২৩ ফেব, ২০১৪

জীবনের বাস্তবতা : আমাদের জীবনের কষ্টগুলো কি এমনি এমনি?

​​কিছু বিষয় আছে যেগুলো ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কত কঠিন সময় যে মানুষের জীবনে আসে, যার শতভাগের একভাগ অন্য কোন মানুষ অনুভব করতে পারবে না, কেবল যিনি ভুগছেন, তিনিই বুঝেন। তখন সদ্য মাধ্যমিক পাশ করেছি, একটা ইংরেজি ম্যাগাজিনে 'মায়ের লেখা সন্তানের প্রতি চিঠিতে' একটা লাইন লেখা ছিলো, "Fiction ends where fact begins", যা আমার সেই কিশোর হৃদয়ে দাগ কেটেছিলো। বাল্যজীবনে আর কৈশোর জীবনে আমি অজস্র গল্প-উপন্যাসে ডুব দিয়ে থেকেছি, তারুণ্যে আর যৌবনের উপলব্ধিগুলো আমাকে শিখিয়েছে, আমাদের একটা জীবন কখনো গল্প-উপন্যাস, পত্রিকার টুকরো ঘটনা বা অভিজ্ঞতার সাথে কখনই মিলে না, অন্য কোন মানুষও তা উপলব্ধি করতে পারবে না। এই একেকটা মানুষের গোটা বিষয়গুলোর একমাত্র সাক্ষী যিনি, তিনিই পারবেন সত্যিকারের সঠিক পুরষ্কার দিতে, শাস্তি দিতে, ভালোবাসা দিতে...

বুক যখন খা খা করে তখন কী করবো?

​দিনের মাঝে বড় ক্লান্ত লাগে অনেক সময়... হৃদয়টাতে কেমন শূণ্যতা অনুভব হয়। অনেকগুলো বছর ধরে এই খা-খা অনুভূতিকে কেমন করে দূর করা যায় ভেবেছি। একসময় ভাবতাম হয়ত আমার সফল হতে হবে। অনেক সফলতা পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ, সেই অনুভূতিরা পিছু ছাড়েনি। এরপর ভেবেছিলাম হয়ত সঙ্গী পেলে বর্তে যাবো। অনেক ভালো মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, কিন্তু মানুষ পাশে থাকতে পারে, তার পাশে চলতে পারে, কিন্তু হৃদয় আর অনুভূতি আমাদের নিজেরই, সেখানে কেউ ভাগ বসাতে পারে না। অনেকে সুন্দর কথা বলতে পারবে, উত্তম উপদেশ আর আশার বাণী দিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে পারবে -- কিন্তু হৃদয়ের শূণ্যতাকে পূর্ণ করার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই...

১৭ ফেব, ২০১৪

খেলাধূলা যখন ভয়ংকর এন্টারটেইনমেন্ট নেশা

এককালে আমি খুবই খেলাপাগলা ছিলাম। যেই বয়সে সবাই কার্টুন দেখতে আর কমিকস বই পড়তে দৌড়াইতো, সেই বয়সে আমি আমার বন্ধুর মামার বাসায় গিয়ে (ডিশের লাইন ছিলো) স্টার স্পোর্টসে মামার পাশে বসে দিন-রাত সাউথ আফ্রিকা ভার্সাস ইন্ডিয়ার টেস্ট সিরিজ দেখতাম। অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, প্যাট সিমকক্স আর ল্যান্স ক্লুজনার বোলিং করে দিনভর, রাহুল দ্রাভিদ আর টেন্ডুলকার ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকায়। সেই আমলে জিম্বাবুয়ের কোচ ছিলো ডেভ হটন, ম্নাঠে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিকদের কাঁপাকাপি ব্যাপার। সেই প্রাইমারি স্কুল টাইমে কয়জন এমন খেলা দেখতো জানিনা। তখন আমার একটা খাতায় পৃথিবীর যাবতীয় ক্রিকেট টিমের ১৪জন প্লেয়ারের নাম লেখা ছিলো। ১৯৯৪ সালে ক্লাস টু-থ্রিতে পড়লেও পুরো বিশ্বকাপের সব খেলা দেখেছিলাম। সাদা কাগজে সাইনপেন দিয়ে  ডিজাইন করে খেলার রেজাল্টগুলো সংরক্ষণ করেছিলাম। এইসব এখনো আমার কাছে আছে...

১৬ ফেব, ২০১৪

[গ্রন্থচারণ] আযকারে মাসনূনাহ : ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম

​এমন একটা বইয়ের নাম বলবো যা হয়ত কারো জীবন বদলে দিবে। আমার খুব প্রিয় বইটার কথা বলতে চাইছি, যে বইটি আমার জীবনে একটি ভিন্ন ধরণের কল্যাণময়তার মাত্রা সৃষ্টি করেছে তা আমি নিঃসন্দেহে ও নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ। আগে কিছু দু'আ জানতাম কুরআন পড়তে পড়তে এবং হাদিস থেকে। সেগুলোই ঘুরে-ফিরে পড়তাম। একসময় এক ছোট ভাইয়ের কল্যাণে "আযকারে মাসনূনাহ" বইটি হাতে পেলাম। বেশি বেশি দু'আ করার আগ্রহ ছিলো, তাই হাতে নিয়েও নিলাম। এরপর আমরা অনেকেই একবারে ৩-৪ কপি করে কিনেছি যেন নিকট বন্ধু ও আত্মীয়দের হাদিয়াস্বরূপ বইটি দেয়া যায়। বইটা পড়ে জানতে পেরেছি কেমন পরিস্থিতিতে, কোন বিষয়গুলোতে আমাদের প্রিয় নবী, দুনিয়ার সেরা মানুষ রাসূল  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কীভাবে কোন কোন দু'আ করেছিলেন।

অবাক ভালোবাসা


আমার জীবন থেকে আরেকটি বছরের আরেকটি 'ভালোবাসা দিবস' চলে গেলো। অনেক উদ্দামতা, অনেক যৌবনের তরঙ্গের সাক্ষী হয়ে রইলাম আবার। বন্ধুর কাছে শুনলাম, তার কলিগকে গত পহেলা ফাল্গুনে এবং 'ভ্যালেন্টাইন ডে' পালনের এই ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার যেতে হচ্ছিলো অফিসের কাজে। তিনি দু'দিনের যাত্রাপথে বহু কষ্টে ছুটে-ফিরে একটা সিট পেয়েছেন, এদিকে বাসস্ট্যান্ডে অনেক ভীড়, পর্যাপ্ত সিট নেই বাসে! 'ভালোবাসার' কামতরঙ্গ ছুটে এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকেও ভাসিয়ে দিয়েছে হয়ত... আল্লাহই জানেন। বিগত বেশ কয়েক বছর থেকে এইসব দিনগুলোতে সম্ভব হলে ঘরেই থাকি, খারাপ লাগা আর অপছন্দনীয়তায়। এবারেও ছুটির দিন থাকায় তার ব্যতিক্রম হয়নি। মনে আছে, প্রায় দু'বছর আগে একটা লেখা লিখেছিলাম আমার পূর্বেকার জীবনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম 'এর বেশি ভালোবাসা যায় না ও আমার প্রাণপাখি ময়না' শিরোনাম দিয়ে: http://idream4life.blogspot.com/2012/02/blog-post_7635.html

৯ ফেব, ২০১৪

আপনার অস্থিরতা এবং অশান্তিগুলোর একটি সহজ সমাধান


আমরা কে না অশান্তিতে থাকি? কার হৃদয়টা অস্থির নয়? আমার এটুকু জীবনে আমি স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি-অফিসের সর্বত্রই অস্থির মানুষের প্রবল বিচরণ দেখেছি, নিজের কথা তো জানিই। বিষয়টা হলো, এই অস্থিরতা কেন? অশান্তিটা কেন? কীভাবে তার সমাধান করা যেতে পারে তা ভেবে কে কী করলাম সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

মাঝে মাঝেই জীবনে পেছন দিকে তাকিয়ে অনুভব করি, এই গোটা জীবনের কত পরিশ্রম - স্কুল, কলেজে কতই না কষ্ট করে সবাই পড়ে। জীবনের ছোট ছোট আচরণগুলো আব্বা-আম্মা শিক্ষা দেন, শিক্ষকরা শেখান। আমরা নিজেদের গড়ি। শার্টের বুকের বোতামটা খোলা না রাখাও শিক্ষা, বড়রা সামনে থাকলে পায়ের উপরে পা তুলে না-বসাও একটা শিক্ষা। কাউকে পানি খেতে এগিয়ে দিলে উপরে ধরতে হয় না, কারণ তিনি যেখানে মুখ দিবেন সেখানে আমার হাত না-লাগা উচিত -- এটাও একটা শিক্ষা। এমন হাজারো শিক্ষা গলাধঃকরণ করে তবু সবাই একসময় কেমন যেন উলটে যায়, জীবনের লক্ষ্য কী জিজ্ঞাসা করলে অন্তঃসারশূণ্য কথা বলে। অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারী মানুষও সম্পূর্ণ মূর্খদের মতন কথা বলে একসময়, কারণ তাদের জীবনটা কোন একটা সময় এমন কিছু লক্ষ্যে গড়তে শুরু করেছিলেন তারা, যা হয়ত কেবলই পৃথিবীর বস্তুগত বিষয়ভিত্তিক, তাতে আমাদের জীবন, এই অন্তর, এই সত্ত্বার অস্তিত্ব, ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনার কোন খোরাক ছিলনা। মনগড়া জীবনদর্শন দিয়ে জীবনকে চালিয়ে নেয়া...

৪ ফেব, ২০১৪

ছোট থেকেই তো অনেক বড় হয় সবকিছু

​কলেজ জীবনে বন্ধুরা চকচকে উজ্জ্বল চেইনের বড় ডায়ালের ঘড়ি, ক্যাটস-আই টিশার্ট, নাইকি জুতা নিয়ে ঘুরাঘুরি করতো 'পার্টজ' নিতে। এখন হয়ত সেই জায়গায় আইপ্যাড, আইফোন দিয়ে রিপ্লেস হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, এইরকম দামী ঘড়ি টাইপের জিনিসের দিকে আমার মন লালায়িত হতো না, বরং তাকে এক টুকরা কাঠ দেখতে যেমন লাগে, অমন লাগতো। নিজের এইরকম ভিন্নতার কারণে খুব অস্বস্তি লাগতো, আমার মতন কাউকে ডানে-বামে পেতাম না। থাকলেও হয়ত তারাও আমার মতন চুপ থাকতো।

ভ্রমণে বের হলে অনেক কিছু শেখা যায়

​ভ্রমণে অনেক অভিজ্ঞতা হয়। ভ্রমণে বের হয়ে অনেক রকমের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানের মানুষের সাথে পরিচয় হয়, আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্যকে দেখার সুযোগ হয়। না চাইলেও অন্যদের বিচিত্র আচরণগুলো 'বিনা প্রতিবাদ ও সমালোচনাতে' মেনে নিতে হয়; অনেকক্ষেত্রেই মানুষ বাইরে থাকার সময়টুকুতে সহজাত 'কুৎসা রটানোর' সুযোগ পায় না, এগুলোর ফলে 'ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার' সাথে তাদের পরিচয় ঘটে, পরিচয় হতে তারা বাধ্য হয়।

কয়েক বছর ধরে চাকুরিজীবনের দমবন্ধ এক লম্বা ছুটিহীন জীবনের মাঝে হাঁসফাঁস করছিলাম। আল্লাহ সুযোগ জুটিয়ে দেয়ার পরে বেশ ক'দিন অনেক জায়গা ঘুরে, অনেক মানুষের সাথে মিশে, অনেক অনেক ঘটনা পেরিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু শিখলাম। এই শেখা পয়েন্ট করে করে লেখার মতন না, বেশিরভাগই উপলব্ধিতে মিশে গেছে, যা পৃথিবীটাকে দেখার চোখটাকে আগের চেয়ে অনেক অন্যরকম করে বদলে দিয়েছে।

২ ফেব, ২০১৪

[গ্রন্থচারণ] ঈমানী দুর্বলতা : শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ



বইয়ের নাম: ঈমানী দুর্বলতা 
লেখক : শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ 
মূল্য: ৩০ টাকা (প্রায়) 

এরকম রত্নের টুকরা টাইপের জিনিস না পড়া একটা বোকামি এবং অনুচিত কাজ। অবশ্যই পড়া উচিত এই বই। ঈমানের ফকিন্নি টাইপের অবস্থা নিয়ে দুনিয়ার ডিগ্রি, টাকা-পয়সা, সম্মান-খ্যাতি, রূপ-সৌন্দর্য, সুখের সংসারের কোনই মূল্য নাই। দুনিয়া পেয়ে আখিরাত হারানোর কোনই মূল্য নেই। আবার, সেই চরম দুর্ভাগা হয়েও লাভ নেই, যারা আখিরাত এবং দুনিয়া উভয়ই হারালো…

বইটিতে উল্লেখ আছে –
অন্তঃকরণের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। অন্তঃকরণকে আরবিতে কালব (পরিবর্তনশীল) বলা হয়েছে এ কারণেই যে, তা দ্রুত পরিবর্তনশীল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“অন্তঃকরণকে কালব বলা হয়েছে বেশি বেশি পরিবর্তন হবার কারণে। অন্তঃকরণের উদাহরণ হলো একটি পাখির পালকের মত যা গাছের ডালে ঝুলানো আছে, বাতাসে সেটিকে এদিকে সেদিকে ঘুরাচ্ছে”। [আহমাদ ৪/৪০৮, সহীহ আল জামে ২৩৬৫]