আজ অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলো, আলাপ হলো। মনে পড়লো, বছর দশেক আগেও আমরা দু'জন যুহর থেকে আসর অবধি একটা সিঁড়ির উপরে অথবা পড়ে থাকা গাছের গুড়ির উপরে বসে থেকে এভাবে আলাপ করতাম। কথার বিষয়বস্তু বদলেছে বেশ একটা অংশ। তখন দু'জনেই ছিলাম রবীন্দ্র ভক্ত। মনে আছে সে 'গোরা' পড়ে আধাঘন্টার উপরে আমাকে দর্শন বুঝিয়েছিলো। শরৎবাবুর উপন্যাসের আলাপে বুঁদ হয়ে থাকতাম। চরিত্রহীন আর পল্লীসমাজ পড়িনি বলে আমার সাথে কী ভাবটাই না নিয়েছিলো !! ক্লাস নাইনে থাকতে ওর লেখা গল্প পড়তাম মুগ্ধ হয়ে, প্রতিটি ঘটনাকে তৃতীয় চোখ হয়ে বর্ণনা করে কেমন হৃদয়স্পর্শী করে দেয়া যায়, সেটাও মন দিয়ে দেখেছিলাম। আমিও সময় পেলে 'বলাকা','প্রভাতসঙ্গীত','মানসী' থেকে ঝেড়ে দিতাম, অমিত আর লাবন্যের চিঠি নিয়ে আলাপ করতেও ছাড়তাম না।
আজকে আমাদের আলাপের বেশিরভাগ অংশকে যে নাম দেয়া যায় তা হলো --জীবনে কত কিছুই না পেলাম! পেরিয়ে যাওয়া দীর্ঘ সময়ে দু'জনের পুরো ভিন্ন অভিজ্ঞতার জীবন। চিন্তার দৃষ্টিকোণগুলোও অন্যরকম। সত্যি বলতে কী, ক্রমাগত কিছু কষ্টে ভুগতে ভুগতে আজ যখন টের পাচ্ছিলাম যে আমি ধ্বংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি, যুহরের পর প্রচন্ড অসহায়ত্বে আল্লাহর কাছে চাইলাম; বিকেলেই বন্ধুর ফোন পেলাম। সন্ধ্যার পর আজ যখন আলাপ করছিলাম তখন ভাবছিলাম, আল্লাহ নিশ্চয়ই ওকে আজ রাহমাত করেই পাঠিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। নইলে যেই বিষয়গুলোতে নিজেকে সান্তনা দিতে পারছিলাম না, তাতে ওর এতটা গভীর চিন্তাপ্রসূত মতামত কী করে এলো? আমার জন্য ঠিক এমনটাই যেন দরকার ছিলো!!
আমরা মানুষ আসলে এমন এক সৃষ্টি , যারা সহজেই বিস্মৃত হই। আমাদের তাই চারিদিক থেকে স্মরণিকা দরকার। সবচাইতে আপন আমাদের কুরআন, যা আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে অনন্তের সফলতার। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই আমাদের জীবন আল্লাহ যেমন করে চেয়েছেন অমন করেই সন্তুষ্ট থাকার জন্য, নিজের কাছে যা ভালো মনে হয় তা করা নয়। আল্লাহ যেমনটা করতে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করতে বলেছেন, সেটাই আমাদের জন্য সবচাইতে বেশি কল্যাণকর -- দুনিয়াতেও, আখিরাতেও। তাই নিজেকে এবং সর্বোপরি প্রিয়জনদের, বন্ধুদেরকে কুরআনমুখী করে দেয়াই আমাদের কাজ। নিঃসন্দেহে হিদায়াহ একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তিনি যাকে পথ দেখান, কেউ তাকে পথহারা করতে পারে না; তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারবে না। তাই নিজের এটুকুর জন্যও সবসময়েই দরকার কৃতজ্ঞ হওয়া, আরো বেশি বেশি পথের দিশা চাওয়া আর সবার জন্য দু'আ করা, হৃদয়ের গভীর থেকে আন্তরিক দু'আ, ভালোবাসায় অশ্রুসিক্ত...
১৮ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে