৪ ডিসে, ২০১১

মিশর একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে -- ড. তারিক রামাদান

বর্তমান দিনগুলো মিশরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিশরীয়রা তাহরীর স্কোয়ারে জমায়েত হচ্ছে আর দাবী জানাচ্ছে সেনাবাহিনীর পতনের জন্য। তারা চাইছে একটি সত্য আর স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে বেসামরিক জনগণ তাদের আইনত অবস্থান আর ভূমিকা খুঁজে পাবে। আপাতত এতটুকু নিশ্চিত যে সামরিক সরকারের অভিপ্রায় এবং কর্মপদ্ধতি এরকম কিছু নয় একদমই। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পরপরই ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা হোসনি মুবারকের লেফটেনেন্ট, ৭৭ বছর বয়স্ক কামাল জানজুরির নাম প্রকাশ করে। একজন প্রার্থীর নাম প্রকাশের এই ছোট্ট ঘটনাটা বলে দেয় সামরিক সরকার কীভাবে অবস্থা সামলানোর চেষ্টা করছে। ফিল্ড মার্শাল তানতাওয়ি এবং তার লোকজন একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত নয় এবং আগ্রহীও নয়। তারা  দৃশ্যপটের বাইরের কাউকে খুঁজছে যাকে মিত্র হিসেবে পাওয়া যাবে, চাইছে কিছু চুক্তি করতে যেন নিজেদের রক্ষা করা যায় এবং দেশের ক্ষমতাও সামলে রাখা যায়।

২২ নভে, ২০১১

মন আর মায়াজাল [কবিতা]



ইদানিং এই এই চারপাশ, এই ঘুমভাঙ্গা ভোর,
এই মায়ামাখা মায়ের মুখ, বাবার উজ্জ্বল শুভ্র চেহারা,
সবকিছুকে আমার স্মৃতিময় লাগতে থাকে।
স্মৃতিকাতর হয়ে সবাইকে ভালোবাসায় একবার করে ছুঁই,
বন্ধুদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা ছুঁইয়ে দিই,
তারপর "আসি তবে বন্ধু" বলে বিদায় নিয়ে ফিরি।

১৮ নভে, ২০১১

একটা মিছিলের গল্প

মিছিল শব্দটি শুনলেই একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে আমার চোখে। একদম সামনে কিছু মানুষ -- হাতে তাদের কিছু প্ল্যাকার্ড অথবা ব্যানার, পেছনে সারিতে সারিতে তাদের অনুসরণ করছে একদল মানুষ। তারা একটা নির্দিষ্ট কারণেই সবাই একসাথে, একই ছন্দে হেঁটে চলেছেন কোন একটা ময়দানে জমায়েত হবেন বলে। যে কারণে তারা সবাই একসাথে এগিয়ে চলেছেন -- হতে পারে সেটা কোন প্রাপ্তির বহির্প্রকাশ, হতে পারে সেটা কোন দাবী আদায়ের আকাঙ্খা। কারণ যেমনটাই হোক, তারা একই সাথে, একই গলায় শব্দোচ্চারণ করেন, একই পদক্ষেপে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে।

এমন একটা মিছিলের কথা আমার মনের দৃশ্যপটে জেগে উঠছিলো বারংবার। অমন একটা মিছিলে আমিও শামিল হয়েছি। আমার চারপাশে একদল মানুষ -- তাতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরাও আছে। দৃঢ় তাদের চেতনা, বুকে তাদের অজস্র ভালোবাসা, চিত্ত তাদের ভয়শূণ্য, দৃপ্ত তাদের পদক্ষেপ। আমি চারপাশে চেয়ে থেকে ভাবছিলাম -- এ আবার কোন মিছিল? আমি কীভাবে এখানে এলাম?


১৭ নভে, ২০১১

বিচ্ছুরিত আলোর নতুন প্রত্যয়

পথ চলতে আঁধারের সমুদ্র দেখে হতচকিত
স্বাপ্নিক আশাবাদী আত্মায় জাগে বিষের যন্ত্রণা।
আলো না থাকাকেও ওরা আলো বলতে চায়, কিন্তু
আমি বুঝেছি এটি আঁধার, যা আসলে আলোর বিচ্ছিন্নতা।
এই সমাজের আলোক উৎসগুলোর ছড়িয়ে পড়ার
পথ রুদ্ধ করে দেয় কিছু আলোকময় অন্ধকার অবয়ব,
তাদের বিশালাকার মূর্তিতে মুগ্ধ হয়, আর
অবনত হয় সহস্র মস্তক -- কিশোরীর দল, কিশোর ছেলে।
আলো বঞ্চিত করতে হলে কি তোমায় অন্ধকার করে দিতে হবে? নাহ!
আলোর ছুটে আসা ধারাকে বিচ্ছিন্ন করে ছড়িয়ে দিলেই ষড়যন্ত্র সফল।
একদল তাজা প্রাণ এই ছায়াকেই আলো মনে করে বেড়ে ওঠে,
ভালোবেসে গড়ে তোলে আঁধার-প্রাঙ্গন।
দীর্ঘ সময় আবছা আলোয় কাটালে সূর্যালোকে সবাই বিরক্ত হয়।
অথচ সেই আলোই আসলে তার বেঁচে থাকার প্রাণশক্তির সঞ্চয়।
সত্যকে দেখে ছিটকে পড়ে তাজা প্রাণগুলো, প্রতিবাদ করে তখনই
মিথ্যে দেখে যখন ভুলে যায় সত্যের সুগন্ধময় বিচরণ।
অথচ, প্রতিটি হীরের টুকরা হতে পারে আলোর উৎস।
সমাজের প্রতিটি আলোকময় আত্মা হতে পারে তেমনি
একেকটি আলোকজ্বল আলোর সৌন্দর্যময় ঝলকানি
হতে পারে সত্যের আর সুন্দরের সুসজ্জিত বাহন।
এই অন্ধকার বিদীর্ণ করে আসতে চাওয়া আলোকে দেখা যায় আজ
এই আলোর দল আর কখনো অপবর্তিত হবেনা।
ঝলসে উঠবে অজস্র আলোক আভার বিচ্ছুরিত সত্যে
অনন্তকালের এক সত্য চিরন্তন আলোর সাথে মিশে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়ে, স্বপ্নে।

** অনেকদিন পরে কাব্য লেখার একটা প্রচেষ্টা করলাম। এরকম অনুভূতি দিয়ে কাব্য লেখা যায়, তা দেখেছি এই বাংলার বড় বড় কবিদের মাঝে। কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ লিখেছেন অসাধারণ কাব্য। এই শতাব্দীর কবি মতিউর রহমান মল্লিক, আসাদ বিন হাফিজ -- যারা শব্দ দিয়ে খোদার ভালোবাসা জাগানিয়া আর সমাজকে নিয়ে আশা দেখানিয়া মানুষ। আল্লাহ তাদের সকলের রুহের মাগফিরাত দান করুন এবং তাদের উত্তম বিনিময় দান করুন।

.....
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৭/১১/২০১১

১৪ নভে, ২০১১

আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ কোন সে বাঁধনে

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে আমাদের প্রজন্ম। আমাদের সময়, আমাদের পরিবার, আমাদের বন্ধন আর আমাদের চারপাশ! তথ্য প্রযুক্তিতে থ্রি-জি, ফোর-জি এর জেনারেশন বদলের চাইতেও দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের জেনারেশন, তার "ইন্টারনাল টেকনোলজি" আর ইভোলিউশন হচ্ছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে।

আগে একটা সময়ে আমাদের প্রজন্মের আব্বা-আম্মারা তাদের মধ্যে কথাবার্তা 'মেলামেশা' ছাড়াই বিয়ে-শাদী করেছিলেন। সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেখলে গলার কণ্ঠ নামিয়ে তর্ক-ঝগড়া করতেন। কথায় কথায় মায়েরা বাপের বাড়ি 'যাও', 'যাবো' বলতে পারতেন না, বলতেন না... একাট্টা হয়ে দু'জনে মিলে যুদ্ধ করে সংসার নামের নৌকাটার হাল ধরতেন সংসার জীবনের চরম দুর্দিনেও... পারস্পরিক সম্মান, অগাধ বিশ্বাস আর দু'জনের মিলিত "কমিটমেন্টের" মাধ্যমে তারা পাড়ি দিয়েছেন বিশাল পথ। ভালোবাসা শব্দটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে দেখিইনা আমরা তাদেরকে!

২৭ অক্টো, ২০১১

বেদনা মধুর হয়ে যায়


বেদনা মধুর হয়ে যায়,তুমি যদি দাও,
মুখের কথায় হয় যে গান তুমি যদি গাও...

গানটা মনে পড়ছিলো। বেদনাক্লিষ্ট হয়ে এই গানটাই মনে পড়লো কারণ আজকের দিনটা ছিলো অনেক বেদনাক্লিষ্ট, সময়টাই যাচ্ছে বেদনাময়। চারিদিকে বেদনার ধোঁয়াশা। তাছাড়া গানটির শিল্পী জগজিত সিং। বিখ্যাত আর জনপ্রিয় এই শিল্পী ক'দিন আগে চলে গেছেন এই পৃথিবী ছেড়ে। তার একটা অন্যতম বহুল প্রচলিত আর খ্যাত একটা সঙ্গীত এই "বেদনা মধুর হয়ে যায়"।

২৪ অক্টো, ২০১১

তারিক রামাদানঃ এক অনুপ্রেরণা আর মুগ্ধতার নাম


তারিক রামাদান নামটার সাথে আমার পরিচয় বছরখানেক হবে। একটা বক্তব্য দেখেছিলাম যেটা তিনি মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (এমএসএ) আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে রেখেছিলেন। অসম্ভব মুগ্ধতায় ভরে গিয়েছিলো আমার মন। তারপর খুঁজে পেতে পেলাম আলজাজিরা টেলিভিশনে রিজখান শো তে দেয়া একটা সাক্ষাতকার। বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে তারিক রামাদানকে প্রশ্ন করে বিব্রত করা হয়। এই প্রশ্নগুলো আমি আরো অনেকজনকে ঘায়েল হয়ে যেতে দেখেছি জীবনে — কিন্তু প্রফেসর রামাদান সেগুলো তার জ্ঞানের গভীরতা, প্রজ্ঞা দিয়ে নির্দ্বিধায় উত্তর দিয়েছিলেন।

২৩ অক্টো, ২০১১

মুখে তোমার কতনা মধু

আমার ছোট একটা ভাতিজা আছে, সে প্রতিদিন একটা করে শব্দ উচ্চারণে চেষ্টা করে। সে যেদিন প্রথম "এই যেএএএ" আর "আবুউউউ" উচ্চারণ করলো -- সেদিন তার বাবা-মায়ের কিশোর-কিশোরীসুলভ আনন্দের উচ্ছ্বলতা দেখে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। সন্তান মুখে কথা বলবে -- এই জিনিসটা কতনা সুন্দর! আর বাবা-মা সেই দুআ করছিলেন দু'জনে একসাথে। এক বছরের কম সময় আগে পৃথিবীর বুকে আসা সেই শিশুটার মুখের শব্দে এত যাদু -- তা আমি একটু আগে একটা ঘন্টা কাটিয়ে বুঝলাম নতুন করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কী অপার রাহমাত।

১৭ অক্টো, ২০১১

সখী ভালোবাসা কারে কয়

"ভালোবাসা" আমার জীবনের অপার বিষ্ময়ের একটা শব্দ। সেই কৈশোর থেকে যখন  বুঝতে শিখেছিলাম -- আমি এই শব্দ দিয়েই পড়েছি কবিতা, সমস্ত গানেই পেয়েছি এই শব্দ। প্রথম পড়েছিলাম রোমিও-জুলিয়েট। কী অপার বিষ্ময়কর সেই "ভালোবাসা", কী চরম বিভেদ তাদের দুই পরিবারে, তারপরেও তাদের সেই "গভীর ভালোবাসা" তাদের নিয়ে গেলো মৃত্যুর টানে। একজন বিষ খেলো দেখে আরেকজন ছুরি বসিয়ে বিদায় নিলো পরপারে। শেক্সপীয়রীয় সাহিত্য -- সাহিত্যজগতে সর্বাধিক পাঠ্যগুলোর একটা এই রোমিও-জুলিয়েট, নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমি এই পাঠে শেখার চেষ্টা করেছিলাম "ভালোবাসা" কী জিনিস।

সবাই বলতো দেবদাসের কথা। সেই কিশোর বয়সেই হাতে তুলে নিলাম শরৎ রচনাসমগ্র। পথের দাবী, দেবদাস, বড়দিদি, মেজদিদি ছিলো আজো মনে রাখার মতন। কিন্তু দেবদাসের জীবনটাও সেইরকম "ভালোবাসার"। পড়তে পড়তে স্বভাবসুলভভাবে নিজেকে বসিয়ে দিতাম দেবদাসের জায়গায়। পার্বতী এলোচুলে যখন বাসায় বসে, আমি বহুদূর থেকে ফিরে তাদের বাড়িতে গিয়ে পার্বতীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবার চেষ্টা করলাম কল্পনায়। তারপর নিজের সমস্ত বিশেষত্ব, প্রতিভা জলাঞ্জলি দিয়ে শহরে "ভালোবাসায়" চুর হয়ে চন্দ্রমুখীর বাহুবন্ধনে জ্ঞানহারা হবার ব্যাপারটাতে নিজেকে কিছুতেই বসাতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত মৃতদেহ যখন পার্বতীর বাড়ির সামনে পড়ে থাকলো --তখনো সেই "ভালোবাসার" স্বরূপ উদঘাটনপূর্বক অনুভব করতে না পারার কষ্টে আমি দেবদাসের বিশেষত্ব নিয়ে গল্প করিনি। এই মুভি (বাংলা বা হিন্দী) কোনটাই দেখতে যাইনি। আমি বইয়ের প্রতিটি লাইন যেভাবে গভীরতায় অনুভব করেছিলাম, চলচ্চিত্র সেখানে কোন প্রকৃত "ভালোবাসা" চেনাতে পারবে বলে বিশ্বাস করিনি।আরেকটু বড় হতেই হাবিবের গান খুব ভালো লাগতো -- "দিন গেলো তোমার পথ চাহিয়া, মন পোড়ে সখী গো কার লাগিয়া, সহেনা যাতনা, তোমারো আশায় বসিয়া, মানেনা কিছুতে মন আমার যায় যে কাঁদিয়া, পুড়ি আমি আগুনে..." তারপরের লাইনে ছিলো "যার কথা মন ভেবে যায়, যার ছবি মন এঁকে যায়, যারে হায় এ মন যায়, জীবনে পাবো কি তার দেখা"... শুনতে এত ভালো লাগতো যে কারো জন্য "মন পোড়াতে" ইচ্ছে করতো। শেষের লাইনটা হতাশার -- জীবনে পাবো কি তার দেখা। সুরের মূর্ছনায় ডুবে সব জলাঞ্জলি দিয়ে "কারো জন্য" অপেক্ষার ব্যাপারটাতেই "ভালোবাসা" পাওয়া যায় বলে বোদ্ধা বন্ধুদের দাবী ছিলো। আমি আরেকটা স্বরূপ পেলাম, যাকে ঠিক বিশেষায়িত করতে পারলাম না তখনো।

টাইটানিক মুভিটিতে নাকি কেট আর ডিক্যাপ্রিওর ছিলো অমর প্রেম, অনবদ্য ভালোবাসা। ভালোবাসার খোঁজে সেই মুভিটাও দেখেছিলাম। কিশোর ছেলের জন্য উষ্ণতা দেয়া ছাড়া, আর বিশাল টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার মাঝে আমি "ভালোবাসা" খুঁজে পাইনি। তারপর "দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যাউঙ্গা" দেখতে বসেছিলাম -- সেটাও বন্ধুদের দাবীর "অপার ভালোবাসা" খুঁজে পেতে। পারিবারিক কোন্দলকে বাড়িয়ে দেয়ার "চলচ্চিত্র" কাহিনীর মাঝে বাস্তবিক "ভালোবাসা" আমার খুঁজে পাওয়া হয়নি। শুধু নায়িকার রূপসৌন্দর্যে নিজের ভিতরের বুভুক্ষু প্রেমিকটা আরেকটু 'বিরহে' পড়ে গিয়েছিলো।

এই কাহিনীর ফিরিস্তি দিতে গেলে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে যাবো। হয়ত এরকম আরো অন্তত ৫০গুণ লাইন লিখতে হবে -- কেবল অভিজ্ঞতা তথা অনুভূতি/ভাবনা শেয়ার করা হবে। কিন্তু আসল কথা হলো--সবকিছুর পরেও ছিলাম অন্ধকারেই। এরপর তারুণ্য পেরিয়ে যৌবনে এলাম। চারপাশে যৌবনের জয়জয়কার। এই যৌবন কোন বাধা মানে না। এই যৌবনে আছে "ভালোবাসা" যেটা বাবা-মায়ের অগোচরে রোমান্টিক হওয়া। সিনেমার নায়িকাদেরকে নিজের "প্রেমিকা", যাকে "তোমাকে ভালোবাসি" বলে অ্যাচিভ করা হয়েছে তার মাঝে খুঁজে পাবার শত চেষ্টা। কত বান্ধবীর যে পোশাক বদলে গেলো প্রেমের ফলে! বলাই বাহুল্য, এটুকু আমি শিখেছিলাম যে অপার ভালোবাসায় পতিত হবার পর সেটা যখন শেকলে আবদ্ধ হয় -- তাকে প্রেম বলে। সবই আমার শেখা --আমার পারিপার্শ্বিকে আমি জীবনে এই শিক্ষাটা সস্তায় এবং সর্বাধিক পেয়েছিলাম -- 'ভালোবাসা কারে কয়'। দুঃখের ব্যাপার হলো -- আমি বুঝিনি। আমি ভালোবাসার "ডেফিনিশান"টাই বুঝিনি।

কোথায় আমার লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট, দেবদাস-পার্বতী, অপূর্ব-প্রভা, শাহরুখ-গৌরি সবাই আমাকে এমন কিছু দিয়ে গেলো। যা আমার জীবন দিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। আমি ধুম করে মরে যেতে পারবো না এমন কারো জন্য যে আজ না হয় কাল মরেই যেতো। আমার যেই জীবনটার জন্য আমি দুই-তিনটি বছরের কোনরাতেই মা-কে ঘুমাতে দেইনি, লাথি দিয়ে, পেশাব করে, চিৎকার করে জীবনটা ফ্যানা ফ্যানা করে দিয়েছিলাম যেই মা'র, তার কথা না ভেবে আমি একটা নারীর জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে অমর "প্রেম" রচনা করে ভালোবাসার সাক্ষর রেখে যাবো বলে বিশ্বাস করিনা, করিনি।

কবিগুরু আমার মত করেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, হয়ত সেদিনও উনি কনফিউজড ছিলেন (কবিতাটির ব্যাকগ্রাউন্ড জানিনা বলে ইউজ ভুল হতে পারে)। বেশ মজার লাইনগুলো। কবিতাংশটা অনেকটা এরকম --

তোমরা যে বল দিবস রজনী
'ভালোবাসা, ভালোবাসা' -
সখী ভালোবাসা কারে কয়?
সে কি কেবলই যাতনাময়!
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কি সুখেরই তরে এমনই দুখের আশ!

ক্যারিয়ারের চিন্তা করে বহু সায়েন্সের বন্ধুদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাংলা-ইংরেজি পড়বি? ওদের উত্তর ছিলো -- তাদের চাকরি-বাকরি নাই, এই জিনিস পড়ার প্রশ্নই উঠেনা। সবচাইতে কম চিন্তার গভীরতাসম্পন্ন বন্ধুরাও এই উত্তরটাই দিতো। কী চিন্তা! যেখানে বিশেষ "লাভ" নেই বলে জানে, সেখানে পা দিবে না -- এটাই সুস্থ মানবিক গুণাবলী। অথচ, নিশ্চিত "দুখের শ্বাস" সমৃদ্ধ ভালোবাসাতে কারো আগ্রহের কমতি থাকতো না। আমি জীবনের বহুবছর এই "ভালোবাসা"  নাক জিনিসটার সঠিক কোন সংজ্ঞা পাইনি। উইকিপিডিয়া টাইপের সাইটের লিঙ্ক দিয়ে লেখাটার ভার বাড়াতে চাইছিনা। সংজ্ঞার চাইতে অনুভূতিটা নিয়েই ভাবছি আপাতত।


আমার বন্ধু ছিলো -- ধরি তার নাম আকাশ আর তার প্রেমিকা নীলা। তিন বছর সম্পর্কের পর তারা পরষ্পরের নামে এমন সব কথা বলে বেড়াত নিজ নিজ মহলে। যেই কথা শুনলে, তার অশ্লীলতা চিন্তা করলে কানে আঙ্গুল দিয়েও নিবৃত্ত হতে পারিনি। প্রভা-রাজিবদের ঘটনাগুলো সেলিব্রিটি বলে কানে এসেছে -- অমন দেহসর্বস্ব ভালোবাসা এখন তারুণ্যের মাঝে খুব খুব বেশি এভেইলেবল। আর এই ঘটনাগুলোও একই ছাঁচে বাঁধা। যার জন্য পরান দিওয়ানা বলে সবাই জানতো -- কোন এক সময়ের স্রোতে তার প্রতিই ঘৃণা, ক্রোধ জমা হয়ে জিঘাংসা তৈরি হলো... সবচাইতে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো -- ভালোবাসি ভালোবাসি বলে যার নাম বলে এসেছি "রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে", পরমূহুর্তে তাকেই "খারাপ, ঘৃণা করি" বলে চিৎকার করার মাঝে যে নিজেরই অতীতকে অস্বীকার করা হয় -- সেটা কেন কারো মাথায় আসে না?


আমি ভালোবাসা কারে কয় জানিনা। তবে বুঝেছি এই ভালোবাসা আমরা শিখেছি নাটকের সুন্দরী মেয়েটার প্রতি ছেলেটার শব্দচয়ন থেকে। সিনেমায় ক্যাটরিনা কাইফের, প্রিয়াংকা চোপড়ার হাসিতে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া শাহেদ কাপুরদের অস্থির আচরণ থেকে। আমি পথ চলতে দেখি "দীঘল কালো চুলের বাঁধনে বাঁধুন প্রিয়জনকে", ভুরু প্লাক করে, চুল সিল্কি করে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করে "ভালোবাসা" ধরে রাখাটা শিখেছি "গীত, কাহানি ঘর ঘর কী" টাইপ শত-সহস্র সিরিয়াল থেকে। আমার জীবনের সবচাইতে "ক্রুশিয়াল, সফিস্টিকেইটেড" তথা গুরুত্বপূর্ণ আর সংবেদনশীল শিক্ষার ভার আমি টেলিভিশনের থেকে, প্রথম আলোর নকশা আর আনন্দ আলোর পাতা থেকেই শিখছি। অথচ ঢাকার সবচাইতে দামী টিচার "আজমল" স্যারের বাসায় লাইন ধরে অ্যাডভান্স ভর্তি হয়ে নিশ্চিত করি জীববিজ্ঞান শিক্ষা।


আসলে পুরো ব্যাপারগুলোই কেবল বয়ে যেতে দেয়া! সবাই চিন্তা ছাড়াই চালিয়ে দেয়। স্কুল-কলেজের রেজাল্টটা দেখা যায় তাই বাবা মা কনসার্নড। কিন্তু জীবনের এই শিক্ষাগুলোর পরীক্ষার মার্কসগুলো দেখা যায়না বলেই এই আধুনিক বাবা-মায়েরা যার-তার হাতে সন্তানের শিক্ষাটা তুলে দিচ্ছেন। আসলে আমি ভাবছিলাম, ভালোবাসা কী আমাকে জিঘাংসু হতে শেখায়? যাকে ভালোবাসতাম, তার সামনের শুভ্র-সুন্দর দিনের সম্ভাবনা থাকলেই কেন পুরোনো প্রেমিক তার গর্দান নিতে দৌড়ে যায়? তাহলে কেন এই ভালোবাসা? তা কেবলই ভোগের জন্য? ক্ষতিই যদি করতে চাই, তাহলে তো সে আমার নিজের হলেও তার ক্ষতিতে আমার কিছু যেত আসতো না! কী ভয়ংকর আমাদের রূপ! কী ভীষণ স্বার্থপর আমরা!!

ভালোবাসা যেন কেবল আমারই কোর্টের বল! তার অন্যথা হলেই, ভোগ করতে না পারলেই পাশবিক রূপ বের হয়ে পড়ে। এই ইন্দ্রিয়ের ভালোবাসার নামই আসলে ভালোবাসা-- লোকে যাকে প্রেম নাম কহে। আমার দেহ, আমার চোখ, আমার কানকে তুমি যতক্ষণ সার্ভিস দিচ্ছ -- ততদিন আমি ভালো, তোমায় ভালোবাসি। এর অন্যথা হলেই তোমায় ঘৃণা করি। আবার এই দামী জীবনটা যাদের বছরের পর বছরের কষ্টে, ক্লেদে, পরিশ্রমে বেড়ে উঠেছে -- সেই মা-বাবা, ভাই-বোনেরাও দুধভাত হয়ে যায় একটা পুরুষ বা নারীর জন্য, যে আসলে তার ফিটনেস পরীক্ষায় পাসও করেনি। হয়ত প্রিয়জনদের কয়েক যুগের অপজিটে দশদিন কনসিস্টেন্সি রাখার যোগ্যতাও তার নেই।


যিনি আমার দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করেছেন অপরূপ সুষমায়, যিনি আমাকে জ্ঞান-বুদ্ধি-মেধা দিয়েছেন তাকে ভালোবাসার কথা ভেবেও দেখিনা কখনো। উনি যদি "তোমার জন্য এত করলাম, তুমি আমার দিকে ফিরেও দেখলেনা, এখন তোমার খবর আছে" বলে আমাদের দেখে নিতেন -- হলফ করে বলতে পারি এই পৃথিবীময় কেবল ছাই দেখা যেত কমপক্ষে। আমার এই ভালোবাসা কাকে দেবো বলে অনেকদিন ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়িয়েছি। জনমভোর বিদঘুটে ঘটনা, অপবিত্র-অশ্লীল ঘটনার মূলে আমাদের সমাজের লোকের কাছে শেখা "ভালোবাসা"কে খুঁজে পেয়ে আমি ক্লান্ত হয়েছি।

তারপর, একদিন সংকল্প করেছি ভালোবাসাকে নষ্ট হতে দেবো না। সুন্দরতম, প্রিয়তম, প্রেমময়, অন্তরতম জন, যিনি সবসময় আমাকে ভালোবাসতেন, ভালোবাসবেন -- আমি তাকেই ভালোবাসবো। সবচাইতে বিপদের দিন যখন জগতের কেউ আমার পাশে আসবে না-- সেদিন যিনি বিচারকের সামনে আমার পক্ষে হয়ে কথা বলবেন -- তাকে ভালোবেসেই আমি স্বার্থপর হবো। এই স্বার্থপরতায় জগতে ক্ষতি নেই, এই প্রেমে নেই উন্মাদনা, নেই প্রচলিত নোংরা পরিণতি। এই ভালোবাসাতে হোক আমার জগত ভালোবাসাময়। এই ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক সৃষ্টি চরাচরে, আমি চাই প্রেমময় পৃথিবী, আমি অর্থহীনতার মাঝে আমার ভালোবাসাকে উজাড় করে দিতে চাইনা। এক ভালোবাসাতেই ভালোবাসা ছেয়ে যাবে আমার চারপাশের মানুষের প্রতি। সবাই পাবে স্বার্থহীন ভালোবাসার স্পর্শ। যার পাওনা কেবল অনন্ত জগতেই, এই ক্ষুদ্র জীবনে তাই ভোগের স্বপ্ন নেই। অথচ সুন্দরতম ভালোবাসা আমি পাবই ইনশাআল্লাহ। এই স্বপ্নটাও দেখতে পারি কেবল উনাকে ভালোবাসবো বলেই! আর তাইতো আমি আর কাউকে হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্ন করবো না -- "সখী, ভালোবাসা কারে কয়।"

আমাদের লেখালেখি, সাহিত্য এবং শেষ নিয়ে কথা

ছোটবেলা থেকেই অনেক লিখতাম। ডায়েরির পাতাভরা লেখা। সেই লেখা কোন উদ্দেশ্যের জন্য ছিলোনা। ছিলো অনুভূতিদেরকে বন্দী করে রাখার ইচ্ছে থেকে লেখা। কৈশোর থেকেই এই জীবনে অনেক প্রভাবিত হয়েছি। শীর্ষেন্দু, সমরেশ, সুনীল, শরৎ, রবিঠাকুরের লেখার জগতে হারিয়ে যাওয়া। ঠিক অন্যপিঠেই ছিলো নসীম হিযাযী আর আবুল আসাদের লেখাগুলোর আত্মিক উদ্দীপনা।

শীর্ষেন্দুর বইয়ের প্রতি আমার একটা বিশেষ দুর্বলতা ছিলো -- সেটা পার্থিব পড়ে খুব বেশি মনে হয়েছিলো। ভাবনার গভীরে, চরিত্রগুলোর প্রতিটির চিন্তাধারাকে পাঠক হিসেবে এক্সপ্লোর করার ব্যাপারটা অত্যন্ত আনন্দের সাথে উপভোগ করতাম। চয়নের অনুভূতিগুলো যেন বুঝতে পারতাম, হেমাঙ্গের কথাও মনে হয় আজো। কী যেন নাম ছিলো মেয়েটার ঝিমলি নাকি অঞ্জলী আর একটা প্রবাসী মেয়েটা -- তাদের চরিত্রের স্বরূপগুলো অনুভব করতে পেরেছিলাম এটা মনে আছে। প্রায় বছর দশেক আগের স্মৃতি হিসবেও এই স্মৃতিচারণ মন্দ হলোনা!

১২ অক্টো, ২০১১

অনিবার্য সেই সময়ের প্রতীক্ষায়

পড়ছিলাম একটা কবিতা। সেদিন হঠাৎই কবিতাটা সামনে পেলাম। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। কবিতার প্রতিটা ছত্রে-ছত্রে যেই ছবি, তা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো যেন! এই বিশাল সভ্যতা এগিয়ে যাবে আরো অনেকদূরে। থ্রি-জি, ফোর-জি ছাড়িয়ে হয়ত দশম জেনারেশনে পৌঁছে যাবে মোবাইল কমিউনিকেশন। জ্ঞানের এই বেগবান ধারা নিমেষেই আমাদের জীবনকে করে দেবে বিলাসবহুল।


নিউজার্সি, টেক্সাস, প্যারিস, লন্ডন, শিকাগো, ক্যানবেরা, জেনেভা কেন্দ্রিক এই পৃথিবীতে আমাদের চলাচলের যান হবে ইচ্ছে হলেই টেক অফ করবে এমন এক 'অটোকার'| ত্রিমাত্রিক অবয়বের মানুষটির চিত্র এসেই সামনে বা পাশে বসে কথা বলবে মোবাইল ফোন অন করার সাথে সাথে। সুশোভিত হবে কল্পনাকে ছাড়িয়ে চলে এই সভ্যতার। সেই সাথে সেখানে থাকবে অবর্ণনীয় কষ্টে থাকা মানুষ। দু'বেলা খেতে পাবেনা তারা। যেভাবেই হোক বড়লোক হবার প্রবল আগ্রহে ছুটে চলা মানুষরা কেউ কাউকে ছেড়ে কথা কয়না এখনই। ভোগ করতে চাওয়ার প্রবল আগ্রহে অন্যকে ঠকিয়ে, সুদ-ঘুষে জমানো টাকা দিয়ে গার্মেন্টসের মালিক -- যিনি গাড়ি কিনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে 'আউটিং' এ যাওয়া হাসমত সাহেব একদিন ধুম করে টিপু মাস্তানের গুলিতে মরে যাবে। ভোগের প্রবল স্বপ্নে কখনই সময়মত ফিরতে না পারা হাসমত সাহেবের ছেলেটা কৈশোরেই 'টাইমপাস' করতে বান্ধবী আর নেশার মাঝে আটকে গেছে তা জানবেনও না। এক অনিবার্য পরিণতিতেই সন্তানের হাতে শূণ্য হবে ''হাসমত গার্মেণ্টস এন্ড ডাইং''।

কাউকে ঠকিয়ে বড়লোক হলে দারিদ্রের সীমানার নিচে থাকা খুপড়ির ঘরের ছেলেটা কীভাবে চেয়ে চেয়ে সহ্য করবে সামনের রাস্তার পার্লারে লিসা আর সিমি হাজার হাজার টাকা দিয়ে পার্লারে ত্বক আর চুলের যত্নেই কাটিয়ে যাচ্ছে দিনের অনেক সময়। এই ক্রমঃবর্ধমান ব্যবধানই একটা অবধারিত সময়ের দিয়ে বয়ে নিয়ে যাবে।

১১ অক্টো, ২০১১

আমি অপার হয়ে বসে আছি

"আমি অপার হয়ে বসে আছি
ও হে দয়াময়
পারে লয়ে যাও আমায়" ...
গানটার কথা হঠাৎই মনে পড়ে গেলো। লালনের এই গানটা কবে শেষ শুনেছিলাম জানিনা। কিন্তু এখন মনে পড়লো কারণ বারবার মনে হচ্ছে আমি তো অপেক্ষাই করছি। এটাকে কি অপার হয়ে বসে থাকা বলে? অপার শব্দটার মানে আমি অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে কিছু পেলাম না। পার হওয়া মানে তো অতিক্রম করা। ''অ' উপসর্গটা এখানে 'না-বোধক' যুক্ত হয়ে সম্ভবত অপার এনেছে। অর্থাৎ অতিক্রান্ত হতে না পারাকে অপার হওয়া। অপার হয়ে বসা থাকা মানে তীরে এসে অপেক্ষা করা। কেউ এসে পার করে দিবে। অপর পাড়ে যাবো। তখন পার হবো। যতক্ষণ না পার হতে পারছি না, ততক্ষণ অপার হয়ে বসে আছি।

৫ অক্টো, ২০১১

সুন্দরে সুন্দরে পাল্লা


সবাই বলে দুনিয়া নাকি খারাপ। অনেক পচা। শুনলেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায়। আসলে দুনিয়া বেশ সুন্দরও। একটা ছোট মেয়ের গলায় গানটা শুনে লজ্জাই পেলাম। কত সুন্দর জিনিসগুলো চিন্তা করা হয়নি। সুন্দরে সুন্দরে পাল্লা দেয় আমাদেরই চারপাশের সুন্দর জিনিসগুলো।


গানটার এমপিথ্রি লিঙ্ক 


দুনিয়া সুন্দর, মানুষ সুন্দর
আসমান সুন্দর, জমিন সুন্দর
সুন্দরে সুন্দরে পাল্লা
জানিনা কত সুন্দর তুমি আল্লাহ

ঝরণা ছুটে চলে এঁকেবেঁকে
পৃথিবীর পটে কত ছবি এঁকে
নদীর কলতানে
সাগরের গর্জনে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে দেয় পাল্লা
জানিনা কত সুন্দর তুমি আল্লাহ 


বাগানে ফুটে ফুল রাশি রাশি
রাতেরই তারা ভরা চাঁদের হাসি
গুণগুণ গানে ডেকে
মৌমাছি মধু চাকে
ফুলে ফুলে করে হল্লা
জানিনা কত সুন্দর তুমি আল্লাহ 


দখিনা বাতাস গায়ে পরশ বুলে 
টানটানে পাল তুলে নৌকা চলে
তোমারি নামে মনে
ভাটিয়ালি সুরের তানে
দাড় টেনে যায় মাঝি মাল্লা
জানিনা কত সুন্দর তুমি আল্লাহ 

১ সেপ, ২০১১

চলে যাওয়া মায়ের প্রতি সন্তানের সে চিঠি







গত বেশ কিছুদিন যাবত একটা বই পড়ছি। বইটা পড়তে পড়তে মুগ্ধতা আমাকে দ্রবীভূত করে ফেলছে। এই কথাটা এজন্যই বললাম যে আমার প্রতিদিন মনে হয় -- এই বই পড়ে আমার অনুভূতিরা আজ দৈন্যতা মুক্ত হলো, এই ভালোলাগারা আমার মন, চিত্ত আমার ভাবনার রাজ্যকে ভালোলাগায় ডুবিতে তাতে আমাকে সেট করে দিচ্ছে। আর তাই "দ্রবীভূত" শব্দটা ব্যবহার করলাম। বইটার নাম হলো "আল কুরআনের শৈল্পিক সৌন্দর্য"। আরবি ভাষায় লিখিত "আত তাসবীরুল ফান্নী ফিল কুরআন" নামের এই বইটির বঙ্গানুবাদ পড়ছি আমি। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছি আসল স্বাদ আর প্রকাশভঙ্গির কেবল বহুদূর দিয়েই যাবে কথাগুলো। তারপরেও আমি যা পাচ্ছি, তা অবিশ্বাস্য! লেখক আরবি সাহিত্যের একজন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উঁচুস্তরের সাহিত্যিক এবং অমর কথাশিল্পী ছিলেন। তিনি হাফেজে কুরআন ছিলেন এবং আল-কুরআনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী গবেষক। সাইয়েদ কুতুব রহিমাহুল্লাহ ছিলেন আরবি সাহিত্য, শিল্পকলা, ললিতকলাতে বিশেষ পারদর্শী-- আর তাই তিনি পবিত্র কুরআনকে দেখেছিলেন এক অন্যরকম মাত্রায়। এই মাত্রাটির সাথে আমরা (বিশেষ করে আমি) সচরাচর পরিচিত নই। কিন্তু আল কুরআনুল কারীমের সীমাহীন শ্রেষ্ঠত্বের এক অসামান্য অংশ জুড়ে আছে তার শৈল্পিক সৌন্দর্য। বইটি আমি পড়ে শেষ করিনি, কিন্তু একটা দারুণ জিনিস অনুভব করেছি -- তা হলো কুরআনের আলোচনায় সৃষ্ট দৃশ্যকল্প। হোক সে নবী-রাসূলের সময়ে বর্ণনা বা গল্পগুলো -- হোক সে কিয়ামাহ, হাশরের ময়দানের বর্ণনা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কী অপার শিল্পকলায় তা আমাদের কাছে, মনকে স্পর্শ করে তাকে অনুভব করার মতন করে বর্ণনা দিয়েছেন সেই ব্যাপারটাই আমি বুঝছি নতুন করে। জাযাকাল্লাহু খাইরান যালিম শাসকের হাতে শহীদ হওয়া এই লেখককে এবং বইটির অনুবাদককেও-- যিনি একটা 'থ্যাঙ্কলেস জব' করে আমার মতন ক্ষুদ্র আত্মাকে চিন্তার এক ভিন্ন মাত্রাকে খুঁজে পেতে সাহায্য করলেন।

৯ জুল, ২০১১

আঁধারের পথে

অন্ধকার গুহার মাঝে থেকে বাইরের আলো মাঝে মাঝে চুইয়ে আসতে দেখে অনেকবার স্বপ্ন দেখেছিলাম ওই আলোতে যাওয়ার। তারপর মুক্তির উপত্যকায় যাবো বলে... প্রার্থনা করেছি শত-সহস্রবার ওই আলোর স্পর্শে নিজেকে ধন্য করবো বলে। অথচ এই গুহা থেকে বের হবার পথ আমি খুঁজে পেতাম না। গহন কালো আঁধারে নক্ষত্রালোকের আলোও চোখে আসতো না। ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসতো দৃষ্টিরা, ফিরে আসতো হৃদয়ের অনুভূতিরা -- যারা শান্তি খোঁজে।

একদিন দিক নির্দেশনা পেলাম সেই অন্ধকার থেকে মুক্তির, আলোর পথে যাবার। দিনের আলোর উদ্ভাসনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে একটুও অপারগ ছিলাম না। যাদের নির্দেশনায় সেই আলোর দেখা পেলাম, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিলাম অজস্রকাল।

একজন একজন করে সবাই ফেলে চলে গেলো একাকী নির্জন অরণ্যে। শ্বাপদদের মাঝে একান্ত একা। আমি চিৎকার করে ডাকি। সবাই হারিয়ে গেছে। আমি হতবিহবল হয়ে কাঁদতে থাকি। আমার চিৎকার কেউ শুনতে পায় না। আমি অনোন্যপায় হয়ে ফিরে যেতে থাকি সেই গুহায়। যেখানে অন্ধকার, যেখানে বিষাক্ত বিচ্ছুর দল আছে। কিন্তু হিংস্র শ্বাপদের ভয় নেই। আর অল্পকাল সঙ্গী পেলে হয়ত চলে যেতে পারতাম মুক্তির উপত্যকায়। যেখানে যুদ্ধ চলে একদল শীর্ণকায় সাদা মনের মানুষদের সাথে হিংস্র অসুরদের। সেই সাধারণ মানুষদের চোখে মুখে দৃঢ়তার ছাপ, হৃদয়ে সুন্দরতম স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন অসুরদের হাতে মৃত্যুর ভয়কে অতিক্রম করে যায়। ঝর্ণার পানিতে অবগাহন করে তারা একদিন ফেলবে স্বস্তির নিঃশ্বাস... সেই ঝর্ণার কোমলতা তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে।

আমি গল্প শুনতাম গুহাবাসী এক বৃদ্ধের কাছে। তিনি বলে গিয়েছিলেন অজস্র ঘটনা। মাঝে মাঝে পাখিদের কাছে শুনতে পাই খবর। আমার বিশ্বাস দৃঢ় হয়। তবু আমি জানি। আমি শূণ্যচারী। আমি আজ নিঃস্ব। আমি আজ নিঃসঙ্গ গ্রহচারী। এই আঁধারের মাঝে পড়ে থেকে স্বপ্ন দেখা যায়না। একদিন অসুরের দল আমাকে একলা পেয়ে তেড়ে নিয়ে চলে যাবে সেই উপত্যকায়। যেখানে হয়ত ছিটকে গেলেই পড়ে যাবো অতল গহবরে। যার নিচে শুনেছিলাম আগুণের কুন্ডলী। ভয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় অনুভূতিগুলো! কাঁপতে থাকে হাত-পা-অন্তরাত্মা...


আজ যেন সবই গল্প। একলা দাঁড়িয়ে হতবুদ্ধি হয়ে আমি আবার অন্ধকার গুহায় ফিরে যাই। গ্রাস করে নিতে তাকে অন্ধকার। খানিক পরেই হয়ত পথ হারিয়ে যাবে আমার। আবার সেই সরীসৃপের মত করে বেঁচে থাকা । আবার হারিয়ে যাবো এই হতাশায়, আবার হারিয়ে যাবো বিষাক্ততায়। তারপর? পরিণাম তো সেই গল্পের মতই! আমি তো আর নতুন কেউ নই! কেবল ইতিহাসের উপাত্তে নব্য সংযোজন...

হয়ত হারিয়ে যাবার আগে এই-ই আমার শেষ চিৎকার....
 

৩ ফেব, ২০১১

অশ্রুভরা চোখে প্রার্থনায় স্মরি তোমাদের

কেবল নিজেকে ঠেলে নিয়ে যেতে চাইছিলাম তাহরির স্কোয়ারে। অনেক মানুষ যেখানে একসাথে হয়েছে। নিশ্চিত মৃত্যুর শঙ্কা জেনেও যারা পিছু হঠছে না। বারবার মনে হচ্ছে এই রাতেও, মানুষগুলো ঘরবাড়ি ছেড়ে একদল গুন্ডা আর রক্তখেকো বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে...

কী তাদের আর্তি? শুধু মুক্তি চায় লোকগুলো। শ্বদন্ত বিশিষ্ট এক লোকের তিন দশকের দুঃসহ শোষণ থেকে মুক্তি। এই মুক্তি, এই স্বাধীনতার কী এক অদম্য টান!! লক্ষ লক্ষ লোককে বের করে নিয়ে পথেই রাত্রি যাপন আর মৃত্যুর হাতছানিও স্তব্ধ করতে পারেনা-- স্বাধীনতা তো এটাই!

জালিম মুবারাকের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে এই সাধারণ মানুষগুলো যখন রক্তাক্ত হয়ে আসছে। শত সহস্র মাইল দূরে এক শহরের সুখের বাগানে এই ক্ষুদ্র আত্মা কেবলি অশ্রুপাত করে চলেছি। জানিনা কেন বুকের ভেতর দলা পাকিয়ে আসছে কষ্টগুলো, জানিনা কী অদ্ভূত ভালোবাসায় তোমাদের অনুভূতিগুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে-- তবে আমি তোমাদের সাথে একাত্ম হয়ে আছি ভাই-বোনেরা! একাত্ম তো এক আত্মা হয়ে যাওয়া তাইনা? তাহরির স্কোয়ারে যেই অদম্য প্রেরণা তোমাদের আজ ঘরছাড়া করে ধরে রেখেছে--- সেই প্রেরণাকে আমি ভালোবাসি জানো? সেই স্বাধীনতাটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি।

আমার এই পাপাত্মা যদি তোমাদের সাথে একাত্ম হয়-- তাতে কীইবা হবে বলো? জানি কিছুই হবে না। তবু যদি হয়! কারণ, তোমাদের অশ্রু আর অন্তরের চাওয়া নিশ্চয়ই আল্লাহর না দেখা হয়না। এই আমার চোখ জুড়ে ঝরঝর করে ঝরে যাওয়া অশ্রুগুলোর যদি একটু মূল্য থেকেও যায়-- যদি আমার প্রার্থনা তোমাদের কারও ক্ষতস্থানের রক্ত ঝরাটাকে অন্ততঃ বন্ধ করতো তাড়াতাড়ি-- তবু তো সার্থক আমি!

তোমাদের এই কষ্ট দূর হোক। এই ইতিহাস যেন বিশ্বজুড়ে মানুষ স্মরণ করে আগামীতে। জালিমদের বিরুদ্ধে কোন শান্তিকামী আত্মাও পারেনা একটা সময় চুপ করে থাকতে। যখন পেছনে যাবার আর পথ থাকে না-- তখন তো সামনেই পথ খুঁজে নিতে হয়! ভাইবোনেরা, তোমাদের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি বিশ্বাস করো... বিশ্বাস করো আমার অন্তর মুচড়ে কান্না আসছে কেবল যখনি তোমাদের জায়গাটায় নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি।

আল্লাহ তোমাদের সহায় হোন। আল্লাহ তোমাদের মুক্তি দিন। হে আল্লাহ, মজলুমের আর্তি আপনার কাছে পৌঁছায় সবার আগে। এই মানুষগুলোকে মুক্তি দিন, তাদের মুক্তি দিন আল্লাহ। আপনার রোশনীর আলোতে এই মানুষগুলোর অন্তর আর আগামী দিনগুলোকে উদ্ভাসিত করে দিন। আমার কষ্টটুকু তো আর আপনি ছাড়া কাউকে বলতে পারিনা...

------
০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১১, রাত ০১:০৩

৩০ জানু, ২০১১

নীরবতা হীরন্ময়

খনো ভাবিনি এরকম কিছু লিখতে বসবো। কিন্তু কিছু কথা আজ বলতে ইচ্ছা করছে। এই কথাগুলো আমার বিগত জীবনে আবিষ্কার করা একদম গভীর উপলব্ধি থেকে বলা। 

ছোটবেলা থেকেই যে শিক্ষায় আমি বড় হয়েছি, তা ছিলো একটা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম। যেই ইসলামের অর্থ শান্তি। যেই শান্তির পরশ শুধু এই জাগতিক জীবনকে ছাড়িয়ে অনন্তকালের আখিরাতকেও পূর্ণ করে। এই শান্তি জীবনের প্রতিটি ভাবনা, চিন্তা আর ব্যবহারের মাঝে প্রতিফলিত হয়। আচরণে আর মনের কাছে 'তীব্র' অনুভূতিগুলোকে শীতল সঞ্জীবনীর স্পর্শে স্বাভাবিক গ্রহণীয় করে তোলে। তখন আর মানুষ কিছুতেই 'হায় হায় সব চলে গেলো', '"এ জীবনের আর কী পেলাম" -- জাতীয় ভাবনা থেকে বহুদূরেই থাকে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই বোধকরি তাই আমি 'এক্সট্রিম' হতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমার সবসময়েই এটা নিয়ে একটা হালকা আক্ষেপ মতন ছিলো। কিন্তু কিছু স্বভাব মানুষের বদলে ওঠা ব্যাপক কষ্টসাধ্য, তার ভিন্নরূপ সঠিক পথকে খুঁজে বের করা তখন জরুরী হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এই জ্ঞানের মাঝে আবিষ্কার করলাম কিছু সুন্দরতম পথনির্দেশনা। আমার মহান রব, যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক তিনি আমাকে নিকটবর্তী আর অত্যন্ত কল্যাণকর একটা পথের নির্দেশনা দিয়েছেন পবিত্র কুরআনুল কারীমেই। যার নাম এক কথায়-- মধ্যমপথ।

আমার দুঃখিনী মায়ের প্রতি

মা, আজ তোমার কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইছি মা। সত্যি বলছি মা, খোদার কসম, আমার চোখে অশ্রু বয়ে চলেছে অবিরাম। মা জানো, আমি এই দুঃখবোধকে কীভাবে চাপাবো জানি না, তাই তোমাকে লিখতে বসেছি মা। জানি তুমি পাবেনা, জানি নপুংসকের দল তার আগেই এটা কেড়ে নেবে। তবু তোমায় না লিখলে আমার অপরাধবোধগুলো যে আমাকে কুরে কুরে খাবে গো মা!


মা, সে-ই কবে তুমি আমাদের মা হয়েছিলে বলতে পারো? আজ অনেক বছর হলো, তাইনা? তোমার সন্তানেরা এলো তোমার কোল জুড়ে। কত স্বপ্নই না ছিলো তাদের নিয়ে তোমার। তুমি স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলে একদল সুন্দর প্রজন্মের। তারা আকাশে বাতাসে আনন্দের হর্ষধ্বনি করবে... তারা তোমার মুখে হাসি ফোটাবে। সেই স্বপ্ন তো তোমার অমূলক ছিলো না গো মা। তুমি তো কম কষ্টে মা হওনি। তুমি দেখেছিলে, তোমার জন্য কতগুলো প্রাণ তাদের বুকের তাজা খুন ঝরিয়েছিলো। তুমি জানতে একদিন তুমি মুক্তি পাবে। সেদিন তোমার সন্তানেরা তোমার মুখ উজ্জ্বল করবে। এই আশা করাটা তোমার অধিকার ছিলো-- তুমি তো আর কম কষ্ট সহ্য করনি!

মা গো, তুমি চল্লিশটা বছর ধরে দেখছো মা-- কী অবর্ণনীয় নোংরা হয়েছে তোমার সন্তানেরা। মা গো, আজ তোমারই বাড়ির সীমানায় কতগুলো অসচ্চরিত্র, লাজহীন মেয়েদের উলঙ্গ নৃত্য দেখতে খরচ করছে তোমারই সন্তানেরা। এক ভাই যখন একবেলা খেতে পায় না, তখন হাজার হাজার টাকা খরচ করে আরেকজন প্রমোদানন্দ করে মা, তার অনেক খায়েশ! মা, এসব তো তোমারই দোষ। তুমি ভেবেছিলে তোমার এক সন্তান অপরজনকে না দিয়ে খাবে না। তুমি ভেবেছিলে তারা একে অপরের সাথে মন খুলে আলাপ করবে, অপরের ভুল দেখলে প্রতিবাদ করে তাকে শুধরে দেবে। তারা ভালোবাসার এক পরিবার রচনা করবে! কোথায় গো মা? এতগুলো বছর পর তোমার সন্তানেরা অনেক দল হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা শক্তিশালী, তারা আজ অপর সবাইকে ছুরি চাকু দিয়ে হত্যা করতে চায়। কেউ চায় তার অর্থ দিয়ে সবকিছু কিনে অন্যদের ভিটেছাড়া করতে। মা গো, তুমি এই-ই চেয়েছিলে?

পড়শিদের সুন্দরী মেয়েগুলো যখন স্বল্পবসনে ঘুরে বেড়ায়, আমার বেশিরভাগ ভাইগুলো তাদের গিলে গিলে খায়। ওই বাড়ির লম্পট ছেলেটা দেখতে সুন্দর হলেও আমার বোনেরা ওর ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়ায়, জানো মা? ওরা জানে আমাদের এই দুর্বলতা, আর তাই সুযোগ পেলেই মেয়েগুলো আর ছেলেগুলো আমাদের আঙ্গিনায় আসে, ঢলাঢলি করে, তারপর অনেক টাকা নিয়ে চলে যায়। আমি জানি মা, এসব কথা জেনে তুমি কখনই সহ্য করতে পারবে না, কিন্তু মা এই সত্য তো একদিন না একদিন তুমি জানবেই। একদিন হয়ত ওদের বাড়ির মেয়েগুলো, ওদের বাসার সুন্দর গাছ আর জলাশয়ের লোভে তোমাকেই বেচে দিতে পারে ওরা! -- এই আশংকা আমায় স্বস্তি দেয় না গো মা।

আমরা তোমাকে মা মা করে চিৎকার করেছি, তোমার মাটিকে সোনা সোনা বলে দাবী করেছি। আবার তোমাকেই বেচে দিতে যাছি পড়শিদের কাছে। মা, এই অসহায় সন্তানকে ক্ষমা করো। মা, এই দুর্বল সন্তানটা তোমাকে অনেক ভালোবাসতো মা। মা, আমার চোখের ঝরঝর ঝরে যাওয়া অশ্রুগুলো কেবলি তোমাকে ভালোবেসে-- বিশ্বাস করো। তোমাকে ওরা কীভাবে কলংকিত করতে পারে ভেবে আমি শিউরে উঠছি ক্রমাগত। মা গো, আমার ভাইগুলোকে অনেক বুঝাতে চাইছি, চেয়েছি। কিন্তু ওরা একদম মজে গেছে মা। শরাব, অর্থ, নারীর লোভে ওরা ভুলেই গেছে এই সম্পত্তি, এই বাড়িঘরের দেখাশোনার দ্বায়িত্বটা তুমি কতটা আদর করে দিয়েছিলে আমাদের।


ওরা আজ তোমার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা করে। মা, বড় বোন মাঝে মাঝেই পড়শির বাড়ি বেড়াতে যায়। ফিরে এসে আমাদের নতুন নতুন আদেশ করে। জানো, সবগুলো কাজই কেমন যেন অদ্ভূত, তবু পালন করি। তুমি তো শিখিয়েছিলে বড়দের নির্দেশ পালন করতে! আমি তো তোমার কথাগুলো শুনি, ওরা কেন তবে এমন? ওরা কেন তোমার প্রতি সমস্ত প্রতিজ্ঞাই ভুলে গেলো?


আমি জানিনা আমার কী হবে। আমি জানিনা তোমার কী হবে মা। আমাকে ক্ষমা করিও। আমাকে ক্ষমা করিয়ো। আমি জানি তুমি আমার দুখিনি মা। তোমাকে কিছু দিতে পারলাম না মা। আমি ভীষণ লজ্জিত, মাগো! আমায় ক্ষমা করো।
---------
 ২৬ ডিসেম্বর ২০১০, দুপুর ০৩:৩০

জানি চলে যাবো একদিন

জানি একদিন চলে যাবো।
এই সকালের ঘাসগুলো আর আমার পায়ের স্পর্শ পাবেনা।
জানি সেদিন ঝরে যাওয়া পাতাদের আর কেউ মাড়িয়ে ঝুরঝুর করে দেবেনা।

জানি আটকে পড়া চড়ুইটাকে আর আমার মতন করে কেউ জানালা দিয়ে বের করে দেবেনা।
এই আমার আর পথ চলতে চলতে থেমে যাওয়া ঠেলাগাড়িটাকে ঠেলে দেয়া হবেনা।

সেদিন যেমন মায়ের কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো-- কতদিন আমার মামণিকে এভাবে পাবো জানিনা! এই মায়ের কোলে কোলেই বড় হয়েছি কতগুলো বছর! এই ছোট শরীরটার উপর কতনা পরিশ্রম বাড়িয়েছি সেই ছোট্টবেলায়। মামনির কত রাত যে ঘুম হয়নি আমার জন্য তা তো গুণেও হয়ত শেষ করা যাবেনা!

আজ আদরের ছোট বোনটার সাথে অভিমান করে কথা বলছি না দুপুর থেকে, হয়ত সে এখনো বুঝেনি আমাকে ফেলে রেখে বাসায় চলে এলো বলে এতটা পথ হেঁটে ফিরেছি নিজেকে কষ্ট দিতেই। তবু ওর উপর রাগ করবো না, ভালোবাসা একটুও কমবে না। কালই হয়ত ও চাইবে বলে সন্ধ্যাবেলায় বাইরে ছুটে যাবো সিংগাড়া নিয়ে আসতে।
কারণ, মাঝে মাঝেই মনে হয়-- একদিন হয়ত চাইলেও আর এত কাছে পাবো না, এভাবে করে ভালোবাসতে পারবো না।

মাঝে মাঝে অনেকের উপর অনেক রাগ হয়। অনেক মানুষের উপর! কেন তারা এত কষ্ট দিতে পারে অন্যদেরকে? প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলি না। খানিকক্ষণ নিজেকে বুঝাই, রাগ অন্যায়ের জন্ম দেয়...
এই যালিম মানুষদের বেশিরভাগের জন্যই করুণা হয়-- হায়! যদি তোমরাও একটু অনুধাবন করার ক্ষমতা হতো-- এই ছন্নছাড়া অল্প ক'দিনের বেড়াতে আসাটা খুব দম্ভের কিছু নয়।

ইদানিং কারো উপর রাগ করিনা, আক্রোশ দেখাই না। হয়ত কিছুদিন পরেই চলে যাবো একদম সবাইকে ছেড়ে-- এই মাঠ-ঘাট-প্রান্তর আর প্রিয়জনদের ছেড়ে।
সকালের স্নিগ্ধ আলোর পরশ হয়ত সেদিন চলে যাওয়া অনেকের মতন আমিও পাবো না।
রাতের এই জোছনার আলোতে পথে আমার ছায়াটাকে আলাদা করে দেখতে পাবো না। ছায়ার মাথাটাকে পা দিয়ে চেপে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে বাসার গেটে চলে আসা হবেনা।

একদিন হয়ত চাইলেও কিছুই বলতে পারবো না, শুধু অনুভব করে যাবো। হয়ত সেদিন সব বুঝেও না বলতে পারার আক্ষেপে যন্ত্রণাদগ্ধ হবো।
অথবা হয়ত একদিন কেবলি ভালোবাসা পাবো। যে ভালোবাসা পেলে আর কিছু লাগেনা! আনন্দে আর স্মিত হাসিতে কেটে যাবে অনন্তকাল।

একদিন......... কতদূরেই না চলে যাবো!!

(পুনশ্চঃ এটা কবিতা নয়, কেবলি স্রোতের মতন করে ভাবনাদের বয়ে যাওয়া)
--------------------------
১৮ ডিসেম্বর ২০১০, রাত ১০:০৭

স্বপ্নগাঁথা রূপকথা

একদেশে এক রাজা ছিল। তার রাজত্বে সুখের অন্ত ছিলো না। রাজ্যের সব লোক সুখে ছিলো। সেই রাজ্যে কেউ মিথ্যা কথা বলতো না। কেউ অভাবে থাকলেও রাজা ও তার মন্ত্রীরা এসে খোঁজ করতো তার খাওয়া দাওয়া চলে কিনা। না হলে রাজকোষ থেকে তাদের সাহায্য করা হতো। মোটকথা, রাজ্যের সবার মুখে কেবলি রাজার গুণগান।

সেই রাজ্য ক্রমাগত বড় হতে থাকলো। রাজার প্রতি অনুগত যোদ্ধাদের সংখ্যাও বাড়তে লাগলো আর তারা সবাই মিলে ছুটে যেতে লাগলো রাজ্যের দৈর্ঘ্য বড় করার জন্য। রাজাও খুশি তার বাহিনীর উপর। তার চাইতে সে আরো বেশি খুশি ছিলো তার রাজকুমারের প্রতি। অমন রাজকুমার পাওয়া আনন্দেরই ব্যাপার বটে। পিতার সমস্ত সুন্দর গুণাবলী রপ্ত করেছিলো সে। রাজকুমারের বীরত্বের গাঁথা-গল্প রাজ্যের রমনীকূলের কানে মুখে চলতো। অমন শৌর্যবীর্যের অধিকারী যেই রাজকুমার, তাকে পছন্দ হবেই না কেন? কিন্তু রাজকুমারের এসবে ভ্রূক্ষেপ ছিলো না। সে জানতো, তার কাজ সে করে গেলে একদিন কুঁচবরণ রাজকন্যার মতন সুন্দরী অপরূপা ঠিকই তার অন্দর আলোকিত করবে।

রাজকুমারকে নিয়ে রাজার অনেক আশা ছিলো। তার আশা, তার মৃত্যুর পর তার ছেলে হাল ধরবে রাজ্যের। কিন্তু সে তার ছেলের বীরত্বের চাইতে তার ছেলের শিক্ষাদানের গুণাবলীতে আরো বেশি আশাবাদী ছিলো। রাজকুমার কখনই তার সিপাহসালারদের রণকৌশল শেখাতে কার্পণ্য করে না। বরং, রাজকুমার চাইতো তার সেনাবাহিনীর সবাই তার মতই অসাধারণ বীরত্ব অর্জন করুক। সবাই যখন ক্ষুরধার যুদ্ধবাজ হবে, তখনই তো তাদের সফলতা!

কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন রইলো না। রাজ্যের কিছু হিংসুটে দুষ্ট লোক শত্রুদের রাজ্যের দৈত্যদের সাথে আঁতাত করলো। কিছু দৈত্য মানুষের রূপ ধারণ করে রাজ্যে ঘুরে বেড়াতো। তাদের ডেকে এনে সেই লোকগুলা রাজদরবারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করতে লাগলো। শত্রুরাও জানলো রাজকুমার আর তার সিপাহসালারদের কী করে ভুলিয়ে রাখা যায়। তারা যদি কিছুদিন তাদের যুদ্ধকৌশল নিয়ে চর্চা না করে, তাহলে ক্রমেই তাদের দুর্বল করে দেয়া যাবে। রাজকুমার আর তার সৈন্যেরা প্রতিদিন কয়েকবেলা করে তাদের নিশানা চর্চা করতো। দৈত্যরা এই জিনিসটাকে খুব ভয় পেতো।

একদিন রাজা চলে গেলেন। নতুন রাজকুমার হবে রাজা। কিন্তু সবাই শোকগ্রস্ত। কেউই কাজে মনোযোগী না। এমন সময়ে দৈত্যরা তাদের মনিবের আদেশে প্রথমে সৈনিকদের লক্ষ্য করলো। সাহায্যকারী লোকদের সাহায্যে কিছু সুন্দরীদের দিয়ে কানপড়া দিলো তাদের। তারপর, সৈনিক, উজীর-নাজির-সিপাহসালাররাও মদ-শূরায় মত্ত হয়ে চিত্তবিভ্রম হয়ে পড়ে রইলো এক নাচনেওয়ালীর আড্ডায়। সেদিন হঠাৎ রাজ্য আক্রমণ হলো। দৈত্যের দল কাউকে রেহাই দিলো না। সমগ্র রাজ্যে রক্তের বন্যা বয়ে গেলো। শুধু রাজকুমারের মতন কিছু বীর, যারা সজাগ ছিলো সেদিন--তারাই কেবল প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলো।

রাজকুমার গহীন বনে ছুটে চললো। তার পেছন পেছন ছুটছিলো প্রজাদের অনেকেই। খাল-বিল-নদী-পাহাড় পেরিয়ে তারা ছুটছে তো ছুটছেই। অনেক বছর চলে গেলো, অনেক সময় পেরিয়ে গিয়ে তারা থামলো। গায়ে তাদের ছিন্ন বস্ত্র। বেশিরভাগকেই হারিয়েছে তারা পথে। রাজকুমার একা ছুটে চলছিলো। তার মনে অনেক দুঃখ। বন জুড়ে কেবলি ভয়। একটা বুলবুলি পাখি এলো তার কাছে। রাজকুমারের কাছে কিছু সৈন্য জানিয়েছে তারা বেঁচে আছে, তারা একটু সুস্থ হলেই আবার রাজ্যের খোঁজে যাবে।

এরপর শুধু অপেক্ষার পালা। আশ্রয়হীনভাবে, ছিন্ন পোশাকে কেবলি তারা অপেক্ষায় ছিলো। তারপর একদিন এক পাখি উড়ে এলো তাদের হারানো রাজ্য থেকে। তার পায়ে লেখা চিঠি থেকে জানতে পারলো রাজ্যের শত্রু রাজার মৃত্যু হয়েছে। নতুন রাজা অনেক উদার মানুষ। তাদের ডেকে পাঠিয়েছে। আনন্দভরা মন নিয়ে আবার রাজ্যের পথে বেরিয়ে এলো তারা। পথে অনেকেই যোগ দিতে শুরু করলো। নিজেদের রাজ্যে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই তাদের ফেলে দেবে না। তারা সেই রাজ্যে ফিরে গেলে কত আনন্দ হবে, এই ছিলো পথের কষ্ট ভুলে যাবার সবচাইতে বড় সান্তনা।

তারপর সবকিছু ভুলে গিয়ে পথ চলতো রাজকুমার। পথের ক্লান্তি তাকে ছেঁকে ধরতো, বিশালাকার দৈত্যরা পথে আক্রমণ করতো, খাবলে ধরতো গায়ের কাপড়, হত্যা করবে বলে তারা পিছু ছুটতো! কৌশল করে সে পালিয়ে বাঁচতো। রাজকুমার হতাশ হতো না কেননা সে জেনেছিলো একদিন সে তার গন্তব্য পৌঁছবেই। সেদিন তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হবে। নতুন রাজকুমারী ফুলময়ী তাকে জানিয়েছে তার বীরত্বের অনেক গল্প শুনেছে সে। কথাটা ভেবে আনন্দে ভরে যায় রাজকুমারের মন। খালি পায়ে কাঁটাভরা পথে হেঁটে চলেছে তো কী হয়েছে? এই পথের শেষ মঞ্জিল হলো এক সুন্দর বাগান দিয়ে। ফুল-ফল-স্বচ্ছপানির স্রোত... সেই অপেক্ষাতেই আছে সে।

স্বপ্ন নিয়েই হেঁটে চলে সে... সুখের দিন তো বেশি দূরে নয়!

----------
১০ ডিসেম্বর ২০১০, রাত ১১:৪৮

২৫ জানু, ২০১১

সাইমুম সিরিজের বইসমূহের ই-বুক লিঙ্ক

আবুল আসাদের অসাধারণ একটি সিরিজ সাইমুম সিরিজ। আদর্শ, কৌশল, অ্যাডভেঞ্চার এবং আরো অনেক অনেক স্বাদের মিলিত লেখনী এই সাইমুম সিরিজ। ছোটকালে পড়া বইগুলোর প্রতি অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে আমার। আল্লাহ আবুল আসাদকে উত্তম বিনিময় দান করুন :)


  • এই লিঙ্কে  সাইমুমের অনেকগুলো বইয়ের ডাউনলোড লিঙ্ক পাওয়া যাবে। বইগুলো যদিও স্ক্যান করা, তবু পড়া তো যায়!