৫ মার্চ, ২০১৩

কিছু শান্তি পাঠিয়ো মোরে অশ্রুস্মরণে

চোখের সামনে অগুনতি লাশের ছবি, গুলিতে ক্ষতবিক্ষত অথবা ধারালো অস্ত্রের কোপ। একই রক্তমাংসের গড়া মানুষ সবাই, তবু লাশ আর রক্তগুলো দেখেও মানুষের অনুভূতি বিকিয়ে যায় চিন্তার দাসত্বের কাছে, দলভক্তির কাছে, বিবেক পরাজিত হয় শয়তানের দাসত্বের কাছে। নিঃসঙ্কোচে হত্যার-ধ্বংসের সপক্ষে ব্যাখ্যা হাজির করতে থাকে পশুর দল। বিশাল ধ্বংসস্তূপ, আগুণ, তিলে তিলে জমানো সম্পদের ধ্বংসলীলা দেখেও স্তম্ভিত হই, নির্বাক হয়ে যাই। কি চাই আমরা? কেন করি কাজগুলো? সত্যিই কি জানে তারা?


নতুন করে ভাবতে থাকি, এই লোকালয়ে, এই চারপাশের বক্ষপিঞ্জরে লুকানো পাশবিক আত্মার মানুষদের নিয়েই আমার বসবাস -- কোথায় নিজের পথ খুঁজবো, কী করে বোঝাবো তাদের? কীভাবে জানাবো সেই স্মরণিকা যেখানে ভিন্নমাত্রায় জেনেছি মৃত্যু এক কঠিন বিপদ, অথচ পরম বাস্তব। একটা পর্দার ওপারেই সব রহস্যের সমাপ্তি, আমাদের চিন্তাভাবনা আর কর্মের সমাপ্তি, এরপর শুধুই ফলাফলের মুখোমুখি হওয়া। মৃত্যু, কেবল একটা মূহুর্তের ব্যাপার, যেকোন সময়, যেকোনখানে। অস্থির হয়ে যাওয়া মনকে শীতল করতে প্রেমময় আল্লাহর পাঠানো গ্রন্থখানি মেলে ধরি, কিছু কথা ভেসে যায় মনে --

♥ “যারা দোযখে যাবে এবং যারা জান্নাতে যাবে তারা পরস্পর সমান হতে পারেনা। যারা জান্নাতে যাবে তারাই সফলকাম।” [আল হাশরঃ ২০]
♥ “কাজেই ছেড়ে দাও, হে নবী! এ কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও।” [আত তারিক : ১৭]
♥ “আসলে তোমার রবের পাকড়াও বড় শক্ত। ” [আল বুরুজ: ১২]
♥ ” নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব।” [আল গাশিয়াহ ২৫-২৬]
♥ “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।” [আল আ'লা ১৪-১৫]

নামাজের কথা মনে আসতেই আবার আজ খুঁজে পড়ছিলাম রুকু-সিজদাহ-শেষ বৈঠকে পড়া দু'আসমূহের অর্থ। আত্তাহিয়্যাতু নিয়ে পড়ার সময় পেলাম, 'আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সলিহীন' এর মাহাত্ম্য। সৎকর্মশীলদের দলে যেতে পারলে এই নিরন্তর দু'আর দলে পড়ে যাওয়া যাবে। যেই দু'আ প্রতিটি মুসলিম প্রতিটি ওয়াক্ত নামাজে পাঠিয়ে দিতে থাকেন।

কিছুদিন ধরে ক'জন মানুষকে বলতে শুনেছিলাম কে মারা গেলে কে কে মনে রাখবে টাইপের হিসাব। আত্যাহিয়্যাতু নিয়ে পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল, পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া মানুষের মনে রাখারাখি, সম্মান নিয়ে হম্বিতম্বির কিছুই কাজে লাগে না, শুধু কাজে আসবে কৃত সৎকর্ম। তাই, জগতের যেখানে আমরা যেভাবেই থাকি, অন্তরের পুরোভাগে যেন কেবল আল্লাহই থাকেন, যেন কেবল আল্লাহর জন্যই হয় আমাদের মুখের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ, হাতে লেখা প্রতিটি অক্ষর, জীবনের প্রতিটি কাজ। সৎকাজের নির্দেশ, অসৎকাজের নিষেধ, আল্লাহর জন্যই হবে ভালোবাসা, আল্লাহর জন্যই হবে দৃপ্ত প্রতিবাদ। কোন মানুষ কাজের আসবে না আমাদের, কেউ না। যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ ধরে চলে তার সুন্নাহ দিয়ে জীবনটাকে গড়ি, তবেই তিনি কঠিন সময়ে পান করাবেন কাউসারের শীতল, শুভ্র, চিরতৃষ্ণানিবারণকারী পানি আর করবেন শাফা'আত।

সিজদা আল্লাহর সবচাইতে নৈকট্যময় সময়, সেই সময় হোক আমাদের শ্রেষ্ঠ সময়, মনোযোগের, আত্মার সুস্থতা আনয়নের সিজদা, ঈমান যেন বেড়ে যেতে থাকে। দু'আ একটি ইবাদাত যার পুরোটাই কল্যাণময়, ফলময়। সারাদিনই যেন দু'আ করতে থাকি আমরা। আমাদের দু'আতে থাকুক উম্মাহর প্রতিটি মুসলিম। একদিন আমরা ইতিহাস হয়ে গেলেও যেন অন্যদের সালাতের দু'আতে জায়গা পাই, আল্লাহ আমাদেরকে সেই সৎকর্মশীলদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবার জন্য কবুল করে নিন।

০৪ মার্চ, ২০১৩

1 টি মন্তব্য:

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে