৪ অক্টো, ২০১৩

জীবনের চক্রগুলো থেকে মুক্তি মিলে কেমন করে?

​মনে পড়ে সেই সময়গুলোর কথা, প্রথম চাকুরিতে ঢুকেছি। অসহায় অনভিজ্ঞ যুবকের কাঁধে অনেক দায়িত্ব। অল্প ক'টা টাকা বেতন পাই, কিছুই হয় না সে টাকায়। বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে যাতায়াত করি, সকালে বেরিয়ে বাড়ি ফিরি রাতে এশার পরে। চাকুরি জীবনে এসে সপ্তাহের ৬ টি দিনই এই অদ্ভুত চক্রে বাঁধা পড়ে বারবারই মনে হত -- এই জীবন চাইনা, এই জীবনের অর্থ নেই কোন। ফেলে আসা ১৬ বছরের পড়াশোনা যথেষ্টই ঠিকমতন করে এলাম, এরপরেও এই অর্থহীন চক্রে ঘোরার নাম কি জীবন হতে পারে? টাকা টাকা টাকা, ভোগ... অন্যদের বানানো সিস্টেমে আমি একটা কাঁচামালমাত্র। ওরা যেভাবে সব তৈরি করেছে, এভাবেই জীবনকে চালিয়ে দিলে কী অর্থ এই প্রাণের? প্রশ্নগুলো ভেতরে গুমরে মরলেও বলার মতন কেউ ছিলো না। তখনকার ভাবনাগুলোকে এমন গুছিয়ে ছিলো না সেটাও নিশ্চিত।

আপু জানালেন, ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটির কথা, ফ্রি তে পড়াশোনা করা যায়। আনন্দিত হলাম, ইংরেজিতে পড়াশোনা-লেকচার এসব শুনে ভাবলাম পারব কিনা... ইসলামকে তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে নিতে চেয়ে  ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটিতে রেজিস্ট্রেশন করলাম। প্রথম কয়েকটা মডিউলের pdf পুরোটা প্রিন্ট করে ব্যাগে ভরে সাথে নিয়ে ঘুরতাম। প্রিন্টেট কপি নিজ হাতে বাঁধাই করে পরম ভালবাসা আর যত্নে পড়াশোনা শুরু করলাম। চেনাজানা সবাই GRE, GMAT, IELTS-এর জন্য পড়ে, আমি পড়ি IOU-কোর্স ম্যাটেরিয়াল। আমার অডিও কালেকশন বড় হলো, ডক্টর বিলাল ফিলিপসের 'ফাউন্ডেশন অফ ইসলামিক স্টাডিজ' কোর্সের অডিওগুলো জায়গা করে নিলো ফোনের মেমরিতে। সেই সময় ঘন্টাখানেকের উপরে বাসে ঝুলতাম, নড়াচড়ার সুযোগ থাকত না। ডক্টর বিলালের সেই কোর্সের দরাজ গলায় বক্তব্য দেয়া অডিও ক্লিপগুলো শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে যাওয়ার দশা। অদ্ভুত কথা হলো, তখন কোনদিন ভাবিনি জীবনে এমন পরিবর্তন আসবে। আমার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে আল্লাহর রাহমাত...

কেমন অসহায় লাগত সেই দিনগুলোতে তা আজ স্মরণ হলো। একের পর এক জীবনে কত পরিবর্তন এসেছে, কত সুযোগ আল্লাহ করে দিয়েছেন আমার জীবনে, সে ভেবে চোখ হঠাৎ ঝাপসা হয়ে আসছে লিখতে লিখতে। প্রশান্ত হৃদয় কেমন হয় সেটা ভুলে যেতে বসেছিলাম একসময়। বন্ধুদের আড্ডাগুলো থেকে নিঃশব্দে সরে এসে একা হয়ে গিয়েছিলাম যখন, ভাবিনি কোনদিন এমন মানুষদের সান্নিধ্য পাবো যারা আল্লাহর দ্বীন নিয়ে ভাবেন, কাজ করেন, স্বপ্নে ও ভালোবাসায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার পথ ধরে চলা অসামান্য ঈমানের মানুষদের হেঁটে যাওয়া পথে এগিয়ে যান। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কেমন হতে পারে, তা ক'জন ভাইয়ের কয়েক মিনিটের সান্নিধ্য হলেও তা থেকে উপলব্ধি করেছি।

পৃথিবীতে যারা মসজিদভিত্তিক ভ্রাতৃত্বের স্বাদ পায়নি, সলাত শেষে বের হয়ে ভাইয়ের বুকে বুক জড়িয়ে ধরার ভালোবাসার অনুভূতি পায়নি, তারা জানলে এমন সুযোগ কখনো হারাত না। এমন ভাইদের সাথে সাক্ষাত পেয়েছি যারা কুরআনের আয়াতের পড়তে থাকেন জীবনের ঘটনাগুলোর আলাপে, যারা সত্যিকার অর্থেই অন্যপথে চলা ভাইদের কথা ভেবে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন, উপকারের উপায় নিয়ে ভাবেন। এই 'কল্যাণ কামনা' কোন স্টেজে মাইক্রোফন হাতের বাক্য না, এই অনুভূতিগুলো আল্লাহকে ভালোবাসা থেকে উৎসারিত। হয়ত ভাষার প্রকাশে শুনতে অন্যরকম লাগছে, কিন্তু সত্যিই এই সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন অনেক মানুষ আছেন, সুবহানাল্লাহ!!

নিজের সাদামাটা অনাড়ম্বর ঘটনাগুলোকে এভাবে বললাম তার কারণ হলো, আমাদের হাজার মাইলের যাত্রা আসলে প্রথম পদক্ষেপটা থেকেই শুরু হয়। আমরা কিছুর শেষ জানিনা, কী হবে তাও জানিনা। আমরা জানি, আন্তরিকতার সাথে, আল্লাহর জন্য যে পথে আমরা আগাবো, উন্মুক্ত হৃদয়কে আল্লাহ পথ দেখিয়ে দিবেন। ঘর থেকে বেরিয়ে শিখতে যাওয়াটাই কঠিন। কিন্তু নিয়াত নিয়ে শুরু করে দিলেই কাজটি হয়ে গেলো। প্রতিদিন অন্তত ১৭ বার আন্তরিকভাবে চোখের পানি ঝরিয়ে পড়ছি আমরা সলাতে, 'ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম', আল্লাহ আমাদের সরল সঠিক পথ দেখাবেন ইনশা আল্লাহ। আমার মতন পাপে ভরা, ভুলে ভরা এক নগন্য বান্দাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন, সে তো তার ভালোবাসারই প্রতিফলন। আমাদের আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন ভালোবাসেন। আমরা যদি এক পা এগিয়ে যাই, আল্লাহ আমাদের দিকে দু'পা এগিয়ে আসবেন অবশ্যই, ইনশা আল্লাহ ... আমরা আগাচ্ছি তো আমাদের রবের দিকে, তাকে ভালোবেসে, তাকে ভয় পেয়ে, জীবনে কেবল তাঁর জন্যই বাঁচতে চেয়ে?


# ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করুন বিনামূল্যে : http://idream4life.blogspot.com/2012/06/blog-post_05.html