৪ অক্টো, ২০১৩

স্বপ্নগুলো বড় বলে কি মুছে ফেলতে হবে?

মানুষের সাথে মিশে নতুন করে উপলব্ধি করছি, সবার জীবনে স্বপ্ন থাকে। মুখে উচ্চারণ করি বা না করি, স্বীকার করি বা না করি, সবাই কিছু স্বপ্ন বুকে ধারণ করে রাখে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় থেকে অনেক বড় কিছু করার ইচ্ছা থাকে অনেকের হৃদয়ের মাঝে। যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তারা আল্লাহ যেমনটি ভালোবাসেন তেমন করেই জীবনকে রাঙ্গাতে চান। মানুষ হিসেবে হয়ত সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়, হয়ত স্বপ্নগুলো বড়, সামর্থ্য কম -- তবু হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা স্বপ্নগুলো কেন মুছে ফেলতে হবে? যদি তা আল্লাহর অপছন্দনীয় কিছু না হয়, তাহলে তাকে মুছে ফেলার কিছু নেই। হৃদয়কে তিক্ত করারও কিছু নেই। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতাই কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে। কেবলমাত্র তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়, তার নির্দেশেই প্রতিটি ঘটনা ঘটে।


পৃথিবীর কোন মানুষের সাধ্য নেই আমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করা যদি আল্লাহ না চান। আমাদের সকল চাওয়া কেবলমাত্র আল্লাহর কাছেই। আল্লাহর ভান্ডার অবারিত, যা থেকে তিনি যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা বেহিসাব দান করেন। যদি আমাদের যোগ্যতা হয় তার কাছে চেয়ে নেয়ার, তবে তিনি অকল্পনীয় উপায়ে বান্দাকে দান করবেন। স্বপ্নগুলো বড়, অধরা থাকার মতন বলেই কেন ফেলে দিবে মানুষ? আমি তো কতগুলো অসাধারণ মানুষের সুন্দর কিছু স্বপ্ন নিয়ে শুনেছি, যা কেবলই কল্যাণময়। *বাস্তবতার ধাক্কা* খেয়ে কেন তারা সেগুলো ভুলে যেতে চান? তা তো উচিত নয়। যারা কেবলই আল্লাহর উপরে ভরসা করেন, তারা জানেন, চাওয়া এবং পাওয়া এর সবটুকুই আল্লাহর সাথে। যদি কিছু অপ্রাপ্তি থাকে, তাও আল্লাহ চেয়েছেন বলেই। আমরা তো বলি যে আমার সলাত, আমার সহ্য করা কষ্ট, আমার জীবন ও মৃত্যু কেবলই আল্লাহর জন্য। আর আমরা তো জানি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ভরসা করে আল্লাহ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট।

পৃথিবীর যেসব স্কেল দেখে আমরা সফলতা/ব্যর্থতা হিসেব করি, তা নয় বরং আল্লাহর কাছে আমাদের জীবনের সফলতা আর ব্যর্থতার হিসেব তো অন্য পাল্লায় মাপা হয়। আল্লাহর কাছে চাইতে থাকা প্রতিটি দু'আ আমাদের জন্য কেবলই কল্যাণকর। যিনি আল্লাহর উপরে ভরসা করেন, তিনি তো কাজ করতে গিয়ে অসফল হলে হতাশ হয়ে যান না। তিনি জানেন, সফলতার মালিক কেবলই আল্লাহ। আর তিনি চেয়েছেন বলেই তো এই অবস্থা। স্বপ্ন মুছে ফেলার কিছু নেই বরং অধরা অনেকগুলো স্বপ্নকে বুকে ধরেও একদম সন্তুষ্টচিত্তে, প্রশান্ত হৃদয়ে এগিয়ে চলতে হয়। এ কাজটা পারেন তারাই -- যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাকেই সকল ক্ষমতার অধিকারী বলে মানেন, আল্লাহর জন্য যাদের জীবন এবং মৃত্যু। আল্লাহ আমাদেরকে এমন সুন্দর হৃদয়কে ও ঈমানকে ধারণ করার তাওফিক দান করুন যা তিনি ভালোবাসেন, আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ।

 ..........................

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“তোমাদের কারো দু’আ কবুল করা হয় যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে। সে বলতে থাকেঃ আমি আমার রবের কাছে দু’আ করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার দু’আ কবুল করেননি” [বুখারী, মুসলিম] 

# রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৯৯

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে, মুসলিমের এক বর্ণনাতে বলা হয়েছেঃ বান্দার দু’আ বরাবর কবুল করা হয় যতক্ষণ না সে গুনাহ করার বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদ করার দু’আ না করে এবং যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহ রাসূল! তাড়াহুড়া কি? তিনি বলেনঃ দু’আকারী বলতে থাকে, আমি অনেক দু’আ করেছি, (আমি বারবার দু’আ করছি) কিন্তু আমার দু’আ কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয়ে আফসোস করে এবং দু’আ করা ত্যাগ করে।