৭ আগ, ২০১৩

ঈদের ছুটি আর চিরদিনের ছুটি

ইফতার শেষে মাগরিবের সলাতে সালাম ফিরাতেই ইমাম সাহেব মাইক্রোফোনে বললেন যেন সুন্নাহ সলাতের পরে কেউ নফলের নিয়াত না করে, জানাযা হবে। জানাজা ছিলো বয়ষ্ক পুরুষের। শেষ তাকবীরের আগে 'আল্লাহুম্মাগফিরলি লিহায়্যিনা... ' পড়তে শুরু করে তার অর্থটা খেয়াল হলো শব্দগুলো ধরে ধরে। কয়েক জুমু'আ আগে খতীব সাহেব এটার ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিছু আলোচনাও করেছিলেন -- অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। জানাজার পরে আজকে মনে হলো একদিন আমার ঘরে আমার সবকিছু পড়ে থাকবে, খাতায় লেখা অর্ধেক পৃষ্ঠা, সবসময় চার্জের প্রয়োজন থাকা মোবাইল ফোনটা, অফিসের ব্যাগটা বিছানার একপাশে এলোমেলো পড়ে থাকবে। আমি থাকবো হয়ত ওই কফিনের ভেতরে, হয়ত তখন চাইতে থাকবো -- শির্ক না করা নিয়মিত নামাজ আদায় করা অনেকজন ভাই আমার জানাজাহ তে শরীক হবেন, আমার জন্য তারা দু'আ করবেন যেন অনন্তকালের জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাই। অথচ কেউ শুনবে না, জানবে না আমি কেমন আছি। এই একাকীত্বের যাত্রাই তো সত্যিকারের একাকীত্ব...


আব্বা ই'তিকাফে আছেন মসজিদে। তার সাথে সাক্ষাত করে বাটি-পানির ব্যাগহাতে যখন বের হলাম মসজিদ থেকে, দেখলাম বাইরে একটা বিশাল সাইজের পিক-আপ ভ্যানে লাশটি তোলা হয়েছে। জনা বিশেক মানুষও তাতে চড়েছে। মরে যাওয়া মানুষটাকে এক মূহুর্তও আর রাখা যায় না, রাতেই তাকে সরিয়ে ফেলা হবে জনলোকালয় থেকে। এই সদাপ্রাণস্পন্দনের আমি, আমরা মরে গেলেও এমনই হবে। লাশের গাড়ি যখন শব্দ করে আমাকে পেরিয়ে গেলো খেয়াল হলো সলাতের আগে আমার পাশ দিয়ে যাওয়া রিকশায় চড়ে যে মহিলা যাচ্ছিলেন তার হাতভরা ঈদের নতুন পোশাকের ব্যাগ।

বেঁচে থেকে সুস্থ-সচ্ছল মানুষের ঈদ আর মরে যাওয়া মানুষটির ঈদের এই ব্যবধানে কেমন আরেকটু মিইয়ে গেলাম। আমার হৃদস্পন্দন একটু অনিয়মিত হলো যেন, চাপা দীর্ঘশ্বাসও হলো কী?... প্রায় প্রতিদিন এমন অজস্র অনুভূতিকে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকা হয় আমার... বেঁচে থাকার অনুভূতিগুলো আল্লাহ যেমনটা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো চান, তেমনই দান করুন, আখিরাতে যেন তার দয়া আর মুক্তি পাই। সেদিন ইনশা আল্লাহ সব কষ্ট ভুলে যাবো আমরা, ভুলে যাবো সব যন্ত্রণাগুলো...

তিলোত্তমা নগরী
০৭ আগস্ট, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে