৩০ জানু, ২০১১

আমার দুঃখিনী মায়ের প্রতি

মা, আজ তোমার কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইছি মা। সত্যি বলছি মা, খোদার কসম, আমার চোখে অশ্রু বয়ে চলেছে অবিরাম। মা জানো, আমি এই দুঃখবোধকে কীভাবে চাপাবো জানি না, তাই তোমাকে লিখতে বসেছি মা। জানি তুমি পাবেনা, জানি নপুংসকের দল তার আগেই এটা কেড়ে নেবে। তবু তোমায় না লিখলে আমার অপরাধবোধগুলো যে আমাকে কুরে কুরে খাবে গো মা!


মা, সে-ই কবে তুমি আমাদের মা হয়েছিলে বলতে পারো? আজ অনেক বছর হলো, তাইনা? তোমার সন্তানেরা এলো তোমার কোল জুড়ে। কত স্বপ্নই না ছিলো তাদের নিয়ে তোমার। তুমি স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলে একদল সুন্দর প্রজন্মের। তারা আকাশে বাতাসে আনন্দের হর্ষধ্বনি করবে... তারা তোমার মুখে হাসি ফোটাবে। সেই স্বপ্ন তো তোমার অমূলক ছিলো না গো মা। তুমি তো কম কষ্টে মা হওনি। তুমি দেখেছিলে, তোমার জন্য কতগুলো প্রাণ তাদের বুকের তাজা খুন ঝরিয়েছিলো। তুমি জানতে একদিন তুমি মুক্তি পাবে। সেদিন তোমার সন্তানেরা তোমার মুখ উজ্জ্বল করবে। এই আশা করাটা তোমার অধিকার ছিলো-- তুমি তো আর কম কষ্ট সহ্য করনি!

মা গো, তুমি চল্লিশটা বছর ধরে দেখছো মা-- কী অবর্ণনীয় নোংরা হয়েছে তোমার সন্তানেরা। মা গো, আজ তোমারই বাড়ির সীমানায় কতগুলো অসচ্চরিত্র, লাজহীন মেয়েদের উলঙ্গ নৃত্য দেখতে খরচ করছে তোমারই সন্তানেরা। এক ভাই যখন একবেলা খেতে পায় না, তখন হাজার হাজার টাকা খরচ করে আরেকজন প্রমোদানন্দ করে মা, তার অনেক খায়েশ! মা, এসব তো তোমারই দোষ। তুমি ভেবেছিলে তোমার এক সন্তান অপরজনকে না দিয়ে খাবে না। তুমি ভেবেছিলে তারা একে অপরের সাথে মন খুলে আলাপ করবে, অপরের ভুল দেখলে প্রতিবাদ করে তাকে শুধরে দেবে। তারা ভালোবাসার এক পরিবার রচনা করবে! কোথায় গো মা? এতগুলো বছর পর তোমার সন্তানেরা অনেক দল হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা শক্তিশালী, তারা আজ অপর সবাইকে ছুরি চাকু দিয়ে হত্যা করতে চায়। কেউ চায় তার অর্থ দিয়ে সবকিছু কিনে অন্যদের ভিটেছাড়া করতে। মা গো, তুমি এই-ই চেয়েছিলে?

পড়শিদের সুন্দরী মেয়েগুলো যখন স্বল্পবসনে ঘুরে বেড়ায়, আমার বেশিরভাগ ভাইগুলো তাদের গিলে গিলে খায়। ওই বাড়ির লম্পট ছেলেটা দেখতে সুন্দর হলেও আমার বোনেরা ওর ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়ায়, জানো মা? ওরা জানে আমাদের এই দুর্বলতা, আর তাই সুযোগ পেলেই মেয়েগুলো আর ছেলেগুলো আমাদের আঙ্গিনায় আসে, ঢলাঢলি করে, তারপর অনেক টাকা নিয়ে চলে যায়। আমি জানি মা, এসব কথা জেনে তুমি কখনই সহ্য করতে পারবে না, কিন্তু মা এই সত্য তো একদিন না একদিন তুমি জানবেই। একদিন হয়ত ওদের বাড়ির মেয়েগুলো, ওদের বাসার সুন্দর গাছ আর জলাশয়ের লোভে তোমাকেই বেচে দিতে পারে ওরা! -- এই আশংকা আমায় স্বস্তি দেয় না গো মা।

আমরা তোমাকে মা মা করে চিৎকার করেছি, তোমার মাটিকে সোনা সোনা বলে দাবী করেছি। আবার তোমাকেই বেচে দিতে যাছি পড়শিদের কাছে। মা, এই অসহায় সন্তানকে ক্ষমা করো। মা, এই দুর্বল সন্তানটা তোমাকে অনেক ভালোবাসতো মা। মা, আমার চোখের ঝরঝর ঝরে যাওয়া অশ্রুগুলো কেবলি তোমাকে ভালোবেসে-- বিশ্বাস করো। তোমাকে ওরা কীভাবে কলংকিত করতে পারে ভেবে আমি শিউরে উঠছি ক্রমাগত। মা গো, আমার ভাইগুলোকে অনেক বুঝাতে চাইছি, চেয়েছি। কিন্তু ওরা একদম মজে গেছে মা। শরাব, অর্থ, নারীর লোভে ওরা ভুলেই গেছে এই সম্পত্তি, এই বাড়িঘরের দেখাশোনার দ্বায়িত্বটা তুমি কতটা আদর করে দিয়েছিলে আমাদের।


ওরা আজ তোমার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা করে। মা, বড় বোন মাঝে মাঝেই পড়শির বাড়ি বেড়াতে যায়। ফিরে এসে আমাদের নতুন নতুন আদেশ করে। জানো, সবগুলো কাজই কেমন যেন অদ্ভূত, তবু পালন করি। তুমি তো শিখিয়েছিলে বড়দের নির্দেশ পালন করতে! আমি তো তোমার কথাগুলো শুনি, ওরা কেন তবে এমন? ওরা কেন তোমার প্রতি সমস্ত প্রতিজ্ঞাই ভুলে গেলো?


আমি জানিনা আমার কী হবে। আমি জানিনা তোমার কী হবে মা। আমাকে ক্ষমা করিও। আমাকে ক্ষমা করিয়ো। আমি জানি তুমি আমার দুখিনি মা। তোমাকে কিছু দিতে পারলাম না মা। আমি ভীষণ লজ্জিত, মাগো! আমায় ক্ষমা করো।
---------
 ২৬ ডিসেম্বর ২০১০, দুপুর ০৩:৩০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে