৩০ মার্চ, ২০১৩

ইমাম গাজ্জালীর মূল বাণী

"আপনি যখন দরজায় দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছেন, তখন সেই কাজটিও দরজা খুলে যাওয়ার একটি অংশ; আপনি যখন কোন যাত্রাপথে তখন রওয়ানা হওয়ার মাঝেই আপনার যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, যদি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না-ও পারেন তবু চিন্তিত হবেন না। সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন, মৃত্যু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এটাই ছিলো ইমাম গাজ্জালীর মূল বার্তা।"
--- শাইখ হামজা ইউসুফ

"If you’re knocking at the door, the knocking is itself the opening of the door; if you are journeying, your start is your beginning, don’t worry if you don’t get there. Stop wasting time. Death is waiting for you. This was the key message of Imam al-Ghazali"
---Shaykh Hamza Yusuf

২৯ মার্চ, ২০১৩

পৃথিবীতে সেই মানুষগুলোই যুগে যুগে সমাজকে বদলেছে, যারা বিশ্বাস করত যে তারা বদলে দিবে

আমরা যখন রাহমানের মহিমান্বিত গ্রন্থখানি বুকে আর পৃথিবীর সেরা মানুষটার রেখে যাওয়া পদচিহ্ন সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই, তখন কারো বিশ্বাস হয়না। কেউ বলে, "সময় কঠিন, ওভাবে থাকা যায়না।" কারো কথা, "যুগ বদলেছে, তাল মিলাতে হবে সময়ের সাথে।" কারো কথা আবার, "সবাই খারাপ হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে।" কেউ কেউ বলে, "এই সমাজ আর বদলাবে না, সম্ভব না।" 

আমরা বলি, এই পৃথিবীতে সেই মানুষগুলোই যুগে যুগে সমাজকে বদলেছে, যারা বিশ্বাস করত যে তারা এটাকে বদলে দিবে। 

আমরা বিশ্বাস করি, এবং জানি, আমাদের হাতে শ্রেষ্ঠ দুই যন্ত্র আছে, যা নিমিষেই বদলে দেয় সবকিছু, যা যোগাযোগ করিয়ে দেয় পৃথিবীকে অনন্তজগতের সাথে... আমরাই পারি, আমরাই পেরেছি, আমরাই পারব। ইনশাআল্লাহ!

হবু দুলাভাই ও শ্যালিকা?

আজ সকালে বাসে দীর্ঘসময় জ্যামে আটকে আছি। এমন সময় বাসের মাঝের দিকে সিটে বসা এক লোক মোবাইলে খুব উচ্চকন্ঠে কথা বলতে শুরু করলো, অন্যপাশের কথাও শোনা যাচ্ছিলো! এরকম অহরহই ঘটে, পাত্তা দিতাম না। কিন্তু লোকটার কথার বিষয়বস্তু খুবই 'অন্যরকম' ভয়ঙ্কর! সে সম্ভবত এমন কারো সাথে কথা বলছিলো যার বোনের সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। উচ্চস্বরে এমন কিছু কথা বলছিলো যে বাসভর্তি মানুষ উশখুশ করে তার দিকে তাকাচ্ছিলো -- "বোনেরে লাগবো না তোমার লগেই কথা কই... বউ পরে আগে শালীরে সাইজ কইরে নিই... হা, শালীরে সাইজ করতে পারলে বউ ব্যাপার না... কিই,কিই? আমি কি তোমারে খারাপ কথা বলছি? আমি সৎ লোক, খারাপ কি কথা কইতে পারি? (সুর করে)" এতটুকু হলেও হত। এরপরে সে বললো, "আল্লাহ কি বলসে জানো? ফাজকুরুনি আজকুরকুম ওয়াশকুরুলি ওয়ালা তাকফুরুন।" এটার পরে সে বুঝাইতে শুরু করলো যে চাইলেই নাকি আল্লাহ কত বেশি দিবে... [এই আয়াতের অর্থ মোটেই এমন না!]

চমৎকার মানুষ হিসেবে আমরা তাদেরকেই পাই যারা জীবনে পরাজিত হয়েছেন

অসাধারণ আর চমৎকার মানুষ হিসেবে আমরা তাদেরকেই পাই যারা জীবনে পরাজিত হয়েছেন, দুঃখ-কষ্টে ভুগেছেন, জীবনযুদ্ধে ধুঁকেছেন, অনেক কিছু হারিয়েছেন; যারা শত কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতায় জীবনকে গভীর থেকে উপলব্ধি করেছেন। তাদের থাকে জীবনের প্রতি ভালোবাসা, স্পর্শকাতরতা, থাকে গভীর জীবনবোধ, ভাঙ্গাকে গড়ে নেয়ার প্রতি আর্তি যা তাদেরকে সহানুভূতিশীল, বিনয়ী, নম্র, দয়ার্দ্র এবং অন্যের কষ্টের ব্যাপারে সচেতন করে তোলে। অসাধারণ আর সুন্দর মানুষেরা আপনা আপনিই তৈরি হয়ে যায় না।

[Elisabeth Kubler-Ross-এর উদ্ধৃতির আলোকে]

মা এবং বৌ ছাড়া কারো সাথে অভিমান করবা না, কেউ মূল্য দিবে না

মাধ্যমিকে একজন খুব বিনয়ী ইংরেজি শিক্ষক আমাদের ক্লাস নিতেন, যার হাসিমুখ দেখলে মন ভালো হয়ে যেত। একদিন ক্লাসে স্যার beauty নিয়ে পড়ানোর সময় হঠাৎ উপদেশ হিসেবে মুখ উপচানো হাসি দিয়ে বললেন, "If you see anyone beautiful, remain 100 yards far of it" তিনি এই বক্তব্যের ব্যাখ্যাতে বুঝিয়েছিলেন যে beauty distracts our minds, it brings possibility for us to make mistakes. আমি স্কুল জীবন থেকে ব্যক্তিগত ডায়েরি ছিলো, তাতে এটা টুকে রেখেছিলাম। আমি ফিলোসফিক্যাল যেসব জিনিসই শিখতাম স্যারদের কাছে, সেসবই তুলে রাখতাম। সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থাতে এই উপদেশগুলোই হৃদয়-মনের খোরাক ছিলো। তখন তো আর হাসান আল বাসরি, ইমাম গাজ্জালি, ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যিমদের মতন মানুষদের জানতাম না, তাদের আলোকিত শান্তির বাণী জানার সুযোগ ছিলো না। সেই সময়ে আগ্রহে হোক আর অনাগ্রহে হোক, স্যারের কথাটা মাথায় রাখার চেষ্টা করেছিলাম। ওইরকম সুন্দরে বিভ্রান্ত হয়ে বন্ধুরা যখন ঝাঁপ পেড়ে জীবন জটিল করত, তখন আমি ১০০হাত দূরে মনকে সরানোর চেষ্টা করতাম। মনে পড়তেই হাসি পেলো, কী অদ্ভুত আমাদের কৈশোর!

২৬ মার্চ, ২০১৩

জীবনের প্রতিটি মূহুর্তই কল্যাণের

জ্বরগ্রস্ত হয়ে বিছানার সাথে লেপ্টে ছিলাম সারাটা দিন। সাথে জীবনের কিছু পুরোনো সমস্যা যুক্ত হয়ে মন একদম নাস্তানাবুদ হয়ে ছিলো। ইশার সালাতে টলমল করতে করতে গেলাম। সালাত শেষে বিশাল মসজিদের একটা কোণে নিভৃতে বসে একটা অনুভূতিই প্রগাঢ় হয়ে ঘিরে ধরছিলো আমাকে --এই দুনিয়াতে সম্ভবত মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমাদের জন্য খারাপ কিছু নেই। কেননা, তখন অবধি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে। পৃথিবীতে আমি যতটা খারাপই থাকিনা কেন -- হোক সেটা নিজের ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে কষ্ট, হোক সেটা জীবনে অনাকাংখিত আপতিত যন্ত্রণা; এমন প্রতিটি বিষয়ই আমার জন্য আল্লাহর সাথে আমার সম্পর্ককে উন্নত করা বিষয়। কী হারালাম, কী পেলাম, কী হচ্ছে, কী হবে --এসব ভেবে লাভ নেই, নিজের কর্তব্যটুকু করে যেতে হবে। কে জানে, হয়ত সিজদা থেকে মাথা তুলতেই দেখব মালাকুল মাওত হাজির। যাবার সময় হয়ে গেলো। কী হবে তখন আমাদের এত যত্নের, এত ভালোবাসার সম্পদ এবং প্রিয়জন? কবর, কিয়ামাহ, হাশর তো অনেক বেশি সত্য। নিশ্চিত যাত্রাপথ...

অন্যদের জন্য করে শুধু নিজে বাঁচি যা বড় কিছু না

একটা অদ্ভুত জিনিসের উপলব্ধি হলো। কখনো কখনো কারো উপকার করতে পারলে বেশ ভালো লাগে, যেই ভালোলাগা একসময় একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়ে নিজের ব্যাপারে উচ্চ ধারণায় নিয়ে যায়। আসলে কি আমরা বড়সড় কিছু করি? ধরেন, একসময় পকেটের টাকায় একটা মানুষকে ১০০টাকা দেয়ার যোগ্যতা ছিল। এখন আমার ৫০০টাকা দেয়ার সামর্থ্য আছে। এটা কি আমি দিলাম? আমার এই রিজিকের দ্বার খুলেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। এখানে অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে। আমার যোগ্যতা দিয়ে আসলে আল্লাহ ওই মানুষটাকে কিছু পাইয়ে দিলেন। আমার বেশি টাকা এখানে কোন বিষয় না। আমার কিছু টাকা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, আমি তার ব্যবহার করে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি কেবল।

একইভাবে, অন্য যেকোনভাবে কারো উপকার করতে পারলে আল্লাহর শুকরিয়া করা উচিত যে নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির একটা চেষ্টা করতে পারলাম আল্লাহর রাহমাতে, আত্মতৃপ্তিতে নিজেকে 'কিছুমিছু' ভাবার উপায় নেই। কেননা, কাউকে সাহায্য করতে পারার ক্ষমতাটুকু আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, আমি এটার ব্যবহার করলে হয়ত মুক্তি পেতে পারি, না করলে ক্ষতিগ্রস্ত। আমার *অন্তর* এখানে মুখ্য, বাহ্যিক হিসেব-নিকেশ একদমই মূল্যহীন। আল্লাহ তার ইচ্ছামতন মানুষকে যোগ্যতা দেন, যোগ্যতা বেশ হওয়ায় আমাদের গর্বিত হবার কিছু নেই। সারা পৃথিবীকে যদি আমি উপকৃত করতে পারি তাতেও আনন্দিত হবার কিছু নেই, কেননা খুব বড় কিছু করে ফেলিনি। কিছুই তো আমাদের না, আল্লাহর সম্পদই আমরা মানুষের মাঝে বিলায়, বিলিয়ে দেবার সময়ে অন্তর অবস্থাটাই আল্লাহ দেখবেন, বাহ্যিক রূপগুলো না। তাই, নিজেকে বুঝতে কেবল নিজের অন্তরের গভীরে তাকিয়ে দেখলেই হবে -- সেখানে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা কতটুকু, তার প্রতি কতটা আর্তি, তার সন্তুষ্টি পেতে কতটা অশ্রুমালা, তার স্মরণে কতটা অন্যায় থেকে দূরে থাকা, অন্যায় দেখে কতটা প্রত্যয়ে প্রতিবাদ করা...


২৫ মার্চ ২০১৩

ধাক্কা শহর

শহরের বাইরে গ্রাম এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন কাটিয়েছিলাম, চোখের দেখায় তরুণ-তরুণীদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো আর চলমান সংস্কৃতি নিয়ে অনেক চিন্তা থেকে কিছু লিখেছিলাম কয়েক বছর আগে। ইদানিং অফিস থেকে বাসা যাতায়াতেই জীবন বন্দী হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বের হই পথে, নতদৃষ্টিতে পথচলার পরেও বৃষ্টিভেজা বিকেলে পথিমধ্যে, আশেপাশের রিকসায়, গাছের নিচে, ভবনের ভেতরে উদ্দাম অন্তরঙ্গতার এমন সব বিষয় চোখে পড়ে, যা থেকে আর চিন্তা জাগেনা। আজকে ঢাবিতে একটা কাজে গিয়েছিলাম, কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে গেলো যেখান থেকে চোখ সরাতে গিয়েই ভয়াবহতা ভেবে আমার মনে হয় পেটের ভেতরের খাবারগুলো পাক খেয়ে বেরিয়ে আসবে। বিবশ আমার মাথায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে দু'আ করা ছাড়া আর কোন চিন্তা আসে না, আসেনি আজকেও।

চলে গেলেন আরেকজন মানুষ

একটু আগে রাতের খাবার খেতে বসেছিলাম, শুনলাম নিকটাত্মীয় এক চাচা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন আজ সন্ধ্যায়। খবরটা শুনে কয়েক মূহুর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। চাচার সাথে আমার বেশ কিছু স্মৃতি আছে, একদম বাল্যজীবনে তিনি আমাকে খুব আদর করতেন, কোলে করে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। জীবনযুদ্ধে ক্রমাগত সংগ্রাম করা একজন সরকারী চাকুরে ভালো মানুষ ছিলেন। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শখ করে একটা গল্পের বই লিখেছিলেন গত বছরে। এই মানুষটা এই পৃথিবীতে আর কখনো হাঁটবেন না, কথা বলবেন না। তার চেয়েও বড় কথা, তিনি নিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়িয়েছেন। যেখানে আমিও যাব। এই নিয়ন আলোর পথ, এনার্জি সেভিং বাল্বের উজ্জ্বল আলোতে ঝকমকে রুম নয়, মাটির নিচের অন্ধকার কবরেই আমাদের সবার ঠিকানা। চাচা কি আমাকে আদর করেছিলেন, সেই অধিকারে কিছু চাইছেন আমার কাছে? তার কঠিন সময়ে আমি যদি কিছু পাঠিয়ে দিতে পারি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দরবারে? আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।

২৪ মার্চ, ২০১৩

অসাম্য ও নেশার শহর?

ইশার সালাত আদায় করে বাড়ি ফিরছিলাম, আধাঘন্টার উপরে রিকসার পথ পেরিয়ে এলাম। কিছুক্ষণ পরেই টের পেলাম, রিকসাওয়ালা নেশাগ্রস্ত। গা হাত চুলকাচ্ছিলো এলোমেলো। অকারণে বহুপথ ঘুরে রাস্তার পাশে রিকসা থামিয়ে কোন কথা ছাড়াই আড়ালে চলে গেলো। জায়গাটা আমার অফিস থেকে কাছেই, তাই আমি আগে জানতাম ওখানে নানান ধরণের নেশা পাওয়া যায়। এক মহিলা প্রায় সময়েই সেখানে চাদর জড়িয়ে বসে থাকে।

২৩ মার্চ, ২০১৩

সমালোচনাতেই কি মুক্তি?

সাহিত্য পড়ার সময়ে জানতাম সাহিত্য সমালোচক হতে যোগ্যতা লাগে। Ratatouille মুভিটা দেখার সময়েও খেয়াল করেছিলাম, একজন ফুড ক্রিটিকের ভাবসাবই আলাদা। তবে, আমাদের এই বঙ্গোপসাগরের পাড়ের ব-দ্বীপখানির উর্বর পলিমাটিতে ফসলের মতই সমালোচকদের বাম্পার ফলন হয়। তাইতো, বাসে-লঞ্চে, চায়ের দোকানে, অফিসের টেবিলে, কেরানি আর অফিসার সবাইই ব্যাপক রাজনৈতিক সমালোচক, কর্মীর খবর নেই। আমাদের গতানুগতিক ধারার রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে থাকে চাপাতি-চাইনিজ কুড়াল, রিভলবার। তেমনি দেশের সকল ক্ষেত্রেই যেই পরিমাণ সমালোচক পাওয়া যায়, কর্মীর বড়ই আকাল। রাজনীতি,কর্মী,জ্ঞানী-গুণী সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে চাইনি, সে বিষয়ে আমার আগ্রহ তুলনামূলক কম।

২১ মার্চ, ২০১৩

সফলদের জীবনই সুন্দর? আমি কি সুখী নই?

# ১ #

এই জীবনে অনেকবার কিছু মানুষকে দেখে অবাক হয়েছি বিষ্ময়ে! কীভাবে পারে সে? কীভাবে পারে ওরা এত চমৎকার কাজ করতে, এত দারুণ কিছু সফলতা অর্জন করতে? কই, আমি তো পারিনা! আমিও তো কত সাধনা করেছি, চেষ্টা করেছি, তবু তো কিছু লক্ষ্য আমি কখনই অর্জন করতে পারিনি!  সময়ের সাথে সাথে এটাই উপলব্ধি করেছি, প্রতিটি জীবন আল্লাহর সৃষ্টি, প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি মানুষের চারপাশ তাঁরই পছন্দের দান। আমি একসময় কারো অর্জনে, সফলতায় মুগ্ধ হয়ে ভেবেছি ওরাই সুখী। অথচ তখনো আমি জানিনা সেই মানুষটার জীবনের সামনের এই সুন্দরে পেছনে এক দীর্ঘ ক্লান্তিকর কষ্ট আছে। আমি কৈশোর জীবন ধরেই আশেপাশের মানুষদেরকে তীক্ষ্ম চোখে দেখতাম, তাদের জীবনের মাঝে মিশে যাবার চেষ্টা করতাম। আমি দেখেছি, যাদের অনেক ঝাঁ-তকতকে দেখা যায় বাইরে থেকে, তাদের জীবনের পেছনে অনেক গভীর কালো অধ্যায় আছে। কিছু মানুষের রূপের ঝংকারে, ক্ষমতার ঠাঁটবাটে টেকা দায় হলেও, তাদের জীবনের পেছনেই রয়েছে দুর্গন্ধময় ঘটনা, নিকৃষ্ট অনেক আচরণ। যেমনটা আমরা দেখি, বেশিরভাগ সময়েই বাস্তবতা অমন না।

আমি অন্যরকম তাই বড় একা একা লাগে

ছোট থেকে বড় হবার পুরো সময়টাতেই আমি কখনো মিশতে পারিনি 'উরাধুরা' আলোচনার আলাপে। সবসময় নিজেকে আলাদা লাগত। চুপচাপ হয়ে হাসলেও বন্ধুরাও বুঝত আমি ঠিক ওদের মতন না। তাই হয়ত কেউ কখনো যেচে পড়ে উপকার করতে আসেনি। এই কষ্টটা কতটা সীমাহীন গভীর ছিলো তা পরীক্ষার দু'একদিন আগে টের পেতাম। তবু জানি, সব ক্ষতিকে আলিঙ্গন করেই ভীড়ের মাঝেও একলা একাই ছিলাম। তখনকার অনুভূতিরা অন্যরকম ছিলো এখনকার চাইতে। যখন নিজেকে আলাদা মনে হত, নিজের উপরেই রাগ হত, নিজেকে অসুস্থ লাগত। জানতাম না, এই 'একলা' হতে পারার মাঝে একটা গভীর রাহমাত আছে।

এখন অন্তত এটা জানি, একলা একা যারা, তারাই তো গুরাবা। তারা সবার চাইতে আলাদা। সবাই মুভি দেখবে, কনসার্টে যাবে, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ডেটিং করবে, ফোনে আলাপ করবে আবেগ ভরে, রিকসাওয়ালাকে গালাগালি দিবে, ফেসবুকে কমেন্ট জুড়ে গালি, অর্ধনগ্ন মেয়েদের মাঝে শৈল্পিকতা খুঁজবে, নাস্তিক-চে-ভক্তদের কাছে ইসলাম শিখবে, রাসূল (সা) এবং কুরআন নিয়ে 'মজা করতে' দেখলে তারা ভোঁটা অনুভূতি নিয়ে বলবে 'আল্লাহই বিচার করবে' এবং এরপর আগের মতন টাকা-ক্যারিয়ার-মৌজমাস্তি-মুভি-গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডে ফিরে যাবে... আর এসবের মাঝে আমরা আলাদা হয়ে রবো -- তেল-জল মিশ খায়না যেমন করে!

জানি, যার সাথে একা একা কথা বলা যায়, কপাল আর নাক মাটিতে স্পর্শ করে যাকে সবচাইতে কাছে পাওয়া যায়, যার কাছে চোখের অশ্রু ঢেলে মনের দুঃখ দূর করা যায়, যেদিন দেখা হবে তার সাথে, সেদিন ইনশাআল্লাহ তিনি আমাদের সকল একাকীত্ব, একলা একা থাকার অনুভূতি পূর্ণ করে দিবেন। তার ভালোবাসা আর অনুগ্রহেই পূর্ণ হবে এই অন্তর। এই শূণ্যতা, এই একলা লাগা, এই অসহ্য যন্ত্রণা, অন্তরছেঁড়া কষ্ট -- কেবল এক মহান সত্বার ভালোবাসাতেই পূর্ণ হতে পারে। এই ভাবনাটা হিমেল পরশ দেয় হৃদয়, শান্ত করে দেয় অস্থির বুক, যেন টের পাই আমার আল্লাহ আমার সাথেই আছে, এইতো আমার অশ্রুভেজা অনুভূতিতে, আমার স্পন্দনে, আমার দু'হাত তোলা আর্তিতে... ১৯ মার্চ ২০১৩

২০ মার্চ, ২০১৩

সেই সে নামায

জীবনে একটা শারীরিক সমস্যার কারণে মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছিলো দীর্ঘদিন। মসজিদে নিয়মিত সবার সাথে কাতারবদ্ধ হয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের এই এই স্নিগ্ধ অনুভূতিটা বোধকরি ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সালাত আদায়ের সময় প্রায়ই মনে হয়, আমাদের প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার সাহাবারা ঠিক এভাবেই রুকু করতেন, সিজদা করতেন, আমরা যা বলি, তারাও তা বলতেন। আমার মতন, আমার চারপাশের এই মুসলিম ভাইদের মতন করে সমগ্র বিশ্বেই সব মুসলিমরা একইভাবে ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালন করছেন। পৃথিবীর কাজে-কর্মে আটকে পড়ে আল্লাহর নির্দেশকে কেউ অমান্য করছেন না। এই অনুভূতিটুকু আমাকে অদ্ভুত একটা প্রশান্তির পরশ দেয়, যেন ঠান্ডা পানির একটা স্রোত বয়ে যায় হৃদয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যেন আমাদেরকে সুস্থতার সাথে বেঁচে থাকার, তার নির্দেশ পালন করে তার সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দেন, আর যাবার বেলায় যেন ঈমানী মৃত্যু দান করেন।

[১৬ মার্চ ২০১]

১৯ মার্চ, ২০১৩

ছেলেবেলার বন্ধু আর আলাপে জাগরণ


আজ অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলো, আলাপ হলো। মনে পড়লো, বছর দশেক আগেও আমরা দু'জন যুহর থেকে আসর অবধি একটা সিঁড়ির উপরে অথবা পড়ে থাকা গাছের গুড়ির উপরে বসে থেকে এভাবে আলাপ করতাম। কথার বিষয়বস্তু বদলেছে বেশ একটা অংশ। তখন দু'জনেই ছিলাম রবীন্দ্র ভক্ত। মনে আছে সে 'গোরা' পড়ে আধাঘন্টার উপরে আমাকে দর্শন বুঝিয়েছিলো। শরৎবাবুর উপন্যাসের আলাপে বুঁদ হয়ে থাকতাম। চরিত্রহীন আর পল্লীসমাজ পড়িনি বলে আমার সাথে কী ভাবটাই না নিয়েছিলো !! ক্লাস নাইনে থাকতে ওর লেখা গল্প পড়তাম মুগ্ধ হয়ে, প্রতিটি ঘটনাকে তৃতীয় চোখ হয়ে বর্ণনা করে কেমন হৃদয়স্পর্শী করে দেয়া যায়, সেটাও মন দিয়ে দেখেছিলাম। আমিও সময় পেলে 'বলাকা','প্রভাতসঙ্গীত','মানসী' থেকে ঝেড়ে দিতাম, অমিত আর লাবন্যের চিঠি নিয়ে আলাপ করতেও ছাড়তাম না।

১৮ মার্চ, ২০১৩

ক্ষমা করে দিলাম


ক'দিন ধরে চলে যাবার কথা মনে হচ্ছে খুব। মনে পড়লো, যে স্কুল-কলেজের ডেস্কগুলোতে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যেত, যেই গাছের নিচে বসে কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্য ছুঁয়েছিলাম, তাকে ফেলে রেখে এসেছি অনেকদিন হলো; জানিও না কী অবস্থায় আছে, কেমন আছে সেখানকার মানুষগুলো যারা আমাকে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। তৃষ্ণার্ত ছিলাম বলে এক বৃদ্ধ কর্মচারী চাচা কষ্ট করে কলস থেকে পানি ঢেলে দিয়েছিলেন-- এমন একটা ঋণও শুধতে পারব না, কেননা তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ইতোমধ্যে। ভার্সিটিতে পরীক্ষার মাঝে একবার জ্বরগ্রস্ত হয়ে কাতর হয়ে পড়েছিলাম। রুমের কেউ ভ্রূক্ষেপ না করলেও অন্য ফ্লোর থেকে এক বন্ধু এসে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছিলো। আমি কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে চেয়েছিলাম সুস্থতা -- মাত্র দেড়দিনের মাথায় উঠেও দাঁড়িয়েছিলাম।

১৩ মার্চ, ২০১৩

এই বৃষ্টিভেজা রাতে তুমি


একটা সময়ের কথা মনে পড়ে যখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে নিয়ে ভালোলাগার অদ্ভুত অনুরণনে অস্থির হয়েছি। আমার বুকের মাঝে জেগে ওঠা শূণ্যতা আর প্রকৃতির সীমাহীন সৌন্দর্যে মুগ্ধমাতাল মন আমার মাঝে সঙ্গীহীনতার একটা চিন্তাকে জাগিয়ে তুলতো।

অথচ আজ এই সুন্দর রাতে 'ইশার সালাত আদায় শেষে বৃষ্টিভেজা পিচঢালা পথ মাড়িয়ে আসার বেলায় স্নিগ্ধ বাতাসের স্পর্শ পেয়ে মনে হলো, এই অপার ভালোলাগা আমি কাউকে ভাষায় বোঝাতে পারব না। এই ভালোলাগাকে আমি প্যাকেটে ভরে রেখে দিতেও পারব না। এমনকি আমি কখনই বছরের পর বছর এই স্নিগ্ধ হাওয়া উপভোগ করতেও পারব না। আমি নশ্বর মানুষ, আমার যাবার বেলা নির্ধারিত। এই ভালোবাসা, ভালোলাগা, উদাস মন -- সবই তো ক্ষণিকের।

যেই ভালোলাগাকে উসকে দিয়ে আমি ডুব দিতাম, তাতে আমি ডুবে ভেসে রইতে পারব না অনেক লম্বা সময়! অদ্ভুত এই জীবন! জানি, আমাদের মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অকল্পনীয় অনুপম, নিখুঁত সৌন্দর্যের একটা ছোট্ট সৃষ্টি ও উপহার আমাদের হৃদয়ে উপচে পড়া এই অনুভূতিগুলো।

হে রাহমান, আমাদের ক্ষুদ্র জীবন পেরিয়ে এর চাইতে কোটি কোটিগুণ সুন্দর সেই ভালোলাগার বাগানে আপনার প্রিয় বান্দাদের সাথে বসে বৃষ্টিবিলাসের তাওফিক দিয়েন। আপনি তো আমাদের মালিক, আমরা আপনার তুচ্ছ বান্দা। আপনি আমাদের দয়া করুন হে সুন্দর, হে নিরুপম, হে প্রেমময়, হে অসীম দয়ালু। সমস্ত ভালোবাসা তো শুধু কেবলমাত্র আপনারই... ♥ ♥ ♥

১৩ মার্চ, ২০১৩

বদলে যাওয়া আমায় নিয়ে অবাক আমি

সবাই কতকিছু নিয়ে অবাক হয়, আর আমি অবাক হই নিজেকে নিয়েই। কী অদ্ভুত ! কী অদ্ভুত!

মানুষ বদলে যেতে থাকে, সময় পেরিয়ে যায়। মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত এগিয়ে যাই আমরা, আরো কাছে, আরো কাছে, পার্থিব জীবনের একদম শেষের দিকে... কত সহজেই সময় চলে যায়।

এতগুলো বছর পেরিয়েও মনে হয় যেন আমার অর্জন কিছুই নেই, প্রাপ্তি নেই জীবনে --পৃথিবীতেই। আখিরাতের জন্য কিছু করাই হয়নি তেমন। এভাবেই জীবন শেষ হয়ে গেলেই বুঝি মানুষ আফসোস করতে চায়, আরেকবার আল্লাহর কাছে চায় যেন দুনিয়ায় ফিরে কিছু ভালো কাজ করতে পারে।

এভাবে অবহেলায়, অন্তরের মলিনতায় সময় পার করে দিয়েই বুঝি একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কতিপয় মানুষ মাটি হয়ে যেতে চাইবে।

১৩ মার্চ, ২০১৩

বিশ্বাসীদের বুমেরাং ফিরে আসে গভীরতায়

বিগত কিছুদিন অনেক মসজিদের ইমাম, কুরআনের হাফিজ, মাদ্রাসার ছাত্র এবং ছাত্র-কুলি-ব্যবসায়ী-পথচারী আমাদের 'প্রাণপ্রিয় পুলিশ ভাইদের' গুলিতে বিদ্ধ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। আল্লাহ ও তার রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি করার সাহস দেখানো এক পশু দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছে। আল্লামা আহমদ শফীর মতন আলেমদেরকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি ছোঁড়া হয়েছে। বন্ধুদের অনেকের ভাবসাব দেখে বুঝেছি তাদের কাছে রাসূলুল্লাহ (সা) এবং তার পরিবারের নামে অশ্লীল ব্লগ লেখা বিষয়টা খুবই হালকা।

১২ মার্চ, ২০১৩

কিছুই তো আমার নয়

চারদিকের ঘটনাগুলো প্রচন্ড হতাশার উদ্রেক করতে নেয়। অরাজকতা, হত্যা, ধর্ষণ, মিথ্যা, জুলুম, ক্ষমতালিপ্সা, অত্যাচার, অবিচার, হয়রানিতে যেন ভরে গেছে এই সমাজ। ভালোবাসার জিনিসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে নেয় বলেই তো অন্তরের ভিতরের এই ক্ষোভ আমাদের, তাইনা? কী ভালোবাসি আমরা? আমাদের ভালোবাসা তো আমাদের রক্তসম্পর্কের আত্মীয়স্বজন, আমাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্পদ, আমাদেরই প্রিয় মানুষদের সমাজ, একটা ভাষা, একটা দেশ, একটা সুন্দর পৃথিবী... সবকিছুই যখন হুমকির মুখে, তখন অন্তর্জ্বালা আমাদেরকে অস্থির করে দেয়।

একটু ভেবে দেখি? এই আমার ঘর, আমাদের বাড়ির সীমানা, এটা কি আগেও আমাদের ছিলো? হাতবদল হয়ে এসেছে সবকিছু। এই ল্যাপটপ, মোবাইল এবং আর যত সম্পদ -- সেগুলোও হাত ঘুরে নানান উপায়ে এসেছে আমাদের হাতে। কিছুই আমাদের ছিলনা, আগামীতেও থাকবে না। আমরা অল্প সময় থাকব এই মাটির উপরে, এসেছিলাম শূণ্য হাতে, চলেও যাব শূণ্য দু'হাতে। খুব বেশি অস্থির হবার কিছু নেই আমাদের। এই জগতের, এই সৃষ্টি চরাচরের যাবতীয় ক্ষমতা যার, তিনি এখনো এই সবকিছুর মালিক, তিনি সবসময়েই রাজাধিরাজ। তিনিই আমাদেরকে ক্ষণিকের কিছু সময়ে এই জগতে পাঠিয়েছেন, তার কাছ থেকেই এসেছি আমরা, তার কাছেই ফিরে যাব।

আমার মা আমায় যতখানি ভালোবাসেন, তার চাইতে তিনি বেশি ভালোবাসেন। তিনি আমার জন্য যদি কিছু নির্ধারণ করে রাখেন, সেটা আমার জন্য পরম কল্যাণময়। তাই, আমাদের কাজ শুধুই দায়িত্বটুকু পালন করে যাওয়া। নিঃসন্দেহে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যারা জীবনধারণ করেন, যারা কেবল আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে একসাথে ত্যাগ স্বীকার করেন -- তারাই সফল। আল্লাহ তাদেরকেই অনন্তজীবনের সাফল্যের সুসংবাদ দিবেন। আমাদের জীবন দেয়া হয়েছে, মৃত্যুও নির্দিষ্ট করেই রাখা হয়েছে, মাঝের সময়টুকু শুধু কিছু ভালো কাজের জন্যই... আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেনঃ

♥"অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতা রাখেন।  কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।"♥---[সূরা আল মুলক ১-২]
১২ মার্চ, ২০১৩

সুন্দর দিনের শুরু করবো কেমন করে?

রাত গড়িয়ে চলেছে। আমরাও বোধহয় ফেসবুকে, ব্লগে, মেসেঞ্জারে ঘাঁটি গেঁড়ে বসি। এই জগতে আমাদের বেশিরভাগ সময় যে অবশ্যই উত্তম উপায়ে যায় না, তাতে সন্দেহ নেই। আমার পরিষ্কার মনে আছে, পূর্বের জীবনে কখনো রাত না জাগা আমি ভার্সিটির হলে থাকতে থাকতে একসময় ১টা/২টা বাজলে ঘুমাতে যেতাম। সেই দিনগুলোকে দুঃসহ স্মৃতিময় বলে মনে হয় এখন। এলোমেলো রুটিনবিহীন।

জানিনা আমরা মুসলিমরা সবাই আদৌ সবাই ফজরে উঠে সালাত আদায় করি কিনা, অথবা হয়ত কোনরকম সালাতটা সেরেই ঘুম দিই। জানিনা ভোরবেলা দিনের শুরুতে তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত আমরা করি কিনা। ফজরের পরে অন্তরের দরদ ঢেলে কুরআন তিলাওয়াত করার সৌভাগ্যটুকু অর্জনের চেষ্টা হয়ত খুব কম মানুষই করি। অথচ, এই আমার মতন অভাগার জীবন কেমন করে সফল, অর্থপূর্ণ, শান্তির হবে -- তা জানিয়ে লিখে রেখে দিয়েছেন আমার রব, আমারই জন্য --এটা ভাবলেই কুরআন হাতে নিয়ে মনটা কেমন উদাস হয়ে যায় । অনুশোচনা হয় অতীত জীবনের নষ্ট করা সময়ের জন্য, নিজের উদাসীনতা আর ঔদ্ধ্যত্বের জন্য, রাগ হয় নিজের আলসেমির উপরে।

রাতে আগে ঘুমিয়ে পড়াই কল্যাণকর। ভোরে আগে ওঠাই উচিত, আরো বেশি প্রয়োজন শেষ রাতে ওঠা। কিয়ামুল লাইলে দাঁড়িয়ে থাকা। এরপর, ফজরের পরের সুন্দর পরিবেশে কিছুক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করে তার তাফসীর পড়া হবে দিনের শ্রেষ্ঠ উদবোধন, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দরতম অভ্যাসগুলো অর্জনের তাওফিক দিন।

এই উপলক্ষে কিছু স্মরণিকা -- শ্রেষ্ঠ মানুষ, জীবনের প্রতিটি কাজে যিনি আমাদের প্রতি অনাবিল ভালোবাসা রেখে গিয়েছেন, তিনি আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেনঃ

♥ "যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করে সে আল্লাহর দায়িত্বের মধ্যে শামিল হয়ে যায়। কাজেই হে বনী আদম! চিন্তা কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে নিজের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত কোন জিনিস চেয়ে না বসেন।" [মুসলিম]
♥ "যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করে সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত।" [মুসলিম]
♥ “তোমরা আল কুরআন পড়। কারণ কিয়ামাতের দিন আল কুরআন তার পাঠকারীর জন্য শাফা’আতকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে।” [মুসলিম]

# রিয়াদুস সলিহীন থেকে সংগৃহীত।

১২ মার্চ, ২০১৩

১১ মার্চ, ২০১৩

শুধু তোমাকে চাই

যখন জানি খুব ক্ষুদ্র আমি, যখন বুঝি খুব অসহায় আমি, যখন টের পাই অনেক মূর্খ আমি, ঠিক তখনই জানি, একমাত্র আল্লাহই আমাকে এই অবস্থায় গ্রহণ করবেন।

এই জীবনে আর কেউ নাইবা থাক, আর কেউ নাইবা মুখ তুলে চাক, আর কেউ নাইবা ভালোবাসুক, আল্লাহ ভালোবাসতে কার্পণ্য করেন না।

তাই সেই একটা ভালোবাসাই পরম আরাধ্য, একমাত্র চাওয়া...

এই আসমানে অসঙ্গতি খুঁজে ব্যর্থ আমার চোখ

সূরা মুলকের প্রথম চারটি আয়াতের উপরে দারসুল কুরআনে প্রায় দু'ঘন্টা কেটে গেছে বিগত দুই সপ্তাহে আমাদের এলাকার মসজিদে। এরপর থেকে মুসহাফ খুলে মন্ত্রমুগ্ধের মতন পড়তে থাকি, "তাবারাকাল্লাযি..." -- তিনি মৃত্যুকে সৃষ্টির কথা আগে বলেছেন, এরপরে জীবনের কথা উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতখানি নিয়েই আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। এখন বাংলা অনুবাদ আর তাফসির পড়তে গিয়ে হারিয়ে যাই নতুন নতুন উপলব্ধিতে। আমাদের রাহমান আমাদের বলেছেন, তার সৃষ্টিতে অসঙ্গতি দেখতে পাই কিনা সেকথা ভাবতে। পাইনি কখনো হে রব। আপনার সৃষ্টি অত্যন্ত সুনিপুণ, সুন্দর। এই সুন্দর যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কতই না সুন্দর। ত্রুটি খুঁজতে গিয়ে আমার চোখ ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। আমি আমার রবের বিশালত্ব আর শ্রেষ্টত্বকে নতুন করেই অনুভব করেছি। আমাদের ক্ষুদ্র হৃদয়ের গোটা অনুভবেই আপনি জুড়ে রেখেছেন ভালোবাসায়, বিশালতায়, দয়ার্দ্রতায়। আমাদের এই আকাশ, এই নক্ষত্র, এই নীল, এই মেঘ, এই বৃষ্টি, এই রৌদ্রছায়া, এই আকাশের পাখি, এই দিগন্ত -- সবকিছুই আপনার অপার সৌন্দর্যময়তার প্রকাশ করে। আমরা আপনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বান্দা, আমাদের দয়া করুন হে রাহমান...

♥"অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতা রাখেন। কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য  তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও। তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান তৈরী করেছেন। তুমি রহমানের সৃষ্টকর্মে কোন প্রকার অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি? তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে।"♥
---[সূরা আল মুলক: ১-৪] 

.
১১ মার্চ, ২০১৩

১০ মার্চ, ২০১৩

কেমন সেই পথ চেয়ে থাকা?

গত জুমু'আ আদায় করলাম মিরপুরের একটা মসজিদে। একজন বৃদ্ধ ইমাম, খুতবার সময় বক্তব্যে তার ব্যক্তিত্ব এবং প্রজ্ঞার ছাপ সুস্পষ্ট ছিল। কিছুদিন যাবত আলহামদুলিল্লাহ ক্রমাগত অসাধারণ ইমামদের খুতবা শোনার সৌভাগ্য হচ্ছে, যা বিগত অর্ধযুগে হয়নি বললেই চলে।

সেদিন খতীব মসজিদে উপবিষ্ট তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ খুতবা দিচ্ছিলেন, তারুণ্যের অনেকগুলো ইস্যু ছিলো। একসময় তিনি হঠাৎ বিয়ের অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা করতে শুরু করলেন। সেই এলাকায় সাম্প্রতিক বিয়ের অনুষ্ঠানের ডামাডোল, হিন্দি গানের অতিপ্রভাব, জলবৎ তরলং উপায়ে অর্থের অপচয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো, বিধর্মী সংস্কৃতির বিষয়ও উল্লেখ করলেন এবং সুন্নাহর সাথে তার সুস্পষ্ট বিরোধ তুলে ধরলেন। এত আন্তরিক স্নেহমাখা কন্ঠে "বাবারা, তোমরা বিষয়গুলো বুঝলে তোমাদেরই কল্যাণ হবে" বলছিলেন যে তা হৃদয়স্পর্শ করা মতন, সুবহানাল্লাহ!

একসময় বিয়ের অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশার কুপ্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েরা এখন সেজে বসে থাকে, সবাই ছেলেমেয়ে সবাই সেখানে তাকে দেখতে আসে। এরকম অনুষ্ঠানগুলোতে অন্যান্য নারীরাও সেজেগুজে আসে। এমন তো হতেই পারে যে হয়ত বরের নববধূর চাইতে অধিক আকর্ষণীয়া সুন্দরী হয়ত অনুষ্ঠানেই আরেকজন কেউ। তখন সেই ছেলেটির হয়ত তার স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ ও মুগ্ধতা কমে যাবে। ইসলামি সংস্কৃতি এরকম পরিস্থিতিকে তৈরি হবার সুযোগ দেয়না। আমাদের সংস্কৃতি পুরোটাই কল্যাণময়।

চিন্তা করছিলাম, এইভাবে কখনো আমি ভেবে দেখিনি আগে। আমাদের মুসলিম সমাজে ছেলেরা কেবল একটা মানুষের জন্যই অপেক্ষা করে জীবনে, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশাতেই তাকে সাথে নিয়ে সংসার জীবনের যাত্রা শুরু করে। ঐ একটা মানবী ছাড়া আর কারো দিকে তারা দৃষ্টিকে নিবদ্ধও করবে না। তাই সৌন্দর্যের তুলনামূলক যাচাই বাছাই তার চিন্তাতেও থাকবে না। এখনকার সময়ের অজস্র সংসার ভাঙ্গার কারণ হচ্ছে বিবাহপূর্ব এবং পরবর্তী এমন অনেক আসক্তি। মুসলিম পুরুষের ক্ষেত্রে, সংসারের তার অর্ধাঙ্গিনী তার মানসিক, শারীরিক আত্মিক জীবনের সঙ্গী। এই যাত্রাটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই। যে তার জীবনসঙ্গিনী সে তো কেবলই রূপসংশ্লিষ্ট নয়, সে তার সংসারের কর্ত্রী, তার অনন্তযাত্রার সহযাত্রী।

শো-অফের এই নষ্ট সংস্কৃতিতে ডুবে থাকা ছেলেমেয়েরা কল্পনাও করতে পারবে না, আবেগগুলোকে যখন যত্ন করে সাজিয়ে রাখা হয়, তখন সেই আবেগের স্পর্শ পেলে মনটা কতটা উদ্বেল হয়, হৃদয় কতটা আনন্দের পরশ পায়। তবে নিঃসন্দেহে, যারা আল্লাহর জন্য নিজেদের জীবনকে সংযত রাখে, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলোতেও সচেতন থাকে, আল্লাহ তাদের অন্তরে প্রশান্তির ঝর্ণাধারা বইয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াহ দিন এবং কেবল তারই সন্তুষ্টির জন্য জীবনকে পরিচালিত করার তাওফিক দিন। নিশ্চয়ই আল্লাহর হাতেই সর্বময় ক্ষমতা এবং তিনিই আমাদের জীবনের একমাত্র মালিক।

১০ মার্চ, ২০১৩

৮ মার্চ, ২০১৩

পরিপূর্ন যুক্তির খোঁজে

আমি প্রতিদিন অনেকরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই, সর্বপ্রথম নিজের কথা মনে হয় যেখানে জ্ঞানের প্রবল সংকট আমার জীবনের সমস্যাগুলোকে শত-শতগুণে বর্ধিত হবার কারণ হিসেবে কাজ করেছে। একই চিন্তা আমার সমাজের মানুষদের ও মুসলিম উম্মাহর জন্যেও অত্যন্ত তীব্রভাবে মনে হয়। অল্পকিছু জানা জিনিসকে আরো একটু জানার পরে আমার পূর্বেকার অবস্থান নিয়ে খুব লজ্জাবোধ হয়। এখনকার জীবনেও এত দারুণ মানুষের খোঁজ পাই যে তখন অবাক লাগে এইরকম সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক অবস্থাতেও কিছু মানুষ বুকে এত ঔদার্য আর আলো নিয়ে ঘুরে বেড়ান!!

যাহোক, ক'দিন আগে আমার বস একটা কথা বলছিলেন, মজার ব্যাপার হলো তার কাছ থেকে এমন গভীর জ্ঞান আশা করিনি। উনি বলছিলেন, "আমাদের পৃথিবীতে কিছুই নতুন হচ্ছেনা। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখ, এরকমই আগেও ছিল। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু কর্তব্যটুকু করা।" ভেবে দেখলাম, সত্যিই তো। নবী-রাসূলদের ইতিহাস খুবই হালকা করে কিছু হয়ত জানি। কিন্তু এই উপমহাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস তেমন কিছুই জানিনা। কী দুঃখজনক!

অথচ এরই মাঝে কতজন কত কিছুই না জানে! এক ছোট ভাইয়ের মুখে একদিন শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর কথা শুনেছিলাম অনেকদিন আগে। ক'দিন আগে ইমাম সুহাইব ওয়েবের এক আলোচনাতেও ভারতবর্ষের এই মহান স্কলারের নাম শুনেছিলাম। ইমাম সুহাইব তাবিঈন যুগের স্কলার থেকে শুরু করে এই শতাব্দী পর্যন্ত সেরা স্কলারদের বিভিন্ন বইতে উল্লেখিত সামঞ্জস্য নিয়ে মনমুগ্ধ আলোচনা করছিলেন, তখন উনার নাম বলেছিলেন। আজকে এই স্কলারের সম্পর্কে খুব অল্প জানলাম। অসাধারণ মানুষগুলোর 'বায়োগ্রাফি' পড়ে বারবার মুগ্ধ হই। তারা সবাই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, তবু দ্বীনকে উজ্জীবিত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা জীবন দিয়েই করে গেছেন। আমরা আসলে আরাম-আয়েশে জীবন কাটাতে চাই, তাই কিছুই অর্জন হয়না। তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করতেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এরকম সকল সৎকর্মশীল মানুষদের প্রতি রাহমাত বর্ষণ করুন, তাদের সাথে আমাদের সাক্ষাত যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে জান্নাতে হয় -- সেই তাওফিক দান করুন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর (রাহিমাহুল্লাহ) একটি গ্রন্থের নাম 'হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা'। মহিমান্বিত কুরআনের সূরা আন'আম [৬:১৪৯]-এর একটি শব্দের অনুপ্রেরণায় নাকি এই নামকরণ। সে আয়াতটা খুঁজে পড়তে গিয়ে দেখলাম যেন এই সময়েরই কিছু ঘটনার ইঙ্গিত! সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহ বলেছেনঃ

♥"এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। আপনি বলে দিনঃ অতএব, পরিপূর্ন যুক্তি আল্লাহরই। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে পথ প্রদর্শন করতেন।"♥ --[আল আন'আম, ১৪৮-১৪৯]

৭ মার্চ, ২০১৩

যখন তোমায় কাছে পেতে চাই ভালোবাসায়


মনে আছে, তখন বয়স আমার প্রায় ষোল বছর, মসজিদে দুপুরেবেলা এক বন্ধুর সালাত আদায় দেখতাম। যখন সবাই সুন্নাত শেষে বের হয়ে চলে যেত, ও তখনো তন্ময় হয়ে সালাতে দাঁড়িয়ে থাকত। ধীরে ধীরে রুকু-সিজদাহ করত। প্রায় সুনসান নিরবতা চারপাশে, সামনের দিকের কাতারে সালাতের মাঝে 'হারিয়ে যাওয়া' এক কিশোর, মসজিদের এক কোণায় মুগ্ধচোখে আমি...

এরপরেও জীবনে অনেকবার অনেক মানুষের সালাত আদায় দেখে মুগ্ধ হয়েছি। অগুনতি ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের দরদভরা কন্ঠের তিলাওয়াত শুনে চোখের পানি রুধতে পারিনি। কিন্তু ভাবতাম, কীভাবে তারা পারেন এমন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার সাহাবাদের নামাজের কথা ভেবেও অবাক হতাম, সারারাত কীভাবে তারা দাঁড়িয়ে থাকতেন, কীসের এত গভীর টান যা দিনভর করা কষ্ট ও ক্লান্তিকেও হার মানিয়ে দেয়, ঘুম ভুলিয়ে দেয়?

সেদিন একটা হাদিস চোখে পড়লো, এরপর থেকে সালাতের কিছু অনুভূতিকে যেন অন্যরকম করে পেলাম! আসলে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে সবচাইতে কাছে পাওয়া যায় সালাতে, সিজদায়। আরো আপন করে পাওয়া যায় শেষ রাতে। প্রিয়তম স্রষ্টাকে আপন করে চাওয়া কিছু গভীর ভালোবাসা আর আর্তিই হয়ত বান্দাদের অন্তরকে সালাতে টেনে রাখে আপন মহিমায়! এ এমন এক সম্পর্ক যা অবিনশ্বর, অনন্তকালের... সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি!

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

♥“বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়।
কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।”♥ [মুসলিম]

#রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৯৮

৫ মার্চ, ২০১৩

কিছু শান্তি পাঠিয়ো মোরে অশ্রুস্মরণে

চোখের সামনে অগুনতি লাশের ছবি, গুলিতে ক্ষতবিক্ষত অথবা ধারালো অস্ত্রের কোপ। একই রক্তমাংসের গড়া মানুষ সবাই, তবু লাশ আর রক্তগুলো দেখেও মানুষের অনুভূতি বিকিয়ে যায় চিন্তার দাসত্বের কাছে, দলভক্তির কাছে, বিবেক পরাজিত হয় শয়তানের দাসত্বের কাছে। নিঃসঙ্কোচে হত্যার-ধ্বংসের সপক্ষে ব্যাখ্যা হাজির করতে থাকে পশুর দল। বিশাল ধ্বংসস্তূপ, আগুণ, তিলে তিলে জমানো সম্পদের ধ্বংসলীলা দেখেও স্তম্ভিত হই, নির্বাক হয়ে যাই। কি চাই আমরা? কেন করি কাজগুলো? সত্যিই কি জানে তারা?

২ মার্চ, ২০১৩

সাধারণদের কথাবার্তা আর অনন্যসাধারণ আলোচনা

# ফেসবুকের হোমপেইজে স্কলারদের প্রশ্নবিদ্ধ করা, দ্বীনের জন্য জীবনকে বিলিয়ে দেয়া মানুষদের নিয়ে সন্দেহ ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ সমালোচনা অনেক আগেও দেখতাম, এখনো দেখি। যারা এসব চালু রাখেন, তারা যদি স্কলার লেভেলের মানুষ হতেন, ভালোই লাগত, জ্ঞানগর্ভ যুক্তি পড়া যেত, চারপাশে এরকম মানুষ থাকায় ভাগ্যবান বোধ করতে বাধ্য হতাম। অথচ যতটুকু বুঝি, বেশিরভাগ বক্তার মাঝে আবেগের গভীরতা যতই অতলান্তিক, জ্ঞানের ও প্রজ্ঞার ছাপ ততই কম। আল্লাহ এরকম পোস্ট লেখিয়েদের সাথে সাথে আমাদের সবারই অন্তরের আবেগটুকু কবুল করে জ্ঞান বাড়িয়ে দিন এবং শব্দব্যবহারের আদব শিখিয়ে দিন যেন হাত দিয়ে, মুখ দিয়ে নিঃসৃত শব্দগুচ্ছের ব্যবহার হয় শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য; তা যেন নিজের ইগো, নিজের তুচ্ছাতিতুচ্ছ জ্ঞানের ভ্রমে বিভ্রান্ত মানুষের বাণী না হয়।

# আজ ইশার সালাতের পর এলাকার মাসজিদে তাফসীরুল কুরআনের দারস হলো। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের এক অনন্যসাধারণ অভিজ্ঞতা, নিজেদের মাসজিদে এই-ই প্রথম, জীবনেও হয়ত! যতক্ষণ বসে ছিলাম, টের পাচ্ছিলাম, এরকম একেকটা উদ্যোগ অজস্র মানুষের জীবনকে পুরো বদলে দিতে পারে। কী অদ্ভূত সুন্দর হয় এই মজলিশ! আজকে আলোচনা হলো সূরা মুলক এর প্রথম কয়েকটি আয়াত। এই অসাধারণ আয়াতগুলোর দারস করতে গিয়ে তিনি সূরা আল-বাকারাহ, সূরা আর-রাহমান, সূরা-বুরুজের কিছু আয়াতের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। সমস্ত সৃষ্টি জগতের কর্তৃত্ব যার, তার রাজত্বে বান্দা হিসেবে আমাদের কেমন অবস্থান, আমরা কতটা বেশি ক্ষুদ্র, কতটা সীমাহীন নিয়ামাতপ্রাপ্ত -- সেই অনুভূতিটুকুই বারবার ঘুরে আসছিল আলোচনা শোনার সময়টুকুতে। প্রতিটি মানুষই তন্ময় হয়ে শুনছিলেন, হয়ত অনুভবও করছিলেন সেই কথাগুলো। এরপরেই স্মরণিকা এলো নিজেদের কাজ কেমন হওয়া উচিত সেই ব্যাপারে। সবাই হয়ত আমার মতই নতুন উদ্যমে সংকল্প করলেন আল্লাহর কৃতজ্ঞ ও অনুগত দাস হবার, নিজেকে উন্নত করার। আল্লাহ জগতের সকল কুরআনের আলোচনার মজলিশকে কবুল করে নিন এবং তাতে বারাকাহ দিন।

অদ্ভুত সুন্দর মহিমান্বিত কুরআনের আলোচিত সেই আয়াতগুলো --

♥ "অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতা রাখেন। কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন।
আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।

তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান তৈরী করেছেন। তুমি রহমানের সৃষ্টকর্মে কোন প্রকার অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি? তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে।"♥

---- [সূরা আল মুলক : ১-৪]

১ মার্চ, ২০১৩

সুন্দর সমাজের সফল জীবন


একটা কঠিন সময়ে এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছি আমরা। ইদানিং উপলব্ধি হয়, জাহিলিয়্যাতের সময়ের 'আবুল হাকাম' কেন ইসলামের যুগে 'আবু জাহল' হয়ে গিয়েছিলো। মূর্খতা আসলে ডিগ্রির মাঝে থাকে না বরং জ্ঞান যখন অন্তরকে আলোকিত করে না, চিন্তাকে উন্নত করে না, বস্তুজগত আর অন্তরজগতের মাঝে যোগ করতে পারে না তখনই তা মূর্খতা। এমন অজস্র উচ্চশিক্ষিত গন্ডমূর্খদের নিয়েই আমাদের সমাজ, আমাদের চারপাশ। নিঃসন্দেহে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে যত অস্থিরতা তা মানুষের দু'হাতের কামাই। ঘুরে-ফিরে তাই অন্তরে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ধারণ করা মানুষদেরকেই হতে হয় এই জমিনের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার কর্মী। তারাই ধৈর্যশীল, তারাই কল্যাণময়, তারাই সুন্দর।

যুগে যুগে ইসলামের স্কলাররা আমাদের জানিয়ে গেছেন, ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে কল্যাণকে ছড়িয়ে দেয়া এবং অন্যায়কে প্রতিরোধ করা। সবচাইতে আনন্দদায়ক একটা জিনিস শিখলাম ক'দিন আগে সেটা হলো -- কোন একটা বেশি খারাপ জিনিসকে কম খারাপ করে দিতে পারাও একটা 'ভালো' (মা'রুফ)। আমরা এবং আমাদের চারপাশের মানুষগুলো ডুব দিয়ে আছি পাপাচারে, ঘৃণায়, ক্রোধে, মূর্খতায়। দায়িত্ব আসলে আমাদের মুসলিমদের সবারই। সমাজের মূর্খদের আমরা ফেলে দিতে পারিনা কিছুতেই। তারা বুঝতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক, জাহেল অন্তরের বৈশিষ্টই অমন। তাই বুদ্ধি দিয়ে, নিজেদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ব্যক্তিজীবনে কিছু খারাপের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা হলেও আমাদেরকে করতে হবে। আমাদের হারানোর কিছুই নেই। আমাদের সবই প্রাপ্তি। আমাদের করা প্রতিটি কাজই বিজয়ীদের কাজ। তবে, যাকে/যাদেরকে দাওয়াত দিলে বেশি কাজে লাগবে, তাদের প্রতিই আমাদের দায়িত্ব বেশি। কিন্তু একটা জিনিসই বারবার উপলব্ধি করি, কোন অবসর নেই একজন মু'মিনের। সে হবে সমাজের জন্য কল্যাণ -- সত্যকে প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়কে সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। 

ক'দিন যাবত অনেকেই বলছিলেন -- এক বিশাল জনগোষ্ঠিতে মুসলিম নামধারী কাফির, মুরতাদ এবং মুনাফিকদের জালে আটকা পড়ে গেছি আমরা। এরকম কিছু ইঙ্গিত দিয়ে আজকে জুমু'আর নামাজে আমাদের খতীব সংশয় প্রকাশ করলেন যে হয়ত আমাদের গাফিলতিও এর পেছনে দায়ী। তাই তিনি মসজিদে প্রতি সপ্তাহে একদিন কুরআনের দারস এবং প্রতিদিন হাদিসের উপরে আলোচনার সময়সূচী জানালেন। কয়েকদিন আগে আমি নিজেও নিজ জীবনে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা, বিশেষ করে কুরআন নিয়ে গভীর পড়াশোনার নিয়াত করেছিলাম। আমাদের সবারই মনে হয় কুরআনকে আঁকড়ে ধরে জেগে ওঠা উচিত। এটুকু নিশ্চিত যে, আমরা অর্জনে এবং অবদানে কিছু করতে পারি বা না পারি, আল্লাহ তার কুরআন এবং তার দ্বীনকে জয়ী করবেনই। অন্তরতম আল্লাহর ডাকে যেদিন পৃথিবী ছেড়ে যাব আমরা, সেদিন শুধু আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টাগুলো, হৃদয়জুড়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসাটুকুই সম্বল হয়ে রবে। তাইতো, প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সেই দু'আ নিয়মিত করতে চাই,

"ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিক"
(হে হৃদয়সমূহকে ঘুরিয়ে দেয়ার অধিকারি! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ)।

[০১ মার্চ, ২০১৩]