২৪ ডিসে, ২০১৫

এবার তবে নিশ্চুপ থাকা হোক

 

প্রতিটি মানুষের জীবনই কষ্টের। এমনকি যে অপরাধ করতে করতে নিজেকে জুলুম করছে, সে-ও তার অপরাধবোধ, গ্লানি ঢাকতে অন্য কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। অথচ রোগে যখন সে ভুগতে থাকে, অথবা যখন মরে যায়, তাকে কাফনের কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটির নিচে রেখে আসা হয়। যুগে যুগে শত-শত ক্ষমতালোভী শাসকগুলো এভাবেই বিদায় নিয়েছে। এরপর, একসময় তারা হয়েছে ইতিহাসে বিলীন। কেউ জানেনা, খোঁজ রাখেনা।

ভাবলে কেমন অদ্ভুত লাগে, না? যে মানুষটি হয়ত পৃথিবীর কোনো একটি কোণে, এই যেমন ইয়েমেনে কিংবা সিরিয়ায় আজ একটা পথচারী কিশোর হেঁটে চলতে গিয়ে বোমার আঘাতে মরেই গেলো। কেন মরলো, কে মারলো-- বুঝলোই না। আবার হয়ত হেবরনে, পশ্চিম তীরে অথবা কাশ্মীরে দখলদারী আর্মির হাতে একটা কিশোর হয়ত বন্দী হলো যখন, তখন তার বয়েসি পশ্চিমা ছেলেগুলো পার্টি করে, নাইটক্লাবিং করে কোমর দোলাচ্ছে। বন্দী ছেলেটি অপরাধ সে বুঝলোও না, তাকে গরম পানিতে পুড়িয়ে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে মেরে ফেলা হলো। লাশটাও ফেরত গেলো না। কিশোরের মা আহাজারি করে বাকিটা জীবন পার করবে। অথবা হয়ত সেই অভাগী মা একদিন নিজেই গুলি খেয়ে মরে যাবেন।

জীবন-মৃত্যুর এই খেলা যখন চলছে, তখনই কেউ আবেগঘন প্রেম করছে, কেউ ঝগড়া করছে, কেউ ঠকাচ্ছে, কেউ বার্থডে কেক কাটছে। সবকিছুরই সাক্ষী থাকছে অনেকগুলো রূহ, অনেকজন ইনসানের। তখনই আকাশে হয়ত আলোচ্ছটা জ্বললো উল্কাপিন্ডের। ফুল ফুটছে বাগানে, একজন গার্ডেনার বছর ধরে বসে ছিলেন নাইটকুইনকে ফুটতে দেখবেন বলে। একদল ডলফিন ঝুপ করে লাফ দিলো। পৃথিবীময় সৌন্দর্যের এই নিপুণ বাগানে কত ঘটনা! কত সৃষ্টি, কত প্রেম, কত ভালোবাসা চারপাশে। তবুও নিষ্ঠুর মানুষগুলোই হত্যা করে, কী পেতে চায় কে জানে? হিংসায় জ্বলে-পুড়ে নিজেই ডুবে যায় অনল দহনে।

এত অনুভূতি ধারণ করতে পারে কি কোনো অন্তর? আমাদের হৃদয়ের মাঝেই তো আকাশের মতন বিশালতা আছে, তবু কি পারি এই পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে অনুভূতিতে ধারণ করতে? তীব্রতম কষ্টের মূহুর্তগুলো কোনো সাহিত্যে থাকে না, কেউ লিখতে পারে না। তেমনি সর্বোচ্চ আনন্দের মূহুর্তও পাওয়া যায় না কোথাও। মানুষ পারেনা সুন্দর কিংবা কষ্টকে শব্দে ধারণ করতে।

বাকি সবই খুব অগভীর, প্রদর্শনী কেবল। অগভীর অনুভূতিহীনতায় সবাই ভেসে যায়। অবাক পৃথিবীতে অনেকেই লিখতে চেয়েছে, একসময় হয়ত শ্রান্ত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যেতে চেয়েছে। পারবে না বলে ছেড়ে দিতে চেয়েছে কেউ কেউ।

যিনি বানিয়েছেন সব, সমস্ত সুন্দর-অসুন্দর,ভালো-মন্দগুলো নিয়ে তিনিই বলা উত্তম। থাকুক তবে সকল শব্দ। এবার তবে নিশ্চুপ থাকা হোক।

**************
৩০ নভেম্বর, ২০১৫
সন্ধ্যা ৬-১৫ মিনিট

১৬ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৬



(৪৫০)
খুব সুন্দর একটা ভবিষ্যত গড়ে নিতে সুন্দর অতীত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। নিজেকে সুযোগ দিন। আপনার হাতে সময় আছে, বর্তমানকে কাজে লাগান। পেছনের দিকে না তাকিয়ে নিজের সেরাটুকু ব্যবহার করুন বর্তমানের মাঝে...

(৪৫১)
সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?

(৪৫২)
আপনি হয়ত অনেক ভালো কাজ করতে চান। গাছে পানি দেয়াও তেমন। সেই চিন্তা থেকে একটা গাছে পানি দিলেন নিয়মিত। পরে দেখলেন গাছটা ক্যাকটাস, সেটার পানির দরকারই নেই ওভাবে। তাতে কি আপনার ক্ষতি হলো? নাহ! এটাও শিক্ষা হলো, জীবনের এক নিগূঢ় জ্ঞানার্জন হোলো। এমন হাজারো অনাকাংখিত শিক্ষার সমন্বয়ই আমাদের জীবন।

 (৪৫৩)
সব সমস্যার বেশি সরলীকরণ করলে সমস্যা। জটিল সমস্যার সরল সমাধান চাইতে গেলে সব হারাতে হয়। একই বুঝ দিয়ে সবাইকে বুঝতে গেলেও বিপদ।

(৪৫৪)
সবকিছুর সময় আছে। সবকিছুর একটা তীব্র সময় থাকে। চাঁদ যেমন পূর্ণিমায় তার পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। অন্য সময়ে চাঁদের আলো ক্ষীণ থাকে, অমাবশ্যায় সে নিভেই যায়। মানুষের জীবনের অনেক কিছুই হয়ত তার সাথে মিলে যায়।

হয়ত অনেকের লেখালেখিও অমনই। হয়ত অনেক ফেবু পাতাও অমন। অনেককাল নিয়মিত শব্দগুচ্ছ ভেসে এসেছে অনেকের চোখে। দীর্ঘদিন সকালে-দুপুরে-রাতে প্রযুক্তির নানান ছোঁয়ায় খুব সাধারণ কথাগুলোও কিছু নামহীন পরিশ্রমের ফল হয়ে প্রকাশ হয়েছে নিয়মিত বিরতিতেই। হয়ত সে বিরতি দীর্ঘায়িত হবে, হয়ত অমাবশ্যার আঁধারের মতন মিলিয়ে যাবে। কে জানে তা?

সবকিছু কেবল তিনিই জানেন, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তবে, গাছের পাতাও যেমন বসন্তে সুশোভিত হয়, ধীরে ধীরে শীতে এসে ঝরে পড়ে শুকিয়ে। জীবনেও আমাদের অমন কতই না চক্র রয়েছে। হতে পারে, কিছু ফেবু পাতাও অমন চক্রের অংশ। প্রযুক্তির সৃষ্টি এই পরাবাস্তব জগতের প্রদর্শনীটুকুর পেছনে তো মানবিক ও প্রাণিজ মানুষেরই সক্রিয় উপস্থিতি। তাকেও তো মানতে হয় বসন্ত-গ্রীষ্ম-শীতের নিয়ম।

প্রকৃতিপানে চেয়ে, তাতে অনুভব করে শেখার আছে অনেক কিছু। নিতান্ত সহজ সরল চেহারায় জীবনের গভীরতম জীবনোপলব্ধি ওতেই পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের উপকারী জ্ঞান দান করুন, আমাদের সকল ভালো কাজকে কবুল করুন।

১৫ ডিসে, ২০১৫

অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত মুক্তমনা এবং ধর্মপ্রচারকরা একই রকম


অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত মুক্তমনা এবং ধর্মপ্রচারকরা একই রকম -- শুনতে একটু কেমন কেমন লাগতে পারে। তবে ঘটনা সত্য। এটা একটা খুব সাধারণ মানসিকতা। অনেক ধর্মপ্রচারক আছেন, যারা নিজেদের চিন্তাটাকেই একমাত্র সঠিক মনে করেন, তারা ভিন্ন কোন ধারণাকে সহ্যই করতে পারেন না এবং শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। অথচ তাদের 'মতামত' ভুল হতেও পারে, সেটা ঐশীবাণী নয়। তবে, সেই মতামতকেও তারা সঠিকতম হিসেবে ধরে অন্যদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন।

শুধু ধর্মপ্রচারক নয়, প্রচুর তথাকথিত মুক্তমনার দল এই ধরণের মানসিকতাকে ধারণ করে। সোজা বাংলায় এই মানসিকতাটাকে বলা যেতে পারে বাইনারি চিন্তাভাবনা। তারা মুক্তমনা হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করলেও ভিন্নমতের প্রতি তারা আগ্রাসী মনোভাব ধারণ করেন। যুক্তি সেখানে মূল্যহীন হয়ে যায়।

এখানে খুব সুন্দর গোলকধাঁধাঁ হলো -- এই মুক্তমনা দাবী করা ক্ষুদ্রমনারা প্রকৃতপক্ষে বাধ্য করেন অন্যদের যেন তাদেরকে গ্রহণ করা হয়। যেন মুক্তমনা হবার একটি মাত্র পথ রয়েছে !! তারা মূলত ভিন্নমত থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। আরেকটি বিষয় হলো, তারা মূলত নিজেদেরকে নিয়েই সন্দিগ্ধ থাকে।

বেশিরভাগ মানুষের মাঝে এই মানসিকতা আছে। এই মনগুলা খুবই বাইনারি, তারা কেবল নিজেদেরকেই সঠিক এবং অন্যদেরকে ভুল মনে করেন। এদের বেশ কিছু গুণাবলীর একটা হলো, তারা প্রচন্ড আবেগপ্রবণ হন এবং আবেগাক্রান্ত অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এই আবেগতাড়িত মনগুলো অন্য মানসিকতার ও অন্য মতের লোকদেরকে ভয় পায়। নিজেদের অবস্থানকে হারিয়ে ফেলার ভয়ও রয়েছে এতে। ফলে সেই ভয় তাদের পেয়ে বসে বলেই ভিন্ন মতকে প্রচন্ড শক্তিতে আক্রমণ করে ধরাশায়ী করে ফেলার চেষ্টা করে।

এই মানসিকতার ধারক মনে হয় এই সমাজে তো বটেই, এই পৃথিবীতেও প্রচুর দেখা যাচ্ছে। এই মানসিকতার মানুষগুলো দিনদিন এমন ধারণার দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে চলেছে যেসব বুদ্ধিবৃত্তিক কোন যাচাই করা হয়না এবং অত্যন্ত দুর্বল যুক্তি বা যুক্তিহীন হয়ে থাকে।

চিন্তার উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন। নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে কেন আমি এই কথা বলছি, চিন্তা করে দেখতে হবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সত্য একটা হলেও সত্যের কাছে পৌঁছানোর অনেকগুলো পথ থাকতে পারে। অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা গড়ে তোলাও প্রয়োজন। বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি এই সময়ের দাবী, এই পৃথিবীর দাবী।

লেখাটির অনুপ্রেরণাঃ
- বিষয়ঃ ডগম্যাটিক মাইন্ড/Dogmatic Mind
- বইয়ের নামঃ The Quest For Meaning : Developing the Philosophy of Pluralism, লেখক: তারিক রমাদান, প্রফেসর, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি
- প্রাসঙ্গিক ভিডিও: http://www.youtube.com/watch?v=XgW3vP7p3no

১৪ ডিসে, ২০১৫

ভাঙ্গবেন তবু মচকাবেন না? এই ভয়াবহ ভুল থেকে বেরিয়ে আসুন!



সমাজে আমাদের অজান্তেই অনেক কিছু শেখানো হয়। তার মধ্যে একটি হলো, 'ভাঙ্গব তবু মচকাবো না' নাকি শক্তপোক্ত মানুষ হবার যোগ্যতা। অথচ, এটা স্পষ্ট অহং তথা 'ইগো'ওয়ালা কথা। কী অদ্ভুত খারাপ একটা বিষয় চালু হয়ে আছে আমাদের অনেক মানুষের মাঝে!

মুসলিমদের আল্লাহ নিয়মিত বিপদ দেন, পরীক্ষা করেন। তারা ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে। কাফিরদের রশি আল্লাহ ছেড়ে দিয়ে রাখেন, তারা সহজে বিপদে বাঁকা হয় না। মুমিনদের তুলনা হলো ঘাস কিংবা লতাগুল্মের মতন। প্রতিটি দমকা হাওয়া তাদের উপরে দিয়ে বয়ে যায়, তাদের নাড়িয়ে দেয়। কাফিরদের তুলনা হলো বিশাল বৃক্ষের মতন। হাওয়া তাদের উপরে প্রভাবই ফেলে না। কিন্তু বড় একটা ঝড় এলে তারা শেকড় সহ উপড়ে যায়, সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।

মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত 'vulnerable' (ভালনারেবল) হওয়া। ওই কথার সাথে মিলিয়ে বলতে গেলে তা হবে 'প্রচুর মচকে যাওয়া'। আমাদের মাঝে অজস্র মানুষ আছে, অন্যের কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশের ভয়ে 'rigidity' (শক্তিশালী হিসেবে) দেখায়, কৃত্রিমভাবে নিজেকে শক্তপোক্ত করে প্রকাশ করে। তারা নিজেকে সারাক্ষণ চাপের মধ্যে রাখে, সত্যিকারের সত্ত্বাটাকে অন্যের কাছে প্রকাশ করে না।

কিন্তু, আপনি যখন ঠিক আপনার মতন হয়ে অন্যের সাথে মিশবেন, ঠিক সত্যিকারের আপনি যখন অন্যের সাথে আলাপচারিতা করবেন তখন আপাতদৃষ্টিতে অনেকে দুর্বল মনে করতেও পারে। ফলশ্রুতিতে আপনাকে আহত করতেও পারে। কিন্তু আপনি এই 'মচকে' যাওয়াতেও কিছুতেই পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বেন না। ব্যথা সারিয়ে, ভুলটুকু বুঝে সংশোধিত হয়ে, নিজেকে আবার খুব সহজেই এই ধাক্কা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আপনি আবার হৃদয় উন্মুক্ত করে অন্যদেরকে আপনার কাছে টেনে আনতে পারবেন। আবার, আপনি এবার আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলেন, আপনি অনেক ব্যথাকেই এখন দূর থেকেই চিনতে পারেন, কাটিয়েও উঠতে পারেন। খারাপ মানুষদের কারণে আপনি আপনার হৃদয়ের কোমলতা, সজীবতাকেও হারাবেন না। কেননা, অনেক মানুষই খারাপ লোকের দ্বারা আহত হয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। এই ভুল সিদ্ধান্তে সে নিজেও ধ্বংস হয়, আরো অনেককে ধ্বংস করে।


আপনি যখন হৃদয় উন্মুক্ত করে ভালোবাসতে পারবেন, তখন আপনি অনেক শক্তিশালী মানুষ। মানুষের প্রতি সন্দেহ-সংশয়-বিতৃষ্ণা নিয়ে তাদের কাছে গেলে তারা সহজেই বুঝতে পারে আপনি একজন 'দূরের মানুষ'। আপনি তখন সত্যিকারের দুর্বল। কেবলমাত্র সাহসীরাই অন্যকে বিশ্বাস করতে পারে, কেবলমাত্র সাহসীরাই ভালোবাসতে পারে। কেবলমাত্র সৎ অন্তঃকরণ যাদের, তারাই অকপট হতে পারে, সরল, ভঙ্গুর হতে পারে, তারাই জেনুইন (genuine), ভালনারেবল (vulnerable) হতে পারে।

পৃথিবীতে আপনি ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হবেন। হতেই হবে। এটাই জগতের রীতি। তবে এই আঘাতে নিয়মিত মচকাতে থাকুন, কাঁদুন, আহত হোন। আবার জেগে উঠুন।

হৃদয় আপনারই, আপনার মৃত্যুর আগে কেউ একে কেড়ে নিতে পারবেন না। একে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনি যা, তেমনটিই হোন। আপনি যেমন, তেমন স্পষ্ট, সরল ও সত্যিকার আপনাকে উপস্থাপন করুন অন্যদের কাছে।

'ভাঙ্গবো তবু মচকাবো না' বলে অহং নিয়ে চলে কী লাভ? শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয় অহংভরা মিথ্যুক, শয়তান। ভালনারেবল (vulnerable) হোন, সরল হোন, আপনি যেমন তেমনটিই হোন। 'প্রকৃত' আপনাকে আঁকড়ে ধরে সংশয় থেকে বেরিয়ে আসুন। সাহসী হয়ে ভালোবাসুন। হয়ত ধাক্কা খাবেন, আহত হবেন; কিন্তু তবু কখনো ধ্বংস হবেন না ইনশা আল্লাহ। আরো বেশি শক্তিশালী হতেই থাকবেন, আরো বেশি 'মানুষ' হতে থাকবেন। মানুষের মতন মানুষ....

[০২ ডিসেম্বর, ২০১৫]

১৩ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৫

 


(৪৪৭)
শেষ কবে আপনি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখেছেন? আমরা যাদের জ্বলতে দেখি টিমটিম আলোয়, সেই মূহুর্তের সেই আলোটাও তো কত শত বছর আগে ওখান থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছিলো তা হিসেব করার বিষয়, কিন্তু অমন নক্ষত্র, গ্রহ তো ওই আকাশে, এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে লাখে লাখে। ওদের একেকটার আকার আমাদের এই পৃথিবীর চেয়েও অনেক বড়। ওদের ওখান থেকেও আমরা একটা বিন্দুর মতই। এই বিন্দুতেই আমাদের সব। এই বিন্দুটুকুর আরো বিন্দু অংশ নিয়ে হাজার হাজার সৈনিক যুদ্ধ করেছে, সেনাপতিরা নিজেদের অমিত শক্তিশালী মনে করেছে হয়ত কোন একটা অংশ বিজয় করে। শাসকেরা নিজেদের ভাষ্কর্য উদ্বোধন করে, অফিসে অফিসে নিজের ছবি ঝোলায়; মনে করে তাদের এই শক্তি আর এই সময় হয়ত রয়ে যাবে। মহাবিশ্বের এইটুকু বিন্দুতেই শত-সহস্র ধর্ম রয়েছে যারা সবাই নিজেকে সঠিক মনে করে। এটুকুতেই রয়েছে অনিন্দ্য সুরের ঝংকার তৈরি করা লক্ষ লক্ষ সংগীতজ্ঞ, গভীর জীবনবোধ নিয়ে কবিতা ও গল্প লেখা হাজার-লক্ষ কবি আর ঔপন্যাসিক এসে চলেও গেছে। এটুকুর মাঝেই কত আঁকিয়ে যে এঁকেছেন ছবি, শিল্পে আর সংস্কৃতির চর্চার গভীরমূলে গিয়েছেন কত শত জন! এটুকুতেই রয়েছে কত প্রেমিক, কত প্রেমিকা। কত ভালোবাসা, কত টান আর কত আবেগ! কত অশ্রু আর কত হাসি। এখানেই রয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ, কেউ কিছু পেলে অপরের জ্বালা ধরা মন্তব্য নির্নিমেষ। এটুকু জায়গায় কত মানুষের কত মত, কত ক্রোধ, কত অহং, কত ঘৃণা। অথচ এই সুবিশাল আয়োজন, এই অন্ধ ক্রোধান্ধ, আমিত্বকে জয় করার নিরুদ্দেশ যাত্রাপথে কারো কি তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে আদৌ অনুভব হয়? এই টুকুন সৃষ্টির মাঝে, এই বিন্দুর মাঝে এত সিন্ধু যিনি স্থাপন করেছেন, তার বিশাল সৃস্টির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে হয়ত আনমনেই অনুভব হবার কথা ছিলো, "হে আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মালিক! আমাদের দয়া করুন। আমাদের চিন্তার আর হৃদয়ের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতাকে সহ্য করতে না পারার এই জ্বালা থেকে মুক্তি দিন আপনার দয়া আর মহত্বের স্পর্শে।"

(৪৪৮)
জীবনটার দৈর্ঘ্য খুবই কম। কেবল একটু পেছনে তাকিয়ে দেখবেন, মনে হবে যেন ৫ বছর আগের ঘটনাটা মাত্র অল্প ক'দিন আগের! আমাদের চারপাশে অনেক খারাপ মানুষ, প্রায়ই অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে। আমরা যদি সেসবে আটকে যাই, শংকা-চিন্তা-হতাশা-দুঃখে পড়ে আমরা তখন আমাদের সত্যিকারের লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা বাধাগ্রস্ত হবো। ভালো চিন্তা, হৃদয়জোড়া ভালোবাসা, উচ্ছ্বাসভরা বুকে মানুষকে হাসিমুখ করে দেয়ার মতন কাজের বিকল্প নেই।

জীবনটা খুব ছোট। যে কোন ধরণের ক্ষুদ্র/খারাপ/মন্দ চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা/শংকার মাঝে ডুবে থাকার মাঝে কোন ন্যুনতম কল্যাণ নেই। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে, কষ্টের মাত্রা, খারাপ লাগার মাত্রা যেমনই হোক না কেন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকতে হবে-- কল্যাণকর কাজ, ভালো কাজ, আনন্দময় কাজ।

(৪৪৯)
ভালো ছাত্রত্বই কখনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক স্কুল জীবনের 'ফার্স্ট বয়/ফার্স্ট গার্ল' নানান কারণে 'ভালো কোথাও' ভর্তি হতে পারে না। ভালো রেজাল্টও ভালো চাকুরির নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক অনার্স সিজিপিএ পাওয়া ছেলেমেয়ের চেয়ে সময়মত পাশ করে বের হতে না পারা ছেলেরা অনেক অর্থ উপার্জন করেছে/করছে এমন উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। সৎ থাকলেও যে আপনার গায়ে অসততার কালিমা আসবে না তা বলা যায় না, অনেক সৎ মানুষকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে এমন গল্পও আমাদের অনেকের আত্মীয়দের জীবনেই আছে। চরিত্র সুন্দর হলেও যে অপবাদ আসবে না, সেটাও বলা যায় না। অপবাদ দেয়ার কাজ যারা করতে ভালোবাসে তারা তো আল্লাহর প্রিয়তম বান্দাদেরকেও ছাড়েনি।

পরিশ্রম করলেই উত্তম ফল হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে পরিশ্রম না করলে উত্তম ফল অসম্ভব। আর হ্যাঁ, সবার পরিশ্রম একই রকম হয় না। একেকটা মানুষের জীবনের ঝড় একেকটা সময়ে আসে তীব্র হয়ে। সবার জীবন আলাদা, জীবনে পাওয়া রহমত আলাদা, জীবনের পদ্ধতি আর গড়ে ওঠা আলাদা, শক্তি আর দুর্বলতাও আলাদা। আল্লাহই সুনিপুণভাবে সবকিছু জানেন। কেবলমাত্র তার হাতেই সমস্ত ক্ষমতা। সমস্ত কিছু দেয়ার মালিকও তিনিই। তাই, কাজ করতে হবে সর্বাত্মক চেষ্টার সাথে, কিন্তু মনে রাখতে হবে ফলাফল একান্তই আল্লাহর দান। সমস্ত প্রার্থনা আর অন্তরের নিগূঢ় কথপোকথন কেবলই আল্লাহর সাথে হতে হবে।

১২ ডিসে, ২০১৫

কীভাবে সুখ পাওয়া যায় জীবনে?



প্রতিটি মানুষ সুখী হতে চায়। প্রতিটি মানুষের চাওয়ার ভেতরেই থাকে সুখী হবার অদম্য আগ্রহ। শব্দগুলো কাছাকাছি, অল্প কিছু পার্থক্য যদিও আছে বাংলায় -- সুখ, শান্তি, প্রশান্তি। কখনো ভালোলাগাও এমন শব্দ। কীভাবে তা অর্জন করা যায়?

দার্শনিক ব্লেইজ প্যাসকেলের একটি থিওরিতে পড়লাম -- মানুষের মূলতঃ তিনটি সত্ত্বার মাঝে অভাবের অনুভূতি থাকে -

১) শারীরিক
২) বুদ্ধিবৃত্তিক
৩) আত্মিক

জন্মের পর থেকেই মানুষ পরনির্ভরশীল। প্রথমেই তার মা-কে প্রয়োজন হয়। মায়ের একটানা যত্নে সে বড় হয়। শারীরিক এই মা-নির্ভরতা থেকে যখন সে খানিকটা বড় হয়ে স্বনির্ভর হতে শেখে, তখন থেকে তার মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এই প্রশ্ন হলো-- বুদ্ধিবৃত্তিক অভাব। সে নিজে থেকেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করে কেন সে এইখানে এলো।

মৃত্যুচিন্তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের প্রায় প্রতিটি মনেই মৃত্যুর কথা এলেও সে এই চিন্তাকে ভুলে থাকতে চায়, এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু তার খেয়াল থাকে না এই সত্যকে তার আলিঙ্গন করতেই হবে।

মানুষ বেশিরভাগ সময় অসুখী হয় অন্যের দিকে তাকিয়ে। তুলনা করতে গিয়ে তার মনের সুখ তিরোহিত হয়। অথচ প্রতিটা জীবন একদম আলাদা। আরেকজনের সাথে কারো কোন মিল থাকে না। সুখ প্রত্যেকের নিজের দিকেই তাকিয়ে অনুভব করা উচিত। কখনো কখনো একটা মূহুর্তের ক্ষুদ্র ভালোলাগাই জীবনে আনন্দের ঢেউ বয়ে আনে। বুদ্ধিমান মানুষ, যারা নিজেদের বুদ্ধিকে ব্যবহার করে, তারা অন্যদের সুখ দেখে নিজেকে সুখী-দুখী হিসেব করতে বসে না। তারা নিজেদের জীবনকে নিজেদের চোখেই দেখে।

যারা আবেগের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তারা সুখ পায় না। যারা আবেগকে চিনে নিয়ে তাকে জয় করে, তারা আবেগ থেকে উদ্ভুত আনন্দও পায়, বিপদেও পড়ে না। আবেগ এক ধরণের ফাঁদ, সেই ফাঁদে আবেগস্বর্বস্বরা নিয়মিত ভূপাতিত হয়।

রেফারেন্স:
- প্রাসঙ্গিক ভিডিও : The Quest for Meaning - ড তারিক রমাদান - http://www.youtube.com/watch?v=XgW3vP7p3no

১১ ডিসে, ২০১৫

আপনার হৃদয় কি ভারাক্রান্ত?


আপনার হৃদয় কি ভারাক্রান্ত? কষ্টে-যন্ত্রণায়, অপ্রাপ্তি-অশান্তি, শঙ্কায়-অস্থিরতায় কাটাচ্ছেন? একটা ব্যাপার জানেন? পৃথিবীতে এই মূহুর্তে কোটি কোটি মানুষ আপনার চেয়েও ভয়ংকর কষ্টে সময় কাটাচ্ছে। আপনি কি ভেবে দেখেছেন, আপনার এই মূহুর্তটা কিন্তু বেশিদিন থাকবে না!

কষ্টের একটা সময় থাকে। প্রথম ধাক্কাটা কিছুটা তীব্র হয়। কিছু বিষয়ে আবার পরবর্তীতে কষ্টটায় দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে হয়। সেগুলো যেমনই হোক, মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়। সন্তানকে কবরে রেখে এসে পিতাকে বের হতে হয় জীবিকার সন্ধানে। সন্তান আর স্বামী মরে যাওয়ার পরেও একজন নারী ফিরে এসে রান্নার যোগাড় করেন অন্তত খেয়ে বেঁচে থাকতে। জীবন এমনই। আপনি যে কষ্টটিকে সহ্যের অতিরিক্ত ভাবছেন, যে ক্ষতিটাকে কল্পনাতীত ভেবে আপনার বুক ফেটে যাচ্ছে -- সেটুকুকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেতেন আরো অসংখ্য লোক। তারা সেটুকুও পান না।

আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদাতের জন্য। আপনি না চাইলেও আপনাকে তিনি উপলব্ধি করিয়েই দেবেন যে আপনি এই পৃথিবীর কোনো কিছুরই উপরে ক্ষমতা রাখেন না, আপনি অসহায়। এই উপলব্ধিটা একটি পরম নিয়ামাত যখন আপনি বুঝবেন আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই অভিভাবক।

সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?

[০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫]

১০ ডিসে, ২০১৫

মুসলিমরা কেন বিশ্বজুড়ে ভুক্তভোগী আর অত্যাচারিত?

বিগত বেশ কয়েক শতাব্দী থেকেই মুসলিমদের মাঝে জ্ঞানের অভাবে, শ্রেষ্ঠত্বের অভাবে, নিজেদের কন্ঠকে প্রকাশ করতে না পারায় (যার পেছনে বেশিরভাগ ভূখন্ডের কলোনিয়ালিজম দায়ী, বা সংখ্যালঘুত্ব দায়ী) তাদের মাঝে 'ভিকটিম মেন্টালিটি প্রকট হয়ে থাকে। তাই তাদেরকে কনস্পিরেসি থিওরি গেলানো যত সহজ, আর কোন ধর্ম-জাতি-আদর্শের লোকদের এতটা সহজ না। তাই কোন ছবি দেখিয়ে যদি বলা হয়, 'অত্যাচার' করা হচ্ছে -- যাচাই বাছাই ছাড়াই তখন ধরে নেয়, এটাই তো আমাদের হয়, সুতরাং 'প্রচার করার মাঝেই আমার কাজ শেষ'। ফলে এইসব প্রচার করে, গলাকাটা, বোমফাটা ছবির শেয়ারিং যত হয়, দিনশেষে ওই মানুষটার ভিতরের প্রত্যয়ও সাধারণত জাগেনা নতুন কিছু করার।

নিজেদেরকে ভুক্তভোগী মনে করার এই মানসিকতা আসলে দুর্বল চিত্তের, অযোগ্য-অপদার্থ মানসিকতার প্রকাশ। শেয়ারিং করলে যাচাই বাছাই করতে হবে সেটা কতটা সত্য। আর মাথায় রাখতে হবে, দুনিয়ার বুকে যোগ্যতা সবসময়েই সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ বিষয়ের একটা। নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হলে যোগ্যতা নিয়েই বড় হতে হবে। আপনি ক্লাসে ফার্স্ট হোন, একদিন টিচার হবেন --সম্মানিত গুরুত্বপূর্ণ পদ। আপনি অফিসের সবচাইতে আন্তরিক আর কর্মঠ কলিগ হোন -- আপনার বিশ্বস্ততা আর অসাধারণত্ব নিয়ে শত্রুভাবাপন্নরাও তেমন কিছু করতে পারবেনা।আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও তেমনি, আল্লাহর দ্বীনকে যারা বুকে নিয়ে জীবন চালাচ্ছে, তারা যদি হয় উত্তম চরিত্রের, নিজের আশেপাশের ভাইয়ের প্রতি অনুভূতিতে নিপুণ, দক্ষ বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, মুভি মেকার, অথবা একজন সাধারণ মানুষ যিনি নিপুণ চরিত্রের, ব্যক্তিত্বের তাহলে এমনিতেই মুসলিমদের উন্নতি হবে।

তবে অনুগ্রহ করে নিজেকে নিজেই চেক করা দরকার, আমরা কি ভুক্তভোগী থাকার মানসিকতা (victim mentality) নিয়ে গড়ে উঠছি? নাকি নিজেদের থেকেই কিছু করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী হয়েছি? আজ থেকে ৫০ বছর আগেও এমন ছিলো না। আমেরিকার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব অল্প ক'টাতেই ইহুদি শিক্ষক ছিলো। এখন প্রায় প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিগুলোতেই ইহুদি শিক্ষক আছে, যারা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে নিজেদের সর্বাত্মক উন্নতি করছে। বুদ্ধি আর মেধাকে বিকশিত করতে না পারলে মুসলিমদের পরাজিত হয়েই বোধহয় থাকতে হবে।

তবে আশার আলো আছে, এখন অনেকেই নিজেদেরকে উন্নত করছে সারাবিশ্বে। সারাবিশ্বে দেশে দেশে মিডিয়াতে বামপন্থী/ইসলামবিদ্বেষীদের আধিক্য সংবাদকে একপাক্ষিক করে ফেলে এখন। মিডিয়াও মানুষের মনোজগতে বিশেষ ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে। তবে মুসলিমরা তাদের কাজগুলো করলে এই বিষয়গুলোতে বস্তুনিষ্ঠতা আসতে পারত কারণ তারা যেকোন অবস্থাতেই সত্য আর সুন্দরের পক্ষে থাকবে। বিশ্বমানুষের মুক্তির জন্য মুসলিমদের নিজেদের মনোজগতকে উন্নত করা প্রয়োজন। বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ও যোগ্যতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।


রেফারেন্স:
# লেকচার - ড সাইয়েদ হুসেইন নসর - ফিলোসফি ম্যাটারস  http://www.youtube.com/watch?v=qAgGB407FHs

৯ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৪



(৪৩৮)
সমস্ত রং যেখানে থাকে, সেটি হয় কালো। যেখানে কোন রং থাকে না, তার রং সাদা। হৃদয় যখন সমস্ত ক্লেদ ও পংকিলতামুক্ত হয়-- সেটি শুভ্র হৃদয়। সেটিই প্রশান্ত আত্মা।

(৪৩৯)
একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনি সবসময় যে কাজগুলো করতে চেয়েছেন সেগুলো করার আর কোন সময় নেই। তাই এখনই তা করতে শুরু করুন।

(৪৪০)
আমরা যাকে ভালোবাসি, আসলেই কি বাসি? কেমন করে বুঝি সেটা? আমরা যা পছন্দ করি, আসলেই কি করি? নাকি অন্যেরা যা ভালোবাসায়, পছন্দ করায়, তা আমরা অবচেতনভাবে পছন্দ করি, ভালোবাসি, উত্তম মনে করি? আমরা কতটুকু সময় নিজের চিন্তা নিজে করি? লোকের বলা ছাচেই আমরা বেশিরভাগ চিন্তা করি, তাইনা? অথচ আমরা কেউ অন্য কারো মতন না। আমাদের জীবনগুলো পরস্পরের চেয়ে একদম আলাদা।

(৪৪১)
আমরা বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের চিন্তার কারাগারে বন্দী থাকি। চারপাশের মানুষগুলো আমাদের বন্দী করতে চায় তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ আরোপ করে সৃষ্ট যে কারাগার তার মাঝে। আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন অবারিত পৃথিবী। পৃথিবীতে খুব অল্প বিষয় নিষিদ্ধ। পৃথিবী আল্লাহর নিয়ামতে পরিপূর্ণ। উপভোগের জন্য পাপহীন বিনোদনে পৃথিবী ভরপুর।

(৪৪২)
আমাদের সাধ্যমতন পরিচ্ছন্ন ও শুভ্র পোষাক পরা উচিত। পোশাকের পরিচ্ছন্নতা আমাদের মনে প্রভাব ফেলে। সুন্দর, পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন পোশাক আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। দুর্গন্ধহীন পোশাক পরা আমাদের এক ধরণের দায়িত্ব কেননা তাতে আমাদের স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, চলার পথে যারা আশেপাশে আসে তাদের কষ্ট হয়। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বয়স অনুযায়ী পোশাকের রঙ হতে পারে, বিশেষ করে তরুণ বয়সের ছেলেরা উজ্জ্বল রং-এর পোশাক পরলে তা নিজের জন্যই একটি পজিটিভ ইন্সপিরেশন হতে পারে। পোশাক পরবো; কী পরছি তা খেয়াল রাখবো!

(৪৪৩)
নিজেকে দয়া করুন, নিজের প্রতি রহমদীল হোন। কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে? প্রতিটা মানুষের জীবনের স্রোত আলাদা, একের সাথে আরেকটা মিশে না। অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। এমনকি নিজের অতীতের সাথেও না। শুধু জেনে নিন, আপনার জীবনে সামনে যা আসে, তা আল্লাহর পাঠানো। কিছুতেই তা এড়িয়ে যেতে পারতেন না। গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না।

(৪৪৪)
সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।

(৪৪৫)
আচ্ছা, ক'জন আমরা ঘৃণাহীন, হিংসাহীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি? পত্রিকা, চ্যানেলের খবরে, অপদার্থ বন্ধু/আত্মীয়র মুখে, ফেসবুকের পন্ডিতন্মন্য মানুষদের সমালোচনামুখর পোস্টে আমরা শুধু ঘৃণা, অবিশ্বাস, সন্দেহ, অশান্তি, পরনিন্দা, অপবাদ, মিথ্যায় ডুবে থাকি... শান্তির ঘুম কেমন করে আসবে জঞ্জালভরা হৃদয়ে, অতৃপ্ত ও অসুস্থ চোখে?

(৪৪৬)
যা কিছু সম্পর্কে আমি জানি যে তা স্থায়ী নয়, তেমন কোন কিছুর সাথে আমি নিজেকে জড়াতে চাইনা।

 ~প্রিজন ব্রেক টিভি সিরিজে মাইকেল স্কোফিল্ড

৮ ডিসে, ২০১৫

কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে?

 



নিজেকে দয়া করুন, নিজের প্রতি রহমদীল হোন। কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে? প্রতিটা মানুষের জীবনের স্রোত আলাদা, একের সাথে আরেকটা মিশে না। অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। এমনকি নিজের অতীতের সাথেও না। শুধু জেনে নিন, আপনার জীবনে সামনে যা আসে, তা আল্লাহর পাঠানো। কিছুতেই তা এড়িয়ে যেতে পারতেন না। গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না।

আমাদের উপরে যা কিছু আসে তা আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত নয়, এ আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা। আস্থা রাখুন নিজের উপরে। দুর্যোগ মানেই জীবন ধ্বংস নয়, হোক তা প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট। দুর্যোগ কেটে যায়। ধ্বংসস্তূপ সারিয়ে তুলতে হয় সেই আপনাকেই। তাই, অপেক্ষা করুন নতুন করে গড়ে নেয়ার। এটাই জীবন। অতিকাব্যিক কিছু নেই পৃথিবীর জীবনে। আসল সফলতা আল্লাহর কাছে। দুনিয়ায় কাজ হলো সুন্দর করে মূহুর্তগুলোতে আপনার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। ফলাফল আল্লাহর হাতে। সবই আল্লাহর হাতে।

সহজভাবে গ্রহণ করুন জীবন। হাসিমুখ থাকুন, হাসিমুখ তৈরি করুন। কাজ করুন। মন দিয়ে কাজ করুন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকুন যেন এগুলো সাদকায়ে জারিয়া হয়ে মরণের পরেও বন্ধু হয়ে রয়।

৭ ডিসে, ২০১৫

কেউ দেখে শিখে আর কেউ ঠেকে শিখে



জীবনে সবাই শেখে। কেউ কেউ শেখার জন্য বেছে নেয় খুব কষ্টের পথ। আপনি যে জিনিস হয়ত মধ্য বয়সে শিখছেন, তা হয়ত অনেকে কৈশোরে শিখে ফেলেছে। কেউ হয়ত স্কুল জীবনে যা শেখার কথা, আজো তা শেখেনি। এগুলো চিন্তা করে অবাক হবেন, তাতে লাভ নেই। আসল বিষয় হলো, আপনি কখন শিখবেন। যখনই হোক, জীবনে যখন "ঠেকে শিখবেন" তখনই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, যতই শিখবেন, শেখার সময়টা অবশ্যই কষ্টের, কিন্তু না শেখা জীবন হতাশা আর গ্লানির। যারা কখনই শেখে না, বুঝেও বুঝে না, দেখেও অনুভব করে না--তারা আজীবন বুকের জ্বালায় দগ্ধ হয়ে মরে। কষ্টের উৎস খুঁজে না পাওয়ার যে জ্বালা, সেটা তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে।

কেউ ক্লাসরুমে আনন্দ করে শেখে, কেউ শেখে শুভাকাংখীর উপদেশ থেকে। আবার নির্মম শিক্ষা হলো খুব বড় ক্ষতি থেকে শেখা। তবুও, শেখা শেখাই। একটা কথা বহুল প্রচলিত, "শিখেছি কোথায়? ঠেকেছি যেথায়"। তাই শেখায় কোন লজ্জা নেই, বয়স নেই। ঐ যে বলে না? 'better late than never'-- দেরিতে হলেও শিখুন। শেখাই জীবন। শিখলেই জীবন বদলায়। কিন্তু শেখার পথটা খুব কষ্টের। খুব। যে কোন চিন্তা, অভিজ্ঞতা আমাদের যা শেখায়, তা একটা দুর্গম পথ। কিন্তু, শেখা ছাড়া জীবন হয় না। 'পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন,' -- শেখার এক পরম আদেশ, হালাল-হারাম, অমুক-তমুক, ইত্যাদি চিন্তা করার আগেই শিখতে দৌড়াতে হবে।

যারা সাধারণ বাক্যই উপলব্ধি করতে পারে না, চোখের সামনে, নিজের জীবনে শত-সহস্র ঘটনা থেকেও শিখতে পারে না। ধর্মের কথা, হালাল-হারাম আর পাপ-পুণ্যের গল্প বলে সে তো কেবল অন্যের ক্ষতিই করবে। আল্লাহ তো দিন-রাত্রির পরিবর্তনে, আকাশ আর দুনিয়ার সৃষ্টির মাঝে তাকিয়ে থেকে চিন্তাশীলদের শেখার আমন্ত্রণ দিয়েছেন। কয়টা হৃদয় সত্যিকারের শিখতে পারি? এই আকাশ আর পৃথিবী, রাত আর দিনে কী কী শিখেছি তা পয়েন্ট করে লিখে নিজেরাই লজ্জায় পড়ে যাবো না?

শিখতে হবে। একদম শিশুদের মতন শেখা। শেখাতেই রয়েছে মুক্তির শুরু। শেখার মাঝেই রয়েছে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার চাবি। সবাই আটকে পড়ে আছি কারাগারে। অজ্ঞতা, অন্ধত্ব, অহং, হিংসার কারাগার। আলো দাও খোদা। 'নূরুন আলা নূর' কবে একটানা হতেই থাকবে আমাদের হৃদয়ে?

[১৩ নভেম্বর, ২০১৫]

৬ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৩




(৪৩১)
আমাদের জীবনে অনেক সুযোগ আসে, অনেক ঘটনা আসে শিক্ষা হিসেবে। দেখা যায়, একই ঘটনা কাউকে অনেক বদলে ফেলে, কেউ ভেতর থেকে অনেক উপলব্ধি করতে পারে-- অপরজনের কাছে ব্যাপারটা স্রেফ একটা ঘটনা। এখানে থাকে দৃষ্টিভঙ্গি আর পূর্বেকার জ্ঞানের পার্থক্য।

(৪৩২)
আমি যতবার দূর-দুরান্তে পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেরিয়েছি, আমার মনে হয়েছে আল্লাহ হলেন আর-রাযযাক। কীসের যোগ্যতা, কীসের কর্ম, কীসের বংশ আর কীসের মাপকাঠি, আল্লাহ সবাইকেই তার রিযিক দান করেন। আল্লাহ হয়ত বিভিন্ন উপায়ে রিযিক দেন আমাদের-- কিন্তু রিযিক বন্টনের কাজটির মালিক কেবলই তিনি। সমস্ত মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ, পোকামাকড় সবাই আল্লাহর নিপুণ রিযিক বন্টন থেকেই পায়।

এদিকে মুমিনের জন্য তাকওয়া থাকলেই রিযিক দেয়ার নিশ্চয়তা আল্লাহ দিয়েছেন। বুঝিনা আমরা। অবশ্যই বেখবর। নইলে সহজ পথ ছেড়ে কি আর কঠিনে ডুবি?

(৪৩৩)
যখন আমরা কোন ভ্রমণে যাই, আমরা জানি আমরা কতটা কম শক্তিশালী; বুঝতে পারি সবকিছু কতটা অনিশ্চিত। ভ্রমণে আমরা নানান ধরণের মানুষের সাথে পরিচিত হই যা আমাদের উপলব্ধি করায় যে পৃথিবীটা কতই না বিশাল, কত বিচিত্র এখানকার মানুষ!

(৪৩৪)
বিশালতা প্রকৃতির যেমন আছে, আকাশের আছে, সমুদ্রের আছে। মানুষের মাঝেও বিশালতা আছে -- জ্ঞানের, ব্যক্তিত্বের, মেধার। তবে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করতেও যেমন সকল হৃদয় পারে না, মানুষেরটুকুও সবাই বুঝে না।

(৪৩৫)
গতকাল সূর্যোদয় দেখেছিলেন এমন অনেক মানুষ আজ দেখার সুযোগ পাননি, তাদের জীবনের সময় শেষ হয়ে গেছে।

আমরা নতুন দিনটি উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। একটি দিন আমাদের জীবন বদলে দিতে যথেষ্ট। আজকে আবার নতুন আশায় বুক বাধতে পারবো। নতুন প্রচেষ্টায় এগিয়ে যেতে পারবো কল্যাণের পথে।

(৪৩৬)
হাসিমুখ মানুষদের আমরা ভালোবাসি। আমরা সবাই জীবনযুদ্ধে কমবেশি বিদ্ধস্ত মানুষ, হাসিমুখ প্রাণবন্ত লোকদের জীবনের উদ্যম আমরা দেখতে ভালোবাসি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মানুষদের জীবনকে আমরা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিই।

গোমড়ামুখো মানুষকে লোকে পছন্দ করেনা, তাদের এড়িয়ে চলে। নিজ জীবনের গ্লানি আর কষ্ট নিয়ে সবাই ত্যক্ত বিরক্ত থাকে, অন্যের কষ্ট নেবার জায়গা আর শক্তি কোথায়?

জীবনে যখন আমরা ব্যক্তিসত্ত্বার কষ্ট ছাপিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, অন্ততপক্ষে নিজের হাসিমুখ দিয়ে হলেও, তখন আমরা জীবনের সত্যিকার অর্থবাচকতা খুঁজে পাই। নইলে এই জীবন কি আর কোন জীবন হলো?

(৪৩৭)
যখন আমাদের হারানোর কিছু আর বাকি থাকে না, তখন আমরা নতুন করে জীবন নিয়ে পরিকল্পনা করার, সাজিয়ে নেয়ার আর গড়ে নেয়ার কাজ করতে পারি। [অনূদিত]

৫ ডিসে, ২০১৫

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে হৃদয়টা স্বচ্ছ হতে হয়

 

এমন কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়েছে আমার জীবনে যারা হয়ত 'হুজুর' টাইপ না, তাদের ইসলামের বুঝগুলোও স্পষ্ট না। হয়ত ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহও কম। কিন্তু মানুষগুলোর চিন্তা বেশ স্বচ্ছ। তারা যে ভুল কাজগুলো করেন, সেগুলো করলে তারা স্বীকার করে, তারা অন্য কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করে না, গীবত করে না অযথাই অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হতে গিয়ে। তারা মানুষের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করে এমনকি ভিন্নমতের হলেও। এরকম মানুষগুলোর হৃদয়ে যে আলো দেখতে পাই, তা আমি অনেক 'কড়া ধার্মিক' ভাব ধরা টাইপের লোকদের কাছে কানাকড়িও পাইনি। এই মানুষগুলোর সান্নিধ্যে থাকতেও স্বস্তি লাগে।

ইসলাম যদি মড়ার ধর্ম হতো, যা মানুষকে মূল্য দেয় না -- তাহলে ইসলাম যুগ-যুগান্তর ধরে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন রঙের, ভিন্ন সমাজের লোকদের কাছেও গৃহীত হত না। ক্রিশ্চিয়ানিটির চার্চ যেভাবে মানুষের উপরে ক্ষমতা ও জোরপূর্বক 'বিধি বিধান' প্রয়োগ করে মানুষকে যন্ত্রণা দিয়ে তাদেরকে ধর্ম থেকে তাড়িয়েছে। ফলে আজো পশ্চিমাদের মাঝে রিলিজিয়ন চার্চের বাইরে আসবে ভাবলেই আঁতকে ওঠে, ইসলাম নিয়েও তাদের ভয়টার পেছনে ধর্মের 'ঐতিহাসিক' ঘটনাগুলোর প্রভাব আছে। সেই একই পথের লোক এই ইসলামের নাম ধরেও অনেক থাকে, যাদের উপস্থিতি মানুষকে ইসলামকে ভুল বুঝায়, ইসলামের বিষয়ে ভুল ধারণা দেয়। এদের কঠোরতা আর সংকীর্ণতার খপ্পরে পড়ে মানুষ ইসলামের 'এক্সট্রিম' থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। অথচ এসব লোকেরা আদতে ইসলামের মর্মই বুঝেনি। স্রেফ নিজেদের ক্ষুদ্রতাকে সুন্দর রূপ দিতে ধর্মের নৌকায় পা দিয়ে লোকের কাছে 'দাম' নিতে, 'পাত্তা' নিতে ধার্মিকের চেহারা/শব্দ/ভাব নেয়।

মানুষকে ভালোবাসতে হয়, মানুষকে মর্যাদা দিতে হয়। মানুষের চিন্তাকে মূল্য দিতে হয়। 'সহীহ পথে আছি' ভেবে তাই অন্যদের দিকে ভ্রূকূটি করে তো সেই একচোখা-উদ্ধত মানুষটা আল্লাহর সৃষ্টি মানুষকেই ছোট করে; সে আবার এসব করে আল্লাহকে কেমন করে পাবে?

আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে প্রতিবেলা খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, শ্বাস নেওয়াচ্ছেন পরম ভালোবাসায়। হয়ত বুঝ এলে অবুঝ লোকটাও আল্লাহর গুণকীর্তন করেই জীবন কাটিয়ে দেবে। তবু এমন মানুষের উপরে আমাদের কতিপয় 'ধার্মিকদের' কেমন অদ্ভুত 'অহংবোধ' কাজ করে? মানুষের সাথে দেখা হলেই নিজেকে 'সুপিরিয়র' কেন ভাবতে হবে? হলেই না হয় ইনফেরিওর, মেনেই নিন না আপনি তার চেয়ে অনেক কিছুতেই ছোট। মেনে নিন!

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে হৃদয়টা স্বচ্ছ হতে হয়। ভালোবাসতে শিখতে হয়। যার হৃদয়ে মাখলূকের প্রতি ভালোবাসা নেই, সে আল্লাহকে ভালোবাসার দাবী কীভাবে করতে পারে? কঠিন হৃদয়ের মানুষরা আল্লাহর থেকে অনেক দূরে। মানুষকে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসতে হয় সবাইকে, কোন 'যদি' ও 'কিন্তু' ছাড়াই যে ভালোবাসা...

[১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫]

৪ ডিসে, ২০১৫

কবে ভালোবাসা ফিরে আসবে আবার? হৃদয়ে হৃদয়ে...



আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরাই তাদের নিজের ভেতরের দেয়ালগুলোতে নিজেদের বন্দী করে রাখে। তাদের বন্দী থাকতে হয়, বন্দী হতে শেখানো হয় ছোট থেকেই। লোকে কী বলবে, তারা কী বলবে ভাবতে ভাবতে নষ্ট হয়ে যায় হৃদয়ের ভেতরের জৈবিক রসায়ন। ধর্মের দোহাই দিয়ে বেঁধে রাখতে চায় অনেকে।

ধর্ম কী কেবলই কিছু আচার-অনুষ্ঠান? আমরা কি জানিনা অনেক বড় আলেমদের সর্বাগ্রে জাহান্নামে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে মর্মে সতর্কবাণীর কথা? আমরা কি জানিনা উশকো-খুশকো অভাবী-দীন-হীন লোকের হাত আল্লাহর খুব পছন্দ হবার কথা? বাহিরে মোরা ভদ্র বড়, ভেতরে শুধুই পশু। বাহিরের আচ্ছাদন আর লেবাসের সৌষ্ঠবের প্রতি আগ্রহ তো বুকের ভেতরের রসায়নকে নষ্ট করে ফেলেছে।

বহিরাবরণে ভদ্রলোক/ধার্মিক/ভদ্রমহিলা/শিক্ষিত অথচ বুকের মাঝে নেই মানবিক বোধ। অনেকগুলো ডিগ্রি পাশ দিয়ে আসা ডাক্তার সাহেব এক মিনিট কথা বলতে চাইছেন না রোগীর সাথে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্মার্ট আর ইয়াং ছেলেটা ঘুষি বাগিয়ে দিলো রিকসাওয়ালা ছেলেটাকে, ভেবে দেখা যায় না ছেলেটা কতটা কষ্টে রিকসা নিয়ে বের হয়েছে, শরীর দিয়ে টেনেছে এই যানটি--জীবনের প্রয়োজনে? এই চলমান সমাজে মনুষ্যত্ব লুকিয়েছে শব্দের খোলসে, মানুষের হৃদয় কেবলই শূণ্য। হৃদয়গুলোতে লোভ, হিংসা, ক্রোধ, অহংকার এবং সর্বোপরি ক্ষমতার লালসা।

কবে ভালোবাসা ফিরে আসবে আবার? হৃদয়ে হৃদয়ে...
কবে ভালোবাসা পাবে গাছের পাতা, পাখি, প্রাণী; ভালোবাসা পাবে চলতি পথের পথিক। ভালোবাসা পাবে অসহায়, আহত হৃদয়ের মানুষগুলো। ভালোবাসা তো পারে বদলে দিতে সবকিছু। আসলে, যা ভালো লাগে করতে হয়। বাইরে দেখতে যেমনটি লাগে, নিজেরা যেন তেমনটিই হই। নিজেরা যেমন,  তেমনটি যেন লোকে মনে করে। কী লাভ তীব্র বৈপরিত্যের মাঝে সদা বসবাসে?

[২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫]

৩ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪২

 


(৪২৩)
স্বপ্ন দেখুন এবং নিজ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে লেগে থাকুন। নয়ত সারাজীবন আপনাকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। [অনূদিত]

(৪২৪)
চারপাশের গাছগুলো আমাদের দেখিয়ে দেয় জীবনের মরে যাওয়া অংশগুলো কীভাবে ঝেড়ে ফেলে দিতে হয়।


(৪২৫)
কখনো কখনো জীবনের সমস্ত চাপ, দায়, কর্তব্য, চিন্তাভাবনাকে প্যাকেটে ভরে পলিথিনে ভরে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে দূরে থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসতে হয়। জীবনের ক্লান্তি-ক্লেদগুলোকে ড্রেনের পানিতে ঢেলে দিতে হয়... সাথে শুধু কিছু দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসা রেখে দিয়ে বাকি হিসেব-নিকেশ চুলোয় তুলে দিতে হয়।

এরপর কিছু উদাস দুপুর, লম্বা নিঃশ্বাস। ভালো লাগা এক কাপ কফি খুঁজে বের করা। শহরের ক্লান্ত-শ্রান্ত বিরক্ত মানুষগুলোর মাঝেই কিছু ভালোলাগা অনুভূতিকে খুঁজে বেড়ানো। ছোট্ট এই জীবনের এত চাপ নিয়ে কী হবে? হৃদয়ের শান্তি কেউ দেখতে পায় না, সে আমাদের একান্ত অনুভূতি...

(৪২৬)
মানুষকে বিচার করতে থাকলে, তাদের ভালো-মন্দ হিসেব করতে থাকলে আপনি কখনো তাদের ভালোবাসার সুযোগ পাবেন না।

(৪২৭)
শীঘ্রই যখন সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে, তখন আপনি জীবনের পেছনে ফিরে তাকিয়ে এই সময়গুলোর কথা ভেবে খুশি হবেন এই ভেবে যে আপনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি।

(৪২৮)
আপনার উপরে অন্যদের চাপিয়ে দেয়া জীবনকে যাপন করতে যাবেন না, আপনি সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানুষ। নিজের মতই হোন, উন্নত করুন নিজেকে, নিজের মতন করেই।

(৪২৯)
ভুল করলে ক্ষমা চাইতে শিখুন। ভুল মানুষই করে, সেটা হতেই পারে। কিন্তু ভুল করে অনুতপ্ত না হওয়া বা অহং ধরে বসে থেকে ক্ষমা না চাওয়া শয়তানের কাজ। এই অহং শুধু ধ্বংস এনে দেয়।

(৪৩০)
আপনার জীবনটা এখন যেমন, জীবন আসলে অমনই...

সময় বদলে গেলেও জীবন আমাদের প্রতি একই রকম থাকে-- হয়ত চারপাশ বদলায়, মানুষগুলো বদলায়, জীবন একই রকম থাকে।

নিজ জীবন বদলাতে হলে হৃদয়কে বদলাতে হয়, পৃথিবীকে দেখার চোখটা বদলাতে হয়।

২ ডিসে, ২০১৫

"ফেসবুকে লোকে শুধু ভালোটাই দেখায়, খারাপ ঢেকে রাখে"--এই সমালোচনা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

​"ফেসবুকে লোকে শুধু ভালোটাই দেখায়, খারাপ ঢেকে রাখে "-- এমন মন্তব্য করে 'মানুষের' সমালোচনা করাটাও এক ধরণের মূর্খতা যদি ​কেউ পুরো ব্যাপারটা মাথায় না রাখে।

এখানে ​কেউ 'শো অফ' করাটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে কেননা​ লোক দেখানো কাজ ভালো নয়, ক্ষতি অনেক।​​ লোক দেখানো প্রবণতা আমাদের এমন মানুষ বানিয়ে ফেলতে থাকে যা আমরা পছন্দ করিনা।​ নিজেদের অজান্তেই আমরা তখন ভিন্ন কোন বাজে মানুষে পরিণত হতে থাকি।​ আবার, লোককে নিজের ভালো দেখিয়ে তাদের হিংসা বাড়িয়ে ​দেয়ার ফলে নানানভাবে ​নিজের ক্ষতি হবার রাস্তাও তৈরি হয়।

কিন্তু লোকে দেখালে​ তো​ ভালোটাই দেখায়, দেখাবেই। লোকে সুন্দর পোশাক পরে সামনে আসার মানে কিন্তু এই দাবী করা নয় যে তার পোশাকের নিচে লজ্জার বিষয় নেই।​ যারা ভালো দেখায়, তার মানে অন্তত তারা ভালো বিষয়টা বুঝে। তারা ভালোকে 'কেয়ার' করে, ভালোকে 'উত্তম' বলে মনে করে। এটা কি একটা ভালো নয়? মুসলিম হিসেবে আমাদের কাজ কি 'ভালো'কে প্রতিষ্ঠিত করা ও ছড়িয়ে দেয়া নয়?

যারা প্রকাশ্যেই খারাপ কথা বলে, খারাপ কাজ করে, তারা তো আরো খারাপ। তারা তো সমাজে আরেক মাত্রার খারাপকে প্রতিষ্ঠিত করে, ছড়িয়ে দিতে থাকে।​ যারা খারাপ বিষয় লোকের সামনে উন্মোচিত করে তারা খারাপ কাজের সাক্ষী থাকার ব্যাপারটা ভয়ও করেনা। হয়ত গোপন ব্যাপারটা আল্লাহ ক্ষমা করে দিতেন ইস্তিগফার করায়, এখন অনেকে সাক্ষী রয়ে গেলো, এই কাজের হিসেবে তারাও অংশ হয়ে গেলো।

​বেশি ​সমালোচনা ঠিক নয়। অন্যদের উদ্দেশ্য বোঝা আমাদের মানবীয় যোগ্যতার অতীত। তাই সমালোচক হিসেবে নিজেকে বেশি পন্ডিত মনে হলে নিজেকে সতর্ক করা উচিত। আল্লাহ বান্দাকে গায়েব না জানিয়ে নানানভাবে বিনয়ী থাকতে বাধ্য করার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন। অন্যের ব্যাপারে নির্দ্বিধায় সমালোচনা করার ক্ষেত্রে এটাও একটা সাবধান থাকার বিষয়।

সব সমস্যার বেশি সরলীকরণ করলে সমস্যা। জটিল সমস্যার সরল সমাধান চাইতে গেলে সব হারাতে হয়। একই বুঝ দিয়ে সবাইকে বুঝতে গেলেও বিপদ।

[১২ নভেম্বর, ২০১৫]

৩০ নভে, ২০১৫

রুমী কবিতা (সপ্তদশ কিস্তি)

 

* * * * *
প্রিয় হৃদয়! কখনো ভেবো না তুমি অন্যদের চেয়ে উত্তম। অপরের দুঃখগুলো সহানূভুতির সাথে শোনো। তুমি যদি শান্তি চাও, খারাপ চিন্তাগুলোকে মনের মাঝে রেখো না, পরনিন্দা কোরো না এবং এমন কিছু শেখাতে যেয়ো না যা তুমি জানো না। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * 
আমার হৃদয় তো তোমার হাতে থাকা কলমের মতন
আমার সবকিছুই তোমার হাতে
আমাকে সুখী অথবা দুখী করে লিখতে পারো
তুমি আমার জন্য যা প্রকাশিত করো কেবল তা-ই আমি দেখি
আর যেমন করে থাকতে বলো, আমি তেমনটিই থাকি।
আমার সমস্ত অনুভূতিগুলো সেই রঙ ধারণ করে
যা তুমি রাঙ্গাতে চাও।
আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত
তুমি ছাড়া কেউ নয়।
দয়া করো, আমার ভবিষ্যতকে
আমার অতীতের চেয়ে সুন্দর করে দাও।

~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
তোমার হৃদয়ের গভীরে একটি প্রদীপ আছে, জ্বেলে দিতে তৈরি হও।
তোমার আত্মায় গহীন শূণ্যতা আছে, তাকে পূর্ণ করতে তৈরি হও।
তুমি তা অনুভব করতে পারছ, তাইনা?
~ রুমী

* * * * *
তোমার শব্দকে উঁচু করো, কন্ঠ চড়িয়ো না। কারণ, বৃষ্টিই ফুলকে প্রস্ফুটিত করে, বজ্রপাত নয়।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
আত্মাটা যখন ঘাসের ওপরে শুয়ে পড়ে,কথা বলার বিষয়ে পেতে গোটা পৃথিবীকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ মনে হয়। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
তোমার চোখের পাতা আমার হৃদয়ে যে কবিতা লিখবে, সে কবিতা কোন কবির কলম থেকে বের হবেনা কোনদিন। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
কিন্তু তুমি কি এমন কারো কথা ভাবতে পারো যে ধোঁয়াচ্ছন্ন অস্পষ্ট নয়? ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * **
বিদায় কেবল তাদের জন্য যারা তাদের কেবল চোখ দিয়ে ভালোবাসে। কেননা, যারা হৃদয় এবং আত্মা দিয়ে ভালোবাসে তাদের জন্য বিচ্ছেদ বলে কিছু নেই। ~জালালুদ্দিন রুমী

২৮ নভে, ২০১৫

নিজেদের 'বিশুদ্ধ' মুসলিম মনে করে সন্দেহ আর ঘৃণায় কেন ডুবে থাকা?

 

মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। অন্যেরা যখন তা ভুলে থাকে, তখন মুসলিমরাই সেই প্রতিনিধির দায়িত্বধারী। মজার ব্যাপার হলো, এই মুসলিমদের মধ্যে অল্প কিছুই সচেতন মুসলিম। এই সচেতনদের মাঝে অনেকেরই রয়েছে 'গ্রুপিং' মেন্টালিটি। নিজেদের 'বিশুদ্ধ' মনে করার বিভ্রম এবং অন্যদের 'অশুদ্ধ' মনে করে তাদের থেকে দূরে থাকার এক বিচিত্র বিশ্বাস ও সংস্কৃতি বেশিরভাগে 'গ্রুপের' লোকদের মাঝে বিরাজমান।

সংকীর্ণতার চর্চা করতে করতে নিজেদেরকে বিশাল এই পৃথিবী ও সৃষ্টিজগতের স্রষ্টার প্রতিনিধি থেকে সংকীর্ণমনা খুঁতখুঁতে নেগেটিভ মেন্টালিটির কিছু মানসিক প্রতিবন্ধীতে পরিণত করে ফেলেছি আমরা আমাদেরকেই। তাইতো, নিজেদের 'ইসলাম পালন' নিজেদেরও উপকার করে করেনা, অন্য মুসলিমদের, অন্য ধর্মের লোকদের উপকার তো দূরে থাক। অন্যদের বিশ্বাস, অন্যদের সাথে মেলামেশা যখন এতই অপছন্দ ও ঘৃণার, তখন তারা কেমন করে জানবে আল্লাহ এত সুন্দর একটা জীবনবিধান পৃথিবীতে পাঠিয়ে রেখেছেন। শেষমেষ, এসব বিশুদ্ধতাবাদী মুসলিমরা আত্মতুষ্টি পাওয়ার চেষ্টাতেই পৃথিবীর জীবনটা পার করে ফেলে। তাদের 'বিশুদ্ধ' ও সহীহ চিন্তাধারার অহং তাদের ভয়াবহ মানুষে পরিণত করে চলেছে। নতুন এই ভয়ংকর রোগ এখন বাংলাদেশের মাঝে ছড়িয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আবার, এই স্রোতে গা না ভাসিয়ে হৃদয়টাকে অনেক বড় করে চলা মানুষও কম নেই। হয়ত তাদের অনেক কটাক্ষ শুনতে হয়, তাদের অনেক বেশি জ্বালা ও যন্ত্রণা সইতে হয় সবখান থেকেই। মুসলিম নামের মানুষগুলোর কাছ থেকেও, অমুসলিমদের কাছ থেকেও। ইসলাম যে ভালোবাসার, শান্তির তা ভুলে যেতে বসেছি আমরা। ইসলাম কেবলমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই কঠোর এবং সেটাও সমাজে শান্তি আনয়নের জন্য। তাই বলে অপরের সাথে আচরণের কঠোরতা এবং ভালোবাসাহীনতার, খুঁতখুঁতানি ও সন্দেহের এই বৈপরীত্যময় চর্চা এসেছে কাদের হাত ধরে?

ভালোবাসা, দয়া, রাহমা এগুলো সবই আল্লাহর গুণবাচক ব্যাপার। ভালোবাসলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। আপনি ভুল মানুষকে বিশ্বাস করতে পারেন, বিশ্বাস করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস একটি সম্পূর্ণ পজিটিভ বিষয়। কেবলমাত্র সাহসী, সৎ লোকেরাই বিশ্বাস করতে পারে-- হোক তা যেমনই বিশ্বাস।

ঈমানে রোগ লেগে থাকা লোকেরা নিঃসংকোচে ভালোবাসতে পারে না, বিশ্বাস করতেও পারেনা। ঈমান আছে কিনা তা বুঝতে ভলিউমের পর ভলিউম বই ঘাঁটতে হয় না। এত কঠিন বিষয় আল্লাহ মানবজাতির প্রতি দান করেন নাই, তিনিই সমস্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মালিক। মুসলিমরা ভালোবাসতে পারে, অন্যের কষ্টকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে পারে, সহজেই মিশতে পারে, দয়া করতে পারে শত পৃষ্ঠার যুক্তিমার্কা আলোচনা ছাড়াই।

সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।

[০৭ অক্টোবর, ২০১৫]

২৭ নভে, ২০১৫

প্লুরালিজম কী?


[প্লুরালিজম এখন একটি বৈশ্বিক শব্দ। অনেকেই এই ধরনের চিন্তা ও আনুসঙ্গিক বিষয়কে বর্তমান সময়ের উত্তাল বিশ্বে শান্তি আনয়নে, হিংসা-জিঘাংসা নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন। এই লেখাটি প্লুরালিজম ডট অর্গ ওয়েবসাইট থেকে নেয়া প্লুরালিজমের ইন্ট্রুডাকশন সেকশনের ভাবানুবাদ]

প্লুরালিজমের আইডিয়াটা মূলত প্রথম এসেছিলো ১৯৯০ সালের দিকে হার্ভার্ড কলেজের প্রফেসর তার স্টুডেন্টদের নিয়ে মাল্টিপল রিলিজিয়ন নিয়ে কাজ করার সময়। ১৯৯৭ সালে পর এইটা একটা রূপ পায় আমেরিকাতে। বিগত কয়েক বছর ধরে এইটা থিওলজিস্টদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

১) প্লুরালিজম শুনতে হয়ত মনোলিজম টাইপের শব্দের বিপরীত শোনায়। শাব্দিক অর্থটা এমন হলেও, আসলে এটা কেবল ধর্মীয় চেতনার বৈচিত্র্যকে বুঝায় না। এই টার্মিনোলজিটা সময়ে প্রয়োজনেই এসেছে। মূলত প্রতিটি ধর্মীয় চেতনার গোষ্ঠির মাঝে নিজ নিজ চিন্তাধারার ব্যাপারে প্রকটতা কাজ করে। কেবলমাত্র নিজেদের নিয়েই থাকার ফলে কোন বৈচিত্র্যকেই তারা মেনে নেয় না, আর অন্য চেতনার মানুষদের সাথে কোন কথাবার্তাও হয়না। তাই, প্লুরালিজম কেবল বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করাই না, বরং আগ্রহী হয়ে এগিয়ে গিয়ে অন্য ধর্ম চেতনা আর বিশ্বাসকে জানতে চাওয়ার মাধ্যমে চলমান অস্থিরতা আর গোঁড়ামির সংকট কমানোর একটা আইডিয়া প্লুরালিজম।

২) প্রতিটা ধর্মবিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন চেতনার প্রতিফলন হলেও, তাদের মাঝে কিছু মূল সাদৃশ্য আছে। তাই, প্লুরালিজমের আরেক নাম হলো এই বিশ্বাসগুলোর মাঝে যেসব মিল আছে -- তাদের খুঁজে বের করা। সাধারণত সবাই আধা-সত্য জিনিসের উপরে বিশ্বাস করে বসে থাকে, অজ্ঞানতার কারণে কেবল অন্য ধর্মের প্রতি বিরূপ হতে থাকে। এই সংহতি বা সহ্য ক্ষমতাকে বাড়ানো সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষাপটে খুবই দরকারি। তাই ধর্মগুলোর নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসসমূহের জ্ঞানের শেয়ারিং এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

৩) যদিও ধর্ম থেকে ধর্ম আলাদা বিশ্বাসের উপরে দাঁড়ানো, তবু এখানে সাদৃশ্যগুলোর উপরে ভিত্তি করে দেখা যায় যে নিজেদের চাওয়াগুলো এক পর্যায়ে একই থাকে। অনেক বেশি পার্থক্য সত্বেও এই সাদৃশ্যের চেতনাকে লালন করে পরস্পর সম্পর্ক উন্নয়নটা প্লুরালিজমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৪) প্লুরালিজম মূলত বিভিন্ন ধর্মের চেতনার মানুষদের মাঝে কথাবার্তা ও ডায়লোগকে বুঝায়। অর্থাৎ, কেবলমাত্র নিজের ধর্মকে নিয়ে জেনে বসে থাকা নয়, বরং পারস্পরিক জ্ঞান শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যের বিশ্বাসকে গ্রহণ করাই না, বরং নিজেদের উদ্যোগে তাদের সাথে মিলগুলো খুঁজে প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পথ চলা হলো প্লুরালিজম।

রেফারেন্স:

# ওয়েবসাইট - http://pluralism.org/pages/pluralism/what_is_pluralism
[ইউটিউব ভিডিও] -  www.youtube.com/watch?v=XgW3vP7p3no
[বই] Quest for Meaning - Developing the philosophy of Pluralism : Tariq Ramadan

২৬ নভে, ২০১৫

[অনুবাদ] পাওলো কোয়েলহো # ১

 

* * * * * *
পৃথিবী আপনার বক্তব্য আর মতামত দিয়ে কোনদিন বদলাবে না। পৃথিবী বদলায় আপনার কাজ দিয়ে যে দৃষ্টান্ত আপনি তৈরি করেন তা দিয়ে।~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
জীবনকে হয় দীর্ঘ নয়ত সংক্ষিপ্ত বলে মনে হয় যা নির্ভর করে আপনি জীবনে কেমন করে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন তার উপরে।~ পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
পৃথিবীর কোন কিছুই পুরোপুরি ভুল নয়। এমনকি পড়ে থাকা নষ্ট ঘড়িটাও দিনে দু'বার সঠিক সময় দেয়। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
পেছনের দিনে কেউ যেতে পারে না, কিন্তু সবাই সামনে এগিয়ে যেতে পারে। তাই আগামীকাল যখন সূর্য উঠবে তখন নিজেকে আপনার বলতে হবে, আজকের দিনটিকে আমি আমার জীবনের প্রথম দিন হিসেবে মনে করবো।~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
সবাইকে দেখলে যেন মনে হয় অন্যদের কেমন করে জীবন যাপন করা উচিত সেই সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা আছে, কিন্তু কারোই তো তার নিজের জীবন-যাপন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই। ~পাওলো কোয়েলহো [দি-আলকেমিস্ট] 

* * * * * *
আমরা যখন ভালোবাসি, তখন চেষ্টা করি নিজেকে আরো উন্নত করার। যখন নিজেকে উন্নত করার সাধনা করি, তখন আমাদের চারপাশের সবকিছুও উন্নত হয়ে যায়।  ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
নিজের ভেতরের শিশুটির হাত চেপে ধরুন কেননা শিশুদের কোন অসম্ভব কাজ করতেই আটকায় না। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
কোন কিছু করতে দ্বিধা হলে তা করে ফেলুন। আপনি সবসময় পরে আফসোস করতে পারবেন। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
আপনার সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু যেন আপনার দুই কানের মমধ্যবর্তী জায়গায় বসবাস না করে তা নিশ্চিত করুন।~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে বড় উত্তর। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
আপনি যখন 'বিদায়' জানানোর মতন সাহসী হবেন, দেখবেন জীবন আপনাকে নতুন করে 'স্বাগত' জানিয়ে পুরষ্কার দেবে। ~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
"স্বপ্নকে সত্য হওয়াকে অসম্ভব করে ফেলার পেছনে যে একমাত্র কারণটি কাজ করে তা হলো ব্যর্থতার ভয়।"~পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
অপেক্ষা করা কষ্টকর, ভুলে যাওয়া কষ্টকর। কিন্তু ঠিক কী করতে হবে তা না জানা হলো সবচেয়ে বেশি কষ্টকর ভোগান্তি। ~পাওলো কোয়েলহো

মানুষ হিসেবে ভুল করার অধিকার আপনার আছে



মানুষ হিসেবে ভুল করার অধিকার আপনার আছে। আপনি প্রতিদিনই ভুল করবেন, সেগুলো থেকে উত্তরণই আপনার প্রতিদিনের সফলতা। আপনার ভুলকে পুঁজি করে কেউ আহত করলে, আঘাত দিলেই কিন্তু আপনি ভেংগে পড়বেন না। আপনাকে সম্পূর্ণ ভুল মানুষ হিসেবে কেউ দাবী করলে তাতে কষ্ট পাবেন না। কেননা, আপনি এই মানুষটা একদিনে হননি।

আপনার গোটা জীবনের প্রতিটি দিনের ছোট ছোট সৌন্দর্য মিলেই এই আপনি। আল্লাহর পৃথিবী একদিনে উলটে যায় না। কারো কথায়, আচরণে আহত হবেন না। শক্ত হোন, নিজের কাছে সততা রাখুন। আল্লাহ ঠিক জানেন আপনার অন্তরের সৌন্দর্য, অন্যদের প্রতি আপনার ভালোবাসা, শুভকামনা আর দোয়া-- আপনি সবকিছুর বিনিময় অবশ্যই পাবেন। আপনার সংগোপনে করা সুন্দর চিন্তাগুলোর প্রতিবিম্ব আপনি খুঁজে পাবেন অন্য মানুষের আচরণে, কথায়।

আল্লাহর পৃথিবীটা অনন্য সুন্দর। এখানে সবকিছু মিলেই সবকিছু। অল্পতেই আশাহত হবেন না। :)

[১৩ নভেম্বর, ২০১৫]

১৭ নভে, ২০১৫

আপনি কি নিজের ভেতরের জিঞ্জিরগুলো চুরমার করতে পেরেছেন?

 

আচ্ছা, আপনি কি কখনো নিজের ভেতরের সমস্ত জিঞ্জিরগুলো ভেঙ্গে চুরমার করতে পেরেছেন? আপনি কি সমস্ত খারাপলাগা, কষ্ট, ক্লেদ, ঘৃণা, হিংসা, অপ্রাপ্তির হিসেব, অস্বস্তি, অশান্তিকে ভেঙ্গে নিজেকে ফুরফুরে হাসি উপহার দিতে পেরেছেন? পেরেছেন নিজেকে ভালোবাসতে? নিজেকে যে ভালোবাসতে পারে না, সে অন্যদেরকেও পারে না। যে নিজের একাকীত্বকে সহ্য করতে পারেনা, সে অন্যের সান্নিধ্যেও শান্তি পায় না। যে নিজের কারাগারে নিজে বন্দী থাকে, সে অপর কারো সান্নিধ্যে আরো বেশি বন্দীত্ব অনুভব করে।

খেয়াল রাখুন যেন নিজের চারপাশের শেকলগুলো আপনাকে বেঁধে না রাখে, যেন অতীতের মতন গ্লানিময় না হয় আগামীর দিনগুলো। হাসুন মন খুলে, বৃষ্টিকে উপভোগ করুন আনন্দে। আপনার মতন জীবন তো পৃথিবীতে কোটি-কোটি মানুষ এখনো উপভোগ করছে-- সাগ্রহে কিংবা বাধ্য হয়ে। আপনি যা পাচ্ছেন, সে তো আল্লাহর একান্ত দান। তিনি যা দিচ্ছেন, তা আপনার জন্যই নির্ধারিত। তিনি যা থেকে আপনাকে বঞ্চিত করছেন, তা আপনি কিছুতেই পেতেন না। এই বর্তমানের মূহুর্তটুকু উপভোগ করুন। প্রাণের, অনুভূতির, উপলব্ধির এই মহামূল্যবান সময়ের জন্য কৃতজ্ঞতা অনুভব করুন। আপনার চারপাশেই অনেক মানুষ চিন্তা ও উপলব্ধির সময় কিংবা সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। কীসের জ্বালা আপনাকে ভারাক্রান্ত করছে বলুন তো?

ভেবে দেখুন, এই মূহুর্তটির মতন মূল্যবান কিন্তু কিছু আপনার জীবনে নেই। এই এক্ষুনি বুকের মাঝে আনন্দের ঢেউ খেলাতে পারবেন কি? না পারলে চিন্তিত হয়ে দেখুন তো, কোন নষ্ট অনুভূতির বাঁধ আপনার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার স্রোতকে আটকে দিচ্ছে? সমস্ত শান্তি ও ভালোবাসার ভান্ডারের চাবি তো আমাদের হৃদয়ের গহীনেই, কেন তবু আমরা দুঃখিত, বিষণ্ণ, অশান্ত?

[৬ অক্টোবর, ২০১৫]

১৬ নভে, ২০১৫

আমরা যাকে ভালোবাসি, আসলেই কি বাসি?

 




আমরা যাকে ভালোবাসি, আসলেই কি বাসি? কেমন করে বুঝি সেটা? আমরা যা পছন্দ করি, আসলেই কি করি? নাকি অন্যেরা যা ভালোবাসায়, পছন্দ করায়, তা আমরা অবচেতনভাবে পছন্দ করি, ভালোবাসি, উত্তম মনে করি? আমরা কতটুকু সময় নিজের চিন্তা নিজে করি? লোকের বলা ছাঁচেই আমরা বেশিরভাগ চিন্তা করি, তাইনা? অথচ আমরা কেউ অন্য কারো মতন না। আমাদের জীবনগুলো পরস্পরের চেয়ে একদম আলাদা।

আমরা বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের চিন্তার কারাগারে বন্দী থাকি। চারপাশের মানুষগুলো আমাদের বন্দী করতে চায় তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ আরোপ করে সৃষ্ট যে কারাগার তার মাঝে। আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন অবারিত পৃথিবী। পৃথিবীতে খুব অল্প বিষয় নিষিদ্ধ। পৃথিবী আল্লাহর নিয়ামতে পরিপূর্ণ। উপভোগের জন্য পাপহীন বিনোদনে পৃথিবী ভরপুর।

আচ্ছা, ক'জন আমরা ঘৃণাহীন, হিংসাহীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি? পত্রিকা, চ্যানেলের খবরে, অপদার্থ বন্ধু/আত্মীয়র মুখে, ফেসবুকের পন্ডিতন্মন্য মানুষদের সমালোচনামুখর পোস্টে আমরা শুধু ঘৃণা, অবিশ্বাস, সন্দেহ, অশান্তি, পরনিন্দা, অপবাদ, মিথ্যায় ডুবে থাকি... শান্তির ঘুম কেমন করে আসবে জঞ্জালভরা হৃদয়ে, অতৃপ্ত ও অসুস্থ চোখে?

কেন লোকের গীবত-পরনিন্দা থেকে দূরে যাইনা? কেন যাবতীয় নেগেটিভিটি থেকে সরে আসিনা? কেন সবাইকে ভালোবাসতে পারিনা? কেন লোকের উত্তম গুণাবলী নিয়েই আলাপ করিনা?

সমস্ত রং যেখানে থাকে, সেটি হয় কালো। যেখানে কোন রং থাকে না, তার রং সাদা। হৃদয় যখন সমস্ত ক্লেদ ও পংকিলতামুক্ত হয়-- সেটি শুভ্র হৃদয়। সেটিই প্রশান্ত আত্মা।

নিজেদের শত্রু যেন নিজেরাই না হই কখনো। আমাদের আত্মা যেন হয় সদাকৃতজ্ঞ, স্নিগ্ধ, ভালোবাসায় ভরপুর প্রশান্ত আত্মা।

[২৯ আগস্ট, ২০১৫]

১৩ নভে, ২০১৫

রুমী কবিতা (ষোড়শ কিস্তি)


 

* * * * * * *
তোমার জীবনটা তাকে সঁপে দাও যিনি ইতোমধ্যেই তোমার সমস্ত শ্বাস-প্রশ্বাস এবংমূহুর্তগুলোর মালিক। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
ভালোবাসার দৃষ্টি হলো স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
আমার গহীন ভেতরে কে আছে তা খুঁজে দেখতে আমি নিজেকে খুঁড়ে চলি। কিন্তু, যতই গভীরে খুঁড়তে থাকি, ততই আমি নিজের চিহ্নটুকু হারিয়ে ফেলতে থাকি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
আমার মুখ বন্ধ রেখে আমি তোমার সাথে আরো শত উপায়ে কথা বলেছি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
কারো আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চাইলে তুমি আগে তোমার বাহু দু'টি প্রসারিত করো।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
ভালোবাসার সফরে বেরিয়ে পড়ো। সে তো তোমার কাছ থেকে শুরু হয়ে তোমাতেই এসে শেষ হয়।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
হৃদয়ের একটা নিজস্ব ভাষা আছে। সে কথা বলার করার হাজারটি উপায় জানে। ~জালালুদ্দিন রুমী

১২ নভে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪১

 

(৪১৪)
​কেবলমাত্র সম্মানিত মানুষরাই অন্যদের সম্মান দিতে জানেন। যারা সম্মান দিতে জানেনা, তারা মূলতঃ নিজেরাই সম্মানের যোগ্য হয় না।

(৪১৫)
যখনই শুঁয়াপোকা ভেবেছিলো তার পৃথিবীটা একদম শেষ হয়ে গেলো -- তখনই সে উড়তে শুরু করেছিলো!

(৪১৬)
মানুষের একটি স্বভাব হ​লো, পথ হারিয়ে ফেললে আরও দ্রুত হাঁটা...

(৪১৭)
জীবনে কারো ব্যাপারে অভিযোগ রাখবেন না। জীবনে ভালো মানুষরা আপনাকে দিবে সুখ, খারাপ মানুষেরা দেবে অভিজ্ঞতা। খুব জঘন্য মানুষে​​রা আপনাকে দেবে শিক্ষা আর খুব চমতকার মানুষেরা আপনাকে দিবে স্মৃতি। [অনূদিত]

(৪১৮)
আচ্ছা ঠিকাছে, আপনি যে কোন মানুষকে অপছন্দ করতেই পারেন। এমনকি কোন কারণ ছাড়াই কাউকে অপছন্দ করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে আপনি কাউকে অসম্মানিত, অপদস্থ, অপমানিত করতে পারেন না। [স্পিরিট সাইন্স ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত]

(৪১৯)
যারা আবেগের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তারা সুখ পায় না। যারা আবেগকে চিনে নিয়ে তাকে জয় করে, তারা আবেগ থেকে উদ্ভুত আনন্দও পায়, বিপদেও পড়ে না। আবেগ এক ধরণের ফাঁদ, সেই ফাঁদে আবেগস্বর্বস্বরা নিয়মিত ভূপাতিত হয়।

(৪২০)
আসুন আমরা অনেক উদারতা নিয়ে সেই মানুষগুলোকে ক্ষমা করে দেই যারা আমাদের ভালোবাসতে পারেনি। ~পাবলো নেরুদা

(৪২১)
হাসপাতালে ঈদের ছুটি বলে তেমন কিছু নেই। রোগীরা এখানে আসে ত্রস্তব্যস্ত হয়ে, জীবনের প্রয়োজনে। জীবনকে ধারণ করতে চাওয়ার কী সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা এই রোগে কাতর মানুষগুলোর! আমাদের জীবনটা কতই না ঠুনকো! কী অসহায় আমরা! হাসপাতালে আসার কারণটি তৈরি হবার এক মিনিট আগেও মানুষগুলো বুঝতে পারে না তাকে পড়ে থাকতে হবে বিছানায়। শক্তপোক্ত আমরা বিছানায় পড়লে টের পাই, অসমর্থ মানুষগুলোকে জগতে কেউ পাত্তা দেয় না। 'সারভাইফাল ফর দা ফিটেস্ট' হলো এই জগতের মূলনীতি। দুর্বলদের পদে পদে জ্বালা!

কত কষ্ট আর অসহায়ত্ব! হায় দুনিয়ার জীবন! তবু সবার বাঁচতে ইচ্ছে করে। শেষ প্রান্তরে গিয়েও হয়ত আরেকবার রোদভাঙ্গা সকাল দেখতে ইচ্ছে হয়, ইচ্ছে হয় ডানা মেলা গাংচিল দেখতে, ইচ্ছে হয় রাতের আকাশের স্নিগ্ধ জোছনা দেখতে সমুদ্রপাড়ে বসে! হয়ত মৃত্যুর দরজার ওপারের নিদারুণ রহস্যের ভয় তটস্থ রাখে বলেই যেতে ইচ্ছে হয়না। তবু যেতে হবে। রোগে ভুগতে থাকা মানুষগুলোকে এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। ইশশ! কত কষ্ট মানুষের জীবনে! তবু আমাদের একেকটা বুকের মাঝে কতই না নির্মমতা!

(৪২২)
হে আল্লাহ, নিরস্ত্র গাজাবাসীদেরকে চারপাশ থেকে পৃথিবীর অন্যতম সর্বোচ্চ সামরিক শক্তির ইহুদিবাদী ইসরায়েল যেভাবে হত্যা করছে, আপনি এই মজলুম মুসলিম ফিলিস্তিনিদের একমাত্র অভিভাবক। হে আল্লাহ, সিরিয়াবাসীদেরকে যেভাবে নানান দলের অস্ত্রধারীরা মিলে হত্যা করছে সেই ফিতানের মাঝেও একমাত্র আপনিই অভিভাবক। হে আল্লাহ, মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হবার তাওফিক দিন। হে আল্লাহ, ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দিন, কাফিরদের ধ্বংস করে দিন, তাদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিন, তাদের সবদিক থেকে কাবু করে দিন। নিশ্চয়ই সমস্ত ক্ষমতা কেবলই আপনার। আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। [১১ অক্টোবর, ২০১৫]

৯ নভে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪০

 

(৪০৮)
একটা পর্বতের চূড়ায় ওঠার অনেকগুলো পথ থাকে। ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেও হয়ত অনেকেই সেই একই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

আমরা যা নিয়ে চিন্তা করি তা নিয়ে অনেকে অনেকভাবে চিন্তা করতে পারে। আমরা যা দেখি, তাকে অনেকে অনেক ভঙ্গিতে, অনেক দৃষ্টিকোণে, অনেক ভিন্ন কৌণিক অবস্থান থেকে দেখতে পারে। তারা আমার মতন নয় বলে তারা ভুল নয়। তারা তাদের মতন, আমরা আমাদের মতন।

যারা কম জানে ও কম বুঝে তাদের অতি-আত্মবিশ্বাসের কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অজ্ঞতা।


(৪০৯)
অনেক সময় আমাদের সংকট হয় ভাষার। একজন হয়ত যে কথা বলে, আরেকজন একই কথা অন্যভাবে বলে। কিন্তু তারা পরস্পরকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, ভুল বুঝে, শত্রুতাও হয়।

একবার তিন ব্যক্তি একসাথে হেঁটে আসছিলো। একজন ছিলো আরব, আরেকজন পার্সিয়ান এবং অপরজন ইতালিয়ান। তারা পথে একটি দিরহাম পড়ে থাকতে দেখলো। তিনজনেই দিরহামটির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো তা আয়ত্ব করার জন্য।

আরবটি বললো, এই পয়সা দিয়ে আমরা ইনাব কিনবো।
পার্সিয়ান লোকটি বললো, এই দিরহাম দিয়ে আমরা আঙ্গুর কিনবো।
ইতালিয়ান বললো, এই দিরহাম দিয়ে আমরা ভেনেটা কিনবো।

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী এই ঘটনার ব্যাপারে বলেন, তারা সবাই আসলে একই কথা বলছিলো। তাদের দরকার ছিলো একজন অনুবাদকের।

[শাইখ হামজা ইউসুফের লেকচারে শোনা ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখা]

(৪১০)
আপনি তো সেটাই বিশ্বাস করেন যা আপনি বিশ্বাস করতে পছন্দ করেন। ~ জনৈক

(৪১১)
যারা আপনাকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে তাদের কাছে আপনার কোন করে ফেলা কাজের জন্য ব্যাখ্যা দিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। যাদের কাছে আপনার কৃত কোন কাজের ব্যাখ্যা দিতে যেতে হয়, তারা আপনাকে কখনো বিশ্বাসও করবে না, ভালোবাসবেও না। [সংগৃহীত ও অনূদিত]

(৪১২)
সে-ই কেবল ভুল করেনা যে কোনদিন কোন কিছু করার চেষ্টা করেনা।

(৪১৩)
​ "আমি কি একটা পতাকা উত্তোলন করাকে আমাদের সমস্যার সমাধান বলে মনে করি? উত্তর হলো, না। পতাকা আমাদের অর্থ দেবে না, কাজের সুযোগের বন্দোবস্ত করবে না, পতাকা আমাদের অধিকার এনে দেবে না, পতাকা বন্ধ করবে না আমাদের উপরে বোমাবর্ষণ।" ---- উম্মু আবদুল্লাহ, গাজার নুসারিয়েত উদ্বাস্তু শিবিরের ৪৯ বছর বয়সী বৃদ্ধা আল-জাজিরার সাথে একটি সাক্ষাতকারে এই কথা বলেন।

৮ নভে, ২০১৫

একগুচ্ছ অনুবাদ [৭]


পাবলো নেরুদা  /কার্ল জাং / কাহলিল জিবরান

* * * *
কোন একদিন কোন একখানে নিশ্চিতভাবেই আপনি আপনার নিজেকে খুঁজে পাবেন, আর সেই মুহূর্ত, হ্যা, সেই মুহূর্তটিই আপনার জীবনের সবচেয়ে সুখময় অথবা তিক্তকর মুহূর্ত হতে পারে। ~পাবলো নেরুদা

* * * *
তুমি হয়ত গাছ থেকে সবগুলো ফুল কেটে ফেলতে পারো কিন্তু তুমি বসন্তের আগমন রুধতে পারবে না। ~ পাবলো নেরুদা

* * * * *
আসুন আমরা অনেক উদারতা নিয়ে সেই মানুষগুলোকে ভুলে যাই যারা আমাদের ভালোবাসতে পারেনি। ~পাবলো নেরুদা

* * * * *
আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মাঝামাঝি যে মাসটি পড়েছে, তার নাম কী? ~পাবলো নেরুদা

 * * * *
একাকীত্ব তো এমন নয় যে আপনার চারপাশে কোন মানুষ নেই। বরং একাকীত্ব হলো আপনি যে জিনিসগুলোকে জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন সেগুলোর সাথে আপনার যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারা। ~কার্ল জাং

* * * * * *
যতই নিজের গভীর থেকে গভীরে লক্ষ্য করবেন, আপনার দৃষ্টি ততই স্বচ্ছ হবে। যে বাইরের পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে, সে তো স্বপ্নের মাঝে ডুবে থাকে। যে নিজের ভেতরটায় মনোযোগ দেয়, সে মানুষটাই জেগে ওঠে।~কার্ল জাং
 
* * * * * *
গতকালের দিনটি আজকের স্মৃতি এবং আগামীকালের দিনটি আজকের স্বপ্ন।~ কাহলিল জিবরান

* * * * * *
"যে চাঁদ কবিদের কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে, সেই একই চাঁদ কি শান্ত সমুদ্রকে প্রচন্ড গর্জনে ক্ষেপিয়ে তুলে না?
~ কাহলিল জিবরান

* * * * * * 
বাতাসের কাছে কোন গোপন কথা বলার পরে সে যদি গাছকে বলে দেয় তাহলে তুমি বাতাসকে দোষ দিতে পারো না। ~ কাহলিল জিবরান

* * * * * *
"বুড়োরা সবকিছু বিশ্বাস করে, মধ্যবয়স্করা সবকিছুকে সন্দেহ করে আর তরুণেরা সবকিছু জানে!" ~অস্কার ওয়াইল্ড

* * * * * *
"তিনি বলেছিলেন, তোমার শত্রুকে ভালোবাসো। আমি যখন এই আদেশ পালন করতে গেলাম তখন আমি আমাকেই ভালোবাসতে লাগলাম।" ~কাহলিল জিবরান


৭ নভে, ২০১৫

ভালোবাসার সুমধুর আহবান


খুব সুন্দর এই আজানটা শুনে বুকের ভেতরটায় একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো। আজান তো সেই আহবান, যা ডেকে আনে সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর পথে। কী স্নিগ্ধ আর শান্ত সেই আহবান। কী সুন্দর আর সুমধুর সেই বাণী, সেই কথাগুলো। আমার সমস্ত শব্দ দিয়েও কি পারবো সেই সৌন্দর্যময় আজানকে বিশেষায়িত করতে?

অনেকদিন আগে একবার মসজিদে যুহরের পরে বসে বসে দেখছিলাম মুয়াজ্জিন খুব দরদ দিয়ে মসজিদ পরিষ্কার করছেন। তিনি আসলে আল্লাহর ঘরের অতিথিদের জন্য আয়োজন করছিলেন, তিনি তো আল্লাহর অতিথিদের যত্ন-আপ্যায়ন করেন। যিনি আহবান করেন প্রতিদিনের নামাজে, যিনি 'আল্লাহু আকবার' বলে ঘোষণা করেন আল্লাহর বড়ত্বের--'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ' বলে তিনি সাক্ষ্য দেন নবীর (সা) রিসালাতের, ছড়িয়ে দেন সুমধুর কন্ঠে সেই ভালোবাসা আর দৃঢ়তাকে শত মানুষের, হাজার হাজার প্রাণি-পাখি-গাছপালার মাঝে।

এমন ভালোবাসা, এমন দরদ, এমন নিষ্ঠা কি রব বিফলে যেতে দেবেন? আল্লাহ যেন মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসা আহবানগুলোকে আরো বরকতময় করে দেন। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ-লক্ষ মুয়াজ্জিনকে যেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন, আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকেও ক্ষমা করে দেন।

# সুন্দর আজানটি: https://www.youtube.com/watch?v=EnmV613p7MQ

মনের জানালা মাঝে # ৩৯

 

(৪০০)
স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দেয়। স্বপ্নই আমাদের মাঝে আশা জাগিয়ে রাখে। স্বপ্নগুলো আমাদের হৃদয়কে সজীব রাখে। স্বপ্নহীনতা হৃদয়কে শুকনো মাটির মতন করে দেয়, জীবনের তাপে যা সময় পেরিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তাই স্বপ্ন দেখতে হয়। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখতে হয়। ভালো কাজ করতে হয়। চারপাশের মানুষদের উপকার করতে হয়। তাদের ভালোবাসতে হয়।

ভালোবাসতে হলে স্বপ্ন দেখতে হয়। স্বপ্ন দেখতে হলে ভালোবাসতে হয়।

(৪০১)
​ সমুদ্রপাড়ে আমরা অদ্ভুত ভালোলাগায় আত্মহারা হয়ে যাই। আমরা হারাই বিশালতার মাঝে। আমরা আসলে বিশালতায় হারাতে ভালোবাসি। মানুষের মাঝেও এমন অনেক মানুষ আছে যাদের হৃদয় অমন কয়েকটা সমুদ্রকে ধারণ করে। বিশাল হৃদয়ের ভালোবাসায় আমরা অবগাহন করি আনন্দচিত্তে।

বিশাল সমুদ্র সৃষ্টি হয় আল্লাহর ভালোবাসায়। বিশাল হৃদয় তৈরি হয় ব্যক্তির সার্বজনীন ভালোবাসায়। যে হিসেব-নিকেশ ছাড়া ভালোবাসতে পারে, সেই অর্জন করে বিশাল হৃদয়, যে হৃদয়ের পাশে থাকলে সমুদ্র বিলাসের অনুভূতি জাগে।

হৃদয় বিশাল করতে ভালোবাসা লাগে। ভালোবাসতে হলে হৃদয়টা বড় হওয়া লাগে।

(৪০২)
এক ভাই আমাকে একটা কৌতুক শোনালো। হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি চলে এলো। পরে আবার আমাকে সে কৌতুকটি সে শোনালো। এবার আমি হাসলাম কিন্তু আগেরবারের মতন না। সে আবার আমাকে কৌতুকটি শোনালো। কিন্তু এবার আর আমি হাসলাম না।

সে তখন আমাকে বললো, তুমি যদি একই কৌতুকে বারবার হাসতে না পারো তাহলে তুমি কেন সেসব মানুষদের জন্য কাঁদো যারা তোমাকে বারবার কষ্ট দেয়? [সংগৃহীত ও অনূদিত]

(৪০৩)
ব্যর্থ হওয়াটা দুঃখজনক। কিন্তু আরো অনেক বেশি কষ্টদায়ক হলো কখনই সফল হবার চেষ্টা না করা।

(৪০৪)
সুখ কি কেবল সেটাই যা আমরা আশা করি আর তারপর তা পেয়ে যাই?

কখনো কখনো সুখ আমরা তৈরি করে নিই নিজ হাতে। কখনো সুখ থাকে আমাদের কাজের মাঝে, কখনো থাকে আমাদের নিজের মাঝেই, কখনো সুখকে পাওয়া যায় ত্যাগের মাঝে, নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাঝে।

সুখের প্রকৃত ঝর্ণাধারা মিশে আছে আমাদেরই মাঝে। আমাদের সত্ত্বায়, আমাদের দৃষ্টিভংগি, চিন্তায়, আবেগে, উপলব্ধিতে।

(৪০৫)
মানসিক চাপ শুধু আমাদের শারীরিক ক্ষতি করে, তা-ই নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি আমাদের আশা, স্বপ্ন এবং বিশ্বাসকেও নষ্ট করে দেয়।


(৪০৬)
আমরা জীবনে যা পেয়েছি তার জন্য যদি শুকরিয়া করতে না পারি, তাহলে অন্তত সেইসব ভয়ংকর ব্যাপারগুলোর কথা ভেবে আমাদের শুকরিয়া করা উচিত যাদের ক্ষতি থেকে আমরা বেঁচে গেছি।

(৪০৭)
কোন কিছুকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সর্বপ্রথম অন্তত সেটির স্বপ্ন দেখতে হয়।

সুখে থাকার খুব সহজ একটা তরিকা

পৃথিবীতে সুখে থাকার খুব সহজ একটা তরিকা আছে। স্রেফ বর্তমানে থাকুন। এটা একদমই কঠিন কোন বিষয় না। সুখী হতে হলে আপনাকে অনেক কিছু করে দুনিয়া উলটে দিতে হবে না। স্রেফ বর্তমানের মাঝে জীবনকে ধারণ করুন। বর্তমানকে খুব গভীরভাবে দেখুন, বর্তমানকে নিয়ে বেঁচে থাকুন, বর্তমানের মূহুর্তগুলোকে উপভোগ করুন।

অতীতের কারণে অনুশোচনা ও দুশ্চিন্তা আর ভবিষ্যত নিয়ে যত বেশি উদ্বেগ ও শংকা করবেন, আপনি তত বেশি অশান্তিতে থাকবেন। অতীত আর ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা করে মূলত আপনি অন্য কারো/অন্য কিছুর কাছে নিজের স্বস্তি/শান্তি/সুখ জমা দিয়ে দিলেন।

১২ অক্টো, ২০১৫

রুমী কবিতা (পঞ্চদশ কিস্তি)




* * * * * * *
খোদা, সেখানে নিয়ে চলো
আমার আত্মাকে
যেখানে হয়ত শব্দ ব্যবহার না করেই
আমি কথা বলতে পারবো।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
তুমি যে অনুপ্রেরণা খুঁজছো হন্যে হয়ে
তা ইতোমধ্যেই তোমার মাঝেই রয়েছে।
চুপ করো আর কান পেতে শোনো।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
যখন আমরা মারা যাবো,
কবরের ফলকের মাঝে আমাদের খুঁজো না।
আমাদের খুঁজিয়ো মানুষজনের মাঝে।
~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
একটা গাছের মত হও আর মরে যাওয়া পাতাগুলোকে ঝরে যেতে দাও।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
খোদার কাছে পৌঁছানোর অনেকগুলো পথ আছে। আমি বেছে নিয়েছি ভালোবাসা।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
আমাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো।
আমি ভালোবাসা এবং আমি সবসময় তোমারই। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * *
কিছুক্ষণের জন্য হলেও তোমার উচিত নৈঃশব্দের বাগানে একাকী পদচারণা করা।~জালালুদ্দিন রুমী

অর্ধেক পানিভর্তি গ্লাস নিয়ে যত কথা



অর্ধেক পানিপূর্ণ গ্লাসের কতটুকু ভর্তি অথবা খালি এই প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। এই যেমন যারা নাকি বলে অর্ধেক পূর্ণ তারা নাকি অপটিমিস্ট, আর যারা বলে অর্ধেক শূণ্য তারা নাকি পেসিমিস্ট! অথচ একজন জ্ঞানী মানুষ বলেছিলেন, অর্ধেক খালি বলা ঐ ছেলেটি তার কাছে রিয়েল অপটিমিস্ট এবং স্বাপ্নিক কেননা সে ভেবেছে আরো অর্ধেক পানিতে গ্লাসটি পূর্ণ হতে পারতো।

আবার কেউ বলেন, অপটিমিস্ট আর পেসিমিস্ট যখন গ্লাসের কতটুকু ভরা বা খালি তা নিয়ে তর্ক করছিলো তখন অপরচুনিস্ট এসে পানিটুকু খেয়ে ফেলে গেছে।

খুব গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে সেই মানুষটির কথা যিনি বলেছেন, গ্লাসটি কতটুকু ভারী। উত্তরে কেউ বললো হয়ত দু-আড়াইশো গ্রাম! তিনি বললেন, গ্লাসটির ওজন সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকবে। যতই আপনি গ্লাসটি ধরে রাখবেন, ততই তার ওজন বাড়তে থাকবে। তাই গ্লাসটি বেশিক্ষণ ধরে রাখবেন না, নামিয়ে রেখে দিন।

জীবনের চিন্তাগুলোই এমন। যতই ভাববেন, ততই তারা আপনাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলবে। একই চিন্তা তাই বেশিক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করতে নেই। একই চিন্তা বেশি বেশি করলেই সমাধান আসে না, বরং তা মনকে অসুস্থ ও অসাড় করে ফেলে।  মনকে সুস্থ-সুন্দর রাখতে হলে চিন্তাগুলোকে পরিচ্ছন্ন ও গুছানো রাখা প্রয়োজন।

৪ অক্টো, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৩৮



(৩৯১)
অন্ধকার কখনো অন্ধকার দূর করতে পারে না, কেবল আলোই তা পারে... ঘৃণা কখনো ঘৃণা দূর করতে পারে না, কেবল ভালোবাসাই তা পারে।

(৩৯২)
অনেক সময় বন্ধুর মন খারাপ সারানোর একটা তাৎক্ষণিক উপায় হলো তাকে নিজের কষ্টের বিষয়গুলো বলা, এতে অনেক সময়ই তাদের কষ্ট লাঘব হয়ে যায়। #SadButTrue

(৩৯৩)
পড়ুয়া মানুষদের সাথে কথা বলতেই আনন্দ। তারা অনেক শব্দ ধারণ করেন, তাদের কাছে অনেক আইডিয়া পাওয়া যায়, অনেক সুন্দর অনুভূতি ও চিন্তার সাথে পরিচিত হওয়া যায়। বইপড়ুয়াদের কল্পনাশক্তি অন্যদের চেয়ে প্রখর হয়। কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির অনেকগুলো উপায়ের অন্যতম প্রধান ও শ্রেষ্ঠ উপায় হলো গল্প পড়া। মানুষের জীবনকে, জীবনবোধকে জানা খুবই কল্যাণকর। বই পড়া তুলনাহীন কল্যাণময়, অভাবনীয় সুন্দর!

(৩৯৪)
জীবনে যত বড় ঘটনাই ঘটুক না কেন, বড় আশা হলো -- এই ব্যাপারটাও একসময় কেটে যাবে। কোন কিছুই স্থায়ী নয়, ভালো সময়ও নয়, খারাপ সময়ও নয়।

(৩৯৫)
আপনার মনটাতেই আছে সবকিছু। আপনি যা চিন্তা করবেন, তা-ই হয়ে যেতে থাকবেন।

(৩৯৬)
অসম্ভব বলতে কোন বাস্তব ঘটনা নেই। এটা একটা মতামত মাত্র।

(৩৯৭)
আপনি কতটা শক্তিশালী তা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন তখনই যখন শক্তিশালী হওয়া আপনার টিকে থাকার সংগ্রামের একমাত্র উপায়।

(৩৯৮)
ভালো হোক, খারাপ হোক... দিন থেমে থাকবে না, থাকে নি, থাকে না। লম্বা করে একটা নিঃশ্বাস নিন। এসব চিন্তা থাকুক। তেমন কিছুই যখন আমাদের হাতে নেই, চিন্তাটুকু কেন করি শুধু শুধু?


(৩৯৯)
"সাধারণ হওয়াটাই অসাধারণ"-- একথা মুখে বললেও বেশিরভাগ লোকই সাধারণ কাউকে অবহেলা ও তাচ্ছিল্যে দেখে। সম্ভবত, এই জন্যেই সাধারণ থাকাটা অসাধারণ। ~ ইফতেখার মাহমুদ

৩ অক্টো, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৩৭

 

(৩৮৪)
কখনো কখনো বের হয়ে যেতে হয় পথে, মুসাফির হয়ে। মুসাফিরের জীবন অভিজ্ঞতার। নানান রকমের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, জীবনবোধের মাঝেই তো পথচলা। জীবনটাই অমন অভিজ্ঞতা--কিছু ভালো, কিছু তিক্ত। কিন্তু অভিজ্ঞতা আমাদের তৈরি করে-- অজানাকে জানায়। মুসাফির হয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে ফিরে, নানান ধরণের মানুষের সাথে মিশে, মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়।

পাওলো কোয়েলহোর 'দি আলকেমিস্ট' বইটিতে লেখক দেখিয়েছেন ছেলেটি যখন মিশরের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আবার নিজ ভূমিতে ফিরে আসে-- দুই সত্ত্বার মাঝে বিস্তর ব্যবধান। ছেলেটি ট্রাভেল করে যা শিখেছিল তা তার জীবনকে, জীবনবোধকে বদলে দিয়েছিলো। আমাদের জীবনগুলোর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়।

(৩৮৫)
খুব কষ্ট লাগছে কি? দ্যাটস দ্যা পয়েন্ট। দুনিয়াটাই এমন, অবিমিশ্র সুখে থাকার নাম দুনিয়া নয়। ঈমান থাকলে তার পরীক্ষাও থাকবে, তার পুরষ্কারও আছে। আরেকটু ধৈর্য ধরুন... এ সময়টা কেটে যাবে!

(৩৮৬)
প্রতিটি সূর্যোদয় আমাদের জন্য আরেকটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে জীবনে। জীবনটাকে নতুন করে সাজানোর, ভুলগুলো শুধরে নেয়ার...

(৩৮৭)
আপনার যা পছন্দ করেন তা করতে পারা হলো স্বাধীনতা। আপনি যা করছেন তা পছন্দ করতে পারা হলো সুখ।

(৩৮৮)
আপনার যা পছন্দ করেন তা করতে পারা হলো স্বাধীনতা।
আপনি যা করছেন তা পছন্দ করতে পারা হলো সুখ।

(৩৮৯)
যখন যেখানে থাকি, তখন আসলে সেখানে থাকি না। পরে যখন পেছনে ফিরে দেখি, মনে হয় কেন আরো বেশি করে সেখানে থাকিনি তখন। ~ইফতেখার মাহমুদ

(৩৯০)
জানেন তো? মানুষ কিন্তু তার স্বপ্নের সমান বড়। আপনার স্বপ্ন কত বড়? আপনার স্বপ্নে আপনি কতটুকু সময়কে ধারণ করেন? কতজন মানুষ? আপনার হৃদয়টার ভেতরের শুভকামনা ও ভালোবাসারা কতটুকু জায়গা ধারণ করে?

২৬ সেপ, ২০১৫

রুমী কবিতা (চতুর্দশ কিস্তি)


* * * * * * * *
সূর্যের মতন হও মানুষকে অনুগ্রহ ও দয়া করায়
রাতের মতন হও অন্যদের ভুলগুলো ঢেকে দেয়ায়
বয়ে চলা স্রোতধারার মতন হও উদারতায়
মৃত্যুর মতন হয়ে যাও রাগ ও ক্ষুব্ধতায়,
মাটির মতন হও বিনম্রতায়,
তুমি যেমন তেমন করেই নিজেকে প্রকাশ করো।
যেমন করে নিজেকে প্রকাশ করো, তেমনটিই হও।

~জালালুদ্দিন রুমী

* * * *
আমরা তো কেবল শ্রেষ্ঠতম চিত্রশিল্পীর হাতে থাকা এক রংতুলি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
আমার ভেতরে যে সৌন্দর্য তুমি দেখতে পাও, তা আসলে তোমারই প্রতিচ্ছবি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
প্রতিটি মূহুর্ত, একটি নতুন সৌন্দর্য। ~রুমী

* * * * *
মাটি ও পানির এই আবাসের মাঝে,
আমি যেন ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছি।
এসো এখানে, হে মোর প্রিয়,
নতুবা আমায় চলে যেতে দাও।

~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
আমার হৃদয়ের আকার তো ক্ষুদ্র, এতটাই ছোট যে তা প্রায় দেখাই যায় না। এত বিশাল পরিমাণ দুঃখ-বেদনা আমি কীভাবে ধারণ করবো এতে?

তিনি উত্তর দিলেন, "খেয়াল করে দেখো, তোমার চোখটাও তো অনেক ক্ষুদ্র। কিন্তু এই চোখে তো তুমি গোটা বিশ্বজগতকেই ধারণ করো।"

~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
গতকাল আমি চতুর ছিলাম তাই পৃথিবীকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। আজ আমি বুদ্ধিমান হয়েছি, তাই নিজেকেই বদলে দিচ্ছি।~ জালালুদ্দিন রুমী

২৫ সেপ, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৩৬


(৩৭৭)
আজ আপনি একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারছেন কেননা কেউ একজন একদিন গাছের চারাটি যত্ন করে রোপন করেছিল।

(৩৭৮)
এক অন্ধ ব্যক্তিকে তার অন্ধত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিলেন,
আল্লাহ আমাকে এতটাই ভালোবাসেন যে তিনি চান আমি মৃত্যুর পর তাকে দেখার আগে যেন আর অন্য কাউকে না দেখি।

 #দৃষ্টিভঙ্গি #অনুপ্রেরণা

(৩৭৯)
পৃথিবীতে সুন্দর কম নয়। আবার, কেবল কিছু মানুষ শান্তি, সুন্দর ও সুখের স্পর্শে থাকে সে ধারণাটাও ভুল। আসলে, সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে দ্রষ্টার চোখে, তার মনের মাঝে। যে দেখে, যা দেখে তাকে আপন মাধুরী মিশিয়ে রচনা করে।

তাই কিছু মানুষ চারপাশে অনিন্দ্য সুন্দর দেখতে পায়, কিছু মানুষ আনন্দ ও উচ্ছলতা পায় নিয়তই। সুন্দর তো ছড়িয়ে আছে চারপাশে; দেখতে পাচ্ছেন তো আপনি?

(৩৮০)
আমাদের জীবনের জটিলতার মাঝে পড়ে আমরা অনেক সময় হাসতে ভুলে যাই। অনেকে আবার মনে করেন ব্যক্তিত্ব রাখতে হলে হাসতে হয় কম। কেউ কেউ ভালো মুসলিম হতে গিয়ে কম হাসেন। এরা সবাই ভীষণ ভুলে ডুবে আছে। কেননা আমরা হাদিস থেকে জানি, হাসিমুখে অন্যের সাথে সাক্ষাতও হলো সাদকা।

আপনি মন খুলে হাসুন। প্রাণ খুলে হাসুন। আপনার শরীর ভালো থাকবে। মন চনমনে হবে। প্রাণবন্ত মানুষ হোন। অন্তত চেষ্টা করুন। প্যাঁচানো চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্তি দিন। নিজেকে নিজের চিন্তার কারাগারে আটকে রাখবেন না।

পৃথিবীটা খুব সুন্দর। আমাদের জীবনটাও। আলহামদুলিল্লাহ। দুশ্চিন্তায় আজকের দিনটি নষ্ট করবেন না। ইতিবাচক হোন। হাসুন, আনন্দিত হতে শিখুন খুব ছোট ছোট বিষয়েও।

দেখবেন জীবনটা কেমন বদলে যাবে!

(৩৮১)
অতিরিক্ত তথ্য মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কেবলমাত্র কল্যাণকর জ্ঞানার্জন করুন, সুরক্ষিত থাকুন।

(৩৮২)
# আগে মানুষ মনের কথা ডায়েরিতে লিখতো। কেউ পড়লে বিরক্ত হতো।
# এখন মানুষ মনের কথা ফেসবুকে লিখে। কেউ না পড়লে বিরক্ত হয়।

মোরাল:  ফেসবুক মানুষকে বেহায়া বানিয়ে দিয়েছে।

[কৃতজ্ঞতা: মাহফুজ ভাই]

 (৩৮৩)
আহমদ মুসা ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গিয়ে একবার খুতবা দিয়ে জুমুয়ার নামাজ পড়িয়েছিলো। লোকেরা অনেকদিন পর তার ইমামতিতেই জুমুয়া পড়েছিলো কেননা তারা তাদের মুসলিম পরিচয় ভুলে গিয়েছিলো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে।

আহমদ মুসা আমার ছোটবেলায় পড়া গল্পের প্রধান চরিত্র। কিন্তু আহমদ মুসার খুতবা দিতে পারার যোগ্যতা আমার খুব মনে ধরেছিল। তাই সেই অনুপ্রেরণা থেকে নামাজ সংক্রান্ত বইতে সুন্নাহ খুতবার দোয়া পেয়ে মুখস্ত করতে চেয়েছিলাম। এর মাঝে ছিলো সূরা নিসার ১ নং আয়াত। আজকে খেয়াল করলাম আয়াতটা মুখস্ত হয়ে আছে আমার। আলহামদুলিল্লাহ। খুতবা না পারলেও এতটুকুই বা কম কীসে"!

যারা সুন্দর সাহিত্য লিখেন তারা কতই না সুন্দর কাজ করেন! আল্লাহ সাইমুম সিরিজের লেখকের কাজগুলোতে বারাকাহ দান করুন এবং তাকে কবুল করে নিন।

২৪ সেপ, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৩৫



(৩৭১)
ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য কী?
একজন জ্ঞানী ব্যক্তি সুন্দর উত্তর দিয়েছিলেন--
তোমার যখন কোন ফুল ভালো লাগবে, তুমি তাকে ছিঁড়ে নেবে।
যখন তূমি ফুলকে ভালোবাসবে, তুমি গাছটাতে প্রতিদিন পানি দেবে।
যারা একথা বুঝতে পারে, তারা জীবনকে বুঝতে পারে।

(৩৭২)
কোন মানুষ কি কখনো অন্য কাউকে বুঝে? সবাই অন্যকে নিজের মতন করে বুঝে। তাই, কেউ যখন ভালোবাসা পায়, তখন যে ভালোবাসা পায়, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা যে ভালোবাসে তার।

ভালোবাসা পেয়ে নিজে বর্তে যাবার চেয়ে সম্ভবত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃতজ্ঞ হওয়া।

(৩৭৩)
জীবনে হোঁচট খেয়েছেন? আহত? পথহারা মনে হচ্ছে নিজেকে? হাল ছাড়বেন না। হেরে যাবেন না। উঠুন। ঘুরে দাড়ান প্রতিবন্ধকতার যন্ত্রণা থেকে। এগিয়ে চলুন। এভাবেই যেতে হয়, এভাবেই চলতে হয়। পৃথিবীর জীবনটাই এমন। বারবার পরাজিত মনে হবে নিজেকে। কিন্তু প্রতিটি জেগে ওঠাই প্রকৃত সফলতা। বাকিটুকু তো কেবল আনুষ্ঠানিকতা!

(৩৭৪)
জীবনের ব্যর্থতাকে আপনি কেমন করে সামলে নেন সেটার উপরে নির্ভর করে আপনি গড়ে উঠবেন নাকি ধ্বংস হবেন।

(৩৭৫)
সবসময় বেশি সিরিয়াস থাকা শরীর-মনের জন্য উপকারী না। একটু কৌতুক, হাসিঠাট্টা, ছোটাছুটি করা প্রয়োজন। সময় পেলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘুরে বেড়ানোও প্রয়োজন। পৃথিবীর জীবনটা অত বোরিং না, পেইনও না। এবং অবশ্যই শুধুমাত্র সুখের জায়গাও না। তাই, খারাপ সময়কে গ্রহণ করে নিন। এবং অপেক্ষা  করুন, ভালো সময় অবশ্যই আসবে!

(৩৭৬)
আমাদের জীবনে আল্লাহ শত-শত মানুষ এবং হাজার হাজার ঘটনা উপহার দেন যার বেশিরভাগই কল্যাণকর। আমরা মাঝে মাঝে তার মাত্র একটি-দু'টি-তিনটি থেকে তিক্ততা, যন্ত্রণা, কষ্ট  পেয়ে কাতর হয়ে যাই, আশাহত হয়ে যাই। এই বিশাল পৃথিবীর যিনি মালিক, তিনি তার আপন মহিমায় সমস্ত কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। আপনার-আমার শ্বাস-প্রশ্বাস, খাবারের যোগানও তার মাঝে একটি। যদি এই মূহুর্তেই খুব বড় রোগ হয়, যদি এখনই খাবার গ্রহণের, চোখে দেখার ক্ষমতা রহিত হয়ে যায়-- পারবো কি তা পুনরুদ্ধার করতে?  কেন আমরা তবু প্রাণভরা শুকরিয়ায় 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে উঠিনা?

ভেবে কি দেখেছি আমাদের খাবারটা শস্যক্ষেত থেকে আমার হাত পর্যন্ত আসার পথে কত কৃষক, কত শ্রমিক, কত গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ, বাস-ট্রাক-রিকসা-ভ্যান, মুটে-মজুর, বিক্রেতার হাত ঘুরে যত্নভরে একজন রাঁধুনির রান্নার ফলে আমাদের প্লেটে উঠে এসেছে? আল্লাহ তার নিজ দয়ায়, মহিমায়, ঔদার্যে ও ক্ষমায় ঘিরে রেখেছেন আমাদের একেকটি জীবন। এই সৃষ্টির চারিধারে কেবল তারই সৃষ্টির মহত্ব।

আমাদের একেকটি প্রাণ। মাঝে মাঝে বড্ড চিন্তার অতীত এক মিরাকল মনে হয়। আল্লাহ যেন আমাদেরকে তার দয়া ও ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখেন।

২৩ সেপ, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৩৪



(৩৬০)
একজন স্নিগ্ধ ও কোমল মনের মানুষের সাথে কিছুসময় সুন্দর কথোপকথনের অনুভূতি বর্ণনাতীত আনন্দময়।

(৩৬১)
যে উপেক্ষা করতে শেখেনি, সে কোনদিন বড় হতে পারেনি।

(৩৬২)
কোন কাজে সফলতা অর্জনের মূল চাবি হলো কাজটিকে ভালোবাসা, সে যত ছোট কাজই হোক না কেন। কাজটির তুচ্ছ অংশগুলোকেও সমান ভালোবাসতে হয়।

(৩৬৩)
যখন আমরা ভালোবাসা দিয়ে, আনন্দ নিয়ে কোন কাজ করতে থাকি, কাজটি হয় সুন্দর এবং আমরা অর্জন করি দক্ষতা।

(৩৬৪)
কখনো কখনো আমাদের নিরবতায় একলা থাকার খুব প্রয়োজন-- আমরা কে তা বুঝতে এবং আমরা জীবনে সত্যিকার অর্থেই কী চাই তা উপলব্ধি করতে...

(৩৬৫)
আপনি যদি ঘুমাতে না পারেন, তাহলে শুয়ে থেকে দুশ্চিন্তা আর এলোমেলো চিন্তা না করে কিছু করুন যা আপনাকে প্রেরণা যোগাবে।

(৩৬৬)
সবাই আপনার মতন চিন্তা করে না। আপনিও অন্যদের মতন চিন্তা করেন না। কেউ কারো মতন চিন্তা করে না। সবাই অন্যদের থেকে একদম আলাদা।

(৩৬৭)
কখনো কখনো নিজ জীবন থেকে ছুটি নেয়া প্রয়োজন আমাদের। ব্যস্ততা থেকে একটু অবসর। সম্ভব হলে শহর থেকে দূরে কোন গ্রামীণ পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে মুঠোফোন-অন্তর্জাল ছেড়ে একটু নিজের সাথে সময় কাটানো... নিজেকে চিনতে, নিজেকে বুঝতে। শরীরের ভেতরের আত্মাটাকে তার চাওয়া ও কাজগুলোর বোঝাপড়া করতে...

 (৩৬৯)
যেকোন কাউকে ভালোবাসতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাহস। সাহস লাগে অন্যের ভুল উপেক্ষা করতে, সাহস লাগে সংশয় কাটিয়ে উঠতে, সাহস লাগে অসুন্দরকে সুন্দর করে দেখতে। অথচ যে হৃদয় ভালোবাসতে পারে না, সে হৃদয় নানা জরাজীর্ণতা আর অসুস্থতায় ভরে যায়। সুস্থ থাকতে চাইলে প্রচুর ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসতে চাইলে খুব সাহসী হতে হয়। ভালোবাসতে চাইলে মানুষের ভুল-ত্রুটি খোঁজার অসুস্থতা পেরিয়ে সুন্দরকে দেখতে চাওয়ার মন বানাতে হয়। সৌন্দর্য তো তাদের জন্য সবকিছুতেই ছড়িয়ে থাকে যারা তা দেখতে পায়!

(৩৭০)
কোন কিছু করতে গেলে ভুল হবেই। তারাই কোন ভুল করেনা যারা কোন কাজ করার চেষ্টাও করেনা। ভুল হলেও এগিয়ে চলুন, সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ!

২২ সেপ, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৩৩


(৩৫০)
​লোকে কী ভাবলে সেকথা চিন্তা করতে থাকলে সারাজীবন তাদের কারাগারে বন্দী হয়ে থাকতে হবে।

(৩৫১)
রাতের আধারে সবকিছু কেমন যেন রহস্যময় লাগে। প্রকৃতি অদ্ভুত গা ছমছম করা অনুভূতি দেয়। মানুষগুলোর আচরণ বদলে যায়, ভালোত্ব আর পশুত্ব দুই-ই প্রগাঢ় হয়ে যায়।

দিন ও রাতের পরিবর্তনে আছে আয়াত, নিদর্শন। উন্মুখ মন তাই খুঁজে চলে রাত আর দিনের মাঝে গেঁথে থাকা জ্ঞান। হতে পারে একটি উপলব্ধি বদলে দিতে পারে একটি জীবনের গল্প...

(৩৫২)
বিভিন্ন রকম ভাষায় কথা বলতে পারা খুব মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু সকল রকম ভাষায় মুখ বন্ধ রাখতে পারা অমূল্য বিষয়।

(৩৫৩)
জ্ঞান হলো কী কথা বলতে হবে তা জানা।
প্রজ্ঞা হলো কথাটি বলা উচিত নাকি উচিত নয় তা জানা।

(৩৫৪)
বোকা অথবা খারাপ মানুষেরাই বিনয়কে দুর্বলতা মনে করে। তাই বলে বিনয়ের মাহাত্ম্য কখনো কমে যায় না। বিনয়ী হওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টাতে ছাড় দেবেন না কখনো।

(৩৫৫)
মানুষের হাসিতে তাদের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে....

(৩৫৬)
আল্লাহ ভাঙ্গা জিনিসগুলোকে অদ্ভুত সুন্দরভাবে ব্যবহার করেন। মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরে, মাটিকে বিদীর্ণ করে তাতে হয় ফসল, ফসল ভেঙ্গে তৈরি হয় বীজ, বীজ ভেঙ্গে হয় চারা। সুতরাং, আপনি যখন ভেঙ্গেচুরে যাবেন, প্রশান্তির সাথে আশ্বস্ত হোন এই ভেবে যে আল্লাহ আপনাকে খুব ভালো কিছুতে পরিণত করার পরিকল্পনা করছেন। [অনূদিত]

(৩৫৭)
অতীত যখন পেছন থেকে বারবার কেবলই ডাকতে থাকে, তখন তাকে দৃঢ়ভাবে উপেক্ষা করুন। নিশ্চিত জেনে নিন, আপনাকে তার নতুন কোন কিছুই বলার নেই।

(৩৫৮)
আমাদের শহরে আল্লাহর সৃষ্টি একেকটি মানুষের মাঝে ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে পথচলা, কথোপকথনে, লেনদেনের মাঝে অন্যরকম আনন্দ আছে। এই ভালোবাসা হয়ত অনেকেই টের পায়না, কিন্তু যিনি হৃদয়ের সৃষ্টিকারী, যার নিপুণ ভালোবাসায় সৃষ্টিগুলো টিকে আছে, তার সৃষ্টিকে ভালোবাসা দেয়ার প্রতিদান তিনি তো অবশ্যই দেবেন!

(৩৫৯)
কখনো কখনো আমাদের নিরবতায় একলা থাকার খুব প্রয়োজন-- আমরা কে তা বুঝতে এবং আমরা জীবনে সত্যিকার অর্থেই কী চাই তা উপলব্ধি করতে...

রুমী কবিতা (ত্রয়োদশ কিস্তি)


* * * * * * * *
তুমি যখন পথ ধরে হাঁটতে শুরু করবে, সামনের পথ তখন স্পষ্ট হয়ে দেখা দিবে।" -- রুমী

* * * * * * * *
তুমি জন্মেছিলো দু'টি ডানা নিয়ে। কেন তবে জীবনভর হামাগুড়ি দিতেই তোমার এত পছন্দ?" -- রুমী

* * * * * * * *
তুমি যে কষ্টদের সহ্য করছ তারা তোমার কাছে বার্তাবাহক হয়ে এসেছে, তাদের কথা শোন। ~ রুমী

* * * * * * * *
যখন তোমাকে দিতে চেয়ে কেউ  হাতে স্বর্ণ তুলেছে, তখন তোমার হাতের দিকে তাকিয়ো না, কিংবা স্বর্ণের দিকেও না। যে দিচ্ছে তার দিকে তুমি তাকাও। ~ রুমী [মসনবী, দ্বিতীয় খন্ড]

* * * * * * * *
তুমি তো সমুদ্রের মাঝে কোন জলবিন্দু নও, তুমি এক ফোঁটা জলবিন্দুর মাঝে সম্পূর্ণ এক সমুদ্র। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * * *
যদি কবিতার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাহলে বসন্তও ফিরে ফিরে আসবে।~ রুমী

* * * * * * * *
তুমি মনে করো তুমি হলে বিপদ অথচ তুমি হলে সুরক্ষা। তুমি মনে করো তুমি দরজার তালা অথচ তুমি সেই চাবিটি যা তালাটি খুলে দেয়। তুমি যে আসলে অন্য কেউ হতে চাও, তা খুবই বাজে একটা ব্যাপার। তুমি তোমার নিজের চেহারাটি দেখো না, তোমার সৌন্দর্য তুমি দেখো না। যদিও তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর কেউ নয়। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * * *
তুমি কি মনে করো আমি যা করছি তা আমি জানি? নাকি আমার একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের অর্ধেকটাও আমার নিজের অধিকারে আছে? এ তো এমনই যে কলমটি যা লিখছে তা যতটুকু সে জানে, অথবা বলটি এরপর যেদিকে যাবে বলে সে ধারণা করে। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * * * *
দুঃখ-কষ্টগুলো হতে পারে সহানুভূতির বাগান। তুমি যদি তোমার হৃদয়কে সবকিছুর জন্যই উন্মুক্ত রাখতে পারো, তাহলে তোমার কষ্টগুলো হয়ে যেতে পারে ভালোবাসা আর প্রজ্ঞার প্রতি তোমার জীবনভর আকাঙ্ক্ষার সবচেয়ে বড় বন্ধু। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
যখন তোমার শরীরের চিন্তা ও চাওয়ার উর্ধে এসে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে, তখন এমনিতেই একদম নতুন এক জগতে প্রবেশ করবে। ~জালালুদ্দিন রুমী