৩০ নভে, ২০১৫

রুমী কবিতা (সপ্তদশ কিস্তি)

 

* * * * *
প্রিয় হৃদয়! কখনো ভেবো না তুমি অন্যদের চেয়ে উত্তম। অপরের দুঃখগুলো সহানূভুতির সাথে শোনো। তুমি যদি শান্তি চাও, খারাপ চিন্তাগুলোকে মনের মাঝে রেখো না, পরনিন্দা কোরো না এবং এমন কিছু শেখাতে যেয়ো না যা তুমি জানো না। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * 
আমার হৃদয় তো তোমার হাতে থাকা কলমের মতন
আমার সবকিছুই তোমার হাতে
আমাকে সুখী অথবা দুখী করে লিখতে পারো
তুমি আমার জন্য যা প্রকাশিত করো কেবল তা-ই আমি দেখি
আর যেমন করে থাকতে বলো, আমি তেমনটিই থাকি।
আমার সমস্ত অনুভূতিগুলো সেই রঙ ধারণ করে
যা তুমি রাঙ্গাতে চাও।
আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত
তুমি ছাড়া কেউ নয়।
দয়া করো, আমার ভবিষ্যতকে
আমার অতীতের চেয়ে সুন্দর করে দাও।

~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
তোমার হৃদয়ের গভীরে একটি প্রদীপ আছে, জ্বেলে দিতে তৈরি হও।
তোমার আত্মায় গহীন শূণ্যতা আছে, তাকে পূর্ণ করতে তৈরি হও।
তুমি তা অনুভব করতে পারছ, তাইনা?
~ রুমী

* * * * *
তোমার শব্দকে উঁচু করো, কন্ঠ চড়িয়ো না। কারণ, বৃষ্টিই ফুলকে প্রস্ফুটিত করে, বজ্রপাত নয়।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
আত্মাটা যখন ঘাসের ওপরে শুয়ে পড়ে,কথা বলার বিষয়ে পেতে গোটা পৃথিবীকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ মনে হয়। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
তোমার চোখের পাতা আমার হৃদয়ে যে কবিতা লিখবে, সে কবিতা কোন কবির কলম থেকে বের হবেনা কোনদিন। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
কিন্তু তুমি কি এমন কারো কথা ভাবতে পারো যে ধোঁয়াচ্ছন্ন অস্পষ্ট নয়? ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * **
বিদায় কেবল তাদের জন্য যারা তাদের কেবল চোখ দিয়ে ভালোবাসে। কেননা, যারা হৃদয় এবং আত্মা দিয়ে ভালোবাসে তাদের জন্য বিচ্ছেদ বলে কিছু নেই। ~জালালুদ্দিন রুমী

২৮ নভে, ২০১৫

নিজেদের 'বিশুদ্ধ' মুসলিম মনে করে সন্দেহ আর ঘৃণায় কেন ডুবে থাকা?

 

মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। অন্যেরা যখন তা ভুলে থাকে, তখন মুসলিমরাই সেই প্রতিনিধির দায়িত্বধারী। মজার ব্যাপার হলো, এই মুসলিমদের মধ্যে অল্প কিছুই সচেতন মুসলিম। এই সচেতনদের মাঝে অনেকেরই রয়েছে 'গ্রুপিং' মেন্টালিটি। নিজেদের 'বিশুদ্ধ' মনে করার বিভ্রম এবং অন্যদের 'অশুদ্ধ' মনে করে তাদের থেকে দূরে থাকার এক বিচিত্র বিশ্বাস ও সংস্কৃতি বেশিরভাগে 'গ্রুপের' লোকদের মাঝে বিরাজমান।

সংকীর্ণতার চর্চা করতে করতে নিজেদেরকে বিশাল এই পৃথিবী ও সৃষ্টিজগতের স্রষ্টার প্রতিনিধি থেকে সংকীর্ণমনা খুঁতখুঁতে নেগেটিভ মেন্টালিটির কিছু মানসিক প্রতিবন্ধীতে পরিণত করে ফেলেছি আমরা আমাদেরকেই। তাইতো, নিজেদের 'ইসলাম পালন' নিজেদেরও উপকার করে করেনা, অন্য মুসলিমদের, অন্য ধর্মের লোকদের উপকার তো দূরে থাক। অন্যদের বিশ্বাস, অন্যদের সাথে মেলামেশা যখন এতই অপছন্দ ও ঘৃণার, তখন তারা কেমন করে জানবে আল্লাহ এত সুন্দর একটা জীবনবিধান পৃথিবীতে পাঠিয়ে রেখেছেন। শেষমেষ, এসব বিশুদ্ধতাবাদী মুসলিমরা আত্মতুষ্টি পাওয়ার চেষ্টাতেই পৃথিবীর জীবনটা পার করে ফেলে। তাদের 'বিশুদ্ধ' ও সহীহ চিন্তাধারার অহং তাদের ভয়াবহ মানুষে পরিণত করে চলেছে। নতুন এই ভয়ংকর রোগ এখন বাংলাদেশের মাঝে ছড়িয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আবার, এই স্রোতে গা না ভাসিয়ে হৃদয়টাকে অনেক বড় করে চলা মানুষও কম নেই। হয়ত তাদের অনেক কটাক্ষ শুনতে হয়, তাদের অনেক বেশি জ্বালা ও যন্ত্রণা সইতে হয় সবখান থেকেই। মুসলিম নামের মানুষগুলোর কাছ থেকেও, অমুসলিমদের কাছ থেকেও। ইসলাম যে ভালোবাসার, শান্তির তা ভুলে যেতে বসেছি আমরা। ইসলাম কেবলমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই কঠোর এবং সেটাও সমাজে শান্তি আনয়নের জন্য। তাই বলে অপরের সাথে আচরণের কঠোরতা এবং ভালোবাসাহীনতার, খুঁতখুঁতানি ও সন্দেহের এই বৈপরীত্যময় চর্চা এসেছে কাদের হাত ধরে?

ভালোবাসা, দয়া, রাহমা এগুলো সবই আল্লাহর গুণবাচক ব্যাপার। ভালোবাসলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। আপনি ভুল মানুষকে বিশ্বাস করতে পারেন, বিশ্বাস করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস একটি সম্পূর্ণ পজিটিভ বিষয়। কেবলমাত্র সাহসী, সৎ লোকেরাই বিশ্বাস করতে পারে-- হোক তা যেমনই বিশ্বাস।

ঈমানে রোগ লেগে থাকা লোকেরা নিঃসংকোচে ভালোবাসতে পারে না, বিশ্বাস করতেও পারেনা। ঈমান আছে কিনা তা বুঝতে ভলিউমের পর ভলিউম বই ঘাঁটতে হয় না। এত কঠিন বিষয় আল্লাহ মানবজাতির প্রতি দান করেন নাই, তিনিই সমস্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মালিক। মুসলিমরা ভালোবাসতে পারে, অন্যের কষ্টকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে পারে, সহজেই মিশতে পারে, দয়া করতে পারে শত পৃষ্ঠার যুক্তিমার্কা আলোচনা ছাড়াই।

সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।

[০৭ অক্টোবর, ২০১৫]

২৭ নভে, ২০১৫

প্লুরালিজম কী?


[প্লুরালিজম এখন একটি বৈশ্বিক শব্দ। অনেকেই এই ধরনের চিন্তা ও আনুসঙ্গিক বিষয়কে বর্তমান সময়ের উত্তাল বিশ্বে শান্তি আনয়নে, হিংসা-জিঘাংসা নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন। এই লেখাটি প্লুরালিজম ডট অর্গ ওয়েবসাইট থেকে নেয়া প্লুরালিজমের ইন্ট্রুডাকশন সেকশনের ভাবানুবাদ]

প্লুরালিজমের আইডিয়াটা মূলত প্রথম এসেছিলো ১৯৯০ সালের দিকে হার্ভার্ড কলেজের প্রফেসর তার স্টুডেন্টদের নিয়ে মাল্টিপল রিলিজিয়ন নিয়ে কাজ করার সময়। ১৯৯৭ সালে পর এইটা একটা রূপ পায় আমেরিকাতে। বিগত কয়েক বছর ধরে এইটা থিওলজিস্টদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

১) প্লুরালিজম শুনতে হয়ত মনোলিজম টাইপের শব্দের বিপরীত শোনায়। শাব্দিক অর্থটা এমন হলেও, আসলে এটা কেবল ধর্মীয় চেতনার বৈচিত্র্যকে বুঝায় না। এই টার্মিনোলজিটা সময়ে প্রয়োজনেই এসেছে। মূলত প্রতিটি ধর্মীয় চেতনার গোষ্ঠির মাঝে নিজ নিজ চিন্তাধারার ব্যাপারে প্রকটতা কাজ করে। কেবলমাত্র নিজেদের নিয়েই থাকার ফলে কোন বৈচিত্র্যকেই তারা মেনে নেয় না, আর অন্য চেতনার মানুষদের সাথে কোন কথাবার্তাও হয়না। তাই, প্লুরালিজম কেবল বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করাই না, বরং আগ্রহী হয়ে এগিয়ে গিয়ে অন্য ধর্ম চেতনা আর বিশ্বাসকে জানতে চাওয়ার মাধ্যমে চলমান অস্থিরতা আর গোঁড়ামির সংকট কমানোর একটা আইডিয়া প্লুরালিজম।

২) প্রতিটা ধর্মবিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন চেতনার প্রতিফলন হলেও, তাদের মাঝে কিছু মূল সাদৃশ্য আছে। তাই, প্লুরালিজমের আরেক নাম হলো এই বিশ্বাসগুলোর মাঝে যেসব মিল আছে -- তাদের খুঁজে বের করা। সাধারণত সবাই আধা-সত্য জিনিসের উপরে বিশ্বাস করে বসে থাকে, অজ্ঞানতার কারণে কেবল অন্য ধর্মের প্রতি বিরূপ হতে থাকে। এই সংহতি বা সহ্য ক্ষমতাকে বাড়ানো সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষাপটে খুবই দরকারি। তাই ধর্মগুলোর নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসসমূহের জ্ঞানের শেয়ারিং এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

৩) যদিও ধর্ম থেকে ধর্ম আলাদা বিশ্বাসের উপরে দাঁড়ানো, তবু এখানে সাদৃশ্যগুলোর উপরে ভিত্তি করে দেখা যায় যে নিজেদের চাওয়াগুলো এক পর্যায়ে একই থাকে। অনেক বেশি পার্থক্য সত্বেও এই সাদৃশ্যের চেতনাকে লালন করে পরস্পর সম্পর্ক উন্নয়নটা প্লুরালিজমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৪) প্লুরালিজম মূলত বিভিন্ন ধর্মের চেতনার মানুষদের মাঝে কথাবার্তা ও ডায়লোগকে বুঝায়। অর্থাৎ, কেবলমাত্র নিজের ধর্মকে নিয়ে জেনে বসে থাকা নয়, বরং পারস্পরিক জ্ঞান শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যের বিশ্বাসকে গ্রহণ করাই না, বরং নিজেদের উদ্যোগে তাদের সাথে মিলগুলো খুঁজে প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পথ চলা হলো প্লুরালিজম।

রেফারেন্স:

# ওয়েবসাইট - http://pluralism.org/pages/pluralism/what_is_pluralism
[ইউটিউব ভিডিও] -  www.youtube.com/watch?v=XgW3vP7p3no
[বই] Quest for Meaning - Developing the philosophy of Pluralism : Tariq Ramadan

২৬ নভে, ২০১৫

[অনুবাদ] পাওলো কোয়েলহো # ১

 

* * * * * *
পৃথিবী আপনার বক্তব্য আর মতামত দিয়ে কোনদিন বদলাবে না। পৃথিবী বদলায় আপনার কাজ দিয়ে যে দৃষ্টান্ত আপনি তৈরি করেন তা দিয়ে।~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
জীবনকে হয় দীর্ঘ নয়ত সংক্ষিপ্ত বলে মনে হয় যা নির্ভর করে আপনি জীবনে কেমন করে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন তার উপরে।~ পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
পৃথিবীর কোন কিছুই পুরোপুরি ভুল নয়। এমনকি পড়ে থাকা নষ্ট ঘড়িটাও দিনে দু'বার সঠিক সময় দেয়। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
পেছনের দিনে কেউ যেতে পারে না, কিন্তু সবাই সামনে এগিয়ে যেতে পারে। তাই আগামীকাল যখন সূর্য উঠবে তখন নিজেকে আপনার বলতে হবে, আজকের দিনটিকে আমি আমার জীবনের প্রথম দিন হিসেবে মনে করবো।~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
সবাইকে দেখলে যেন মনে হয় অন্যদের কেমন করে জীবন যাপন করা উচিত সেই সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা আছে, কিন্তু কারোই তো তার নিজের জীবন-যাপন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই। ~পাওলো কোয়েলহো [দি-আলকেমিস্ট] 

* * * * * *
আমরা যখন ভালোবাসি, তখন চেষ্টা করি নিজেকে আরো উন্নত করার। যখন নিজেকে উন্নত করার সাধনা করি, তখন আমাদের চারপাশের সবকিছুও উন্নত হয়ে যায়।  ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
নিজের ভেতরের শিশুটির হাত চেপে ধরুন কেননা শিশুদের কোন অসম্ভব কাজ করতেই আটকায় না। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
কোন কিছু করতে দ্বিধা হলে তা করে ফেলুন। আপনি সবসময় পরে আফসোস করতে পারবেন। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
আপনার সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু যেন আপনার দুই কানের মমধ্যবর্তী জায়গায় বসবাস না করে তা নিশ্চিত করুন।~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে বড় উত্তর। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
আপনি যখন 'বিদায়' জানানোর মতন সাহসী হবেন, দেখবেন জীবন আপনাকে নতুন করে 'স্বাগত' জানিয়ে পুরষ্কার দেবে। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
"স্বপ্নকে সত্য হওয়াকে অসম্ভব করে ফেলার পেছনে যে একমাত্র কারণটি কাজ করে তা হলো ব্যর্থতার ভয়।"~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
অপেক্ষা করা কষ্টকর, ভুলে যাওয়া কষ্টকর। কিন্তু ঠিক কী করতে হবে তা না জানা হলো সবচেয়ে বেশি কষ্টকর ভোগান্তি। ~পাওলো কোয়েলহো

মানুষ হিসেবে ভুল করার অধিকার আপনার আছে



মানুষ হিসেবে ভুল করার অধিকার আপনার আছে। আপনি প্রতিদিনই ভুল করবেন, সেগুলো থেকে উত্তরণই আপনার প্রতিদিনের সফলতা। আপনার ভুলকে পুঁজি করে কেউ আহত করলে, আঘাত দিলেই কিন্তু আপনি ভেংগে পড়বেন না। আপনাকে সম্পূর্ণ ভুল মানুষ হিসেবে কেউ দাবী করলে তাতে কষ্ট পাবেন না। কেননা, আপনি এই মানুষটা একদিনে হননি।

আপনার গোটা জীবনের প্রতিটি দিনের ছোট ছোট সৌন্দর্য মিলেই এই আপনি। আল্লাহর পৃথিবী একদিনে উলটে যায় না। কারো কথায়, আচরণে আহত হবেন না। শক্ত হোন, নিজের কাছে সততা রাখুন। আল্লাহ ঠিক জানেন আপনার অন্তরের সৌন্দর্য, অন্যদের প্রতি আপনার ভালোবাসা, শুভকামনা আর দোয়া-- আপনি সবকিছুর বিনিময় অবশ্যই পাবেন। আপনার সংগোপনে করা সুন্দর চিন্তাগুলোর প্রতিবিম্ব আপনি খুঁজে পাবেন অন্য মানুষের আচরণে, কথায়।

আল্লাহর পৃথিবীটা অনন্য সুন্দর। এখানে সবকিছু মিলেই সবকিছু। অল্পতেই আশাহত হবেন না। :)

[১৩ নভেম্বর, ২০১৫]

১৭ নভে, ২০১৫

আপনি কি নিজের ভেতরের জিঞ্জিরগুলো চুরমার করতে পেরেছেন?

 

আচ্ছা, আপনি কি কখনো নিজের ভেতরের সমস্ত জিঞ্জিরগুলো ভেঙ্গে চুরমার করতে পেরেছেন? আপনি কি সমস্ত খারাপলাগা, কষ্ট, ক্লেদ, ঘৃণা, হিংসা, অপ্রাপ্তির হিসেব, অস্বস্তি, অশান্তিকে ভেঙ্গে নিজেকে ফুরফুরে হাসি উপহার দিতে পেরেছেন? পেরেছেন নিজেকে ভালোবাসতে? নিজেকে যে ভালোবাসতে পারে না, সে অন্যদেরকেও পারে না। যে নিজের একাকীত্বকে সহ্য করতে পারেনা, সে অন্যের সান্নিধ্যেও শান্তি পায় না। যে নিজের কারাগারে নিজে বন্দী থাকে, সে অপর কারো সান্নিধ্যে আরো বেশি বন্দীত্ব অনুভব করে।

খেয়াল রাখুন যেন নিজের চারপাশের শেকলগুলো আপনাকে বেঁধে না রাখে, যেন অতীতের মতন গ্লানিময় না হয় আগামীর দিনগুলো। হাসুন মন খুলে, বৃষ্টিকে উপভোগ করুন আনন্দে। আপনার মতন জীবন তো পৃথিবীতে কোটি-কোটি মানুষ এখনো উপভোগ করছে-- সাগ্রহে কিংবা বাধ্য হয়ে। আপনি যা পাচ্ছেন, সে তো আল্লাহর একান্ত দান। তিনি যা দিচ্ছেন, তা আপনার জন্যই নির্ধারিত। তিনি যা থেকে আপনাকে বঞ্চিত করছেন, তা আপনি কিছুতেই পেতেন না। এই বর্তমানের মূহুর্তটুকু উপভোগ করুন। প্রাণের, অনুভূতির, উপলব্ধির এই মহামূল্যবান সময়ের জন্য কৃতজ্ঞতা অনুভব করুন। আপনার চারপাশেই অনেক মানুষ চিন্তা ও উপলব্ধির সময় কিংবা সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। কীসের জ্বালা আপনাকে ভারাক্রান্ত করছে বলুন তো?

ভেবে দেখুন, এই মূহুর্তটির মতন মূল্যবান কিন্তু কিছু আপনার জীবনে নেই। এই এক্ষুনি বুকের মাঝে আনন্দের ঢেউ খেলাতে পারবেন কি? না পারলে চিন্তিত হয়ে দেখুন তো, কোন নষ্ট অনুভূতির বাঁধ আপনার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার স্রোতকে আটকে দিচ্ছে? সমস্ত শান্তি ও ভালোবাসার ভান্ডারের চাবি তো আমাদের হৃদয়ের গহীনেই, কেন তবু আমরা দুঃখিত, বিষণ্ণ, অশান্ত?

[৬ অক্টোবর, ২০১৫]

১৬ নভে, ২০১৫

আমরা যাকে ভালোবাসি, আসলেই কি বাসি?

 




আমরা যাকে ভালোবাসি, আসলেই কি বাসি? কেমন করে বুঝি সেটা? আমরা যা পছন্দ করি, আসলেই কি করি? নাকি অন্যেরা যা ভালোবাসায়, পছন্দ করায়, তা আমরা অবচেতনভাবে পছন্দ করি, ভালোবাসি, উত্তম মনে করি? আমরা কতটুকু সময় নিজের চিন্তা নিজে করি? লোকের বলা ছাঁচেই আমরা বেশিরভাগ চিন্তা করি, তাইনা? অথচ আমরা কেউ অন্য কারো মতন না। আমাদের জীবনগুলো পরস্পরের চেয়ে একদম আলাদা।

আমরা বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের চিন্তার কারাগারে বন্দী থাকি। চারপাশের মানুষগুলো আমাদের বন্দী করতে চায় তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ আরোপ করে সৃষ্ট যে কারাগার তার মাঝে। আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন অবারিত পৃথিবী। পৃথিবীতে খুব অল্প বিষয় নিষিদ্ধ। পৃথিবী আল্লাহর নিয়ামতে পরিপূর্ণ। উপভোগের জন্য পাপহীন বিনোদনে পৃথিবী ভরপুর।

আচ্ছা, ক'জন আমরা ঘৃণাহীন, হিংসাহীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি? পত্রিকা, চ্যানেলের খবরে, অপদার্থ বন্ধু/আত্মীয়র মুখে, ফেসবুকের পন্ডিতন্মন্য মানুষদের সমালোচনামুখর পোস্টে আমরা শুধু ঘৃণা, অবিশ্বাস, সন্দেহ, অশান্তি, পরনিন্দা, অপবাদ, মিথ্যায় ডুবে থাকি... শান্তির ঘুম কেমন করে আসবে জঞ্জালভরা হৃদয়ে, অতৃপ্ত ও অসুস্থ চোখে?

কেন লোকের গীবত-পরনিন্দা থেকে দূরে যাইনা? কেন যাবতীয় নেগেটিভিটি থেকে সরে আসিনা? কেন সবাইকে ভালোবাসতে পারিনা? কেন লোকের উত্তম গুণাবলী নিয়েই আলাপ করিনা?

সমস্ত রং যেখানে থাকে, সেটি হয় কালো। যেখানে কোন রং থাকে না, তার রং সাদা। হৃদয় যখন সমস্ত ক্লেদ ও পংকিলতামুক্ত হয়-- সেটি শুভ্র হৃদয়। সেটিই প্রশান্ত আত্মা।

নিজেদের শত্রু যেন নিজেরাই না হই কখনো। আমাদের আত্মা যেন হয় সদাকৃতজ্ঞ, স্নিগ্ধ, ভালোবাসায় ভরপুর প্রশান্ত আত্মা।

[২৯ আগস্ট, ২০১৫]

১৩ নভে, ২০১৫

রুমী কবিতা (ষোড়শ কিস্তি)


 

* * * * * * *
তোমার জীবনটা তাকে সঁপে দাও যিনি ইতোমধ্যেই তোমার সমস্ত শ্বাস-প্রশ্বাস এবংমূহুর্তগুলোর মালিক। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
ভালোবাসার দৃষ্টি হলো স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
আমার গহীন ভেতরে কে আছে তা খুঁজে দেখতে আমি নিজেকে খুঁড়ে চলি। কিন্তু, যতই গভীরে খুঁড়তে থাকি, ততই আমি নিজের চিহ্নটুকু হারিয়ে ফেলতে থাকি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
আমার মুখ বন্ধ রেখে আমি তোমার সাথে আরো শত উপায়ে কথা বলেছি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
কারো আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চাইলে তুমি আগে তোমার বাহু দু'টি প্রসারিত করো।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
ভালোবাসার সফরে বেরিয়ে পড়ো। সে তো তোমার কাছ থেকে শুরু হয়ে তোমাতেই এসে শেষ হয়।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
হৃদয়ের একটা নিজস্ব ভাষা আছে। সে কথা বলার করার হাজারটি উপায় জানে। ~জালালুদ্দিন রুমী

১২ নভে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪১

 

(৪১৪)
​কেবলমাত্র সম্মানিত মানুষরাই অন্যদের সম্মান দিতে জানেন। যারা সম্মান দিতে জানেনা, তারা মূলতঃ নিজেরাই সম্মানের যোগ্য হয় না।

(৪১৫)
যখনই শুঁয়াপোকা ভেবেছিলো তার পৃথিবীটা একদম শেষ হয়ে গেলো -- তখনই সে উড়তে শুরু করেছিলো!

(৪১৬)
মানুষের একটি স্বভাব হ​লো, পথ হারিয়ে ফেললে আরও দ্রুত হাঁটা...

(৪১৭)
জীবনে কারো ব্যাপারে অভিযোগ রাখবেন না। জীবনে ভালো মানুষরা আপনাকে দিবে সুখ, খারাপ মানুষেরা দেবে অভিজ্ঞতা। খুব জঘন্য মানুষে​​রা আপনাকে দেবে শিক্ষা আর খুব চমতকার মানুষেরা আপনাকে দিবে স্মৃতি। [অনূদিত]

(৪১৮)
আচ্ছা ঠিকাছে, আপনি যে কোন মানুষকে অপছন্দ করতেই পারেন। এমনকি কোন কারণ ছাড়াই কাউকে অপছন্দ করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে আপনি কাউকে অসম্মানিত, অপদস্থ, অপমানিত করতে পারেন না। [স্পিরিট সাইন্স ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত]

(৪১৯)
যারা আবেগের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তারা সুখ পায় না। যারা আবেগকে চিনে নিয়ে তাকে জয় করে, তারা আবেগ থেকে উদ্ভুত আনন্দও পায়, বিপদেও পড়ে না। আবেগ এক ধরণের ফাঁদ, সেই ফাঁদে আবেগস্বর্বস্বরা নিয়মিত ভূপাতিত হয়।

(৪২০)
আসুন আমরা অনেক উদারতা নিয়ে সেই মানুষগুলোকে ক্ষমা করে দেই যারা আমাদের ভালোবাসতে পারেনি। ~পাবলো নেরুদা

(৪২১)
হাসপাতালে ঈদের ছুটি বলে তেমন কিছু নেই। রোগীরা এখানে আসে ত্রস্তব্যস্ত হয়ে, জীবনের প্রয়োজনে। জীবনকে ধারণ করতে চাওয়ার কী সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা এই রোগে কাতর মানুষগুলোর! আমাদের জীবনটা কতই না ঠুনকো! কী অসহায় আমরা! হাসপাতালে আসার কারণটি তৈরি হবার এক মিনিট আগেও মানুষগুলো বুঝতে পারে না তাকে পড়ে থাকতে হবে বিছানায়। শক্তপোক্ত আমরা বিছানায় পড়লে টের পাই, অসমর্থ মানুষগুলোকে জগতে কেউ পাত্তা দেয় না। 'সারভাইফাল ফর দা ফিটেস্ট' হলো এই জগতের মূলনীতি। দুর্বলদের পদে পদে জ্বালা!

কত কষ্ট আর অসহায়ত্ব! হায় দুনিয়ার জীবন! তবু সবার বাঁচতে ইচ্ছে করে। শেষ প্রান্তরে গিয়েও হয়ত আরেকবার রোদভাঙ্গা সকাল দেখতে ইচ্ছে হয়, ইচ্ছে হয় ডানা মেলা গাংচিল দেখতে, ইচ্ছে হয় রাতের আকাশের স্নিগ্ধ জোছনা দেখতে সমুদ্রপাড়ে বসে! হয়ত মৃত্যুর দরজার ওপারের নিদারুণ রহস্যের ভয় তটস্থ রাখে বলেই যেতে ইচ্ছে হয়না। তবু যেতে হবে। রোগে ভুগতে থাকা মানুষগুলোকে এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। ইশশ! কত কষ্ট মানুষের জীবনে! তবু আমাদের একেকটা বুকের মাঝে কতই না নির্মমতা!

(৪২২)
হে আল্লাহ, নিরস্ত্র গাজাবাসীদেরকে চারপাশ থেকে পৃথিবীর অন্যতম সর্বোচ্চ সামরিক শক্তির ইহুদিবাদী ইসরায়েল যেভাবে হত্যা করছে, আপনি এই মজলুম মুসলিম ফিলিস্তিনিদের একমাত্র অভিভাবক। হে আল্লাহ, সিরিয়াবাসীদেরকে যেভাবে নানান দলের অস্ত্রধারীরা মিলে হত্যা করছে সেই ফিতানের মাঝেও একমাত্র আপনিই অভিভাবক। হে আল্লাহ, মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হবার তাওফিক দিন। হে আল্লাহ, ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দিন, কাফিরদের ধ্বংস করে দিন, তাদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিন, তাদের সবদিক থেকে কাবু করে দিন। নিশ্চয়ই সমস্ত ক্ষমতা কেবলই আপনার। আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। [১১ অক্টোবর, ২০১৫]

৯ নভে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪০

 

(৪০৮)
একটা পর্বতের চূড়ায় ওঠার অনেকগুলো পথ থাকে। ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেও হয়ত অনেকেই সেই একই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

আমরা যা নিয়ে চিন্তা করি তা নিয়ে অনেকে অনেকভাবে চিন্তা করতে পারে। আমরা যা দেখি, তাকে অনেকে অনেক ভঙ্গিতে, অনেক দৃষ্টিকোণে, অনেক ভিন্ন কৌণিক অবস্থান থেকে দেখতে পারে। তারা আমার মতন নয় বলে তারা ভুল নয়। তারা তাদের মতন, আমরা আমাদের মতন।

যারা কম জানে ও কম বুঝে তাদের অতি-আত্মবিশ্বাসের কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অজ্ঞতা।


(৪০৯)
অনেক সময় আমাদের সংকট হয় ভাষার। একজন হয়ত যে কথা বলে, আরেকজন একই কথা অন্যভাবে বলে। কিন্তু তারা পরস্পরকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, ভুল বুঝে, শত্রুতাও হয়।

একবার তিন ব্যক্তি একসাথে হেঁটে আসছিলো। একজন ছিলো আরব, আরেকজন পার্সিয়ান এবং অপরজন ইতালিয়ান। তারা পথে একটি দিরহাম পড়ে থাকতে দেখলো। তিনজনেই দিরহামটির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো তা আয়ত্ব করার জন্য।

আরবটি বললো, এই পয়সা দিয়ে আমরা ইনাব কিনবো।
পার্সিয়ান লোকটি বললো, এই দিরহাম দিয়ে আমরা আঙ্গুর কিনবো।
ইতালিয়ান বললো, এই দিরহাম দিয়ে আমরা ভেনেটা কিনবো।

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী এই ঘটনার ব্যাপারে বলেন, তারা সবাই আসলে একই কথা বলছিলো। তাদের দরকার ছিলো একজন অনুবাদকের।

[শাইখ হামজা ইউসুফের লেকচারে শোনা ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখা]

(৪১০)
আপনি তো সেটাই বিশ্বাস করেন যা আপনি বিশ্বাস করতে পছন্দ করেন। ~ জনৈক

(৪১১)
যারা আপনাকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে তাদের কাছে আপনার কোন করে ফেলা কাজের জন্য ব্যাখ্যা দিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। যাদের কাছে আপনার কৃত কোন কাজের ব্যাখ্যা দিতে যেতে হয়, তারা আপনাকে কখনো বিশ্বাসও করবে না, ভালোবাসবেও না। [সংগৃহীত ও অনূদিত]

(৪১২)
সে-ই কেবল ভুল করেনা যে কোনদিন কোন কিছু করার চেষ্টা করেনা।

(৪১৩)
​ "আমি কি একটা পতাকা উত্তোলন করাকে আমাদের সমস্যার সমাধান বলে মনে করি? উত্তর হলো, না। পতাকা আমাদের অর্থ দেবে না, কাজের সুযোগের বন্দোবস্ত করবে না, পতাকা আমাদের অধিকার এনে দেবে না, পতাকা বন্ধ করবে না আমাদের উপরে বোমাবর্ষণ।" ---- উম্মু আবদুল্লাহ, গাজার নুসারিয়েত উদ্বাস্তু শিবিরের ৪৯ বছর বয়সী বৃদ্ধা আল-জাজিরার সাথে একটি সাক্ষাতকারে এই কথা বলেন।

৮ নভে, ২০১৫

একগুচ্ছ অনুবাদ [৭]


পাবলো নেরুদা  /কার্ল জাং / কাহলিল জিবরান

* * * *
কোন একদিন কোন একখানে নিশ্চিতভাবেই আপনি আপনার নিজেকে খুঁজে পাবেন, আর সেই মুহূর্ত, হ্যা, সেই মুহূর্তটিই আপনার জীবনের সবচেয়ে সুখময় অথবা তিক্তকর মুহূর্ত হতে পারে। ~পাবলো নেরুদা

* * * *
তুমি হয়ত গাছ থেকে সবগুলো ফুল কেটে ফেলতে পারো কিন্তু তুমি বসন্তের আগমন রুধতে পারবে না। ~ পাবলো নেরুদা

* * * * *
আসুন আমরা অনেক উদারতা নিয়ে সেই মানুষগুলোকে ভুলে যাই যারা আমাদের ভালোবাসতে পারেনি। ~পাবলো নেরুদা

* * * * *
আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মাঝামাঝি যে মাসটি পড়েছে, তার নাম কী? ~পাবলো নেরুদা

 * * * *
একাকীত্ব তো এমন নয় যে আপনার চারপাশে কোন মানুষ নেই। বরং একাকীত্ব হলো আপনি যে জিনিসগুলোকে জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন সেগুলোর সাথে আপনার যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারা। ~কার্ল জাং

* * * * * *
যতই নিজের গভীর থেকে গভীরে লক্ষ্য করবেন, আপনার দৃষ্টি ততই স্বচ্ছ হবে। যে বাইরের পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে, সে তো স্বপ্নের মাঝে ডুবে থাকে। যে নিজের ভেতরটায় মনোযোগ দেয়, সে মানুষটাই জেগে ওঠে।~কার্ল জাং
 
* * * * * *
গতকালের দিনটি আজকের স্মৃতি এবং আগামীকালের দিনটি আজকের স্বপ্ন।~ কাহলিল জিবরান

* * * * * *
"যে চাঁদ কবিদের কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে, সেই একই চাঁদ কি শান্ত সমুদ্রকে প্রচন্ড গর্জনে ক্ষেপিয়ে তুলে না?
~ কাহলিল জিবরান

* * * * * * 
বাতাসের কাছে কোন গোপন কথা বলার পরে সে যদি গাছকে বলে দেয় তাহলে তুমি বাতাসকে দোষ দিতে পারো না। ~ কাহলিল জিবরান

* * * * * *
"বুড়োরা সবকিছু বিশ্বাস করে, মধ্যবয়স্করা সবকিছুকে সন্দেহ করে আর তরুণেরা সবকিছু জানে!" ~অস্কার ওয়াইল্ড

* * * * * *
"তিনি বলেছিলেন, তোমার শত্রুকে ভালোবাসো। আমি যখন এই আদেশ পালন করতে গেলাম তখন আমি আমাকেই ভালোবাসতে লাগলাম।" ~কাহলিল জিবরান


৭ নভে, ২০১৫

ভালোবাসার সুমধুর আহবান


খুব সুন্দর এই আজানটা শুনে বুকের ভেতরটায় একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো। আজান তো সেই আহবান, যা ডেকে আনে সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর পথে। কী স্নিগ্ধ আর শান্ত সেই আহবান। কী সুন্দর আর সুমধুর সেই বাণী, সেই কথাগুলো। আমার সমস্ত শব্দ দিয়েও কি পারবো সেই সৌন্দর্যময় আজানকে বিশেষায়িত করতে?

অনেকদিন আগে একবার মসজিদে যুহরের পরে বসে বসে দেখছিলাম মুয়াজ্জিন খুব দরদ দিয়ে মসজিদ পরিষ্কার করছেন। তিনি আসলে আল্লাহর ঘরের অতিথিদের জন্য আয়োজন করছিলেন, তিনি তো আল্লাহর অতিথিদের যত্ন-আপ্যায়ন করেন। যিনি আহবান করেন প্রতিদিনের নামাজে, যিনি 'আল্লাহু আকবার' বলে ঘোষণা করেন আল্লাহর বড়ত্বের--'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ' বলে তিনি সাক্ষ্য দেন নবীর (সা) রিসালাতের, ছড়িয়ে দেন সুমধুর কন্ঠে সেই ভালোবাসা আর দৃঢ়তাকে শত মানুষের, হাজার হাজার প্রাণি-পাখি-গাছপালার মাঝে।

এমন ভালোবাসা, এমন দরদ, এমন নিষ্ঠা কি রব বিফলে যেতে দেবেন? আল্লাহ যেন মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসা আহবানগুলোকে আরো বরকতময় করে দেন। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ-লক্ষ মুয়াজ্জিনকে যেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন, আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকেও ক্ষমা করে দেন।

# সুন্দর আজানটি: https://www.youtube.com/watch?v=EnmV613p7MQ

মনের জানালা মাঝে # ৩৯

 

(৪০০)
স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দেয়। স্বপ্নই আমাদের মাঝে আশা জাগিয়ে রাখে। স্বপ্নগুলো আমাদের হৃদয়কে সজীব রাখে। স্বপ্নহীনতা হৃদয়কে শুকনো মাটির মতন করে দেয়, জীবনের তাপে যা সময় পেরিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তাই স্বপ্ন দেখতে হয়। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখতে হয়। ভালো কাজ করতে হয়। চারপাশের মানুষদের উপকার করতে হয়। তাদের ভালোবাসতে হয়।

ভালোবাসতে হলে স্বপ্ন দেখতে হয়। স্বপ্ন দেখতে হলে ভালোবাসতে হয়।

(৪০১)
​ সমুদ্রপাড়ে আমরা অদ্ভুত ভালোলাগায় আত্মহারা হয়ে যাই। আমরা হারাই বিশালতার মাঝে। আমরা আসলে বিশালতায় হারাতে ভালোবাসি। মানুষের মাঝেও এমন অনেক মানুষ আছে যাদের হৃদয় অমন কয়েকটা সমুদ্রকে ধারণ করে। বিশাল হৃদয়ের ভালোবাসায় আমরা অবগাহন করি আনন্দচিত্তে।

বিশাল সমুদ্র সৃষ্টি হয় আল্লাহর ভালোবাসায়। বিশাল হৃদয় তৈরি হয় ব্যক্তির সার্বজনীন ভালোবাসায়। যে হিসেব-নিকেশ ছাড়া ভালোবাসতে পারে, সেই অর্জন করে বিশাল হৃদয়, যে হৃদয়ের পাশে থাকলে সমুদ্র বিলাসের অনুভূতি জাগে।

হৃদয় বিশাল করতে ভালোবাসা লাগে। ভালোবাসতে হলে হৃদয়টা বড় হওয়া লাগে।

(৪০২)
এক ভাই আমাকে একটা কৌতুক শোনালো। হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি চলে এলো। পরে আবার আমাকে সে কৌতুকটি সে শোনালো। এবার আমি হাসলাম কিন্তু আগেরবারের মতন না। সে আবার আমাকে কৌতুকটি শোনালো। কিন্তু এবার আর আমি হাসলাম না।

সে তখন আমাকে বললো, তুমি যদি একই কৌতুকে বারবার হাসতে না পারো তাহলে তুমি কেন সেসব মানুষদের জন্য কাঁদো যারা তোমাকে বারবার কষ্ট দেয়? [সংগৃহীত ও অনূদিত]

(৪০৩)
ব্যর্থ হওয়াটা দুঃখজনক। কিন্তু আরো অনেক বেশি কষ্টদায়ক হলো কখনই সফল হবার চেষ্টা না করা।

(৪০৪)
সুখ কি কেবল সেটাই যা আমরা আশা করি আর তারপর তা পেয়ে যাই?

কখনো কখনো সুখ আমরা তৈরি করে নিই নিজ হাতে। কখনো সুখ থাকে আমাদের কাজের মাঝে, কখনো থাকে আমাদের নিজের মাঝেই, কখনো সুখকে পাওয়া যায় ত্যাগের মাঝে, নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাঝে।

সুখের প্রকৃত ঝর্ণাধারা মিশে আছে আমাদেরই মাঝে। আমাদের সত্ত্বায়, আমাদের দৃষ্টিভংগি, চিন্তায়, আবেগে, উপলব্ধিতে।

(৪০৫)
মানসিক চাপ শুধু আমাদের শারীরিক ক্ষতি করে, তা-ই নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি আমাদের আশা, স্বপ্ন এবং বিশ্বাসকেও নষ্ট করে দেয়।


(৪০৬)
আমরা জীবনে যা পেয়েছি তার জন্য যদি শুকরিয়া করতে না পারি, তাহলে অন্তত সেইসব ভয়ংকর ব্যাপারগুলোর কথা ভেবে আমাদের শুকরিয়া করা উচিত যাদের ক্ষতি থেকে আমরা বেঁচে গেছি।

(৪০৭)
কোন কিছুকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সর্বপ্রথম অন্তত সেটির স্বপ্ন দেখতে হয়।

সুখে থাকার খুব সহজ একটা তরিকা

পৃথিবীতে সুখে থাকার খুব সহজ একটা তরিকা আছে। স্রেফ বর্তমানে থাকুন। এটা একদমই কঠিন কোন বিষয় না। সুখী হতে হলে আপনাকে অনেক কিছু করে দুনিয়া উলটে দিতে হবে না। স্রেফ বর্তমানের মাঝে জীবনকে ধারণ করুন। বর্তমানকে খুব গভীরভাবে দেখুন, বর্তমানকে নিয়ে বেঁচে থাকুন, বর্তমানের মূহুর্তগুলোকে উপভোগ করুন।

অতীতের কারণে অনুশোচনা ও দুশ্চিন্তা আর ভবিষ্যত নিয়ে যত বেশি উদ্বেগ ও শংকা করবেন, আপনি তত বেশি অশান্তিতে থাকবেন। অতীত আর ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা করে মূলত আপনি অন্য কারো/অন্য কিছুর কাছে নিজের স্বস্তি/শান্তি/সুখ জমা দিয়ে দিলেন।