১৮ জানু, ২০১৩

একটি জুমু'আর দিন এবং সালাহউদ্দিন আল আইয়ুবির কথা স্মরণ


সপ্তাহের সেরা দিনটি জুমু'আহ -- একথা অনেকবার পড়লেও তা আমার মতন মানুষের জন্য কত বড় রাহমাত তা আজকে আবার টের পেলাম। সুবহানাল্লাহ। ফাটাফাটি ইমাম সাহেব পেয়েছি এলাকার মসজিদে -- সাহসী, সত্যভাষী, অসাধারণ! এমন মানুষ যদি সবগুলো মসজিদেই থাকত! সমাজের এই অবস্থা, বিশ্বের এই অবস্থার কারণ যে আল্লাহ ও রাসূলের জীবনকে না মেনে চলা --এই আলাপগুলো এত অল্প সময়ে এত সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া তো দূরে থাক, বেশিরভাগ ইমাম সাহস করেনা মসজিদে বলার। সবাই জান্নাতের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে থাকেন, নামাজ আর রোজার কথা বলেন। যাকাতের কথা, সমাজের অন্যায় ছড়িয়ে যাওয়ায় ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার কথা বলেন না কেউই -- তাতে হয়ত ইমামতির চাকরিটা ছুটে যাবার আশঙ্কা থাকে। আল্লাহই ভালো জানেন।

সেদিন ইমাম সাহেব বলিষ্ঠ গলায় খুতবার সময়ে যখন আবেগের সাথে দু'আ করলেন '​ আল্লাহুম্মা আ'ইযযিল ইসলামা ওয়াল মুসলিমীন' -- তখন মসজিদ ভরা মানুষদের সাথে গলা মিলিয়ে 'আমিন' বলে দেখি চোখে পানি চলে আসলো।আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে রহম করুন এবং ইসলামবিদ্বেষী মিথ্যাবাদী জালিম মুশরিকদের ধ্বংস করে দিন। ক্রমাগত সংকটে থাকা এক মজলুম হিসেবে এই দু'আ ছাড়া আর কার কাছে কী বলব তা বুঝে পাইনা।

নামাজের অনেকক্ষণ পর বেরিয়ে দেখি স্থানীয় এলাকার অনেকজন আলেম রাস্তায় একসাথে, সম্ভবত কোন দাওয়াত আছে আজ। মানুষগুলোকে একসাথে দেখেই মন ভরে গেলো। ইসলামী চেতনা বৃদ্ধিতে সামাজিক দেখা-সাক্ষাতের কোন বিকল্প নেই তা আরেকবার গভীর থেকে অনুভব করলাম। সত্যিকার জ্ঞানী মানুষদের হালাকায় যদি নিয়মিত অন্তত বসতে পেতাম আমরা নিজ নিজ এলাকাতে -- তাহলে হয়ত আলেমদের চেহারা দেখেই আমাদের মনটা দুনিয়াবী যন্ত্রণা থেকে অনেকটা হালকা হয়ে যেত। এলাকাতে একসাথে কাজ করত তরুণ-বয়ষ্করা একসাথে দাওয়াহ-এর কাজ, উন্নয়নমূলক কাজ। স্বপ্ন দেখি অমন সুন্দর সমাজ আসবে খুব শীঘ্রই।

নামাজ নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো -- ইতিহাসের মহান বীর সালাহউদ্দিন আইয়ুবি মাসের পর মাস থাকা যুদ্ধক্ষেত্রে এক মাঝরাতে উঠে তার সহযোদ্ধাদেরকে আহাজারি করে ডাকছিলেন আর বলছিলেন, তোমরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গেলে মনে হয় আজ... !! বীর সেনাপতির এই কথা শুনে তারা ভয়ে চমকে উঠেছিলেন, তখন সুলতান সালাহউদ্দিন তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে মুসলিমরা জয় তাদের অস্ত্রশস্ত্রের কারণে পায়না, বীরত্বের জন্যেও না বরং তাদের ঈমানের কারণে পায়। যুদ্ধক্ষেত্রে সারাদিন যত কষ্টই হোক, তাহাজ্জুদের সালাতে এই আর্মি চিফ তার সঙ্গীদের নিয়েই দাঁড়িয়ে যেতে পছন্দ করতেন।

উমার বিন আবদুল আযীযের পরে যার কথা বলতে মুসলিম উম্মাহ আনন্দবোধ করেন, তা সালাহউদ্দিন আইয়ুবির (রাহিমাহুল্লাহ) মতন মানুষই তো! বছরের পর বছর যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা এই সেনাপতি নামাজের ব্যাপারে এমনই সচেতন ছিলেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর তার সাহাবাদের সময়ের কথা আমাদের কাছে আরো বেশি স্বপ্নতূল্য আর আরাধ্য। নামাজের ব্যাপারে, আল্লাহকে মানার ব্যাপারে তাদের কোন কার্পন্য কখনো ছিল?

আমার কাছে কেন যেন মনে হয়, এই নামাজের সত্যিকার তাৎপর্য আমরা মনে হয় উপলব্ধি করতে পারিনা। নিজের সাথে আরেকবার নিজেকে রিমাইন্ডার দেয়া প্রয়োজন যেন ঠিকমতন সতের রাকা'আত ইমামের পেছনে হয়, সঠিক সময়ে। *এই জীবন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য* -- এই কথার প্রমাণ মনে হয় যথাসময়ে যথাযথভাবে নামাজের মধ্যেই নিহিত। যার এটা ঠিক আছে, জান্নাতের চাবি তো তার হাতেই হয়ে যাবে। আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন, এমন আশা তো আমরা করতেই পারি।

"ধৈর্য্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।" -- [সূরা আল বাকারাহ : ৪৫]

হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম একটা দু'আ করেছিলেন:
"হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া। হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।"
-- [ সূরা ইবরাহিম : ৪০-৪১]

উচ্চারণঃ রব্বি জা'আলনি মুক্কিমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিয়্যাতি রব্বানা ওয়া তাক্কাব্বাল দু'আ। রব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়া লিল মু'মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্কুমুল হিসাব।

  এই লেখাটিও পড়ুন : একটু শান্তির খোঁজে 

নির্ঘন্ট
-- [অডিও ক্লিপ] পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বীরদের একজন, সুলতান সালাহউদ্দিনের আইয়ুবির জীবনের উপরে শাইখ জহির মাহমুদের আলোচনাঃ ডাউনলোড লিঙ্ক

* * *
১৮ জানুয়ারি, ২০১৩ ঈসায়ী