৮ ফেব, ২০১৩

জীবনের উদ্দেশ্য কি বদলে যায় সময়ের সাথে সাথে?

একটা কথা মনে হয় আমাদের সবসময়ে মনে রাখা প্রয়োজন যে আমরা জল-স্থল-অন্তরীক্ষ, একাকী-কোলাহলে, ক্রুদ্ধতায়-দুঃখে-আনন্দে -- যে অবস্থাতেই যখনই থাকি না কেন আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যটা কখনই বদলে যায় না। আমাদের প্রিয় আল্লাহ তা'আলা বলেই দিয়েছেন যে আমাদেরকে দুর্বল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের পৃথিবীর বুকে পাওয়া শক্তিমত্তা একটা পরীক্ষা, আমাদের দুর্বলতার সময়গুলোও পরীক্ষা। আমার যদি অনেক শক্তি হয়, আমার যদি অনেক ক্ষমতা হয়, আমার দোর্দন্ড প্রতাপে যদি কেউ সামনে দাঁড়াতে না পারে, আমার কথার প্রতিবাদ করার হিম্মত যদি কেউ না রাখে -- তাহলে কিন্তু আমি সফলতম মানুষ হয়ে যাইনা।


আমাদের কি মনে পড়েনা আদ জাতির কথা? তাদের মতন জাতি কেউ ছিলো না এই পৃথিবীর বুকে। শক্তি-ক্ষমতা-দাপটে তারা ছিলো অস্পৃশ্য, অদম্য। হুদ আলাইহিস সালাম তাদের সামনে কিছু বলতে গেলে তারা তাদের শক্তির বড়াই দেখাত, হুদ আলাইহিস সালামকে তার দুর্বলতার কথা স্মরণ করিয়ে দিত। অথচ তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পৃথিবীর ইতিহাস থেকেই। আমাদের কি মনে পড়েনা সামূদ জাতির কথা? একের পর এক সীমাহীন আদেশ লঙ্ঘনের শেষটি ছিলো এক উটনী নিয়ে। পুরো জাতির মাত্র অল্প কয়েকজন সেই উটনীটিকে মেরে ফেলেছিলো চ্যালেঞ্জ হিসেবে, আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘনের আনন্দ হিসেবে। সেই কাজে মাত্র অল্প কয়েকজন নেতৃস্থানীয় লোক ছিলো, অন্যেরা তাকে মুখ বুঁজে মেনে নিয়েছিলো। যখন রবের পাকড়াও এলো, কেউ রক্ষা পায়নি। একটি বিকট আওয়াজ আঘাত করেছিলো এবং তারা নিজেদের বাড়িঘরে এমন অসাড় ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে রইলো যেন সেখানে তারা কখনো বসবাসই করেনি।

সবাই যা করলো --সেটা কখনো আমাদেরকে প্রমাণ করে দেয়না আমরা সঠিক। ড তারিক রমাদানের একটা উদ্ধৃতি আছে, "There is no faith, without a critical mind." এটাই স্বাভাবিক যে আমাদের ঈমান আমরা প্রতিনিয়ত মজবুত করি নতুন নতুন বিষয়ে আমাদের নিরীক্ষণধর্মী মানসিকতায়। আমাদের কাজে-কর্মে critical না হলে সেটা সঠিক হবেনা। আমাদের প্রতিটি কাজে critical হবার মানেই হলো, আমি চেষ্টা করছি এই জিনিসটা আল্লাহ ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পছন্দ করবেন কিনা তা বোঝার, কেন করছি তা জানার। সায়্যিদিনা নূহ আলাইহিস সালাম একই কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিতেন তার জাতিকে। প্রায় সাড়ে ৯০০ বছরের জীবদ্দশায় ক'জনকেই পেয়েছিলেন তিনি যারা ঈমান এনেছিল? মুফাসরিরগণের অনেকে সংখ্যাটাকে বলেছেন ৪০ জোড়া মানব-মানবী।

যখন কেউ গালি দিলো, আমি কেন তাকে গালি দিব? আমার তো হারানোর কিছু নেই। মু'মিন বান্দার প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। কেউ আমাকে গালি দিলেও তা আমার জন্য কল্যাণকর হয়। আমার জন্য অন্তত একটি সাওয়াব লেখা হয়ে যায়। আমার পেছনে কেউ অন্যায় মিথ্যা গীবত করলে তা আমার গুনাহ মাফের এবং গীবতকারী ব্যক্তির সাওয়াব আমার হয়ে যাবার সম্ভাবনা নিয়ে আসে। মুসলিমদের ভালোবাসা কেবলই আল্লাহর জন্য, তার নিঃশ্বাস কেবলই আল্লাহর জন্য। তার প্রতিটি কাজই কল্যাণময়। একা থাকলেও সে আল্লাহকে স্মরণ করে। যখন অনেক বড় জনকোলাহলে থাকে, তখনও সে চিন্তা করে -- তার এই কাজটি কি আল্লাহ পছন্দ করবেন? সে যদি অশ্লীল আর মন্দ কাজের পাশে থাকে, সে তা ছেড়ে চলে আসবে। কেননা একাকী খারাপ কাজের সাক্ষী থাকেন আল্লাহ এবং মালাইকারা। দলবদ্ধভাবে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার সাক্ষী থাকে আরো অনেক মানুষ -- হাশরের ময়দানে আমরা যখন অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকব, তখন সেই সাক্ষীদের কেউ আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না; চাইবে ডুবিয়ে দিতে, চাইবে আমাকেই অপরাধী বানিয়ে সে মুক্তি পেতে। একাকী অন্যায় করলে আল্লাহ মাফ করে দিতেও পারেন।


০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে