২৩ ফেব, ২০১৪

বুক যখন খা খা করে তখন কী করবো?

​দিনের মাঝে বড় ক্লান্ত লাগে অনেক সময়... হৃদয়টাতে কেমন শূণ্যতা অনুভব হয়। অনেকগুলো বছর ধরে এই খা-খা অনুভূতিকে কেমন করে দূর করা যায় ভেবেছি। একসময় ভাবতাম হয়ত আমার সফল হতে হবে। অনেক সফলতা পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ, সেই অনুভূতিরা পিছু ছাড়েনি। এরপর ভেবেছিলাম হয়ত সঙ্গী পেলে বর্তে যাবো। অনেক ভালো মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, কিন্তু মানুষ পাশে থাকতে পারে, তার পাশে চলতে পারে, কিন্তু হৃদয় আর অনুভূতি আমাদের নিজেরই, সেখানে কেউ ভাগ বসাতে পারে না। অনেকে সুন্দর কথা বলতে পারবে, উত্তম উপদেশ আর আশার বাণী দিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে পারবে -- কিন্তু হৃদয়ের শূণ্যতাকে পূর্ণ করার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই...

উস্তায নুমান আলী খানের আলাপ শুনতে গিয়ে এই বিষয়টার স্বরূপকে উপলব্ধি করেছিলাম প্রথম কয়েক বছর আগে, এরপর উস্তায খুররম মুরাদের (রাহিমাহুল্লাহ) 'ইন দা আর্লি আওয়ার্স' পড়তে গিয়ে কিছু বিষয় শিখলাম। ইমাম গাজ্জালির 'বিদায়াতুল হিদায়াহ' বইটার উপরে একটা আলোচনা শুনতে গিয়েও শিখেছিলাম এই বিষয়ে বেশ কিছু জিনিস। একটা চিন্তা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলো-- শরীর আমাদের দুনিয়ার মাটির তৈরি, এর খায়েশ মেটাতে তাই দুনিয়ার সম্পদ, খাদ্য, মানুষ লাগে। কিন্তু আমাদের রূহ তো এই পৃথিবীর না, আল্লাহর সৃষ্টি এই রূহকে তাই অযত্নে ফেলে রাখা হয় যখন আমরা তার যত্ন নিই না। আল্লাহর স্মরণেই তার যত্ন হয়, তখন দেহ আর রূহের মিলিত এই যাত্রা পৃথিবীতে প্রাণে শান্তি যোগায়। আল্লাহর স্মরণেই এই হৃদয় শান্তি পায়, তার কাছে কান্নাকাটির মাঝে হৃদয় আশ্বস্ত হয়, অভিভাবক পায় বলে স্থিরতা লাভ করে।

আত্মার উন্নয়ন তাই এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সবার প্রথমে দরকার জীবনটার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা। জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, আল্লাহর জন্যই আমাদের এই জীবন। সেই বিষয়টা যেই অবস্থাতেই আছি, সেই অবস্থাতেই নিজেকে বুঝানো। অর্থাৎ, জীবনটাকে অর্থবহ আর শান্তিপূর্ণ করতে হলে আল্লাহর পথে গিয়ে যেতে হবে, সেই জন্য আজই দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। হৃদয়ের যত্ন নিতে হবে, এই যত্ন তার বেড়ে ওঠা ও পরিপুষ্টির জন্য দরকার। আমাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করার মাঝে রয়েছে সফলতা। যিনি হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করতে পারেন, তিনি তো সত্যিকার সফল। আমাদের লক্ষ্য তো জান্নাত লাভ করা, আর তা অর্জন করা সম্ভব আল্লাহ সন্তুষ্টির মাধ্যমে। জান্নাত লাভ কোনভাবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি পেলেই জান্নাত অর্জন সম্ভব। তাই, যেভাবেই হোক, জীবনের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্যই হতে হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। এতেই সফলতা, এতেই শান্তি, এতেই পরিতৃপ্তি...

জান্নাতের কথা ভেবে মনকে স্থির করতে হবে, কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায় তা ভাবতে হবে। অতীতের নখরের আঁচড়ে ফালাফালা হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। অতীত এইসব চিন্তায় অকারণ বিঘ্ন ঘটায়, অতীতের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে, অনুশোচনা করে জান্নাত অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে পারে। এই লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়তার অভাবে আমরা পা ফসকে যাই অনেক সময়। মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে হবে, "যদি আজই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাই, তবে কী নিয়ে যাচ্ছি?" --এমন ভাবনা মাথায় থাকতে হবে। আল্লাহর স্মরণেই বান্দার মন শান্তি পায়। আল্লাহ আমাদের শান্তি দান করুন।

* * * *
নির্ঘন্ট:
# সুবহে সাদিক - খুররম মুরাদ। প্রকাশক: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক থটস