঠিক কাজ করে না।"~ টমাস আলভা এডিসন


 * * *
মেয়েদের চোখের পানি অদ্ভুত এক অস্ত্র আর ছেলেদের চোখের পানি অদ্ভুত এক বাস্তব !~ ভিকিয মব

 * * *
আপনি কাজটি করতে পারবেন এই বিশ্বাসটি আপনাকে অর্ধেক পথ এগিয়ে নিয়ে যাবে।~ থিওডর রুজভেল্ট

 * * *
সফল হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে যেয়ো না, বরং চেষ্টা করো মূল্যবান হতে।~ আইনস্টাইন

 * * *
একটি চারাগাছ রোপণের প্রথম শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো ২০ বছর আগে। আর দ্বিতীয় সময়টি হলো ঠিক এখনই।~ চৈনিক প্রবাদ

 * * *
আপনি সমুদ্র পার হতে পারবেন না কোনদিন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার চোখের সীমানা থেকে সমুদ্রতীর না হারায়।~ক্রিস্টোফার কলম্বাস

 * * *
আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ দু'টি দিন হলো যেদিন আপনি জন্ম নিয়েছিলেন এবং যেদিন আপনি তার কারণ খুঁজে পেয়েছিলেন।~ মার্ক টোয়েন

 * * *
কিছু জিনিস তোমার নজর কাড়বে, কিন্তু সেগুলোই অর্জন করার চেষ্টা করো যা তোমার হৃদয় কাড়ে।~ প্রাচীন ভারতীয় প্রবাদ

 * * *
সুখের একটা দরজা বন্ধ হলে আরেকটি খুলে যায়। কিন্তু বন্ধ দরজায় আমরা এত বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকি যে আমাদের জন্য খুলে যাওয়া দরজাটি তখন আর চোখে পড়েনা।~ হেলেন কেলার

 * * *
সাতবার পড়ে গেলে আটবার উঠে দাঁড়াও।~ ল্যাটিন প্রবাদ

 * * *
জ্ঞান অর্জন করতে গেলে খরচ হয় তা সত্য। অথচ একই ব্যাপার কিন্তু ঘটে অজ্ঞতাতেও।~ ক্লস মোসার

 * * *
যার জ্ঞান আছে সে তার নষ্ট হওয়া সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি আফসোস করে।~ দান্তে

 * * *
"অল্প ক'জন চিন্তাশীল মানুষের একটি দল গোটা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পরিবর্তনগুলো কেবলমাত্র এভাবেই হয়েছে।"~ মার্গারেট মেয়াড

 * * *
"জীবনটা শব্দরাশির জন্য অনেক বেশি গভীর, তাই একে শব্দ দিয়ে বর্ণনা করার চেষ্টা করো না। জীবনটা শুধু ধারণ করো।"~ সি,এস, লিউইস

 * * *
থাকার একটা জায়গা গড়ে তুলতে অনেকজন পুরুষের দরকার হলেও, একটি সংসার গড়ে তুলতে একজন নারীই যথেষ্ট।~ চৈনিক প্রবাদ

 * * *
আজকালকার দিনে মানুষ সবকিছুর দাম বুঝে কিন্তু কোনকিছুর মূল্য বুঝে না। ~অস্কার ওয়াইল্ড

২৭ নভে, ২০১৩

একগুচ্ছ অনুবাদ [১]



* * *
যে বই পড়ে সে মৃত্যুর আগে হাজারটা জীবনকে ধারণ করে। যে বই পড়েনা সে কেবল একটাই জীবন পায়। ~ জর্জ মার্টিন

* * *
ক্ল্যাসিক এমন ধরণের বই যার প্রশংসা সবাই করে কিন্তু কেউ পড়ে না। ~ মার্ক টোয়েন

* * *
নিজেকে অনুপ্রেরণা দেয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো অন্য কাউকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা। ~ মার্ক টোয়েন

* * *
যে জিনিস দেখা সবচেয়ে কঠিন তা হলো চোখের সামনে যা রয়েছে। ~ ভন গথে

* * *
লেখকের চোখে অশ্রু না এলে পাঠকের চোখেও অশ্রু জমে না। লেখকের মাঝে বিষ্ময় না থাকলে পাঠক বিষ্মিত হতে পারে না। ~ রবার্ট ফ্রস্ট

* * *
আমি এতটা কমবয়েসি নই যে সবকিছু সম্পর্কে জানব। -- অস্কার ওয়াইল্ড

* * *
একটি প্রাণখোলা হাসি আর লম্বা একটা ঘুম যেকোন কিছুকে সারিয়ে দেয়।~আইরিশ প্রবাদ

* * *
প্রতিদিন কিছু ছোট ছোট বিষয়কে শেখা হলো জ্ঞান। প্রতিদিন কিছু ছোট জিনিসকে এড়িয়ে যেতে পারা হলো প্রজ্ঞা।~ জেন প্রবাদ


* * *
তুমি কতটা ধীরে আগাচ্ছ তা মোটেই ব্যাপার নয় যদি তুমি থেমে না যাও।~ কনফুসিয়াস

* * *
আমরা বই পড়ি এটাই জানতে যে আমরা একলা নই। ~ উইলিয়াম নিকোলসন


 * * *
"তুমি তোমার নিজের মত হও, আর সবাই দখল হয়ে আছে।"~ অস্কার ওয়াইল্ড

 * * *
"কখনো অনুশোচনা করো না। জীবনে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে তো দারুণ ব্যাপার। আর যদি খারাপ কিছু ঘটে, তাহলে তার নাম অভিজ্ঞতা।"~ ভিক্টোরিয়া হল্ট

 * * *
"আপনার মত না থাকলে কেউ আপনাকে ছোট করতে পারে না।"~ ইলিনর রুজভেল্ট

 * * *
"আমরা সবাই অনেক বড় বড় কাজ করতে পারিনা। কিন্তু ছোট ছোট কাজগুলো করতে পারি অনেক বড় ভালোবাসা নিয়ে।"~ মাদার তেরেসা

 * * *
 'আমি সফল হবার সূত্র জানিনা, তবে জানি ব্যর্থ হতে হলে সবাইকে খুশি করার চেষ্টাই যথেষ্ট।'~ বিল কসবি

 * * *
'সফলতার অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি আত্মবিশ্বাস। আর আত্মবিশ্বাস অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হলো ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া।'~ আর্থার অ্যাশ

২৬ নভে, ২০১৩

অনুপ্রেরণা - ২



* * *
ভালোকাজের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে। যখন সময় হয় কেবল তখনই তার বর্ষণ হয়। আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করেন শুকনো মৃত মাটির উপরে; একদম সঠিক সময়েই। যখন পথ অবারিত হবার সময় হবে, তখনই সেই পথ প্রশস্ত হবে। তিনি তার সময় অনুযায়ীই সেই কাজটি করেন, আমাদের সময়ের হিসেবে নয়। আর এটা আমাদের ক্বাদরের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকার একটি অংশ এবং যা হয়েছে তা আপনার জন্য নির্ধারিত ছিলো বলেই হয়েছে। ~ শাইখ হামজা ইউসুফ, [সংক্ষেপিত, ২০১১ রিহলা]

২৫ নভে, ২০১৩

মালিক শাহবাজ (ম্যালকম-এক্স)

বর্তমান মিডিয়া বলতেই সবাই বুঝে বিবিসি, সিএনএন, ইন্ডিপেনডেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি... নতুন বিশ্বের এইরকম চেহারা হবে, সেখানে মিডিয়ার ব্যাপক প্রভাব থাকবে, তা তো বেশ পুরোনো পরিকল্পনা। হয়ত এসব অনুধাবন করে সেই খোদ আমেরিকায় অনেক বছর আগে মালিক শাহবাজ (ম্যালকম এক্স) নামক সাহসী মানুষটি একটি কথা বলেছিলেন যা আমার প্রায়ই মনে পড়ে--

"আপনি যদি সতর্ক না থাকেন তাহলে পত্রিকাগুলো আপনাকে নিপীড়িত-অত্যাচারিত মানুষদেরকে ঘৃণা করতে শেখাবে এবং যারা অত্যাচারী-নিপীড়নকারী তাদের প্রতি ভালোবাসা জাগাবে।" ~ ম্যালকম-এক্স

মালিক আল-শাহবাজ 'ম্যালকম এক্স' নামে সুপরিচিত। তিনি আফ্রো-আমেরিকান মুসলিম, ঘটনাবহুল জীবনের এক পর্যায়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আমেরিকায় ব্ল্যাকদের অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় নেতা। বক্তব্য প্রদানকালীন সময়ে একদিন তাকে বিরোধীরা কয়েকজন মিলে ২১টি গুলিতে বিদ্ধ করে, সেদিনই তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

জন্ম :  ১৯২৫, মৃত্যু : ১৯৬৫

ম্যালকম-এক্সের উদ্ধৃতি:

"ভবিষ্যত তো তাদের জন্যই যারা আজকে তা গড়ে তুলতে কাজ করে।"
~ মালিক আল-শাহবাজ (ম্যালকম এক্স)

* * *
"আপনি যদি সতর্ক না থাকেন তাহলে পত্রিকাগুলো আপনাকে নিপীড়িত-অত্যাচারিত মানুষদেরকে ঘৃণা করতে শেখাবে এবং যারা অত্যাচারী-নিপীড়নকারী তাদের প্রতি ভালোবাসা জাগাবে।"
~ ম্যালকম-এক্স মালিক শাহবাজ [১৯২৫-১৯৬৫]

* * *
"যে কোন কিছুর পক্ষে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ায় না সে সবকিছুতেই ভেঙ্গে পড়ে।"
~ মালিক আল-শাহবাজ (ম্যালকম এক্স)

* * *
​​হোঁচট খাওয়া মানেই পড়ে যাওয়া নয়। ~ ম্যালকম এক্স

অনুপ্রেরণা - ১



"যে মানুষটাকে ভালোবাসি, তাকে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে। আমাদের ভালোবাসা যদি হয় কেবল কাউকে দখল করে রাখার কোন চাওয়া, তাহলে তা ভালোবাসা নয়। আমরা যদি শুধু আমাদেরকে নিয়ে চিন্তা করি, শুধু আমাদের প্রয়োজনগুলোই বুঝি এবং অন্যদের প্রয়োজনকে এড়িয়ে যাই, তাহলে আমরা কখনই ভালোবাসতে পারবো না। যাদের ভালোবাসি তাদের প্রয়োজন, চাওয়া, ভালোলাগা এবং কষ্টগুলো আমাদেরকে অবশ্যই গভীরভাবে খেয়াল করতে। এটাই প্রকৃত ভালোবাসার পথ। আপনি যখন কাউকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবেন, তখন তাকে ক্রমাগত ভালোবেসে যাওয়া থেকে আপনি নিজেকে ঠেকাতে পারবেন না।" [গ্রন্থ : Peace Is Every Step: The Path of Mindfulness in Everyday Life]

 * * *
"আপনাকে যারা ভালোবাসে তারা আপনার করা ভুলগুলো অথবা আপনার বাজে স্মৃতিগুলোকে মনে রাখার বোকামি করবে না। আপনাকে যখন দেখতে খারাপ লাগে তখন তারা আপনার সৌন্দর্যকে স্মরণ রাখে, আপনি যখন ভেঙ্গে পড়েন তখন আপনার পূর্ণতার সময়গুলোকে মনে রাখে, আপনি যখন অপরাধবোধে ভুগেন তখন আপনার সরলতাকে খেয়ালে রাখে এবং আপনি যখন দ্বিধায় থাকেন তখন আপনার উদ্দেশ্যকে মনে রাখে। [অ্যালান কোহেনের উদ্ধৃতির ভাবানুবাদ]

 * * *
জীবনের যেসব বিষয় নিয়ে হিসাব-নিকাশ মেলেনি, সেগুলোর ব্যাপারে ধৈর্য ধরুন। সেই উত্তর-না-পাওয়া প্রশ্নগুলোকেই ভালোবাসতে চেষ্টা করুন, যেমন করে আপনি গ্রহণ করে থাকেন বন্ধ দরজার একটি ঘর অথবা ভিনদেশি ভাষায় লেখা কোন একটা বই। এখনই সব উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত হবেন না। আপনাকে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন দেয়া হবে না কেননা সেসব জেনে আপনি ঠিকভাবে বাঁচতে পারবেন না। তাছাড়া, এই বিষয়গুলো হলো অভিজ্ঞতার পথ দিয়ে যাওয়া। জীবনের এই দিনগুলোতে আপনার এই প্রশ্নগুলো বুকে নিয়েই বাঁচতে হবে। হয়ত, সময়ের সাথে কোন একদিন, আপনি নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে যাবেন। [রেইনার রিলকার 'Letters To A Young Poet' থেকে উদ্ধৃত অংশের ভাবানুবাদ]

 * * *
যারা আপনাকে সাধারণ কিছু স্নিগ্ধ ও শান্ত কথা বলে একটুখানি স্বস্তি এনে দিতে চেষ্টা করেন, তাদের দেখে  এমনটা ভেবে বসবেন না যে তাদের জীবনটা যন্ত্রণাবিহীন। তার জীবনেও দুঃখ-কষ্ট এবং যন্ত্রণা থাকতে পারে যা হয়ত আপনার চাইতেও বেশি। যদি তেমনটা না-ই হতো, তাহলে তিনি এমন কিছু শব্দ কখনো খুঁজে পেতেন না।
~ রেইনার রিলকা [অস্ট্রিয়ান ঔপন্যাসিক, ১৮৭৫-১৯২৬]

২৪ নভে, ২০১৩

ফেসবুক : অগোচরে ক্ষতি করতে থাকা এক ভয়ংকর

​ফেসবুকের মাধ্যমে আমার ব্যক্তি জীবনে কিছু প্রাপ্তি আছে বটে, কিন্তু ফেসবুক থেকে সম্ভাব্য ক্ষতির কথা ভাবে যে পরিমাণ ভীতি আমার মাঝে কাজ করে তার পরিমাণ বোধকরি অনেক অনেকগুণ বেশি। একটা জিনিস খুব ভয় হয়। তা হলো, সহজেই যাচ্ছেতাই লেখা যায়। লিখতেই আছি, কমেন্টে, পোস্টে, ইনবক্সে -- যেন লেখাটা কিছুই নয়। খুব অবহেলায় অনেক লিখেছি অনেক জায়গায় অনেক কিছু...

ফেসবুকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে আমাদের মনগুলো কীভাবেই না পরিবর্তিত আর পথভ্রষ্ট হয়েছে। একটা কিছু হলেই ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার একটা উদগ্র বাসনা ভিতরে কাজ করে। ছবি আপলোড করে লাইক আর কমেন্টেই যেন ফুটে উঠে আমার *গ্রহণযোগ্যতা* সবার কাছে কতটুকু, কিংবা আমরা দেখতে কতটুকু সুন্দর। একটা কিছু লিখেই অপেক্ষায় থাকি লাইক আর কমেন্টের। যেখানে উদ্দেশ্যগুলো হবার কথা আল্লাহর সন্তুষ্টি। খুব ক্ষীণ একটা লাইনের ওপারে আমাদের অজান্তেই সেটা হয়ে যায় কিছু লাইক আর কমেন্ট প্রাপ্তি...

একটা বড় ক্ষতি হলো, আমাদের অনুভূতিগুলোকে পানসে করে দেয়া। প্রতিটা জিনিসই যখন ফেসবুকে, তখন সামনাসামনি অনেকদিন/অনেকক্ষণ পর পাওয়া মানুষটার সাথে কথা/অনুভূতি ভাগাভাগির গভীরতাটা থাকেই না। অথচ আমি দ্বীনের শিক্ষাতে শিখেছিলাম, বিরতি দিয়ে দিয়ে ভাইদের সাথে মিলিত হতে এতে করে পারস্পারিক সম্প্রীতি বাড়বে।

আমরা সবাই ভেবে নিয়েছি আমাদের অভিমত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সমস্ত বিষয়ে লাগামহীন মন্তব্য, তর্ক, কুরূচিপূর্ণ শব্দ দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছি ইনবক্স/কমেন্টবক্স/পোস্টগুলো। আমাদের যোগ্যতা, জ্ঞানের গভীরতা এবং সেই সাথে সময়ের ব্যবহার কতটুকু 'ইফেক্টিভ' হচ্ছে সেই হিসেবে এইসব কাজ অকল্পনীয় ক্ষতিকর হয়ে যাচ্ছে। আখিরাতে জবাবদিহিতার বিষয়টা আমাদের ভাবায় না?

বাস্তব জীবনে কেউ বাঁকা কথা বললে সহ্য করে নিই আমরা, জানি কে কীভাবে আমাকে জানে। অনেক অপমানকে গায়ে না মাখলেও চলে। ফেসবুকে কেউ কাউকে কিছু বললে *উপযুক্ত শিক্ষা* না দিলে পেটের ভাত যেন চাউল হয়ে যাবে ভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে দেখেছি অনেককে। আল্লাহ মাফ করুন আমাদের। এমন কত বড় বড় অন্যায়ের অংশ হয়ে যাচ্ছি লাইক/শেয়ারের মাধ্যমে, কত সহজেই, ভেবে কি দেখেছি?

নিশ্চিত যে অনন্তকালের জীবন, তাকে জটিল বা ব্যর্থ করে দেয়ার এই অদ্ভুত আয়োজনে আমরা কত আগ্রহেই না যোগ দেই প্রতিদিন। ভালো কাজের সংখ্যা আমাদের এমনিতেই কম। লাইক/কমেন্ট/শেয়ারের লোভ, চ্যাটিং-এ মানুষের সাথে অনর্থক আলাপের আগ্রহ আমাদের কোথায় ঠেলে দিচ্ছে প্রতিদিন... ভেবে দেখেছি কি আপন মনে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে ক্ষমা করুন, সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

- এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি লিঙ্ক:

1. Faceboook : The Hidden Danger : Yasmin Mogahed http://www.suhaibwebb.com/society/entertainment/facebook-the-hidden-danger/

2. Fiqh of Facebook : http://www.suhaibwebb.com/society/media/the-fiqh-of-facebook/

২৩ নভেম্বর, ২০১৩

২৩ নভে, ২০১৩

মনের জানালা মাঝে # ৪



(৩৮)
ঠিক আপনার মতই জীবন আর কারো নেই। মানুষের সাথে মিশে দেখবেন তাদের শৈশব, কৈশোর অথবা বাল্যকাল আপনার চাইতে অন্যরকম, কিংবা তাদের পারিবারিক জীবন আলাদা। অথবা তাদের শারীরিক কোন অসহ্যকর কষ্ট আছে যা আপনার নেই। নিজের কষ্টগুলো নিয়ে যখন ভার মনে হবে, আশেপাশে মিশবেন। আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে নিজেকে ছড়িয়ে দিবেন। একজন অথবা দু'জন মানুষ খুঁজলে হয়ত মনে হবে সবাই আপনার চেয়ে সুখী। তখন সেই ভ্রান্তি কেটে উঠবে না। একটু বেশি করে নানান রকম মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনার গন্ডি ছাড়িয়ে অন্যদের জীবনকে জানলে দেখবেন আপনি হয়ত কারো জীবনের কথা ভেবে কাঁদতে শুরু করবেন।

(৩৯)
যখন খুব কষ্ট লাগে, তখন জানি, এই কষ্টের দুনিয়া খুব বেশিদিনের জন্য না। আর একটুই তো। কাটিয়ে দেয়াই কাজ...  যখন সুন্দর প্রকৃতিতে নিঃশ্বাস নিই আনন্দে, তখন জানি এই পৃথিবী ছেড়ে যাবার পর যা পাওয়া যায় তা এর চাইতেও অনেক সুন্দর। সেটা চাই, হে দয়াময়...

(৪০)
পৃথিবীর কোন কিছুর জন্য অপেক্ষার একটা সীমারেখা আছে। একটা সময় পরে অপেক্ষার বস্তুটার আবেদন হারিয়ে যায়, মনের অনুভূতিটাও শুকিয়ে যায় অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে। একসময় তা অনীহায় পরিণত হয়।

(৪১)
আপনি খারাপ থাকলে কারো কিছু আসে যায় না। কারো কাছে খারাপ থাকা বর্ণনা করলেও আসলে কেউ কিছু করবে না। মূলত মানুষ নিজেরাই খুব অসহায়। নিজেকে যেভাবেই হোক ভালো রাখাই উচিত, আল্লাহর কাছেই কেবল সাহায্য চাওয়া উচিত।

(৪২)
জীবনের পরতে পরতে খুশি-আনন্দ-কষ্টের মাঝে আল্লাহ আপনাকে মেসেজ দিয়ে চলেছেন... তার আরো কাছে যেতে, তার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বলছেন। খেয়াল করে পড়ে দেখুন...


(৪৩)
একজন বললো, স্বপ্ন দেখে কী হয়? স্বপ্নেরা কখনো সত্যি হয় না। কথা সত্যি। সব স্বপ্ন সত্য হয় না। কিন্তু এটাও সত্য, স্বপ্ন ছাড়া কিছুই হয় না। কিছু পেতে হলে স্বপ্ন দেখতে হয়, মানুষের মন কোন অবস্থাতেই আশা ছাড়া থাকে না। উচ্চাশা করা সঠিক নয়, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে হয়। ছোট ছোট স্বপ্ন, স্বপ্নেরা শিশির বিন্দুর মতন, ঘাসের উপরে চকচকে হীরার কণার মতন ঝলক দেয় কষ্টের মাঝে, দুঃখের মাঝে। কঠিন সময়ে তাই স্বপ্ন বেশি করে দেখতে হয়, কারণ, একদিন খারাপ সময় কেটে যাবে।

(৪৪)
বাস্তবতাকে উপভোগ করে দেখার কিছু নেই, সে আপনাকে জোর করেই স্বাদ নেয়াবে... কখনো টেনে-হিঁচড়ে হলেও আপনাকে বাস্তবতার স্বাদ নেয়াবে। বাস্তবতা হলো সেই জীবন, যা পার্থিব; যা আমাদের সব চাওয়ার মাঝে থাকে না, প্রায় সময়েই আমাদের না-চাওয়া বিষয়গুলো নিয়েও থাকে। কিন্তু আমাদের স্বপ্নগুলো শুধু পার্থিব না, তাতে অপার্থিব জগতের সৌন্দর্য মাখানো থাকে... এই রূঢ় বাস্তবতার নখর থেকে বাঁচতে চাইলে স্বপ্ন দেখতেই হবে। স্বপ্নেরা আশা জাগায়, ভালোবাসা জাগায়, হৃদয়কে কোমল করে...

(৪৫)
আমরা কেউ অন্য কারো মতন না, অন্য কেউ আমাদের মতন না। অন্যদের স্কেলে নিজেদের বিচার করা বোকামি, অন্যদের সাথে তুলনা করাও নির্বুদ্ধিতা। লক্ষ্য একটাই, মৃত্যুর পরের সফলতা, পৃথিবীটা শুধু পেরিয়ে যাওয়ার। কোন পূর্ণতা প্রাপ্তি এই জগতে হয় না, হতে পারে না...

(৪৬)
আমাদের এ এক অদ্ভুত সমাজ !! অজস্র অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে এমনভাবে জীবন কাটাচ্ছে যেন তারা বিবাহিত। অজস্র বিবাহিতরা এমনভাবে জীবন কাটায় যেন তারা একা। সমস্যা কেন এত?

(৪৭)
অপেক্ষার পর, পরিশ্রমের পর যখন ঈপ্সিত জিনিসটি পাওয়া যায়, সেই আনন্দ, সেই উদ্বেলিত হৃদয়ের অনুভূতি কি কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যায়? যারা অমন করে অপেক্ষা করেনি তারা কীভাবে বুঝবে অপেক্ষার পরে প্রাপ্তির মাঝে ভালোবাসা কত তীব্র থাকে, তাতে কত গভীরতা থাকে, হৃদয়ে কত গভীর আনন্দের ধারা বয়ে যায়...

(৪৮)
আপনি যে জীবনে সত্যিকারের কল্যাণময় পরিবর্তন চান তার সম্ভবত প্রথম প্রকাশ হচ্ছে আপনি নিজের বিষয়ে ভালো কথা বলতে না পারলেও, খারাপ কথা বলবেন না। আশাবাদী কিছু শোনাতে না পারলেও নৈরাশ্য ও হতাশার কথা বলবেন না। যতদিন নিরাশা বা হতাশার সাথে থাকবেন, আপনি অবশ্যই কোন সত্যিকারের উন্নতি বা পরিবর্তন আনতে পারবেন না। উন্নতির মূল শর্ত হলো -- হয় ভালো কথা বলো নয়ত চুপ থাকো।

(৪৯)
আমাদের সবার অজস্র সীমাবদ্ধতা, ভুল, নীচতা, হীনতা, খুঁত আছে। এটা সত্যি। হয়ত অনেক ক্ষেত্রে ভালোগুলোর পরিমাণ খারাপগুলোর চেয়ে কম, এরকমটাও হতে পারে। কিন্তু তাতে কোন ক্ষতি নেই। বিষয়টা হচ্ছে, একজন মানুষ তার কোন সত্ত্বাকে মূল্য দিচ্ছে, কোন গুণাবলীকে ফুটিয়ে তুলতে চাইছে।

২১ নভে, ২০১৩

মনের জানালা মাঝে # ৩



(২৬)
সুখী হতে হলে ছোট ছোট বিষয়ে আনন্দিত হওয়া শিখতে হয়।

(২৭)
দু'আ করার সময় তাদেরকে স্মরণ রাখুন যারা আপনাকে একজন উন্নত মুসলিম হবার পথে সাহায্য করেছেন, করছেন।

(২৮)
মানুষের সাথে নিজের দুঃখ-দুর্দশার কথা শেয়ার করলে বেশিরভাগ মানুষ আনন্দিত হয়, সে তখন চিন্তা করতে থাকে সে আসলে কত ভালো আছে! বিষয়টা অদ্ভুত বাস্তব...সত্যিকার সমব্যথী দুস্প্রাপ্য, তা পেতে চাওয়া বোকামি; অনায্যও বটে...

(২৯)
যতবার মানুষকে বেশি মূল্য দিয়েছি, মানুষের কাছে প্রত্যাশা করেছি; ততবার কষ্ট পেয়েছি, ততবার যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েছি। প্রত্যাশা করার প্রয়োজন কেবলই আল্লাহর কাছে। শুধুই তিনি, কেবলই তিনি। সমস্ত ক্ষমতা তো কেবলই তাঁর।

(৩০)
নিজেকে নিজের কাছেই প্রমাণ করার চেষ্টা করুন, অন্যদের কাছে নয়।


(৩১)
সবকিছুর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত আছে। তাই কোন শংকা, দুশ্চিন্তায় থাকার কোন অর্থ নেই। আল্লাহর উপরে নির্ভর করে পথ চলুন। যা হবার এমনিতেই হবে...

(৩২)
দুনিয়ার যেসব জিনিস আপনি পেতে চেয়ে না পাবার অতৃপ্তিতে ভুগছেন, সেগুলোর বেশিরভাগ জিনিস আপনি পেলেও আপনার অন্তর এমন থাকত। যে অশান্তিতে থাকে, তার কারণ লাগে না। যে সন্তুষ্ট থাকার, সে এমনিতেই থাকে...

মনের জানালা মাঝে # ২



(১৩)
স্বপ্নকে অবজ্ঞা করবেন না। আপনি আসলে সেই মানুষ যা আপনি স্বপ্ন দেখেন। ভেবে দেখুন, যখন স্বপ্ন দেখেন সুন্দর একটা ব্যক্তিত্বের, তার যাত্রা কিন্তু এই মূহুর্তেই শুরু হয়ে যায়, এখনই নিজের মাঝে পরিবর্তনের দোলায় আসে। স্বপ্নগুলো হোক সুন্দর. আপনি হয়ে উঠুন স্বপ্নকে সত্য করার জন্য প্রত্যয়ী...

(১৪)
'চলার পথের সকল কুকুরের ঘেউঘেউগুলোর উত্তর দিতে গেলে আপনি ঠিকমতন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন না।' ~জনৈক

(১৫)
আগামীকালকের দিনটি হোক আজকের চাইতে উত্তম।

(১৬)
লিখতে চাইলেই কি লেখা হয়? কখনো কখনো হাতে কীবোর্ড নিয়ে হা করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকা হয়, এভাবে কয়েকদিন চলে যায়, অনুভূতিগুলো আর লেখা যায় না...

নিশ্চয়ই আল্লাহই সকল ক্ষমতার অধিকারী। তিনি না চাইলে কিছুই হয় না, যতই যোগ্যতা থাকুক আমাদের। যোগ্যতাটাও তো আল্লাহরই দান।

(১৭)
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার আগে একটু ভাবুন, আপনার ব্যাপারে আল্লাহ কতটা ধৈর্যশীল...

(১৮)
ইতিহাসের সবচাইতে বড় শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে মু'মিনরা ব্যতীত অন্য কেউ শিক্ষা নেয় না।

(১৯)
কারো কথা বুঝতে চাইলে কান খোলা থাকলেই হয়না, মনটাও খোলা রাখতে হয়।

(২০)
সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকতে নেই, সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়...
(২১)
জ্ঞানী মানুষেরা সবসময় চুপ থাকেন না, কিন্তু তারা জানেন কখন চুপ থাকতে হয়।

(২২)
দুনিয়া আছেই আমাদের হৃদয়কে ভেঙ্গে খানখান করে দেবে বলে। পাহাড়ের গুহায়, গর্তে, ঘরের কোণায় বসে থাকলেও এই ভাঙ্গন থেকে রক্ষা নেই।

(২৩)
নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে শ্বাস নিতে পারা এই মূহুর্তটা কতই না সুন্দর ! পার্থিব কতরকমের যন্ত্রণা আর প্যাঁচে পড়ে হয়ত অনেক মানুষ নিশ্চিন্তে থাকতেই ভুলে গেছে। আজ যখন রাস্তার পাশে মোটা কাগজের উপরে শুয়ে থাকা শিশুটিকে গভীর প্রশান্তির ঘুমে দেখলাম তখন মনে হলো, মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে শুয়েও। খুব বেশি কিছু লাগে কি? আমরাই আমাদের অভাবকে লাগামছাড়া করি, এরপর সেই অভাবের শোকে অশান্তিতে পুড়ি। সীমানা তো আমাদেরই মাঝে, সুখ সে তো আমাদেরই মনে।

(২৪)
একদিন আপনি কিছু মানুষের কাছে কেবলই স্মৃতি হয়ে যাবেন। প্রাণপন চেষ্টা করুন যেন তা ভালো স্মৃতি হয়...

(২৫)
আমাদের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা আমাদের নিজেদের ক্ষমতাটুকুর খবর আমরা জানিনা। আমরা জানিনা কতটা শক্তি আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে লুকিয়ে আছে। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য প্রতিদিনের ঘানি টানার জন্য নয়, আমাদের সৃষ্টি আরো অনেক বিশাল কাজ করার জন্য। নিজেদের শক্তি ভুলে কোথায় মাথা কুটে মরি আমরা?

মনের জানালা মাঝে # ১



 (১)
সত্যি কথা বলতে, আগামী জীবনে অবসর নেই, নেই তেমন একটা সময়, নেই সুস্থতাপূর্ণ সময়, নেই দায়িত্ব হালকা থাকা সময়। যা করার আজই করতে হবে। এই এখন থেকেই শুরু করতে হবে। আলসেমি নয়, আজ থেকেই অন্তরের সুন্দরগুলো বাড়াতে, আজ থেকেই সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করতে হবে।

(২)
আমরা আমাদের সম্পর্কগুলোকে নিজেরাই জটিল করি। অথচ হয়ত হৃদ্যতাপূর্ণ কিছু কথা, ভালোবাসার অনুভূতিগুলো হৃদয়কে ছুঁয়ে গেলে দুরত্বগুলোও ঘুঁচে যায়। রাগ করে কি সম্পর্কের টানপোড়েন দূর হয়? প্রয়োজন ভালোবাসা, অনুভূতিকে বুঝতে চেষ্টা করা... আর আন্তরিক ভুল স্বীকার ও সংশোধনের ইচ্ছা...

(৩)
পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, কাউকে দেখে মোহিত হই, কাউকে দেখে বিরক্ত হই, কেউ যন্ত্রণায় দেয়, কেউ অযাচিত ভালোবাসায় সিক্ত করে। আমি কিন্তু আমার জায়গাতেই থাকি, আমার সম্পদ আমার হৃদয়, অনুভূতি, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি এবং কাজগুলো। এই আমার সাথে অন্যদের বিস্তর ফারাক থাকতে পারে, কেউ আমাকে উপহাস করতে পারে। তাতে কী? আল্লাহর সাথে আমার সম্পর্ক সঠিক থাকলে পৃথিবীর আর কোন কিছুতেই আঁটকে যাবার, দুঃখ পাবার কিছু নেই। হৃদয় যেন অকারনে যার-তার কারণে না ভাঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে।

(৪)
বেঁচে যখন আছি, ভালো হোক আর খারাপ হোক -- এই সময়টা কেটে যাবে।  যদি আগামীরটা খারাপ হয়, তখন এই ভালোটাতে লাভ হবেনা। আগামীর সময়টা ভালো হলে, এই খারাপটা প্রভাব ফেলবে না।  পৃথিবীর জীবনে তবে কী লাভ এত হিসেব করে?

(৫)
আপনি যখন ভালোবাসার জন্য আহাজারি করছেন। ডানে-বামে তাকিয়ে দেখেন কেউ খাবারের জন্য কাঁদছে, মরেও যাচ্ছ। আবার অসুস্থতায় ও চিকিৎসাহীনতায় মারা যাচ্ছে।
(৬)
আমারে ফাঁকি দিলা রে বন্ধু,
তিনি তো দেখিলেন সবই...

(৭)
যে এখন কিছু না পাওয়ায় তৃপ্ত হয়না, সে ঐটা পেলেও নতুন না পাওয়ায় অতৃপ্ত থাকে।  অদ্ভুত!!
নিশ্চয়ই মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ..

(৮)
যতই আফসোস করুন, আপনার অতীত বদলাতে পারবেন না।
যতই দুশ্চিন্তা করুন, আপনার ভবিষ্যত তাতে বদলাবে না।

(৯)
আপনার চোখের পানি হলো নিজ জীবনের জন্য বৃষ্টির মতন। বৃষ্টি ছাড়া কোন কিছুই সতেজ হয়ে বেড়ে ওঠে না।

(১০)
সবাই যেমন পেতে চায় সে মানুষটা নয়, বরং নিজে যেমন চান সেই মানুষটি হতে চেষ্টা করুন।

(১১)
আমরা অন্যের কর্তব্য আর নিজেদের অধিকার নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকি,
নিজের কর্তব্য আর অপরের অধিকার নিয়ে সময় ব্যয় করলে পৃথিবীটা সুন্দর হত।

(১২)
অতীত নিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকলে কখনই সামনে আগাতে পারবেন না। অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে সামনে এগিয়ে চলুন। এই দিনগুলোই কিন্তু আপনার ভবিষ্যত নির্ণয় করে দিবে...



[প্রকাশ- ২১ নভেম্বর, ২০১৩]

১৬ অক্টো, ২০১৩

কী অর্থ আমাদের জীবনের?


ঈদের দিনটা সবার মত আমারও অন্য সকল দিনের চাইতে আলাদা, ভিন্ন আমেজের। আজ সকালে আব্বা এবং মামা তাদের দাদাদের নিয়ে আলাপ করছিলেন। তাদের দাদারা দু'জন খুব ভালো বন্ধু ছিলেন, গোটা গ্রামে তাদের পারস্পারিক হৃদ্যতার কথা সবাই জানত। কোন কোন কাজ অপরজনের অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে করতেন। নাতিদের পাঠাতেন বন্ধুকে ডেকে আনতে, নাতি বসে থেকে দাদার বন্ধুকে সাথে নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরতে পারতো। তারা আজ কেউ নেই, এমনকি আমার দাদাজানও নেই। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন সবাই... যেতেই হবে, যেতে হয় সবাইকে। চলে যাওয়াই নিয়ম...

১১ অক্টো, ২০১৩

পড়াশোনা শেষ করে তবেই বিয়ে করার সংস্কৃতি নিয়ে বিলাল ফিলিপস যা বলেছেন

"বয়সে যারা নবীন তাদেরকে তাদেরই মতন নবীনদের বিয়ে করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে সন্তানদেরকে বলা হয় তাদের পড়াশোনা আগে শেষ করতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, অন্যান্য ডিগ্রি ইত্যাদি শেষ করে তারপর বিয়ে করতে। এই কারণে অনেক সন্তানকে তাদের জীবনের সবচাইতে কঠিন সময়টা অবিবাহিত অবস্থায় পার করতে হয়। যখন তারা ত্রিশের কাছাকাছি পৌঁছে, তখন তারা বিয়ে করে। তাহলে ১৩ থেকে ৩০ বছরের এই প্রায় বিশটি বছর কী ঘটে? কী হয় তাদের জীবনে? আর এই ভুলের জন্য দায়ী কে? প্রাথমিকভাবে, এটা বাবা-মায়ের দোষ। যখন সন্তানরা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যায় এবং শারীরিকভাবে সাবালক হয় তখন তাদের সকল কাজের দায়ভার অবশ্যই তারাই বহন করে, কিন্তু বাবা-মায়েরাও তাদের এই বিশাল পাপের ভাগীদার হয় তাদেরকে এই অবস্থাটি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য না করার জন্য।"

--- ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস

বেশি কথা বলার ব্যাপারটা কেমন?

​ ছোটবেলায় মনটা আমার খুব কোমল ছিলো, লেখকদের কথায় খুব প্রভাবিত হতাম। 'লা মিজারেবল' টাইপের বই পড়ে জাঁ ভালজাঁর জন্য কেঁদেছিলাম, 'হ্যাঞ্চব্যাক অফ নোতরদাম' পড়ে কোয়াসিমোডোর জন্যেও চোখ ভিজেছিলো। আকুল হয়ে কেঁদেছিলাম নসীম হিজাযীর 'ভেঙ্গে গেলো তলোয়ার', 'আঁধার রাতের মুসাফির', 'সীমান্ত ঈগল' পড়ে। বই পড়ার জন্য একসময় মন ছটফট করতো, দু'দিন ছুটি পেলে বই পড়ার মতন না থাকলে খুব কষ্ট হতো। ক্লাস ফাইভের টার্ম ফাইনালের পরে একবার 'শার্লক হোমস রচনাসমগ্র' গিলে শেষ করেছিলাম সপ্তাহের মধ্যেই। প্রায় দু'দশক পেরিয়ে এখনো ছুটি আসে জীবনে, হঠাৎ খেয়াল হয় বই কি আছে সাথে? এখন পূজার সাথে ঈদের ছুটি মিলে বড় ছুটি পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ, গত ৫/৬ মাসে হাজার হাজার টাকার বই কিনে চোখের সামনে রেখে চোখের ক্ষুধা মিটিয়েছি, মনের কেন যেন আমার ক্ষুধামন্দা, প্রায় প্রতিদিন স্পর্শ করার পরেও পড়া হচ্ছেনা বইগুলো।

৬ অক্টো, ২০১৩

প্রযুক্তির চাপে হারিয়ে যায় পাঠক

​আমার প্রায়ই মনে হয় আমাদের প্রযুক্তির যুগে আমরা যা হারিয়েছি, হারাচ্ছি তা হচ্ছে পাঠক। আমাদের সমাজে একটা অদ্ভুত প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা শুধুই মোবাইল আর টেলিভিশনের স্ক্রিনে চোখ সেঁটে রাখে, যাদের চিন্তা ও বোধের জগতটা সংকীর্ণ হতে হতে হয়ত আবেগশূণ্য-বিবেকশূণ্য একটা অদ্ভুত প্রাণীতে পরিণত হবে। বিবেক ও বোধহীন আবেগ তো মূলত নফসের দাস, সেই অনুভূতির প্রকাশকে আবেগ বলার চাইতে 'খায়েশ' বলাই বোধহয় অধিক যুক্তিযুক্ত। আমরাও বোধহয় তাদেরকে বইগামী করতে পারিনা, আমরা হয়ত চাইও না। সামগ্রিকভাবে আমাদের এই সমাজ কী অপরিসীম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা বোধকরি যে কেউ অনুমান করতে পারবেন। তাদের থাকবে বুকে বুকে ঘৃণা, মানুষকে বুঝে না বুঝে ঘৃণা করা কিন্তু ভালোবাসতে পারে না কাউকে। 'আমি এইটা পছন্দ করি, আমি ঘৃণা করি' -- টাইপের কথা বলতে পারে, অথচ আরেকটা মানুষকে সম্মান আর বিনয় দেখানো পারে না। আরেকটা মানুষকে বুঝতে হলে, তার হয়ে ভাবতে পারাটা একটা নিয়মিত অনুশীলন যেটা বই পাঠ থেকে শেখা যায়। একজন পাঠক প্রতিটি বইতেই অনেকগুলো জীবনকে যাপন করেন। যে কখনো বই পড়েনা, সে একটাই জীবনকে যাপন করে, আর মনের দিক থেকে খুব অসহায় আর দরিদ্র সেই জীবন।

৪ অক্টো, ২০১৩

জীবনের চক্রগুলো থেকে মুক্তি মিলে কেমন করে?

​মনে পড়ে সেই সময়গুলোর কথা, প্রথম চাকুরিতে ঢুকেছি। অসহায় অনভিজ্ঞ যুবকের কাঁধে অনেক দায়িত্ব। অল্প ক'টা টাকা বেতন পাই, কিছুই হয় না সে টাকায়। বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে যাতায়াত করি, সকালে বেরিয়ে বাড়ি ফিরি রাতে এশার পরে। চাকুরি জীবনে এসে সপ্তাহের ৬ টি দিনই এই অদ্ভুত চক্রে বাঁধা পড়ে বারবারই মনে হত -- এই জীবন চাইনা, এই জীবনের অর্থ নেই কোন। ফেলে আসা ১৬ বছরের পড়াশোনা যথেষ্টই ঠিকমতন করে এলাম, এরপরেও এই অর্থহীন চক্রে ঘোরার নাম কি জীবন হতে পারে? টাকা টাকা টাকা, ভোগ... অন্যদের বানানো সিস্টেমে আমি একটা কাঁচামালমাত্র। ওরা যেভাবে সব তৈরি করেছে, এভাবেই জীবনকে চালিয়ে দিলে কী অর্থ এই প্রাণের? প্রশ্নগুলো ভেতরে গুমরে মরলেও বলার মতন কেউ ছিলো না। তখনকার ভাবনাগুলোকে এমন গুছিয়ে ছিলো না সেটাও নিশ্চিত।

স্বপ্নগুলো বড় বলে কি মুছে ফেলতে হবে?

মানুষের সাথে মিশে নতুন করে উপলব্ধি করছি, সবার জীবনে স্বপ্ন থাকে। মুখে উচ্চারণ করি বা না করি, স্বীকার করি বা না করি, সবাই কিছু স্বপ্ন বুকে ধারণ করে রাখে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় থেকে অনেক বড় কিছু করার ইচ্ছা থাকে অনেকের হৃদয়ের মাঝে। যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তারা আল্লাহ যেমনটি ভালোবাসেন তেমন করেই জীবনকে রাঙ্গাতে চান। মানুষ হিসেবে হয়ত সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়, হয়ত স্বপ্নগুলো বড়, সামর্থ্য কম -- তবু হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা স্বপ্নগুলো কেন মুছে ফেলতে হবে? যদি তা আল্লাহর অপছন্দনীয় কিছু না হয়, তাহলে তাকে মুছে ফেলার কিছু নেই। হৃদয়কে তিক্ত করারও কিছু নেই। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতাই কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে। কেবলমাত্র তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়, তার নির্দেশেই প্রতিটি ঘটনা ঘটে।

২৮ সেপ, ২০১৩

আপনার বর্তমান অবস্থানের কারণে গর্ববোধ করবেন না

"পৃথিবীর ক্ষমতাশালী রাজাদের প্রত্যেকেই একসময় কান্নাকাটি করা একটা শিশু ছিলো, প্রতিটি বিশালাকার ভবন একসময় ছিলো কেবলই একটি নকশা। আপনি আজকে কী, সেটা খুব বেশি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নয়; সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো আগামীকাল আপনি কোথায় থাকবেন। কখনো, কোনভাবেই আপনার বর্তমান অবস্থানের কারণে গর্ববোধ করবেন না। ভেবে দেখুন, দাবা খেলা শেষ হবার পরে রাজাকেও কিন্তু সৈন্যের সাথে একই বাক্সে যেতে হয়।"

আল্লাহ যেন পৃথিবী থেকে আমাদের বিদায়ের পরে জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগানে স্থান করে দেন এবং জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবার হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন।

[সংগৃহীত; ইংরেজি থেকে অনুবাদকৃত]

যে মানুষটাকে ভালোবাসি তাকে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে

"যে মানুষটাকে ভালোবাসি, তাকে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে। আমাদের ভালোবাসা যদি হয় কেবল কাউকে দখল করে রাখার কোন চাওয়া, তাহলে তা ভালোবাসা নয়। আমরা যদি শুধু আমাদেরকে নিয়ে চিন্তা করি, শুধু আমাদের প্রয়োজনগুলোই বুঝি এবং অন্যদের প্রয়োজনকে এড়িয়ে যাই, তাহলে আমরা কখনই ভালোবাসতে পারবো না। যাদের ভালোবাসি তাদের প্রয়োজন, চাওয়া, ভালোলাগা এবং কষ্টগুলো আমাদেরকে অবশ্যই গভীরভাবে খেয়াল করতে। এটাই প্রকৃত ভালোবাসার পথ। আপনি যখন কাউকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবেন, তখন তাকে ক্রমাগত ভালোবেসে যাওয়া থেকে আপনি নিজেকে ঠেকাতে পারবেন না।"

[যে গ্রন্থ থেকে অনুবাদ : Peace Is Every Step: The Path of Mindfulness in Everyday Life]

২৬ সেপ, ২০১৩

আমাদের মনের জানালা দিয়ে দেখা


একটা গল্প, কিছু কথা, বলে দেয় অনেক কিছুই...
.....

নববিবাহিত দম্পতি নতুন বাসা নিয়েছে। পরদিন সকালে তারা যখন নাশতা করছিলো, মেয়েটি জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো কাপড় শুকাতে দিয়েছে ঘরের কর্ত্রী। সে বলে উঠলো,
- 'কাপড়টা পরিষ্কার হয়নি, ঐ বাসার মহিলা ভালো করে কাপড় ধুতে জানেনা। তার মনে হয় ভালো কোন কাপড় কাচার সাবান দরকার।" মেয়েটির স্বামী সেদিকে তাকালো, কিন্তু নিশ্চুপ রইলো।

যতবারই পাশের বাড়ির মহিলাটি কাপড় শুকাতে দিতো, ততবারই এই মেয়েটি একই মন্তব্য করতো।

মাসখানেক পরে সেই বাড়িতে সুন্দর পরিষ্কার কাপড় শুকানোর জন্য ঝুলতে দেখে মেয়েটি অবাক হয়ে তার স্বামীকে বললো,"দেখো, অবশেষে উনি শিখেছেন কীভাবে ঠিকভাবে কাপড় ধুতে হয়। আমি তো ভাবছি কে তাকে শেখালো!!"
তখন ছেলেটি বলে উঠলো, "শোনো, আজ ভোরে আমি আমাদের জানালার কাঁচ পরিষ্কার করেছি!"

.....

আমাদের জীবনটাও এমনই --

"আমরা কোন কিছু দেখার সময় যা দেখি তা নির্ভর করে আমাদের সেই জানালার পরিচ্ছন্নতার উপর যা দিয়ে আমরা দেখি। কোন সমালোচনা করার আগে আমাদের নিজের মনের অবস্থাটা খেয়াল করে নেয়া প্রয়োজন, নিজেদেরকে প্রশ্ন করা দরকার যে আমরা কি তার মাঝে কোন ভালো দেখতে চাই আদৌ? নাকি মানুষটার দিকে তাকাচ্ছি তার ভুলগুলো খুঁজে পেতে বিচার করবো বলেই।"

সবাই তো পড়লাম... আসুন তা নিজেদেরকে স্মরণ করিয়ে দিই।

[শাইখ যাহির মাহমুদের ফেসবুক পেইজের পোস্ট থেকে ভাষান্তর]

২৪ সেপ, ২০১৩

যদি কিছু ভালো না লাগে, অস্থির লাগে তাহলে কিছু আইডিয়া

কিছু কিছু সময় আছে যখন 'কেন যেন ভালো লাগতেসেনা' টাইপের ফিলিং হয়। বয়ঃসন্ধিকালে যখন এরকম হতো, তখন বইপত্র ঘেঁটে এইটার কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে পড়ে নিজেকে বুঝ দিয়েছিলাম যে এখন আসলে শরীর-মনে পরিবর্তন আসছে তাই একটু মন খারাপ/উদাস হতেই পারে। সমস্যা সমাধান হয়নি, বরং সময়ের সাথে সাথে প্রকট হয়েছিলো। ভার্সিটি লাইফে উপলব্ধি করলাম হল জীবনটা হলো সুতোকাটা ঘুড়ির মতন, এখানে 'কী যেন নেই' অনুভূতি আরো বেড়ে গিয়েছিলো। আশেপাশে সবাইকে দেখে টের পেতাম, এরকম অনুভূতিকে খুব কম ছেলেই আলাদা ধরতে পারত, কিন্তু পালিয়ে বাঁচতে তাস খেলা, কম্পিউটার গেমস, মুভি দেখা টাইপের অর্থহীন সময় নষ্টের কাজের মাঝেই 'এন্টারটেইনমেন্ট' খুঁজে নিতো, কিন্তু কখনই অন্তরের শূণ্যতা দূর করতে পারত না কেউ। মনের সাথে সামনে দাঁড়িয়ে বোঝাপড়া করার সাহসটাই বেশিরভাগ মানুষের থাকে না, মনকে তখন 'চিন্তা এড়িয়ে' যেতে দেয় সবাই। সমস্যার সমাধান তখন আর হয়না ।

প্রেম করা এবং ছ্যাঁকা খাওয়া জীবনগুলোর কথা

ভার্সিটি জীবনে অনেককে 'ছ্যাঁকা' খায়। ছ্যাকার আগে তো প্রেম হতে হয় -- আমাদের সময়ের বেশিরভাগ প্রেমের সূত্রপাত ছিলো কলেজ লাইফের কোচিং সেন্টারগুলোতে, নইলে কলেজে পড়ার সময় কোন এক 'কাজিনের বান্ধবী' টাইপের জায়গা থেকে। অথবা, 'ফোন' নাম্বার পেয়েছিলো কোন বন্ধুর কাছে -- সেই জিনিস থেকে কথা বলতে বলতে প্রেম। কিছুদিন এইসব প্রেম চলে দুর্দান্ত মুডে। ক্লাস থেকে বের হয়েই কানে ফোন নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রুমে ফেরা। সব বন্ধুরা একসাথে হল থেকে বের হয়ে যখন নাশতা করতে বের হয়, তখন 'প্রেমিকরা' কানে ফোন নিয়ে পেছনে থাকত। এই দৃশ্য সার্বজনীন, সকল ভার্সিটিতে, সকল সেমিস্টারের ছেলেপিলেদের মাঝে এখনো এমন দৃশ্য আছে বলে মনে হয় আমার।

ইদানিং দেখতে পাই ঢাকার রাস্তায় ব্যস্ত পথেও কিছু ছেলেমেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে পার হয় এবং তারা কথাতে এতটাই ডুবে থাকে যে খেয়ালই করে না বড় গাড়িগুলোকে, তারা কেবল আল্লাহর প্রচন্ড দয়ার কারণেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায়। এইসব ছেলেমেয়েদের পথচলতে চারপাশের ব্যাপারে উদাসীন অথচ হাসিমুখ দেখে আমার কেন যেন মনে হয় অন্য প্রান্তে বিপরীত লিঙ্গেরই কেউ আছে হয়ত। তাদের মাঝে হারাম সম্পর্কের জোয়ার বইছে, শয়তান তাদের অনুভূতিতে বেশি করে উচ্ছ্বাস মাখিয়ে দিচ্ছে, ফলে এই ভালোবাসার নেশার মাতলামিতে ডুবে থাকছে তারা।আবেগের ভাগাভাগি, কিছু স্বপ্ন আর খুঁনুসুঁটি তো আনন্দেরই বটে! কিন্তু নদীতে তো জোয়ার হলে ভাটাও আসে, অনৈতিক সম্পর্কের উদ্দাম আনন্দের জোয়ার পেরিয়ে প্রেমে ভাটার টান আসে, সে টান তারা সামলাতে পারে না। সে টানে দু'জনাই ভেসে যায়, একদম হারিয়েই যায় বেশিরভাগ সময়েই। এই ভাটারই ফল ছ্যাঁকা খাওয়া। সুস্থ-স্বাভাবিক এক যুবক হতাশা আর উচ্ছন্নতাকে আলিঙ্গন করে নেয় এমন সময়ের পরেই।

আত্মাছেঁড়া কষ্ট

জীবনে কত রকম কষ্টই না হয়! কিছু কিছু কষ্টকে আত্মাছেঁড়া কষ্ট বলা যায়। বুক জ্বলে যায় এমন কষ্টও তো হয়। আসলে, এমন অনুভূতি প্রতিটা মানুষের জীবনেই আছে। সেটা পরিশ্রমের ফল না পাওয়ায় হতে পারে, প্রিয়জনের বিদায়ে হতে পারে, অনাকাংখিত ঘটনা থেকে হতে পারে, আপনজনের বিদায় থেকেও হতে পারে, বড়-ছোট রোগবালাই থেকেও হতে পারে। যেভাবেই হোক, কষ্ট হয়না এমন মানুষ তো আমরা নই।

কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা হলো, কষ্টের ফলাফল কিন্তু একেকজন একেক রকম পায়। যে মানুষটা আল্লাহর জন্য জীবনধারণ করে, সে জানে -- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই দুনিয়া ও সৃষ্টিজগতের মালিক। তিনিই এই কষ্টটা দিয়েছেন, সেই তিনিই আমাকে সুস্থ শরীর দিয়েছিলেন, আমার জীবনে রিযিকের ব্যবস্থা করেছিলেন, করছেন। আমাদের হারানোর কিছু নেই, শুধুই প্রাপ্তি। এই কষ্টের মূহুর্তটাতেও যদি সবর করি, ধৈর্যধারণের ফলস্বরূপ তিনি আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে তার পছন্দানুযায়ী এমন দান করবেন যা আমার কল্পনাতীত। সমস্ত সফলতার মালিক কেবলই তিনি। আমার জীবনের উদ্দেশ্যও কেবলই তার সন্তুষ্টি।

অনলাইনে লেখালেখি

কিছুদিন লেখালেখি থেকে দূরে ছিলাম। জীবনের প্রয়োজনে, নিজের প্রয়োজনে। আমি দীর্ঘ অনেকগুলো বছর ধরে একটানা ফেসবুক ব্যবহার করছি, এমনকি অন্যান্য সোশাল নেটওয়ার্কগুলোও। আধযুগ পরে এসে আমার কাছে একসময় মনে হচ্ছিলো, সম্ভবত ভার্চুয়াল এই লেখালেখির মাঝে বোধহয় তেমন কোন অর্থ নেই, হয়ত অনেকটাই সময়ের সস্তা পচন, আখিরাতের ক্ষতি কামাই তুলনামূলকভাবে বেশি। এটা সত্যি, ভুল এবং ক্ষতিতে ডুবে থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি। তবে আমার চুপ থাকা সময়ে যখন মাঝে মাঝে ফেসবুকে-টুইটারে ঢুঁ দিয়েছি, তখন টের পেয়েছি যে অনেকসময় অনাকাংখিত উৎস থেকে পাওয়া কথাগুলোর মাঝে যে 'রিমান্ডার' বা স্মরণিকা থাকে তা কত বেশি শক্তিশালি হতে পারে। কখনো কখনো ছোট্ট একটা বাক্য চিন্তার জগতে প্রচন্ড ঝড় সৃষ্টি করে।

২০ সেপ, ২০১৩

প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হওয়া মানুষদের কী হবে জীবনে?

তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ঢাবি'র কেন্দ্রীয় মাসজিদে মাগরিবের সলাত আদায় করে শাহবাগে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। ছুটির দিনের সন্ধ্যা, শিশুপার্কে আগত মানুষদের উপচে পড়া ভিড়ে বাসে জায়গা পাওয়ার আশা ত্যাগ করে হাঁটতে শুরু করলাম রমনা পার্ক লাগোয়া ফুটপাত ধরে... একটু নীরব এলাকায় আসতেই এক শক্তপোক্ত যুবককে সামনেই কানে ফোন নিয়ে রীতিমত অস্থিরভাবে ছটফটিয়ে এদিক ওদিক লাফ দিতে দেখলাম। কিছু কথা কানে আসতে একটু ধীরপায়ে হাঁটলাম, কানে এলো --

"ও কেন ছেলের সামনে হাজির হবে? আমি জানতাম, দুপুর থেকেই টের পাচ্ছিলাম যে আজকে ওকে কেউ দেখতে আসবে। শুক্রবারে ওকে দেখতে আসে আমি জানি... ও আমাকে কথা দিসিলো আব্বা-আম্মা ওর সাথে বেঈমানী করবে না। ও কেন তাহলে ছেলেপক্ষের সামনে গেলো। আজকে যদি ওর বিয়ে হয়া যাইত তাইলে যেমন কষ্ট পাইতাম, আমি এখন তেমন কষ্ট পাইতেছি..."

বিয়ে কি এমনই হওয়া উচিত?


আমরা এমন একটা সমাজে বসবাস করছি এখন, যেখানে প্রেম করার জন্য তেমন একটা ইচ্ছা/আগ্রহেরও দরকার পড়েনা, কিছু বুঝে উঠার আগেই তা একেকজনের উপরে আপতিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্ত মেয়েরা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। বন্ধুর মাধ্যমে, ফোনে, ফেসবুকের ইনবক্সে কেবলই প্রেমের জয়গান। শ্লোগান শোনা যায়, "যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও", আর এই হাত বাড়ালেও হলো, তারপরেই পথ খুলে যায় আনন্দের -- শহরের এখানে-ওখানে অজস্র আনন্দ-আবেগের ভাগাভাগি, খুঁনসুঁটি, হাসি-ঠাট্টা-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যায় আরো অজস্র পথচারীদের সামনেই। আর এই অপার আনন্দকে পেতে কেবল একটা জিনিস লাগে -- "ইচ্ছা"।

কিন্তু এই সমাজেই বিয়ে করার জন্য শত-সহস্র কঠিন ধাপ আছে। সেই ধাপের একেকটা পূরণ না করতে পারলে অপরাধী-আসামী হয়ে যেতে হয় নিকটাত্মীয়-পরিবারের কাছে, সর্বোপরি *সমাজ* নামের প্রতিষ্ঠানটির কাছে। হারাম সম্পর্ক গড়া যতটাই সহজ, হালাল সম্পর্ক করা ততটাই কঠিন।

১৩ সেপ, ২০১৩

একান্ত নিজের জন্য কিছু সময় দরকার সবার

জীবনের কিছু অনুভূতি প্রায়ই চাপা দীর্ঘশ্বাস বের করে তার একটা হলো জীবনের প্রকৃত জ্ঞান কিছুটা শিখে সেই মানদন্ডে নিজের জীবনের পেছনের দিকে এক ঝলক তাকানো... খেয়াল হয়, অনর্থক-অকারণ অনেক সময় যা আসলে আমার কোনই কাজে আসবে না। অনেক আলাপে থাকতে চাইনি, অনেক বিষয় জানতে চাইনি, অনেক মানুষের সাথে মিশতে ভালো লাগেনি তাও থাকতে হয়েছে -- সেগুলো নিয়ে খারাপ লাগে; টের পাই অনেক বেশি দৃঢ় হতে হবে আগামী জীবনের জন্য।

আসলে আল্লাহর একজন বান্দা হবার বিষয়টাতে অনেক কিছু ভাবতে হয় না -- শুধু প্রতি মূহুর্তে, ঠিক প্রতিটা ক্ষণে মনে করার চেষ্টা যে এতে কি আমার আল্লাহ খুশি হবেন? খুব বেশি জ্ঞান লাগে না, যেকোন মূহুর্তে, যে কেউ আমরা শুরু করতে পারি, এরপর তিনি ডেকে নেয়া পর্যন্ত তারই কাছে যাবার চেষ্টা -- এতেই এই জীবনের সফলতা। একদিন কেউ থাকবে না, কেউ থাকেও না। পড়ে থাকবে আমার সুন্দর পোশাক, ভালোবাসার মানুষগুলো, আমি চলে যাব মাটির নিচে। পড়েছিলাম একজন ওস্তাদ তার ছাত্রকে শিখিয়েছিলেন, "মাটিকে অবজ্ঞা করো না। তুমি যখন বেঁচে থাকো তখন সে তোমার পায়ের নিচে থাকে, যখন তুমি মরে যাবে তখন সে তোমার উপরে থাকবে।" -- কথাটা পড়ে ধাক্কা খেয়েছিলাম।

স্রেফ কিছু সম্ভাবনার কথা

অনেক সম্ভাবনার কথা মনে হয় মাঝে মাঝে, স্রেফ কিছু সম্ভাবনার কথা। আমাদের মাঝে একটা অদ্ভুত সত্ত্বা আছে যে বিচারকের আসনে বসতে পছন্দ করে, মানুষ পেলেই তাকে বিচার করে একটা গ্রুপে/দলে/টাইপে ভাগ করে ফেলতে চায়। নিজে একটু দ্বীন সুন্দর করে পালন করতে পারলে যদি এমন মানুষ পাই যে হয়ত ইসলাম পালনে আগ্রহী, তার বেশভূষা এবং মুখের ভাষায় সেইরকমের কিছু আহামরি পাওয়া না গেলে তাকে আমরা হয়ত গুণতিতেও ধরতে চাইনা। সামনের মানুষটার অবস্থানের উপরে ভিত্তি করে তার প্রতি আচরণ প্রতিফলিত হয়, বেশিরভাগ মানুষই এমন আমরা।

কতটুকুই বা জানি আমরা? হয়ত সামনের মানুষটা যখন অনেক কষ্টে যুদ্ধ করছে জীবনের, তার দ্বীন পালনের দুর্বলতা হয়ত আমাদের সামনে পরিষ্কার, তখনো হয়ত আমরা মনে করছি অনেক পরিশ্রম করে আমরা বেশ ভালো জায়গাতে এসেছি, জ্ঞানে-গুণে-পার্থিব অবস্থানে। অথচ আল্লাহ হয়ত আমাদের জীবনের বড় পরীক্ষাতে এখনো ফেলেননি। আমি যেই পরীক্ষা পেরিয়ে এসে মনে করছি অনেকদূর এসেছি, সেই মানুষটা হয়ত এর চাইতে বহুগুণ কঠিন অবস্থা পেরিয়ে আছেন। অথচ আমি তার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে চলে এলাম। ভেবেই নিলাম আমি তার চাইতে অনেক ভালো মুসলিম। অন্যের প্রতি খড়গহস্ত হওয়ার সময় আমাদের কুরআন এবং হাদিসের জ্ঞানটুকু চুলোয় তুলে রাখতে পছন্দ করি আমরা। অনেক কিতাব বুঝি, আলাপ করি কিন্তু কেবল মানার সময় নিজেকে ভালো মনে হতে থাকে।

১৫ আগ, ২০১৩

মিশরে লাশের মিছিল

মিশরে লাশের মিছিল দেখছি কাল থেকে। গুলিতে ঝাঁঝরা করা, জীবন্ত-মৃতদের পুড়িয়ে দেয়া, সর্বাধুনিক অস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়া শরীরের উষ্ণ রক্তমাখা লাশগুলোর ছবি দেখে কেমন অন্য এক জগতে চলে যাচ্ছি। আমার জীবনের এই অধ্যায় শুরু হয়েছিলো ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা শুরুর সময়টি থেকে। লাশ দেখে ঝরঝরিয়ে কেঁদেছি, অসহায়ত্বেই। শুধু মুসলিম হবার কারণে, আল্লাহর কাছেই কেবল মাথানত করার প্রত্যয়ের কারণে পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে আমাদের ভাই এবং বোনদের রক্ত গবাদিপশুর রক্তের চাইতেও সস্তা করে ফেলেছে ইসলামবিদ্বেষীর দল। 

একসময় সবকিছু দেখে এই অসহায় ক্রন্দনের মাঝে নিজের প্রতিই খেদ তৈরি হত, কষ্ট হত আমাদের অক্ষমতা আর অযোগ্যতার জন্য। অথচ আজ কেমন যেন মনে হচ্ছে, এই ফিলিস্তিনে, ইরাকে, আফগানিস্তানে, সিরিয়ায়, মিশরে, কাশ্মীরে, মায়ানমারে, চীনে এবং সর্বোপরি আমার দেশের মাটিতে আল্লাহর বান্দাদের ছিটকে পড়া রক্তগুলো শুধু লক্ষকোটি প্রাণের শাহাদাতের তামান্নাই তৈরি করে দিচ্ছে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঈমানদার মানুষগুলো দৃপ্ত প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছে।

১৪ আগ, ২০১৩

যে লোহিত ঝর্ণাধারা সিক্ত করে পৃথিবীর জমিন

দেখেছি রক্তাক্ত ভাইয়ের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া শরীরের ছবি,
দেখেছি শহীদ করে দেহটিকে পুড়িয়ে দেয়া ভাইদের কৃষ্ণবর্ণ অবশেষ,
সপ্তদশী বোনটি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে জিহাদের ময়দানে, ভালোবাসায়।
দেখেছি সন্তানহারা পিতার​​ ঈমান, কয়েক ঘন্টা পরেই নির্বিকার উক্তি,
'দুঃখপ্রকাশে আসিনি, আমাদের লক্ষ্য অন্যায়কারী অত্যাচারীদের উচ্ছেদ।'
আল্লাহর পথে মৃত্যুর প্রত্যয়ে অপেক্ষারত প্রৌঢ়ের নিশ্চিন্ত চেহারা দেখেছি।
শিশু সন্তানকে হারানো মায়ের চেহারাতে ভাসতে দেখেছি দৃঢ়তা। এভাবেই
রক্ত পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে জয় আসে সত্যের, মুক্তি পায় মানবতা, একদিন।

সাক্ষী থাকছি হাজার হাজার মৃত্যুর; নমরূদ, ফিরাউনের অত্যাচার
হামানের বড়ত্বের নিস্ফল দম্ভ, আদ-সামুদ-মাদইয়ানবাসীর দাম্ভিকতার।
চোখে ভাসে মুসলিম নামের মুনাফিকদের পরিচয়, সূরা মুনাফিকুন।
আমি মুসলিম তাই ভাইয়ের মৃত্যুতে চোখ ঝরে শ্রাবণধারা, জ্বলে অন্তর
যন্ত্রণায় অসহ্য লাগে শরীর; বলে উঠি, 'আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা...'
ইসরায়েলে তৈরি কাঁদানে গ্যাসে কায়রোর কুয়াশাচ্ছন্ন। ট্যাঙ্ক, বুলডোজার,
স্নাইপার গান, রাইফেল,হেলিকপ্টারে রাবায়া আর নাহদা স্কয়ার ঘেরা।
তারা শাহাদাতের স্বপ্নদরজায় প্রবেশ করছেন আল্লাহর নাম মুখে নিয়ে,
প্রশান্ত আত্মাদের সম্ভাসন জানাচ্ছেন নূরের তৈরি একদল পবিত্র আত্মা।

নীলনদের তীরে নতুন ফেরাউন আজ, হাজার মুসলিমের শাহাদাতে তাই
উন্মত্ত আনন্দ আজ জেরুজালেমের ঘরবাড়িতে। অথচ সৌদ পরিবার,
দুম্বার ঠ্যাং চিবুচ্ছে। কায়রোর রাজপথের রক্তের নহর দেখে তাড়া করে
তেলবিক্রির টাকা বস্তায় পাঠিয়েছে সেনাশাসককে। হতভাগা আলেমরা
নির্ভাবনায় বিভক্ত করছে মুসলিমদেরকে নিত্যনতুন হঠকারী চিন্তায়।
মুসলিম উম্মাহ আজ শতধাবিভক্ত --দাড়ি কতটা লম্বা হবে হবে,
তারাবিহ কত রাকাত, নারীর মুখখানি ঢাকতেই হবে নাকি হবে না।
এমন তর্কে উন্মত্ত ব্যস্ততা দেখে হাসিমুখে ঘুমায় নেতানিয়াহুর দল।

আজ প্রয়োজন উমার, উসামা, খালিদ, খুবাইব, জাফরের মত প্রাণ।
অথবা আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, তারিক বিন জিয়াদের দৃঢ়তা
আল-আকসার পথে দৃঢ়চেতা সালাহ আদ-দীনের তেজোদীপ্ততা।
হে কাদির, হে লাতিফ, আমাদের ক্ষুদ্র প্রাণগুলোতে ঈমানী তেজ দিন,
দয়া করুন যেন এক কালিমার পতাকার নিচে সবাই সমবেত হই।
মিথ্যাবাদী, অত্যাচারীর হাত থেকে যেন মুক্ত করতে পারি মানবতাকে।

১৪ আগস্ট, ২০১৩
রাত : ০৯ টা ০৩ মি।

১৩ আগ, ২০১৩

কিছু কীটপতঙ্গ নারীর বুদ্ধিভ্রান্তিবিলাস

দেখেছ প্রিয়া, তোমাকে বলেছিলাম না এমনটা হবার নয়? আমি আর কবে আর এডগার এলান পো আর টেনিসনের কবিতা পড়ব? অথচ ইচ্ছে ছিলো দু'একটা অসাধারণ ছত্র আমি তোমাকে লিখে উৎসর্গ করবো। মনে আছে, তোমাকে পড়তে দিবো বলে রেখেছিলাম, W.B. Yeats এর 'the wild swans at coole' যেখানে সেই হাঁসগুলোর ডানা ঝাপটানোর ফলে সেই জলরাশিতে খেলে যাওয়া পানির মাঝে স্রোতটাকে কত সুন্দর করেই না বর্ণনা হয়েছিলো।

তাও যদি হতো! আর কবেই বা লংফেলো বা ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার স্পর্শে নদীকূলের পাশে গিয়ে আপ্লুত হবো অথবা ড্যাফোডিলের নাচন দেখতে আকাশের মেঘে উড়ে বেড়াবো? তোমার জন্য আমি হয়ত বেশি কিছু না, দু'একটা সনেট অন্তত লিখতে পারতাম। হয়ত তোমার চুলের স্পর্শ মুখে নিয়ে আমার দু'একটা অষ্টক তৈরি হত মধুসূদনের মতন।

এখনকার বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো

এক ছোট ভাই প্রশ্ন করেছিলো, ভাইয়া এখনকার বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোর অবস্থা তো খুবই খারাপ হয়। গান-বাদ্য, ছেলে-মেয়ের মেলামেশা, নাচানাচিগুলো, ডিজে... এসব থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?

উত্তর আর কী দিবো? কাছের বন্ধুদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো দেখে-শুনে বুঝেছি এখানে 'ইসলামিক্যালি মডিফিকেশন' করার সুযোগ নেই বললেই চলে, বেশিরভাগ অনৈসলামিক কাজ। পারিবারিক আর সামাজিক চাপে পিষ্ট হয়ে করতে হয়। এখন অনেক ধাপ থাকে বিয়েতে, আমি এতটা 'ব্যাকডেটেড'(!) যে ঠিক সব জানিও না। তবু শুনেছি -- মেহেদি ১, মেহেদি ২, গায়ে হলুদ ১, গায়ে হলুদ ২, বিয়ে, বৌভাত, (রিসিপশন)। এগুলো থেকে যারা কমায়, তারা মূলত টাকার ঠেলাতে পড়ে কমায়।

পরের নিন্দা করলাম, অতঃপর...

ভেবে দেখলাম, খেয়ালে এবং বেখেয়ালে আমি মানুষের গীবত করে পরবর্তীতে যতটা আফসোস করেছি, ততটা আফসোস আমার খুব কম পাপের কারণেই বুক জ্বালা করে হয়েছে। আফসোস আরো বেশি হয়েছে যখন অনেক দেরিতে হলেও সেই মানুষগুলোর চারিত্রিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছি। তখনই টের পাই, যা খারাপ তা আসলে সবসময়েই খারাপ। যে মানুষটিকে আল্লাহ উপহার দিয়েছেন উত্তম চরিত্র, তার নামে কখনো কোথাও ভুলেও কিছু বলেছি, তা নিজে জেনেও পরে সেই মানুষের সামনে দাঁড়ানো সত্যিই অস্বস্তিকর এবং অশান্তির। সেই সাথে মনে হয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যখন সব প্রকাশ করে দিবেন, সেইদিন সমস্ত মানুষের সামনেও লজ্জা পাওয়ার ভয়, আর আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ন্যায়বিচারের ভয়। আল্লাহ পরনিন্দা তথা গীবত এবং মুসলিম ভাইদের সম্পর্কে মন্দ ধারণা করার অভাস থেকে আমাকে ও গোটা মুসলিম উম্মাহর ভাইবোনদেরকে রক্ষা করুন।

স্বপ্ন কারখানা, তিলোত্তমা নগরী
১২ আগস্ট, ২০১৩ ঈসায়ী

যে অদৃশ্য কারাগারে বন্দী থাকি অনেকেই

জীবনে আমরা অনেকেই খুব সহজেই যে ভুলগুলো করি তার একটা মনে হয় --অন্যদের কাছে নিজেদের জীবনের ব্যাখ্যা দিতে যাওয়া। আমি শিখেছি জীবনে, কারো কাছে ব্যাখ্যা দিতে যেয়ো না -- যে তোমাকে ভালোবাসে, সে তোমার ব্যাখ্যা না শুনলেও তোমাকে ভালোবাসবে। যে তোমাকে অপছন্দ করে সে তোমার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলেও অপছন্দই করবে।

মানুষ কী মনে করলো, সে কী ভেবে বসলো -- এই বিষয়টা আমাদেরকে এক অদৃশ্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত করে। তাদের কাছে নিজেদের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমাদের মানসিক শক্তি ক্ষয় হয়, সময় চলে যায়। কতই তো দেখেছি, কিছু বন্ধু/ভাই আমাকে ঘৃণা করবেন এমন আশাতেই চারপাশে চোখ বিদ্ধ করতেন কাজে-কর্মে, ভুল পেয়ে আমাকে ধরাশায়ী করে 'ঘৃণা' ছড়িয়ে চলে গেলেন। ঘৃণা করতে কষ্ট হয়না, ওটা আপনাতেই হয়। ভালোবাসা জিনিসটাই শ্রমসাপেক্ষ, বাজারি নারী-পুরুষ ভালোবাসার কথা বলছিনা, বলছি মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা।

জীবনটা খুব ছোট। অন্যের কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে, তারা কী মনে করলো সেই বিষয়টাকে গুণতিতে ধরে জীবনকে অনর্থক জটিল করার কোন মানে হয় না। অন্য মানুষেরা যেন কখনো যেকোন ভালো বা খারাপে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। শুধু একজন কী ভাবলো তাতে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। শুধু তাঁর, সেই মহান আল্লাহর পছন্দকে এড়িয়ে যাওয়াই এই জীবনের সবকিছুকে অর্থপূর্ণ থেকে অর্থহীন করে দিতে পারে। এই কেন্দ্রে স্রষ্টার সাথেই হৃদয় জুড়ে থাকুক, দূর হোক স্রষ্টার সৃষ্টিদের কাছে মানসিক কারাগারের বন্দীত্ব।

স্বপ্ন কারখানা, তিলোত্তমা নগরী
১১ আগস্ট, ২০১৩ ঈসায়ী

৯ আগ, ২০১৩

তরুণদের জীবনে ঈদ এবং নারী

গাইর-মাহরাম নারীদের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ যেকোন উঠতি বয়সের ছেলে থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার কাছেই কমবেশি আকর্ষণীয়। লাগেই, লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহ তা অপছন্দ করেন। এমন মেলামেশা ও সম্পর্কগুলো হারাম। 'মিক্সড গ্যাদারিং' এড়িয়ে যেতে পারা মনে হয় তেমন সহজ নয়, যখন এখনকার সমাজে সবাই 'শিরাম স্মার্ট'। এখন প্রায় বন্ধুদের সার্কেলে ছেলেমেয়ে মেলামেশা থাকে, পরিবারে 'কাজিন'দের মাঝেও তা দেখা যায়। 'কাজিন' কখনই আপন ভাই-বোন নয়, এবং আমার শোনা অনেক বাস্তব ঘটনাতে আমি এই কাজিনদের সাথে দুনিয়ার জীবনের জটিলতা সৃষ্টিকারী নোংরা ও আখিরাত ধ্বংসকারী ভয়াবহ ঘটনার আলাপ শুনেছি। সাবধান থাকা আবশ্যক।

অনৈতিক মেলামেশার মাঝে কিছুটা জৈবিক/শারীরিক আনন্দ থাকলেও 'এগজস্টেড ফিলিং' এনে দিবে, তিক্ততার স্বাদ হবে, ঘটনা/মেলামেশার পরে ফেরত এসে খারাপ লাগা তৈরি হবে এবং জীবনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। অমুকের সাথে মিশেছেন/মিশবেন তাই তমুককে তেল দিবেন, ঘমুককে ব্যাখ্যা দিবেন, টমুক আপনাকে গলা চেপে ধরবে। পরিবারে, বন্ধুমহলে, সমাজে ইজ্জত কমে যায়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান হারায়। ঈমানদারদের উঁচু পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস থাকে কেননা তারা জানেন তারা এমন কাজ করেননি, যা আল্লাহ অপছন্দ করেন। আর আল্লাহ যা অনুমুতি দিয়েছেন এমন কাজ এই দুনিয়ায় এবং আখিরাতেও সবাই জানবে--এমন ভয় হয়না। ইজ্জত তথা সম্মান আল্লাহরই হাতে, যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, বেইজ্জতি তাদের প্রাপ্য হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে রহম করুন।

পুরষ্কার প্রাপ্তির দিনে আমার প্রিয়তম বাক্যগুলো

আজ ঈদ-উল-ফিতর। একমাসের সিয়াম সাধনার পুরষ্কার বিতরণী আজ, সবাই সমবেত হবো ঈদগাহে/মসজিদে ইনশা আল্লাহ। দু'আ করবো আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি ও আখিরাতের জীবনে মুক্তির প্রত্যাশায়। আমাদের গোটা মুসলিম উম্মাহ থাকবে দু'আতে। আমার যন্ত্রণাক্লিষ্ট-রক্তমাখা ভাই ও বোনেরা শুধুমাত্র আল্লাহকে রব মেনে শাহাদাহ ঘোষণা করাতেই পার্থিব সীমাহীন অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। আমরা অভাগা, পৃথিবীতে চলমান এই ঘটনাগুলোতে আমাদের কর্তব্য কী ছিলো এবং কী করেছি তার দায়ভার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে এড়াতে পারব না কিছুই।

আমাদের ঈদ হবে হয়ত সুন্দর, জামাকাপড় সুস্বাদু খাবার আর সুঘ্রাণে। কিন্তু অত্যাচারীদের আক্রমণে রক্তাক্ত প্রান্তরগুলো, পরিবারগুলোতে ভাই-বোনেরা কীভাবে ঈদ করছেন-- সেটা তো চিন্তার ও উপলব্ধির। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ক্ষমা করেন, আমাদের দ্বীনকে বিজয়ী করেন। দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকা আমার ভাই-বোনদের যেন শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন, আমাদেরকেও যেন ক্ষমা করেন, বিজয়ীদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবার যেন যোগ্যতা দান করেন।

৮ আগ, ২০১৩

বোধ, শরীর মন ও আবেগ নিয়ে কিছু কথা

জীবন থেকে আমার একটা উপলব্ধি হচ্ছে, ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক যেকোন উন্নতির মূলে থাকতে হবে উত্তম চরিত্র, এর অভাবে বর্তমান সমাজ তথা পৃথিবীর ক্রমঅধোঃগতি হচ্ছে দ্রুতবেগে। উত্তম চরিত্রের মূলে রয়েছে উত্তম জ্ঞানার্জন (বইপড়া সর্বাগ্রে এবং সৎসঙ্গ ও অন্যান্য) যাকে বাড়াতে হবে, আমাদেরকে রোধ করতে হবে সময়ের অপচয়। জ্ঞান না থাকলে যত ভালো মনই থাকুক, তাকে ব্যবহার করা যায় না সঠিক উপায়ে। আর জ্ঞান থাকতে হবে, অবশ্যই থাকতে হবে আন্তরিকতা,ইখলাস।

একই সাথে নিজেকে যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করার মানসিকতাটা, নিজেকে চিন্তা করানোর পদ্ধতিটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জ্ঞান এবং বোধ দুইটা ভিন্ন জিনিস। একটা মানুষের কিছু জানা থাকলেই সে বুঝে -- এমন না। আমাদের সেই বোধটাকে গড়ে তোলা দরকার। আবেগ কমাতে হবে, দ্বীন এবং দুনিয়া উভয়ক্ষেত্রেই আবেগ কমিয়ে চিন্তা ও বুদ্ধিকে ব্যবহার করতে হবে। এই উপলব্ধি এবং প্রয়োগেও মনের মধ্যকার বোধের উত্তম অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। না হলে আবেগ জ্ঞানকে অতিক্রম করে, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় না।

৭ আগ, ২০১৩

ঈদের ছুটি আর চিরদিনের ছুটি

ইফতার শেষে মাগরিবের সলাতে সালাম ফিরাতেই ইমাম সাহেব মাইক্রোফোনে বললেন যেন সুন্নাহ সলাতের পরে কেউ নফলের নিয়াত না করে, জানাযা হবে। জানাজা ছিলো বয়ষ্ক পুরুষের। শেষ তাকবীরের আগে 'আল্লাহুম্মাগফিরলি লিহায়্যিনা... ' পড়তে শুরু করে তার অর্থটা খেয়াল হলো শব্দগুলো ধরে ধরে। কয়েক জুমু'আ আগে খতীব সাহেব এটার ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিছু আলোচনাও করেছিলেন -- অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। জানাজার পরে আজকে মনে হলো একদিন আমার ঘরে আমার সবকিছু পড়ে থাকবে, খাতায় লেখা অর্ধেক পৃষ্ঠা, সবসময় চার্জের প্রয়োজন থাকা মোবাইল ফোনটা, অফিসের ব্যাগটা বিছানার একপাশে এলোমেলো পড়ে থাকবে। আমি থাকবো হয়ত ওই কফিনের ভেতরে, হয়ত তখন চাইতে থাকবো -- শির্ক না করা নিয়মিত নামাজ আদায় করা অনেকজন ভাই আমার জানাজাহ তে শরীক হবেন, আমার জন্য তারা দু'আ করবেন যেন অনন্তকালের জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাই। অথচ কেউ শুনবে না, জানবে না আমি কেমন আছি। এই একাকীত্বের যাত্রাই তো সত্যিকারের একাকীত্ব...

এই সময়ে আমাদের সমাজের স্বচ্ছল অথবা ধার্মিক পরিবারদের কথা

সম্পদের প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা একটা অদ্ভুত ধরণের অহংবোধ নিয়ে এনে দেয়, অনুভূতিবোধকেও বোধহয় ভোঁতা করে দেয়। সহমর্মিতা জিনিসটা হয়ত খেয়েই ফেলে। সমাজের উচ্চবিত্তদের কম অংশই 'মনুষ্যত্ব' ধারণ করেন বলে মনে হয় ইদানিংকার ঢাকাভিত্তিক শহুরে জীবনের অভিজ্ঞতায়। অন্যদের জায়গায় তারা কখনো নিজেদেরকে বসিয়ে করে জীবনের কষ্টগুলোকে হয়ত ভেবে দেখতে, অনুভব করতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না তাদের কতটা যুদ্ধ করতে হয়। নিজেদের 'থাকা' কে তারা স্বাভাবিক ধরে অন্যদেরকে অবমূল্যায়ণ করেন প্রাচুর্য আর ক্ষমতার মানদন্ডে। অথচ সেই 'থাকা'টুকু তাদের সৌভাগ্য, আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া কল্যাণমাত্র, যার জবাবদিহিতাও হবে আখিরাতে, কঠিনভাবেই।

৪ আগ, ২০১৩

বাঁধভাঙ্গা পানির স্রোতের মতন শব্দগুলো

হঠাৎ বাঁধভাঙ্গা পানির স্রোতের মতন শব্দগুলো যেন
বুকের ভেতর থেকে প্রচন্ড বেগে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
ভোরের সূর্যের অস্ফূট আলোয় ভিজে যাওয়া ঢাকা শহরে
দালান-কোঠাগুলোর সারিতে এক ক্ষুদ্র কোণের গুমোট কক্ষে
আঙ্গুল চেপে গণনাযন্ত্রের পাতায় লিখছি একেকটি অক্ষর।
কোন বিশেষ কিছু বলতে নয়, স্রেফ হালকা হতে, নির্ভার হতে।

এই যে এই সময় চলে গেলো, তা আর কখনো ফিরে আসবে না।
আমার এই শব্দ, এই অনুভূতি, এই আবেগগুলো আর হুবহু রবে না।
বালুঘড়ি দেখেছিলাম, ঝরঝর করে ঝরার সময় কেমন অস্থির লাগত।
এইতো শেষ হয়ে গেলো, কে উলটে দেবে এরপর? শেষ দেখার এক তাড়না।
অথচ এই সময় আমার, এটাও শেষ হয়ে যাবে। জীবনটা বালুঘড়ির মতন
ঝরছে দ্রুতবেগে যেটুকু বাকি আছে। ঝরে নিঃশেষ হবো, মানুষ তো আমি!

যেখানে আমার শেষ, সেখানেই তাঁর শুরু। আমার সবটুকুই তার দয়া।
আমার চিন্তারা যেখানে অসহায়, দৃষ্টি যেখানে আটকে যায়, অজানাকে ভয়।
সেখানে তাকে খুঁজে পাই। ভালোবাসায় আশ্বস্ত করেন। জানিয়ে দেন পারব না।
এই না পারাতে নেই অসহায়তা, এই না পারাতেই মর্যাদা এই জন্মের।
যেন ফিরে ফিরে যাই তার কাছে। স্রষ্টা আর সৃষ্টির ব্যবধানকে উপলব্ধি করতে।

কেউ বলে কাহহার, তা সত্যি। আমি বুঝি রাহমান, বুঝি গাফুরুল ওয়াদুদ।
আমার হৃদয়ের এই শূণ্যতা, এই অনুভূতির এলোমেলো ঢেউগুলো, পবিত্র স্বপ্ন
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসের অস্থির আর্তিগুলো, চোখের অশ্রু, ভালোবাসা,
আমার অসহায় প্রতিটি ক্ষণ, আর অনুভূতিগুলোর সবই তো মানবের অপাঠ্য।
বাধ্য হয়ে আশ্লেষে, অশ্রুসিক্ত হয়ে ফিরে যাই তার কাছেই; যিনি রাহমান।

স্বপ্ন কারখানা
০৪ আগস্ট, ২০১৩

যদি জানতাম কবিতা লিখে কোন ব্যবধান কমানো যাবে

যদি জানতাম কবিতা লিখে কোন ব্যবধান কমানো যাবে,
যদি বুঝতাম একটা কবিতা কখনো হৃদয়ের জ্বালা জুড়াবে ,
হয়ত কবিতা লিখতে বসতাম আমি, অল্প ক'টা লাইনের।

কবিতাকে ফেলে রেখে এসেছি বহুদূর, ইচ্ছে করেই, সজ্ঞানে।
যেদিন বুঝেছি কাব্যবিলাস নিতান্তই সময়ক্ষেপন। এই বিশাল
পৃথিবীর মাঝে কোন পরিবর্তন হয়না কবিতায়, কোন বেলায়।

ক্ষুদ্র এই জীবনে নিন্তান্ত শব্দমোহে, শব্দচ্ছটায় আলোকিত হয়ে
হয়ত রুচবে না আমার অভাগা ভাইদের না খাওয়া একটা বেলা।
রক্তাক্ত ভাইয়ের যন্ত্রণার উপশম হবেনা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে।

ভোরের আলোর স্নিগ্ধতায় হৃদয়ের বিচ্ছিন্ন যন্ত্রণাগুলোকে বিন্যস্ত করতে
কীবোর্ড চেপে লিখছি কিছু কথা, যাকে আমি বলি আচমকা সৃষ্ট অকবিতা।
যে শব্দগুচ্ছের মাঝে কষ্ট, শূণ্যতা আর একরাশ সহমর্মিতা লুকিয়ে আছে।


স্বপ্ন কারখানা
০৪ আগস্ট, ২০১৩

যে বিষয় শুধুই উপলব্ধির

আল্লাহর রাহমাতে ছোটবেলা থেকে কুরআনকে নিয়ে দিনগুলো চলার অভ্যাস তৈরি হলেও নিজের ভুলে একটা সময় এসে এই সম্পর্কে ভাটা পড়ে গেলো। সমরেশ, শীর্ষেন্দু আর সুনীলের বইগুলোর মোটা মোটা ভলিউম প্রথম থেকে শেষ পাতা গিলতে শুরু করলাম, নতুন ভালোবাসায় পুরনো একটা মধুর সম্পর্ক হালকা হতে শুরু করলো।

'সেই বেলার কুরআন শেখায় আভিজাত্য কম ছিলো, কিন্তু গভীরতা আর আন্তরিকতা ছিলো অন্যমাত্রার' --এই বিষয়টা উপলব্ধি করলাম আজকে জুমু'আতে খতীব সাহেব কুরআন নিয়ে আলাপ করছিলেন যখন। ইখলাস জিনিসটার মাত্রা সত্যিই অন্যরকম। তখন যেই আয়াত পড়তাম, সেই একটা আয়াতের গভীরতা বুকের গহীনে দাগ কেটে থাকত। মনে আছে যখন পড়েছিলাম, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ভরসা করে, আল্লাহ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট হবেন' -- তখন সেই জীবনের প্রতিদিনের প্রতিমূহুর্ত আমি চেষ্টা করেছিলাম প্রাণপণে একটা অসম্ভবকে সম্ভব করতে। ব্যক্তিজীবনের সবচাইতে শক্তিশালী পার্থিব অর্জন আমার এই আয়াতের শক্তির উপরে ভিত্তি করেই ছিলো। এখন আমি হয়ত অনেক বেশি জানি সেই সময়ের তুলনায়, অথচ শক্তি কাজ করেনা তেমন। যা কমে গেছে তা হলো *ইখলাস*, sincerity.

২ আগ, ২০১৩

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আমাদের সমাজে আর দেশে-দেশে আলাদা

এক ছোটভাই সাজিদ ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, সে ফেসবুকে লিখেছে --
"দেশে দেখেছি মেয়েরা চিকন হওয়ার জন্য খাওয়া দাওয়া করেনা । রাতে ভাতের বদলে শসা খায়।স্লিম না হইলে বিয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা।
আমার এক রুমমেট মৌরিতানিয়ান । মামা কঠিন ট্যলেন্ট। ওদের দেশে নাকি মোটা মেয়ে ছাড়া বিয়েই হয়না। তাই মায়েরা ঠেসে ঠুসে খাওয়ায়।
তাই যারা আফ্রিকায় বিয়ে করতে চান তারা বেশি বেশি খান এবং প্রচুর মোটা হউন।"

কথাগুলোতে আনন্দের খোরাক আছে বৈকি!!

২২ জুল, ২০১৩

সমাজে অশ্লীলতা যখন ক্রমাগত ভয়াবহ হচ্ছে তখন তরুণরা কী করতে পারে?

এই চলমান সমাজে অশ্লীলতা ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর হচ্ছে। একজন কিশোর-তরুণের অশ্লীলতাবিহীন বেড়ে ওঠা সত্যিই কষ্টসাধ্য মনে হয়েছে আমার কাছে। একবার আমার একটা লেখা [১] একটা পেইজে শেয়ার হয়েছিলো, লেখাতে অবিবাহিত ভাই ও বোনদেরকে পবিত্র জীবনসঙ্গীর জন্য অপেক্ষার তাগিদ ছিলো আমাদের ইসলামের ইতিহাসে সেরা মানুষদের উদাহরণ টেনে। সেখানে কয়েকজন মানুষ *সত্যিকারের* অবিশ্বাস নিয়ে নির্দেশ করেছিলেন 'এমন (পবিত্র) ছেলে-মেয়ে এই সমাজে আছে নাকি?' তার প্রোফাইল ঘুরে, কমেন্ট পড়ে আমার বিশ্বাস হয়েছিলো সে সত্যিই কল্পনা করতে পারেনা এই সমাজে সত্যিকারের পবিত্র মনের মুসলিম এবং মুসলিমাহ আছে। আমার বড্ড কষ্ট হয়েছিলো সেই মানুষটার প্রতি। কত অশান্তই না সেই অন্তর! সুবহানাল্লাহ!

একজন তরুণ ভাইয়ের জন্য কিছু বিষয় আমার অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করবো। শুধুই ব্যক্তিগত মত। আমি ব্যক্তিগতভাবে টেলিভিশন/স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবনে অনেক আগেই বাদ দিতে পেরেছিলাম। তাই মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে টিভি দেখতে গিয়ে নির্লজ্জ কমার্শিয়ালগুলোর অত্যাচার দেখে ভীত হয়েছি। ক'দিন আগে দেখলাম -- বডি স্প্রের কারণে কাউন্টার দিয়ে এক ভারতীয় নায়ক দেখছে কতগুলো মেয়ে তার প্রতি শারীরিকভাবে 'অ্যাট্রাক্টেড' বোধ করছে। আরেকজনের সাথে তার এই বিষয়ে প্রতিযোগিতাও হচ্ছিলো!! নারীদেরকে পণ্য থেকে কামুক করে কতটা নীচে নামিয়ে এনেছে এমন কমার্শিয়ালে ভাবতেই ঘেন্না হয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন ধ্বংসের দিকে ধাবমান এই নোংরা সংস্কৃতি থেকে।

২১ জুল, ২০১৩

এই রমাদানে

এই রমাদানে আগের কয়েক বছরের মতন হুলুস্থূল প্ল্যান করিনি। অনেক ভিডিও দেখে, অনেক লেখা পড়ে, আলাপ আলোচনা ও অনেক পরিকল্পনা করে সবশেষে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকার বিষয়টাকে সজ্ঞানে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছি। আগের বছরগুলোতে রমাদান শেষে সবসময়ে মন আমার ভারাক্রান্ত হয়ে থাকত। আমার উপলব্ধি, কিছু সময় একান্তই নিজের করে নিতে হয়, তাই আমাদের সবারই ভিতরে যা আছে, সেটুকু নিয়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ রমাদান। গত জুমু'আতে খতীব সাহেব বলছিলেন, রমাদান হলো ক্ষমা লাভের সুযোগ, তাই বেশি বেশি ইস্তিগফার করার মাস। কথাটা বুকে দাগ কেটেছে।

রোজার আগে স্রেফ ঠিক করেছিলাম নিজের গোড়াটাকে শক্ত করা দরকার। তাই, সলাতের ব্যাপারে খুব যত্নবান হবো, আর কুরআনুল কারীম পড়বো একটানা। মুফতি তাকী উসমানীর (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন) তাফসীর সেটটা এতদিন ধরে বিছানা থেকে এক হাত দূরে টেবিলের উপরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। তাকিয়ে দেখলেও কেমন আলাদা অনুভূতি হত, নেড়েচেড়ে দেখতাম মাঝে মাঝে। বুক হু হু করে উঠতো অজ্ঞতার তুচ্ছতায়, এখনো করে। আমার আল্লাহ আমার জীবনে ঠিকভাবে জন্য এতকিছু জানিয়ে দিয়েছেন, আমি পড়েই দেখিনি। আখিরাতে কুরআন শাফা'আতকারী হবে তো এই অধমের? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সাহসও করিনা...

ফেসবুক কী এনে দিচ্ছে আমাদের জীবনে ভাবছি তো?

ব্যাপারটা এমন না যে ফেসবুকে রাশি-রাশি ভারা-ভারা স্কলার বসবাস করেন। বরং ব্যাপারটা পুরাই উলটা। একসময় আমরা ইসলাম শিখতাম কখনো স্কুলের ইসলাম শিক্ষা স্যার, এলাকার মসজিদের ইমামের কাছে ছোট-খাটো প্রশ্ন করে। ফিকহের বই ছিলো বাসায়, সেগুলো দেখে তাহারাত, সলাত, সিয়ামের মতন বিষয় শিখতাম। কুরআনুল কারীমের অনুবাদ, রিয়াদুস সলিহীন, বুখারী, মুসলিম শরীফ পড়া হত মন দিয়ে; শেখার আগ্রহে। আমাদের অনেকেরই এমনই হিসেব ছিলো।

এই তো কয়েক বছর আগে থেকে ফেসবুকে যেই জিনিস দেখে ভালো লাগত তা হলো কয়েকজন ভাই এবং আপুর লেখা যেখানে ইসলামের উপলব্ধি ছিলো। সেখান থেকে নিজের জায়গাগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োগ করার সময় সাহায্য পেতাম। কখন যেন এই জায়াগাটা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেলো। দু'চার বছর আবেগ ভিজিয়ে ইসলাম শেখা, অ্যাকাডেমিকভাবে ইসলামের স্পর্শ না নেওয়া মানুষগুলো সকাল বিকাল শ্লীল-অশ্লীল শব্দ দিয়ে পারস্পরিক আক্রমণ শুরু করে দিলো। এখন যেখানে সেখানে ফাতওয়া পাওয়া যায়। স্কলারদের তুলাধুনা করা হয়। অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তোলপাড়। ব্যক্তিজীবনে, নিজের মাঝেই ইসলাম ঠিকমতন প্রয়োগ না করলেও ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়ের উৎসধারা হতে আমাদের ভুল হয়না।

পুরুষ হয়ে নারীর পর্দা নিয়ে খুব চিন্তিত?

আমার যেইসব ভাইয়েরা নতুন করে ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন এবং  সত্যিকার অর্থেই আল্লাহকেই কেবল খুশী করতে চান , তাদের জন্য ক্ষুদ্র একটা অনুরোধ -- দয়া করে নারীর পর্দা নিয়ে অনলাইন অফলাইনে একটা শব্দও লেখার আগে নিশ্চিত করুন নিজের চোখের সংযম।

নারীরা কখনো কোথায় কীভাবে কী আবৃত করবে, কী পরবে, কতটুকু খোলা রাখবে -- সেইটা নিয়ে গবেষণাপত্র পাঠ করার আগে চিন্তা করুন কোথায়, কীভাবে, কখন আপনি গায়ের মাহরাম নারীদের এড়িয়ে, সরিয়ে, দূরে থেকে নিজেকে সামলাতে পারবেন। নারীর দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ করার অনুমুতি কিন্তু আপনার নেই, তাই নিজেকে আগে পাপরাশি থেকে রক্ষা করুন, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে হিফাজত করুন।

টেলিভিশনে প্রচুর কমার্শিয়াল, কম্পিউটারে হিন্দি-ইংরেজি মুভি দেখে উঠে ফেসবুকে বসে অনেক মানুষ পোশাকের দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা আর রঙ নিয়ে কথা বলতেই পারে, আল্লাহই ভালো জানেন তাদের চোখ গায়ের মাহরাম নারীর দিকে আটকে থাকে... নাকি থাকে না। এই রামাদান মাসের বরকতময় সময়কে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত চরিত্রকে উন্নত করার তাওফিক দান করুন।

১৬ জুল, ২০১৩

আগামীর ভ্রমণ পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও ঘরবাড়িরগুলোর আলাপ

মাঝে মাঝে কিছু মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাই। অনেক অনাড়ম্বর। খুব কাছের মানুষগুলো তাদের ব্যাপারে যে সাক্ষ্য দেয় তা হৃদয়স্পর্শী। শুনে মনে হয়, আল্লাহ বোধকরি তাকে জান্নাতবাসী করবেন। আবার, পরম আড়ম্বরে দেখি অনেকের মৃত্যু হয়। পত্রিকা, টেলিভিশন, টক-শো, ফিচার, স্মরণসভায় বক্তাদের মিলনায়তন কাঁপানো আলাপ। ব্যক্তিজীবনে তারা চরিত্রহীন এবং সাধারণ মানুষকে যথেষ্টই যন্ত্রণা দিয়েই দীর্ঘজীবন ধরে সবাইকে যন্ত্রণা দিয়ে তাদের বিদায় হয়েছে। তখনই অনুভব করি, আসলে আমাদের পরিচিতি, সম্পর্ক, খ্যাতি, আরাম-আয়েশ, বন্ধন, জাঁকজমক বিষয়গুলো খুবই ঠুনকো। এই পৃথিবীর কোন কিছু পাওয়ার আশা করে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াটাই বোকামি, মূর্খতা। যাবার বেলায় সবাই শূণ্যহাতে বিদায় নেয় -- এই উপলব্ধিটা এই আঙ্গিকে হলে বেশ খা খা করে বুকটা।

আমি তো দেখেছি প্রতিটি মানুষই একেকজন যোদ্ধা

আমি তো দেখেছি আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি মানুষই একেকজন যোদ্ধা। তাদের জীবনযুদ্ধগুলো একদম অন্যরকম। প্রত্যেকেরই পেয়েছি অনেক দীর্ঘসময় নিয়ে করার মতন গল্প। কারো সাথে কারো তেমন মিল পাইনা, প্রত্যেকের প্রেক্ষাপট, দৃষ্টিভঙ্গি, অনুভূতি আর জীবনদর্শনগুলো ছিলো স্বতন্ত্র। যাদের পেয়েছি আল্লাহর বান্দা হয়ে জীবন ধারণ করতে চাওয়া মানুষ, তাদের জীবনের পরীক্ষাগুলো যেন আরো বেড়ে যেতে দেখেছি! এসব বুঝেই কখনো কাউকে উপহাস করতে পারিনা, সাহস হয়না সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিতে। জানি, এক আল্লাহই মানুষের জীবন সহজ করে দেন। যারা দু'আ করে, যারা আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রাখে যে তিনিই সমস্ত ক্ষমতার মালিক, তিনিই সমস্যা দেন, আবার তিনিই তা সমাধান করে দেন -- তাদের দেখেছি জীবন নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কম, তাদের দেখেছি সমস্ত ভার আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিয়ে পরম শান্তিতে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে।

স্রেব্রেনিকা হত্যাকান্ড এবং একটি ১১ জুলাই

কিছু কথা কখনই খুব কাছের কাউকে ছাড়া আমি সচরাচর বলিনা। বলতে গেলে অনুভূতির অতিশায়ন হয়ে বদলে যায় কিনা এমন একটা চিন্তাও থাকে। যেমন, আজ যখন ইফতারের ঠিক আগে প্লেটটা ছোট ছোট কিছু সাদামাটা আইটেম দিয়ে পূরণ হয়ে গেলো, হঠাৎ মনে হলো আমারই এক ভাই কায়রোর পথে বসে ইফতার করছে কী দিয়ে?

মূহুর্তেই আরব সাগর পেরিয়ে আমার এই দু'চোখ যেন চলে যায় সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, মিশরের পথে প্রান্তরে। ওদিকে সোমালিয়ায়, কাছেই রোহিঙ্গা ভাই-বোনেরা কতই না যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন জীবন ধরে -- কেবল মুসলিম বলেই। আমার আফগানী, ইরাকী ভাই-বোনেরা আমার মতই রোজাদার, তাদের কি এত আয়োজন করে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে? কত মা সন্তানহারা হয়ে খেতে বসে আকুল হয়ে কাঁদছেন হয়ত সন্তানটির জন্য, দু'আ করছেন তাদের জন্য প্রাণভরে... রেখেছি কারো খবর? এমনকি আমি ত অফিস শেষে আজকে বাসায় ফেরার সময়ও কারো খবর নিয়েই ফিরিনি!

৩০ জুন, ২০১৩

মৃত্যুর চাইতে বড় দুঃসংবাদ পাপীদের জীবনে কি হতে পারে?

মনে কি পড়ে এই তো কিছুদিন আগেই কত মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমাদের অন্তরে কি দাগ কাটেনি একটুও? স্মরণ হয়নি আমাদের একদিন আমরাও তাদের মতন চলে যাবো? অথচ আমরা তাদের ভুলে গিয়ে আবার আগের মতন খিস্তি খেউড় আর হতাশার আলাপে ডুবে গেছি, আমাদের পাওয়া না পাওয়ার দিব্যি আলাপে আনন্দ খুঁজে নিয়েছি। যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণই ভালো আছি, এখনো সম্ভাবনা আছে সুন্দর কিছুর, অনন্তকালে মুক্তি পাওয়ার। মৃত্যুর চাইতে বড় কোন দুঃসংবাদ পাপীদের জীবনে কি আর হতে পারে? মৃত্যু ত মুমিনদের সুসংবাদ -- এই দুনিয়ার পরীক্ষা পেরিয়ে অনন্তকালের শান্তির...

 ৩০/০৬/২০১৩

আমাদের জীবনটা একটা পথচলা

আমাদের জীবনটা একটা পথ চলার মতন, এই পথে আমরা মুসাফির। আল্লাহ পৃথিবীতে আমাদের পাঠিয়েছেন, তারই কাছে ফিরে যাবো। যাওয়া সুনিশ্চিত, যেমনটাই হোক এই পথচলার দৈর্ঘ্য। খুব অদ্ভুত বিষয় হলো, মুসাফির যেমন ট্রেনে চড়ে যাবার সময় তার গন্তব্যে যেই ট্রেন যাবে সেটা ছাড়া অন্যগুলোতে চড়ে বসার কথা নয়, আমাদেরও তেমনি উচিত নয় গন্তব্যে নিয়ে যাবে যেই কাজ তা ছাড়া অন্য কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখা। জান্নাত ছিলো আমাদের আদি নিবাস, আদম আলাইহিস সালাম সেখান থেকেই এই পৃথিবীতে পা রেখেছিলেন। আমাদের ফিরে যাওয়া তখনই সার্থক হবে যেদিন জান্নাতে পা দিতে পারবো। এই কথাটা মনে রেখেই পথ চলা দরকার। যে কাজের, চিন্তার, কথার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই আমাকে জান্নাতের পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, তাতে লেগে থাকা বোকামিই... ভুল করলে, যাচ্ছেতাই আচরণ করলে সেগুলো আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে, গন্তব্যও হবে ভুল -- আমরা জাহান্নামে নিপতিত হবো। আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতি হিসেবে কবুল করে নিন।

একদিন ইমাম আহমাদকে তার ছেলে প্রশ্ন করলেন, “বাবা, আমরা কবে শান্তি পাবো?”
 তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তর দিলেন, “জান্নাতে আমাদের প্রথম পদচিহ্নটি রাখার মূহুর্তটি থেকেই।”

“তুমি আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার জীবনের সন্তান হয়ো না, নিশ্চয়ই সন্তান তার মা-কে অনুসরণ করে।” — ইমাম ইবনুল কায়্যিম“

আমি এমন মানুষদের (সাহাবা) সান্নিধ্য অর্জন করেছিলাম যারা তাদের কোন সৎকাজকে ছেড়ে দেয়া যতটা ভয় করতেন তা তোমরা তোমাদের পাপকাজের পরিণামকে যতটুকু ভয় কর তার চাইতেও বেশি।”— আল-হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

২৮ জুন, ২০১৩

ফেসবুক যখন ইগো প্রকাশের নিপুণ মাধ্যম

ফেসবুক একসময় এমন ছিলো না, জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা, দাম্পত্য জীবনের সুখ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার দাপট দেখানোর প্রতিযোগিতা, নিজের ব্যক্তিগত-পারিবারিক-রাজনৈতিক-সামাজিক সবকিছুই ফিল্টারবিহীনভাবে প্রকাশ করা এবং যাবতীয় ইগো প্রকাশের উন্নত এবং ঝামেলাহীন ড্রেইনেজ সিস্টেম এই ফেসবুক। ইগোকে প্রশ্রয় দান করলে তা সেই ব্যক্তিকেই খুবলে খুবলে খায়, সে আরো বন্দী হয়ে যায় নিজের নফসের কাছে। বাস্তব জগতের কারাগারে বন্দী থাকলে সেই শিক দেখা যায়, কিন্তু নিজের নফসের কাছে, হিংসা-পরশ্রীকাতরতা-ক্রোধ-অহংকার-দম্ভ আমাদেরকে যেই শিকের আড়ালে বন্দী করে রাখে তা চোখে দেখা যায় না, তা অদৃশ্যমান। কিন্তু সেগুলো বড়ই ভয়ঙ্কর। ফেসবুকের উসিলায় আমাদের এই ভয়াবহ কারাগারে বন্দী হওয়াটা সহজ থেকে সহজতর হয়ে গেছে।

আসলে নিজেকে মুক্ত করার এই প্রক্রিয়া নিজেদের ভিতর থেকেই আসে, নিজেকে খেয়াল করতে হয় গভীর করে, আগ্রহভরে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ সাহায্য করার নেই, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই দান করেন। আল্লাহ আমাদের জন্য কঠিন জিনিসও সহজ করে দিতে পারেন, সহজ জিনিসও কঠিন করে দিতে পারেন। আল্লাহ আমাদের জন্য কোন কিছু সহজ করে না দিলে তা কখনো সহজ হয় না। বান্দা চাইলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই দান করেন, এই চাওয়া আমাদের ভিতর থেকে আর্তি হয়ে আসা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনদেরকে ক্ষমা করুন, পরিচালিত সরল ও সঠিক পথে।

প্রখ্যাত তাবিঈ ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) খুব সুন্দর একটা কথা বলেছিলেনঃ

"বুদ্ধিমান ব্যক্তির জিহবা তার হৃদয়ের পেছনে থাকেঃ সে যখন কথা বলতে চায়, প্রথমে সে চিন্তা করে। যদি শব্দগুলো তার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে সে তা বলে। আর যদি কথাগুলো তার জন্য অকল্যাণকর হয় তাহলে সে চুপ থাকে।

একজন মূর্খ ব্যক্তির জিহবা তার হৃদয়ের সামনে থাকেঃ সে কথা বলার সময় খুব কমই চিন্তা করে এবং তার জন্য কল্যাণকর বা অকল্যাণকর যা-ই হোক সে বলে ফেলে।"


আমাদের প্রকৃত কল্যাণ ও অকল্যাণ নিয়ে হিসেব করা উচিত আখিরাতের কথা চিন্তা করে। এটা নিশ্চিত, বিষয়টা সহজ না এবং আমাদের জন্য চিন্তা করা ও কাজ করা সচরাচর বেশ কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু যেই আখিরাত সত্য এবং সেখানকার কল্যাণ ও অকল্যাণও সত্য -- তার জন্য একটুখানি প্রচেষ্টা যদি করি আজকে, আল্লাহ আমাদের রাহমাত দান করবেন এবং আমরা ধীরে ধীরে নিজেদের উন্নত করতে পারব। কোন দীর্ঘযাত্রার প্রথম পদক্ষেপটাই না নিলে কেউ কখনোই কোথাও পোঁছাতে পারতাম না। এই শুরু করাটাই আসল, 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' বলে আমাদের এই যাত্রাটি শুরু হয়ে যাক আজই, এক্ষুনি! ইনশা আল্লাহ...

* quote collected from the page of Imam Omar Suleiman

[২৮ জুন, ২০১৩]

আন্তরিক কাজকেই আমরা পছন্দ করি মুখভরা বুলি নয়

মানুষের মুখভরা প্রচুর বুলি, প্রচুর জ্ঞানগর্ভ কথার অলংকার, প্রচুর উপদেশবাণী মনে হয় খুব কমই আমরা গ্রহণ করি। আমরা সম্ভবত অনেক বেশি শিক্ষা গ্রহণ করি অন্যদের আন্তরিক কাজগুলো থেকে, তাদের জীবন দিয়ে করা বিভিন্ন আচরণ ও কাজ থেকে। জীবন তিন দশকের শেষভাগে এসেও আমি দেখলাম আজকে যখন একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসার অফিসে ঘুরতে এলেন, তখন আমি কীভাবে তাকে অভ্যর্থনা দিবো, কীভাবে কথা বলবো এটার একটা ধারণা পেতে আমি শেখার জন্য তাকাচ্ছিলাম একজন সিনিয়র কলিগের দিকে, যার অন্য অনেক আচরণের বেশ কিছু আমার পছন্দ ছিলো। অথচ উনি আমাকে কখনো উপদেশ দিতে আসেননি, শেখাতে আসেননি।আমি দেড় বছর ধরে তাকে দেখে নিজে থেকেই এই আস্থাটি রেখেছি তার উপরে।

একটু বেখেয়াল হলেই চেপে ধরে যেই ভুল

একটা ভুল আমার জীবনে একটু বেখেয়াল হলেই চেপে ধরে ঘায়েল করে ফেলে আমাকে,আমি বারবার পথচ্যুত হই। ব্যাপারটা হলো, জীবনের মূল উদ্দেশ্য কখনই পার্থিব কিছু অর্জন করা  নয়। কখনো পৃথিবীর সমস্ত সুখ এক করে পেলেও তা আমার চিরস্থায়ী হবে না, কখনও প্রাপ্তিগুলো আমাদের পরিপূর্ণ শান্তি দিবে না। এই অন্তর পৃথিবীতে কখনই পূর্ণ হবার নয়, এই পৃথিবীর মতই আমাদের সুখগুলোও ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবীর মাটিতে যেকোন রকমের প্রাপ্তিতে ভরপুর থাকা ঝকঝকে চকচকে মানুষগুলো কখনই আমাদের আলোচ্য বিষয় না। এই জীবনে আমাদের আসলে হারানোর কিছু নাই।

যে ছেলেটা মুসলিম হিসেবে বাঁচতে চায় তার জীবনটাই ভয়াবহ

যে ছেলেটা মুসলিম হিসেবে বাঁচতে চায় তার জীবনটাই ভয়াবহ। বন্ধুদের আড্ডায় কানকে সংযত রাখতে হয়, মুখে রাগ নিয়ে কথা বলা যায় না, বান্ধবীদের সাথে সবাই চিকেন খেতে গেলে সেখান থেকে কৌশলে সরে আসতে হয়, যত্রতত্র চকচকে বিলবোর্ড দেখে চোখ নামাতে হয়, বাসে-ট্রেনে চলতে গেলেও চোখ নামিয়ে সংযম করতে হয়। চারিদিকে ছাগু বলার লোকের অভাব নেই অবয়ব দেখে, শত্রুতা তো আছেই সবার। সবশেষে ঘরে ফিরতে হয়। প্রতিদিন-প্রতিমূহুর্তের এমন যুদ্ধযাত্রাগুলো সামলেই পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি করা। একসময় এই যুদ্ধেও তার ক্লান্ত লাগতে থাকে। ছাত্রজীবন পেরিয়ে বছরের পর বছর চাকুরি করে বেতনের স্বর্বস্ব দিয়ে বাবা-মায়ের সংসারে দিলেও এমন সন্তানরা তখনো 'কমবয়েসি' থাকে। এমন সন্তানরা যখন বিয়ে করতে যায় তখন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম পরিবারের লোকেরা অনেক অনেক টাকা খোঁজে, বাড়িঘর খোঁজে ঢাকা শহরে, শক্তপোক্ত আত্মীয় খোঁজে, তাদের মুখনিঃসৃত শব্দগুলো থাকে প্রখর, তীব্র ধারালো, নোংরা...

ফেসবুকে কল্যাণকর কথাতেও ডিসেনসিটাইজড হওয়া

আমার প্রথম ফেসবুক একাউন্ট যদি হিসেব করি, আমি তখন থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে একটানা ফেসবুকে ছিলাম/আছি। জীবনের কেন্দ্রে যেদিন থেকে সজ্ঞানে আল্লাহকে আনতে চেয়েছি, তখন থেকে ফেসবুকিং জিনিসটাতেও ভিন্নতা এসেছিলো, আসাই স্বাভাবিক। আমি শতাধিক মানুষকে চিনি যারা এমন করেই বদলেছেন।

ইদানিং আমার মনে হয় আমি সবচাইতে বেশি যে বিষয়টাতে ক্ষতিগ্রস্ত তা হলো -- 'ডিসেনসিটাইজেশন'... নাহ, আমি কোন নেগেটিভ বিষয়ে অনুভূতিহীন হয়ে যাবার কথা বলছি না। বলছি ভালো কথাতেই অবশ হয়ে যাওয়া।

৯ জুন, ২০১৩

ইউ টার্ন

আমি অসহায় এক বালক ছিলাম, কিশোর ছিলাম, তরুণ ছিলাম। শত-শত হাজার-হাজার বিষয় জানতে-শুনতে হয়েছে যা আমি চাইনি, জেনে-মনে রেখেও কখনো আনন্দবোধ করিনি তেমন। ভার্সিটির হলে থেকে বলিউড আর হলিউডের সর্বস্ব জানা হয়েছিলো চারদিকে শুনেই। শখ করে দশটা হিন্দি মুভিও দেখিনি জীবনে, আমি তবুও ওদের অনেক নায়ক-নায়িকার কার সাথে কার সম্পর্ক-বিয়ে তা ঠিকই জেনেছি। হয়ত কানে শুনে এখন পত্রিকায় পড়লে চোখে পড়ে। কোনদিন কোন গেমস খেলতে না বসলেও কয়টা বস পার হয়ে কম্পানি অফ হিরোস, কল অফ ডিউটি, কাউন্টার স্ট্রাইক, ফিফাতে কী কী ফিচার এসেছে তা আমি ঠিকই জেনেছিলাম। ক্লাসমেট-জুনিয়রদের বদৌলতে দেশের কোন ভার্সিটিতে মেয়ের সংখ্যা কেমন আনুপাতিক, তাদের কারা কেমন, কোন নায়িকার কয়টা বিয়ে, কার গার্লফ্রেন্ড কে, কে কার এক্স-গার্লফ্রেন্ড, কোথায় কবে কাকে কার সাথে দেখা গেছে... এরকম অপ্রয়োজনীয় তথ্যভান্ডারের মাঝে ডুবে থাকতাম।

৫ জুন, ২০১৩

শুধু তোমার কাছেই এই চাওয়া

হে আল্লাহ! আমি জানি আপনি আমাকে যতটা সুন্দর করে সৃষ্টি করেছিলেন, যতটা যত্ন ও ভালোবাসায় আমাকে অজস্র রাহমাতে পরিপূর্ণ করেছিলেন আমি ততই সবকিছুকে পায়ে ঠেলে নাফরমানিতে আর ভুলে ডুবে ছিলাম। নিজের অবস্থান নিজেই নিচ থেকে নিচে নামিয়েছি, অমর্যাদা করেছি নিজের, যুলুম করেছি নিজের উপরে। হে আল্লাহ, নিজের ভুলেই আপনার কাছ থেকে সরে গেছি দূর থেকে দূরে। হে আল্লাহ, যখন এই পৃথিবীর সব মানুষ আমার উপরে হতাশ হয়, ক্ষুব্ধ হয়, তখনো ঠিক ঐ মূহুর্তেই আমার তাওবা কবুল করে আমাকে ভালোবাসায় জড়িয়ে দিতে কেবল আপনিই থাকেন। কষ্টের সেই কঠিন সময়টাতে খুব ভালো করে বুঝি আপনি গাফুরুল ওয়াদুদ-- আপনি প্রেমময় ও ক্ষমাশীল। 

হে আল্লাহ! জীবনের ভুলগুলোর দিকে তাকিয়ে শত-শতবার উপলব্ধি করেছি আমি কতটা বোকা, অলস, একগুঁয়ে, দুর্বল চিত্তের, দুর্বল ঈমানের পাপী বান্দা। এই আত্মখেদ জেগে ওঠার সময় শয়তান আমাকে আরো দূরে ঠেলে দিতে চায় আপনার পথ থেকে। হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুল করেন। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। জীবনের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর জীবনকে আপনার সন্তুষ্টির জন্যই তৈরি করার জন্য তাওফিক দিন। 

হে আল্লাহ, আপনিই তো একমাত্র দাতা। আপনি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। আমরা দুর্বল, আমরা শুধু আপনার কাছেই হাত পেতে ভিক্ষা চাইছি। যেসব গুণাবলী অর্জন করলে আপনার আরো কাছে যেতে পাবো, আপনার ভালোবাসা পেতে পারব, সেগুলো অর্জন করার তাওফিক দিয়ে দিন। আপনার প্রিয় কাজগুলোকে ভালোবাসার তাওফিক দিয়ে দিন।হে রব্বুল আলামীন, অপর মুসলিম ভাইদের প্রতি ভালোবাসা আমাদের মাঝে তৈরি করে দিন, তাদের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে আমাদের অন্তরকে রক্ষা করার এবং অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার তাওফিক দান করুন। 

হে আল্লাহ, সৎপথের সন্ধান পাওয়ার পর গোমরাহীর পথে আর যেন কখনো ফিরে না যাই। হে আল-মুজিব, আমাদেরকে আপনার পথের উপরে দৃঢ় ও অবিচল থাকার তাওফিক দিন। হে গাফুরুর রাহীম, হে আর-রাযযাক, আমাদের সকল অভাব ও অসহায়ত্ব থেকে কেবলমাত্র আপনার কাছেই আশ্রয় চাইছি। হে আল জাব্বার, আল-মুতাকাব্বির, আল-কারীম, আমাদেরকে দয়া করুন। জান্নাতী হবার জন্য যেসব গুণাবলী প্রয়োজন আপনি আমাদেরকে দান করুন। হে আল-কারিম, আল-মান্নান, আপনি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই যে কিছু দিবে, আমরা শুধু আপনার কাছেই ভিক্ষা চাই। হে গাফুরুর রাহীম, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে জীবনকে কবুল করুন, আমাদের তাওবা কবুল করুন, আমাদের দু'আ কবুল করুন। হে আল্লাহ! এই জমীনের বুকে এই উম্মাহকে আপনি বিজয় দান করুন।

৩১ মে, ২০১৩

কেউ পারবে না আমার পাশে দাঁড়াতে

যখন জানি পৃথিবীর কেউ পারবে না এইসব সময়ে আমার পাশে দাঁড়াতে, আমাকে সাহায্য করতে, আমার কষ্টগুলোর ভাগ নিয়ে আমাকে পথ দেখাতে, তখন সেই মহিমান্বিত গ্রন্থখানি হাতে নিয়ে পাতা ওল্টাই অসহায়ের মতন, পিপাসার্ত আর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে -- সেই 'নূর' কুরআন যে এভাবে কথা বলে তা একদমই নতুন করেই উপলব্ধি করছি যেন! 'আল ফুরকান' -- সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী, জীবনের প্রতিটি কঠিনতম ধাপে তা নতুন করে শেখাচ্ছে আমাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা জগতে যা হয়, যা হবে, যা হবে -- এই সব বিষয়ই জানিয়ে রেখেছেন, কী করতে হবে তাও বলে দিয়েছেন। খুঁজে নিতে হবে সেখান থেকেই... আমাদের মহাপবিত্র রাহমানকে ছাড়া আর কাকে ভালোবাসব? আর কে আমাকে পথ দেখাতে পারবে? আর কে আমার অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করবে, আমার করণীয় বলে দিবে? কেউ না... সমস্ত ক্ষমতা কেবল তারই, আর কারো কোন ক্ষমতা নেই...

সেদিন পড়ছিলাম এইরকম কিছু কথা। হৃদয়কে শীতল করে দেয়... 

 
"যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। 

হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।"

---- [সূরা আল বাকারাহ, আয়াতঃ ২৮৪-২৮৫-২৮৬]

১১ মে, ২০১৩ 

৪ মে, ২০১৩

হৃদয়ের ক্ষত সারাবো কেমনে

মানব হৃদয়ের কিছু অব্যক্ত যন্ত্রণা থাকে, যেগুলো ছোট থেকে বড় হবার সময়ে মানুষ চোট খেতে খেতে ক্ষত করে ফেলে। শরীরের ক্ষতগুলো দেখা যায়, হৃদয়ের ক্ষত দেখা যায় না। সেই ক্ষতের উপরে আবার চোট পেলে যেই যন্ত্রণা মাত্রাছাড়া হয়ে যায়। কখনো সেই যন্ত্রণা আত্মসম্মানবোধে লাগায়, কখনো নিজের উপরে নিজেকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলে, কখনো মনে হয় পৃথিবীটাই নির্মম, কখনো আবার শুধু নিজেকেই কপালপোড়া অভাগা মনে হয়... মনে হতেই পারে, মানব মনের ধরণটাই অমন। কিন্তু আসলেই কি তাই? হয়ত নিজের ভুলের কারণেই যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়েছিল, হতে পারে দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু ঘটে গিয়েছিলো...

৩ মে, ২০১৩

ভিন্ন দ্যোতনাঃ কঠিন কাজ সহজ

ইদানিং সবকিছুতে একটা ভিন্ন দ্যোতনা খুঁজতে চেষ্টা করি, বা অন্য ভাষায় বলা যায়, খানিক চেষ্টা করে সবকিছুর মাঝে ভিন্ন একটা মাত্রা খুঁজে পাই, একই জিনিসটা অন্যরকম লাগে। আজকের মতন শত-শত দিন জুমু'আর সলাত শেষে দু'আ করেছি ইমামের সাথে। আজকের কয়েক মিনিটব্যাপী লম্বা দু'আতে একটা বাক্য কানে আটকে গেলো, "হে আল্লাহ! নেক কাজের প্রতি আমাদের ভালোবাসা তৈরি করে দিন।" বিশাল মসজিদের সামনের মুসল্লিদের মাথার উপরে দিয়ে দূর সিলিংটার দিকে আমার দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে এই কথাটার অনুভূতিটা বুকের এমাথা থেকে ওমাথায় জানান দিতে থাকলো। জীবনটাকে বদলে ক্রমাগত উন্নত করতে চেষ্টা করা এই আমার মতন করে অনেকেই জানেন একটুখানি খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা বা ভালো অভ্যাস তৈরি করা যেন তিনফুট বেড়ের গাছ কোপানোর প্রতিটি মূহুর্তের মতন কঠিন।

৩০ এপ্রি, ২০১৩

উপলব্ধি বা দর্শনঃ জীবন কি কেবল বিভ্রম?

কত যে কথা লিখতাম আগে খাতায়, ডায়েরিতে -- অনুভূতি-উপলব্ধি সবকিছুই!! পড়তে পড়তে একসময় থেকে বুঝতে শুরু করেছিলাম, যা বলতে চাই আমি তার প্রায় সবই অনেকে বলে গেছেন। আগের সব বাদ দিলাম, এইতো কয়েক বছর আগে বিপুল চিন্তাভাবনা করে ফেসবুকে একবার একটা অনুভূতি লেখার পরে এক ভাই কমেন্ট করলো "ভাই, প্লেটোর chariot allegory তে এইরকম বিষয়েই ব্যাখ্যা করেছে।" গিয়ে দেখি সত্যিই তাই! সেদিন প্রথম এই টাইপের আনন্দমিশ্রিত ধাক্কা খাই।

২৮ এপ্রি, ২০১৩

ফেসবুক জীবনঃ লাইক শেয়ার আর কমেন্টের ভালোলাগা

ফেসবুকে প্রথম সাইনআপ করেছিলাম ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তখন থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনে কম্পিউটার জড়িয়ে থাকায় খুব কমই বড় সময়ের দুরত্ব হয়েছিলো। জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে সাথে এই দীর্ঘ সময়ে আমার চিন্তা ও উপলব্ধির বিবর্তন হয়েছে, ফেসবুকও যার একটি অংশ। বিগত শাহবাগী-পরবর্তী সময় থেকে এখন অবধি উত্তাল ফেসবুক দেখে অনেক কথা মনে হচ্ছিল...... কেন এত সময় দেয়া এখানে? প্রচুর শেয়ার পাবার নিয়াতেই ছবি এডিট হয়? অনেক লাইক পাওয়ার আনন্দ উপভোগের আশায় স্ট্যাটাস দেয়া হয়? পেইজ প্রমোট করতে নোংরা নামের অজস্র পেইজ খুলে লাইক চেয়ে বেড়ানোতে কী লাভ? পেইজের অ্যাডমিন হওয়ায় কীসের এত অস্থিরতা? কী লাভ? ছবি আপলোড করে কেন এত লাইক ও কমেন্ট পেতে ইচ্ছা করে? কেউ আমাকে স্মার্ট, কিউট, সুইট বললে তাতে কীসের এত আনন্দ? সাহায্য চাওয়ার নামে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে মেরে দেয়া, সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যার প্রচার সর্বোচ্চ হলো যেন সর্বত্র। কথার সত্যতা যাচাই ছাড়াই ছড়াচ্ছে যা-তা।

সাভার ট্র্যাজেডির শত শত লাশ এবং একটি জুমু'আ

জুমু'আর সলাতে নিয়মিত হয়েছিলাম যতদূর মনে পড়ে সেই ক্লাস ওয়ান-টু থেকে, সাত বছর বয়সের সময়েই। খুবই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছাড়া কোনদিন মিস করেছি বলে মনে পড়েনা। তবে আজকের মতন ব্যতিক্রম দিন খুব বেশি ছিলো না। আজ সলাতের পরে একজন মাইয়্যেতের জানাজা পড়লাম। এরপর সম্মানিত ইমাম সাহেবের সাথে দু'আতে হাত তুলেছিলাম তিন-চারতলা বিশাল মসজিদে হাজার হাজার মুসল্লি একসাথে-- এরকম উচ্চস্বরে কান্নার শব্দ আমি জুমু'আর সময়ে শুনিনি আগে। সাভারে নিহত দ্বীনি ভাইবোনদের জন্য জান্নাতের দু'আ, অসুস্থদের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য দু'আ মহান আল্লাহর কাছে। দু'আর সময়ে সব মানুষের সাথেই আবেগ বাঁধ মানছিল না -- সবাই জানে এ কেমন দুর্যোগ চলছে। বিশাল বিশাল স্লাবের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাড়গোড় গুঁড়া হয়ে যাওয়া মানুষদের কথা মনে হচ্ছিলো।

২৪ এপ্রি, ২০১৩

যদি নিজেকে ফালতু মনে হয় এবং বদলে যেতে চান তাহলে আপনার জন্য

সকালে ভোরের আলো ফুটছিলো যখন, তখন স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলাম। খুব সম্ভব কলেজে পড়ি তখন, কোন স্যার হয়ত বলেছিলেন যা আমার মনে পড়ে এমন করে -- "জীবনকে এমন করে গড়বে যেন তুমি যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, তখন যেন এই অনুভূতিটা নিয়ে যেতে পারো যে এই পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করে রেখে গেলে।"   

১৯ এপ্রি, ২০১৩

কোন আড়ালে পালাবো বলো?

কৈশোরে আমার একটা শখ ছিলো, কোন ডায়েরি পেলে প্রতিটি পাতার নিচে লিখে রাখা বিভিন্ন লেখক ও দার্শনিকদের উদ্ধৃতিগুলো পড়তাম। উপদেশ পেতে আমার বড়ই ভালো লাগত সেই বয়সে-- বড় ভাই, স্যার, মসজিদের ইমাম সবার উপদেশ আমি গোগ্রাসে গিলতাম আর চিন্তাভাবনা করতাম, খুবই আনন্দ লাগত। সেই সময়ে পড়া একটা উক্তি আমার আজকে মনে পড়ছে, কে বলেছিলেন মনে নেই -- "অন্ধকারে তুমি কি সেটাই তোমার চরিত্র।" একই রকমের একটা কথা পড়েছিলাম একবার, "নির্জনতায় মানুষ ফেরেশতার চাইতে উত্তম নইলে শয়তানের চাইতে অধম।" এই কথাতেও চিন্তার খোরাক পেয়েছিলাম। আজকে হঠাৎ এই বাণী দু'টো মনে পড়ে যাওয়ায় ভাবছিলাম, আসলেই চিন্তাজাগানো কথা এগুলো। সবার সামনে আমরা অনেক সুন্দর ভালোমানুষের রূপ ধরে থাকতে পারি, সুন্দর কথা বলতেই পারি, হাসিমুখে তাদের সামনে বিনম্র ভালোমানুষের ভাব দেখাতে পারি। কিন্তু যখন আমি নির্জনতায় রুমে একা, তখন শয়তান এসে ওয়াসওয়াসা দেয়, মনের ভিতরে কুচিন্তা ও কুধারণাদের আগমন হয়। মাথায় হয়ত থাকে, কেউ তো আর দেখতে পাচ্ছে না, সমস্যা কী? সেরকম সময়ে অনেক ভালোমানুষের ভিতর থেকেও ভয়াবহ জন্তু-জানোয়ার বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু আসলে আমরা কি কখনো *আড়ালে* থাকতে পারি?

১৮ এপ্রি, ২০১৩

আল্লাহর উপরে আস্থা আমরা কেন রাখি? কীভাবে রাখি?

গভীর কষ্ট, যন্ত্রণা আর চাপের মাঝেও আমাদের সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার উপরেই আস্থা রাখা উচিত যিনি মুসা আলাইহিস সালামের সামনের লোহিত সাগরকে ভাগ করে পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন, যিনি ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে দগ্ধ করতে চাওয়া অগ্নিকুন্ডকে শান্তিময় শীতল করে দিয়েছিলেন, যিনি বদরের প্রান্তরের মানুষগুলোকে জয়ী করতে ফেরেশতাদের পাঠিয়েছিলেন, যিনি বৃদ্ধ বয়সে জাকারিয়া আলাইহিস সালামকে দান করেছিলেন ইয়াহইয়া (আ) এর মতন সন্তান, যিনি বৃদ্ধ ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে দান করেছিলেন ইসমাইল ও ইসহাক দু'জন নাবী (আলাইহিমুস সালাম)। আল্লাহর নির্দেশেই শিশু ইসমাইলের পায়ের আঘাতে তৈরি হয়েছিলো আমাদের বিষ্ময় ও রাহমাতপূর্ণ যমযম কূপ, খটখটে রৌদ্রে তৈরি করা নূহ আলাইহিস সালামের কিশতিকেও তিনিই ভাসিয়েছিলেন পাহাড় ডুবে যাওয়া পানির প্রবাহে।

আমাদের কাছে যা অসম্ভব, সেটা তার কাছে কোন ব্যাপারই না, কারণ তিনিই সৃষ্টিকর্তা। তিনি তাদেরকেই সাহায্য করেন যিনি তার উপরে বিশ্বাস রাখে, আস্থা রাখে। এই আস্থা কোন 'terms and conditions' দিয়ে তৈরি হওয়া না, এই আস্থা আমাদের পরম আস্থা। হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা, নির্ভরতা কেবল তার উপরে সঁপে দিয়েই আমরা নির্ভার হই। আমাদের মালিক আমাদেরকে যখন ইচ্ছা তখন দান করেন, আমাদের জীবনের ও অস্তিত্বের প্রতিটি জিনিসই তার দান। এই দান আরো বাড়বে, আমরা যতই শুকরিয়া করব, যতই পাগলের মতন চাইবো। আল্লাহ যখন দান করেন, কীভাবে দান করেন, কোথা থেকে আসে তা বোঝার যোগ্যতা মানুষের হয়না, সেই শক্তি ও ক্ষমতা ক্ষুদ্র মানুষের নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম শক্তিশালী, সর্বজ্ঞানী, ইবাদাতের যোগ্য একমাত্র সত্ত্বা। সমস্ত প্রশংসা কেবলই আল্লাহর যিনি রাহমান, যিনি রাহীম। আল্লাহ আমাদেরকে তার প্রতি সবসময়, প্রতিক্ষণে, প্রতিমূহুর্তে প্রশান্তচিত্তে কৃতজ্ঞ থাকার তাওফিক দিন।

[১৭ এপ্রিল, ২০১]

অনেক কষ্টের সময়েও যেন অন্তত এই কথাগুলো স্মরণে থাকে

খুব বেশি কিছু না। শত শত পাতার বই মুখস্তের বিষয় না, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শোনাও না, প্রিয়জনের হাতের স্পর্শে আশ্বস্ত হয়ে কিছু শিখতে যাওয়াও নয়। যখন যে কঠিন সময়ে সবকিছু ফেলে চলে যায়, যখন একদম অসহায় হয়ে যাই শত্রুতায়, বিপদে, কষ্টে, পরীক্ষায়; তখনো শুধু এই কথাটুকু হলেও যেন স্মরণে থাকে--

তিনি আমাকে ফেলে যাননি, যাবেন না। আমি যখনই তাকে স্মরণ করব, তিনিও করবেন। তিনি আমার সবচাইতে আপন, আমাকে তিনি ভালোবাসায় সিক্ত করে রেখেছেন বলেই এই নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আমাদের জীবন এখানেই শেষ নয়, এই নিঃশ্বাসের শেষে শুরু হবে অনন্তজীবন। সফলতা হবে সেই জীবনে। আমার এই ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্বও একটা রাহমাত কেননা একারণেই তাকে অনুভব করছি গভীর করে। আমার অশ্রুভেজা প্রার্থনা, আমার স্মরণ কখনো বিফলে যেতে পারেনা। এই চাওয়া, এই আর্তি তো সেই মহান সত্ত্বার কাছে, যার হাতে সকল ক্ষমতা। তিনি চাইলেই ধ্বসে যাবে পাহাড়-পর্বত, প্রাণ চলে যাবে জালিমের, অকল্পনীয় উপায়ে তিনি হয়ত আমার সামনে হাজির করবেন এমন জিনিস যা কেবল হৃদয়ের স্বপ্ন-কল্পনাই। যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, যিনি প্রবল প্রতাপশালী রাজাধিরাজ পবিত্র সত্ত্বা, যিনি জানেন আমার মনের গূঢ়তম চিন্তাটাও, তিনি আমাকে দেখছেন আমি কতটুকু তাকে অনুভব করি, আর কাছে কতটা ভিখিরি হয়ে চাইতে পারি, তার সন্তুষ্টি পেতে কতটা ত্যাগ আমি স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি। পুরষ্কারের বেলা তো কেবলই তার। যেদিন তিনি পুরষ্কার দিবেন সেদিন জালিম-অন্ধ ভোগবাদীরা সবাই অসহায় হয়ে থরথর করে কাঁপবে ভয়ে। সেদিন তিনি তার প্রিয় বান্দাদের নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করবেন চিরকালের জন্য। সেদিন কেবল তারই ক্ষমতা থাকবে, সবার সাময়িক জারিজুরি রহিত হবে তার আগেই। সেই মহান আল্লাহর জন্যই তো এই জীবন। এই কষ্ট, এই ত্যাগ, এই যন্ত্রণা, এই অশ্রুভেজা চোখ, এই আহত শরীর, এই আহত হৃদয়, এই সবর ---- সবই তো তোমার জন্য হে রাহমান, সবই তোমার জন্য হে গাফুরুল ওয়াদুদ। তোমার ভালোবাসায় আমাদের সিক্ত করো!! :'(

[১৭ এপ্রিল, ২০১৩]