১৯ এপ্রি, ২০২০

মনের জানালা মাঝে # ৫৯



(৫০৮)
আপনার চোখগুলো যা দেখতে চায়, আপনি তো কেবল সেটাই দেখতে পান।

মূল দেখার বস্তুগুলো আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে, আল্লাহ যা চান, সেটাই হয়। তাই, ঘটনাগুলো দেখতেই হয়। কিন্তু ঘটনা তো প্রতি মূহুর্তেই আমাদেরই চারপাশে অজস্র। ফ্যান ঘুরলে কাপড় নড়ে, বাইরে পাখি ডাকে, কেউ কাউকে কিছু বলতেসে, এমন হাজারো ঘটনা। এগুলোর মাঝে আমরা যেটা চাই, সেটাই কেবল খেয়াল করি। আর যা খেয়াল করি, তাকে নিজেদের ইচ্ছেমতন ব্যাখ্যা করি। রাস্তায় কেউ কাউকে থাপ্পড় দিলো-- এই দৃশ্য দেখে আপনি ভাবতে পারবেন এটা অন্যায়, ভাবতে পারবেন দুর্বলদের উপরে সবলের অত্যাচার, ভাবতে পারবেন এটা বড় ভাই ছোট ভাইকে শাসন করেছে। ঘটনা যাই হোক, যে অনুভূতি আপনি পেতে চান, আপনি নিজেকে সেটাই বিশ্বাস করান, ঘটনা তখন তেমনটিই মনে হয়।

[২৪ এপ্রিল, ২০১৬]

(৫০৯)
সচরাচর আমাদের হাসি থাকে মৃদু, উচ্চস্বরে নয়। সেটাই উত্তম। কিন্তু মাঝে মাঝে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হয়, মাঝে মাঝে হিহিহি করে, আবার কখনো হোহোহো করেও হাসতে হয়। কখনো হাসি হবে মুচকি, কখনো নিঃশব্দে দাঁত বের করেও হাসা উচিত। হৃদয়কে বৈচিত্র্য দিয়ে আনন্দ দেয়া উচিত, তাহলে মানুষটার ব্যক্তিত্বের মাঝেও আনন্দময় ভিন্নতা তৈরি হতে পারে।

যে প্রাণখুলে হাসতে জানে না, তার প্রাণের উচ্ছ্বলতা প্রকৃতপক্ষে মরেই থাকে। হাসিতে থাকে আমাদের হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি।

(৫১০)
শাইখ হামজা ইউসুফ হ্যানসনের আব্বা মারা গেছেন ক'দিন আগে, পৃথিবীর অনেক স্কলাররাই তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন, দোয়া জানিয়ে। ৮৯ বছর বয়সে এসে তিনি মৃত্যুর কিছুকাল আগে কালেমা শাহাদাত পাঠ করেন। কী সুন্দর বিদায়! যার ছেলে সবাইকে ভালোবেসে গিয়েছে, শেখায় উদারতা, সহমর্মিতা আর জ্ঞানের গভীরতা; তার পিতা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাবেন-- এটাই তো স্বাভাবিক। আল্লাহ হামজা ইউসুফের পিতাকে জান্নাতবাসী করুন এবং আমাদের উত্তম, সহজ, ঈমানী মৃত্যু দান করুন।
[১৯ এপ্রিল, ২০১৬]



(৫১১)
মার্কিন মুলুকের ইমাম ওমর সুলাইমানকে যখন 'সেক্যুলার হিউম্যানিস্ট', 'ধর্ম যার যার উৎসব সবার' মার্কা চেতনাপন্থী  শত-শত শাহবাগীরা কমেন্ট করে করে ইসলাম শেখাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই তিনি টের পাচ্ছেন বঙ্গোপসাগরের পাড়ে এ কোন বিচিত্র 'মুসলিম দাবী করা' জনগোষ্ঠীর আবাস।

ইসলাম তো আর বাছাইকৃত কিছু আয়াতের কপিপেস্টিং, জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা আর মিডিয়া খাটিয়ে অন্যদের আক্রমণ করে জিতে থাকার বিষয় না রে ভাই। চৌদ্দশ বছর ধরে যে সিলসিলা বয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে, সে পথটা তো প্রতিদিন নিত্য কষ্ট আর অশ্রুপাতের পথ। আল্লাহকে ভালোবাসা মানুষগুলোর জীবন তো একদমই অন্যরকম, যেন ভিন্ন মানুষগুলোর অভিন্ন শরীর, এক ব্যথা অপরজনে টের পায়। আপনি যখন মুসলিম, খুব ভালো করে জানেন কে আপনার মতই একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে দুনিয়ায় দিনাতিপাত করতে চাইছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই আপনি তাকে আপনার প্রার্থনায়, স্মরণে রাখবেন। উত্তপ্ত মস্তিষ্ক, ঘৃণার কলিজা, অনুবাদ থেকে দু'চার আয়াত ব্রডকাস্ট করে তর্ক করে উড়িয়ে দিতে চাওয়া অন্তরগুলো কখনো পায়নি রবকে সত্যিকারভাবে স্মরণের আনন্দ, জানেনা একই পথে থাকা অন্য মানুষদের কষ্টের পরেও স্বস্তি পাওয়ার অনুভূতিগুলো।

উলামারা কুরআন শেখাতে গিয়ে বলেছেন, সিরাতাল মুস্তাকিমে চলার প্রার্থনা একই সাথে সঠিক পথে পরিচালিত হবার আবেদন এবং সেই পথকে চিনতে পারার জন্য দরকারী জ্ঞানেরও আবেদন। ত্যাগ বিনা এগুলো এমনিতেই হয়? কুরআনের চেহারা দেখেননা যিনি মাসে একটি দিন, তিনি ইসলামকে পালন করবেনই 'ধর্ম যার যার উৎসব সবার' হিসেবেই। তিনি পালন করবেন হোলি, দুর্গাপূজা, মেরি ক্রিসমাস। নিজেকে মুসলিম দাবী করে শির্ক করার মাঝে ডুবে থাকা তো নিজেদের ধ্বংস করারই শামিল।

আমাদের রব যেন আমাদেরকে 'সিরাতাল মুস্তাকিমের' পথে পরিচালিত হবার তাওফিক দেন, তিনি যেন আমাদেরকে উপযুক্ত জ্ঞান দান করেন। তিনিই তো আমাদের রব, আমাদের জীবনের মালিক, তার কাছেই আমরা ফিরে যাবো।

[১৫ মে, ২০১৬]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে