৬ জানু, ২০১৩

আলাপন : মৃত্যু ভুল ও সংশোধন

{ ১ }

এই পৃথিবী চিরস্থায়ী জায়গা নয়, বরং উল্টোটা। অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর বার্তা নিয়েই আমাদের এই জগতে পদার্পণ। আমরা অনেক সুন্দর বাড়ি বানিয়ে তাতে চিরকাল থাকতে পারব না, আমরা অনেক সুন্দর বাগানবাড়িতে দামী ফুল লাগিয়ে তাতেও অনেক অনেক বছর থাকতে পারব না। আমাদের সন্তান-সন্ততি প্রিয়জনদের বুকে জড়িয়ে ভালোবাসার উত্তাপ অনুভব করতে পারব না চিরকাল। এখানে সবই খুব অল্প সময়ের জন্য। এটাই বাস্তব।

যেদিন আমরা পরিষ্কারভাবে আমাদের তুচ্ছ জীবনের মৃত্যুর কথা সত্যিকারভাবে ভাবতে পারব -- সেদিনই হয়ত আমাদের আচরণ কিছুতেই আর মোহগ্রস্তদের মতন হবেনা। আমি জানি, আমি সত্যিকার মৃত্যুকে, কবরের ঘুটঘুটে অন্ধকারের কথা ভাবতে পারিনি আগে -- যখন জানতাম না সেখানে কতটা কঠিনভাবে থাকতে হবে। বাসা থেকে বের হবার সময় মাঝে মাঝে যখন মনে হয় -- কোনদিন হয়ত এভাবেই আর ফেরা হবেনা, বুক মোচড় দিয়ে ওঠে। যতটা না পেছনে রেখে যাওয়া প্রিয় জিনিসের কারণে, তার চাইতে আতঙ্ক আমার কী জমাতে পেরেছি তার জন্য।


আমরা শত সহস্র পাপাচারের মাঝে হয়ত কিছু ভালোকাজ করার চেষ্টা করেছি। তাতেও লোকপ্রদর্শনের ইচ্ছা ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে কিনা তা-ও নিশ্চিত হতে পারিনা। দু'একটা মানুষের উপকার করেই আত্মতুষ্টিতে ভুগিনি, সেটাও বলতে পারব না। জেনে বুঝে অজস্র পাপ করেছি, যা অনেক বড় নাফরমানী। সব কিছুর পরে আসলে কী থাকে তা জানিনা। তখনই বুঝি, নিঃসন্দেহে আমাদের রবের দয়া ছাড়া মুক্তি অসম্ভব। এটাও জানি, নিরাশ হবার সুযোগ নেই। আশাবাদীও কি হবার সুযোগ আছে আমাদের? আমি জানি আমার সৃষ্টিকর্তার সমস্ত ক্ষমতা, তবু আমার বুকের ভিতরে সেই চিন্তা স্পর্শ করেনা। এই বুক পাথর হয়ে জমে গেছে, তাকে যেন নরমও করা যায়না। অথচ চোখের অশ্রু, কুরআনের তিলাওয়াত এই পাথরসম অন্তরকে নরম করার কথা...

প্রিয়জনেরা যখন দূর থেকে দূরে চলে যায় তখন এই চিন্তাগুলো আরো গাঢ় হয়। একদিন এই চোখগুলো অন্য কিছুকে দেখবে। এই দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে অন্য অনেক কিছু... যারা আজ দূরে, যারা ফেলে গেলেন আমাদেরকে, হয়ত তাদের সাথে দেখা হবে কখনো। জানিনা আমি। আমি শুধু জানি, আমি খুবই দুর্বল সৃষ্টি। কেবল আমার আল্লাহ আমাকে যতখানি ক্ষমতা দিয়েছেন ততটুকুই আমার দৌড়। আজ যারা আমার ও আমাদের উপরে যুলুম করছে, তারা অবশ্যই একদিন লাঞ্ছিত হবে, ইনশা আল্লাহ। সেদিন হয়ত দুনিয়াবী এই কষ্টগুলোই আমাদের মুক্তির কারণ হবে -- অনন্তকালের জান্নাতের সুসংবাদের। কে জানে সেই কথা! আল্লাহর কাছে দু'আ করা এবং সাধ্যানুযায়ী কাজ করা ছাড়া আমাদের কীইবা আছে দুর্বল করে সৃজিত মানবজাতির অংশ হয়ে?


{ ২ }


ভুল তো করবই। ভুল করব, ভুলে যাব -- এটাই মানব স্বভাব। কিন্তু ভুল থেকে যদি শিক্ষা নিতে পারি, তখনই সেটা কল্যাণকর। এতে আল্লাহর সাথে দুরত্ব কমে আসে আমাদের। আমাদের সবারই অতীত আছে একটা, তিক্ত অতীত। অনেকেরই জীবনের একটা ভুলের কারণে কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা থেকে পাওয়া শিক্ষা অন্তরকে ঘুরিয়ে দেয় আল্লাহর পথে। জীবনের একটা সময় গিয়ে তাদের সেই তিক্ত ঘটনাটাকেই ভালো লাগতে থাকে -- কেননা সেই সময়ের বদৌলতে আমাদের জীবন বদলে গেছে, পাওয়া গেছে পথের সন্ধান, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে আরো আপন করে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। 

জীবনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোর মাঝেও আমাদের কল্যাণ লুকিয়ে থাকতে পারে, থাকতে পারে পাপ মাফ হবার জন্য কিছু কষ্ট, থাকতে পারে ঈমানকে মজবুত করার জন্য উপকরণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত দু'আ শুনেন। তিনি আমাদের সমস্ত ডাকে সাড়া দিবেন। তবে তিনি বিনিময় দিবেন তার ইচ্ছেমতন সময়, তার পছন্দের উপায়ে -- আমাদের পছন্দে নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী এবং তিনি আমাদের উত্তম অভিভাবক।

♥" এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।" -- [সূরা আল বাকারাহ : ১৫৫]
♥ “সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” -- [সূরা বাকারা ১৫২]
♥ "তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।….. ” -- [সূরা গাফির ৬০]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে