৪ জানু, ২০১৩

একদল আগন্তুকের কথা

ডানে বামে চেয়ে অনেক আগন্তুক দেখতে পাওয়া যায়। সমাজের আর দশটা মানুষের চাইতে এদেরকে সহজেই সনাক্ত করতে পারা যায় ভিন্নতার কারণে। সামাজিক প্রবাহের চাইতে ভিন্ন হওয়ায় এই আগন্তুকের দল অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, অনেক সময় জ্বলুনির কারণও হয়।
একজন মুসলিম তরুণ সবার কাছে গুরাবা বা Stranger (আগন্তুক) টাইপেরই। কেনই বা হবে না আগন্তুক?

আগন্তুকদের তো ক্লাসরুমে গলা বকের মতন বাঁকা করে পাশের কারো সাথে গুটুর গুটুর করা হয়না, লাইব্রেরিতে গিয়ে বইয়ের স্তূপের নিচে চিমটা চিমটি খেলা হয়না।


বন্ধুদের আড্ডায় উচ্চ গলায় বলিউডি নায়িকাদের শাব্দিক ব্যবচ্ছেদ না করে দূরে থাকতে হয়, সন্ধ্যা-রাতের দিকে হলের কোণায়, চিপায়, নিচুস্বরে ফোন কানে ফিসফাস করা হয়না, আড্ডার চরম সময়ে নামাজের ওয়াক্ত হলে ক্ষান্ত দিয়ে দেয়।

বন্ধু-বান্ধবীরা লেইকের পাড়ে একসাথে যেতে চাইলে আস্তে করে সরে যাওয়া হয়। অফিসের লাঞ্চ টেবিলে মহিলা কলিগের সাথে রাস্তার জ্যাম আর 'আমাদের তো যা ছিল তা...' টাইপের আলাপ করা হয়না।

ফেসবুকে মেয়েদের অ্যাড রিকু পাঠিয়ে তাদের ছবিতে জোর করে 'ওয়াও, খুব সুন্দর লাগছে' টাইপের কমেন্ট করা হয়না।

সবাই যখন জিলেট আর মাক-থ্রি কিনে গালের উপরে ঘসে ঘসে ক্লাসে যায়, তখন ওরা শ্মশ্রুমন্ডিত মুখে ওজুর পানি স্পর্শ করে হাঁটা ধরে। সবার প্যান্টগুলো মাটিতে ছেঁচড়ে গিয়ে তলায় ছিঁড়ে যায়, ওদের থাকে কয়েক ইঞ্চি উপরে।

সবাই যখন সপ্তাহ শেষে বসুন্ধরার সিনেপ্লেক্সে যায়, ওরা তখন শহরের আরেক প্রান্তে হালাকায় যায়। সবাই যখন ফেসবুকে গালি দিয়ে উদ্ধার করে অমুক তমুক ইস্যুতে, তখন ওরা কীভাবে সমাজকে বদলে দেয়া যেতে পারে তা চিন্তা করে।

সমস্যায় পড়ে সবাই 'শি_, ফা_' টাইপের শব্দ উচ্চারণ করে অথচ ওরা বলে, 'ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন'। অবাক হয়ে সবাই বলে, 'ড্যাম ম্যান!' ওরা বলে, 'সুবহানাল্লাহ'। হলের অনেকেই যখন সুশীল হয়ে গালাগালি করে রাতে কম্পিউটার স্ক্রিণটাকে নীল বানিয়ে ফেলে, তখন ওরা ভোরে ফজরে উঠবে বলে ঘুমুতে চলে যায়।

সবাই যখন অন্যায় দেখে কোন একটা পক্ষকে গালাগালি করে নিজের রাস্তা মাপে, এরা তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ ও সৎকাজের নির্দেশ দিতে এগিয়ে যেতে পা বাড়ায়... মৃত্যুকে এরা ইঁদুরের মতন ভয় পায়না, এরা জানে -- মৃত্যু হলো জীবনের শুরু।


এই সমাজে আগন্তুক ছেলের সংখ্যা কম নয়। আরেকজন আগন্তুককে দেখতে পেলে তাই দু'হাত বাড়িয়ে দিন তাদের প্রতি। তাদের দিন শান্তির সুসংবাদ, যা তাদের পথচলায় প্রেরণা দিবে। এই আগন্তুকরাই তো বিজয়ীদের মহাকাব্যের একেকটা সংগ্রামী সফল নায়ক। এখন হয়ত জমিনের বুকে ছড়ানো ছিটানো তারা। কঠিন দিনের সেই বিশাল ময়দানে এরা হাসিমুখে থাকবে, এদের চোখ-মুখে থাকবে জ্যোতি।

তাইতো, *ধৈর্যধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ*...

1 টি মন্তব্য:

  1. আলহামদুলিল্লাহ Abdullah ভাই... welcome back... আরও জ্বালাময়ী লিখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে

    উত্তরমুছুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে