একটা কঠিন সময়ে এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছি আমরা। ইদানিং উপলব্ধি হয়, জাহিলিয়্যাতের সময়ের 'আবুল হাকাম' কেন ইসলামের যুগে 'আবু জাহল' হয়ে গিয়েছিলো। মূর্খতা আসলে ডিগ্রির মাঝে থাকে না বরং জ্ঞান যখন অন্তরকে আলোকিত করে না, চিন্তাকে উন্নত করে না, বস্তুজগত আর অন্তরজগতের মাঝে যোগ করতে পারে না তখনই তা মূর্খতা। এমন অজস্র উচ্চশিক্ষিত গন্ডমূর্খদের নিয়েই আমাদের সমাজ, আমাদের চারপাশ। নিঃসন্দেহে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে যত অস্থিরতা তা মানুষের দু'হাতের কামাই। ঘুরে-ফিরে তাই অন্তরে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ধারণ করা মানুষদেরকেই হতে হয় এই জমিনের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার কর্মী। তারাই ধৈর্যশীল, তারাই কল্যাণময়, তারাই সুন্দর।
যুগে যুগে ইসলামের স্কলাররা আমাদের জানিয়ে গেছেন, ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে কল্যাণকে ছড়িয়ে দেয়া এবং অন্যায়কে প্রতিরোধ করা। সবচাইতে আনন্দদায়ক একটা জিনিস শিখলাম ক'দিন আগে সেটা হলো -- কোন একটা বেশি খারাপ জিনিসকে কম খারাপ করে দিতে পারাও একটা 'ভালো' (মা'রুফ)। আমরা এবং আমাদের চারপাশের মানুষগুলো ডুব দিয়ে আছি পাপাচারে, ঘৃণায়, ক্রোধে, মূর্খতায়। দায়িত্ব আসলে আমাদের মুসলিমদের সবারই। সমাজের মূর্খদের আমরা ফেলে দিতে পারিনা কিছুতেই। তারা বুঝতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক, জাহেল অন্তরের বৈশিষ্টই অমন। তাই বুদ্ধি দিয়ে, নিজেদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ব্যক্তিজীবনে কিছু খারাপের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা হলেও আমাদেরকে করতে হবে। আমাদের হারানোর কিছুই নেই। আমাদের সবই প্রাপ্তি। আমাদের করা প্রতিটি কাজই বিজয়ীদের কাজ। তবে, যাকে/যাদেরকে দাওয়াত দিলে বেশি কাজে লাগবে, তাদের প্রতিই আমাদের দায়িত্ব বেশি। কিন্তু একটা জিনিসই বারবার উপলব্ধি করি, কোন অবসর নেই একজন মু'মিনের। সে হবে সমাজের জন্য কল্যাণ -- সত্যকে প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়কে সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
ক'দিন যাবত অনেকেই বলছিলেন -- এক বিশাল জনগোষ্ঠিতে মুসলিম নামধারী কাফির, মুরতাদ এবং মুনাফিকদের জালে আটকা পড়ে গেছি আমরা। এরকম কিছু ইঙ্গিত দিয়ে আজকে জুমু'আর নামাজে আমাদের খতীব সংশয় প্রকাশ করলেন যে হয়ত আমাদের গাফিলতিও এর পেছনে দায়ী। তাই তিনি মসজিদে প্রতি সপ্তাহে একদিন কুরআনের দারস এবং প্রতিদিন হাদিসের উপরে আলোচনার সময়সূচী জানালেন। কয়েকদিন আগে আমি নিজেও নিজ জীবনে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা, বিশেষ করে কুরআন নিয়ে গভীর পড়াশোনার নিয়াত করেছিলাম। আমাদের সবারই মনে হয় কুরআনকে আঁকড়ে ধরে জেগে ওঠা উচিত। এটুকু নিশ্চিত যে, আমরা অর্জনে এবং অবদানে কিছু করতে পারি বা না পারি, আল্লাহ তার কুরআন এবং তার দ্বীনকে জয়ী করবেনই। অন্তরতম আল্লাহর ডাকে যেদিন পৃথিবী ছেড়ে যাব আমরা, সেদিন শুধু আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টাগুলো, হৃদয়জুড়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসাটুকুই সম্বল হয়ে রবে। তাইতো, প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সেই দু'আ নিয়মিত করতে চাই,
"ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিক"
(হে হৃদয়সমূহকে ঘুরিয়ে দেয়ার অধিকারি! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ)।
[০১ মার্চ, ২০১৩]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে