আলাপের বিষয় যেমনই হোক ভাষা সুন্দর হতে হবে? কেমন করে?
কিছুদিন
আগে আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞানে আলোকিত একজন মানুষের আলোচনা শোনার সৌভাগ্য
হয়েছিল একটি হালাকাতে। হাদিস শরীফ থেকে আলোচনা হচ্ছিলো, তখন হজ্জ্বের বিষয়
আসার কয়েকটি বিষয় এসেছিলো যা প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য আলোচনা। আলোচনার সময়
হাদিসটির একটি অংশ উদ্ধৃত করার পর উপস্থিত সবাইই ব্যাপারটা বুঝেছিলেন --
কথাগুলো এবং বিষয়টি উল্লেখের ভাষা এতটাই সুন্দর ছিল যে আমি মুগ্ধ হয়ে
গিয়েছিলাম ভাষার ব্যবহার দেখে। কেন যেন চোখ ভিজে এসেছিল যখন আলোচক বিষয়টি
নিজে থেকেই পুনর্বার উল্লেখ করলেন এবং বললেন, আমাদের দ্বীন সবকিছু নিয়েই
কথা বলে, সবকিছু নিয়েই আমাদের নির্দেশনা আছে। যখন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের
একান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা হয়, তখন তার ভাষাও থাকে উন্নত, চমৎকার।
সাহাবা আজমাঈন অনেক বিষয়ের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমন সুন্দর ভাষাই ব্যবহার
করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সেরা মানুষ।
তিনি আমাদেরকে সেরা শব্দগুলোই শিখিয়ে গিয়েছেন। সত্যিই হাদিসগুলোর ভাষাশৈলী
খুব অসাধারণ। আমি এমনিতেই শব্দ সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহী থাকি বলে হাদিসটি
শোনার সময়েও শব্দালংকারের ব্যাপারটা এমনিতেই খেয়াল করছিলাম -- তখনই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের দ্বীন জীবনবিমুখ নয়, বরং খুব বেশি জীবনমুখী, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই আলোকিত করে।
আজকে কিছুক্ষণ আগে ভুলক্রমে অজানা একটা পেইজে গিয়ে, সেখান থেকে মন্তব্য
দেখে একজন মানুষের (নারী) প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম জঘন্য অশ্লীল শব্দের
যথেচ্ছ ব্যবহার। অজস্র মানুষের লাইক, আরো উচ্চ লেভেলের অশ্লীল মন্তব্যের
মাঝে কয়েক মিনিট কাটানোর পরে সবকিছু কেমন যেন তেতো লাগছিল। মনে হচ্ছিলো,
কেন এখানে আসলাম? জঘন্য অনুভূতি থেকে বাঁচতে তাই সেইদিনের ঘটনাটার
স্মৃতিচারণ আমার জন্য জরুরি ছিল। ফলশ্রুতিতে সবার সাথে শেয়ার করতে এই লিখতে
বসে যাওয়া। আমাদের মনে রাখা উচিত, একজন বুদ্ধিসম্পন্ন সুস্থ মানুষকে কিছু
বুঝাতে আবশ্যক হলে, উত্তম শব্দ এবং হালকা ইঙ্গিতই যথেষ্ট। আমাদের মুখ এবং
হাত নিঃসৃত শব্দগুলো খুবই উন্নত হওয়া প্রয়োজন। সেটা যেই বিষয়েই হোক না কেন।
প্রতিবাদের ভাষাও ভদ্র ও শালীন হওয়া আবশ্যক। আমাদের মুসলিমদের শিক্ষাই
অমন। যেহেতু আমরা সচরাচর আলোকিত মানুষদের মাঝে থাকিনা, তাদেরকে জানার
চেষ্টাও করিনা, আর তাই জানিও না আমরা -- এই পৃথিবীতে কাদের হেঁটে যাওয়া পথ
আমাদের অনুকরণ করার কথা, কাদের ব্যবহৃত শব্দকেই বুকে জড়িয়ে অনন্তের
পৃথিবীতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার চেষ্টা করার কথা। আমি বারবার
উপলব্ধি করি -- আসলে, ক্রমাগত চেষ্টা করে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তরিক
সাধনা করে যেতে হবে আমাদের -- যে অবস্থাতেই থাকি। জান্নাতের পথে পা বাড়ালে
যতটুকুই যেতে পারি, আল্লাহ আমাদের বাকিটা পথ কবুল করে নিবেন ইনশা আল্লাহ।
পা যদি না-ই বাড়াই, কীসে পাবো বিনিময়?
# কিছু স্মরণিকা :
♥ “…নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” [আল বাকারা ২২২]
♥ “তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা মুলক -১৩]
♥ “…আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।” [আত তাওবাহ ১০৮]
♥ ” অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।” [সূরা যিলযাল ৭-৮]
♥ “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।” [সূরা আ'লা ১৪-১৫]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে