ফেসবুক এবং অন্যান্য অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ে আমার একান্তই নিজস্ব কিছু
অভিমত ও অনুভূতি আছে। অনেকেই মনে করেন অনলাইন শুধুই ফান করার জায়গা, যা
ইচ্ছা তা-ই বলা যেতে পারে। আবার, অনেকে মনে করেন এখানে অ্যাক্টিভিজম দিয়ে
তারা দেশ-সমাজ বদলে দিবেন। এছাড়া অনেকের মাথায় অনেক রকমের ক্ষতিকর এবং
খারাপ চিন্তার কথাও আছে জানি। কিন্তু সেসব না, বরং ভিন্ন কিছু বিষয় খুব মনে
হয়।
ক'দিন আগে তিন চার বছর আগের ইমেইল আর ফেসবুকে মেসেজ-পোস্ট পড়তে গেলাম। নিজের সেই সময়ের ভাষার ব্যবহার আর চিন্তাগুলো দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। সিরিয়াস টাইপের খারাপ লাগা যাকে বলে। সেদিন থেকে একটা অনুভূতি আমাকে বেশ তাড়ায়, তা হলো -- এমন কিছু যেন না বলি বা লিখি যা খুবই যাচ্ছেতাই। একসময় বন্ধুদেরকে খোঁটা মেরেও বেশ অনর্থক কথাবার্তা লিখতাম।
অনেকগুলো বছর পর কী হলো? সেই বন্ধু, সেই সম্পর্ক, সেই ইমোশোন কখন হারিয়ে গেছে -- কারও সাথে কয়েকবছর দেখা/কথা না হলেও আমার সেই আপত্তিকর শব্দগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। এমন অনেক কথা, যা আমি বলতে পছন্দ করিনা এখন। এমন অনেক চিন্তা, যা আমি এখন ভাবতেও চাইনা। আমি তো বদলেছি, আমার ফেলে রাখা পদচিহ্ন বদলায়নি। আমার সেই লিখে রাখা শব্দগুলো রয়ে গেছে কোন একটা সার্ভারে। হয়ত এই সভ্যতা ধ্বংস হবার পূর্ব পর্যন্ত রবে। আমাদের জীবনটাও এমন না অনেকটা? এই মূহুর্তখানি একসময় অতীত হয়ে যাবে। আমার নোংরা, তিক্ত, জঘন্য আচরণগুলো যদি মাটির সাথে, মানুষের জীবনের সাথে লেপ্টে থাকে -- আমি যদি না থাকি, সেই আফসোস সামলাতে পারব তো? পৃথিবীর সবকিছু থেকে মুছে গেলেও তো সেগুলো কিরামান-কাতিবিনের কাছে লিপিবদ্ধ রয়ে যাচ্ছে। আমরা কি কখনো একা? কখনো কি আমরা গোপন আদৌ? এটা কি খেয়াল রাখা উচিত না সবারই?
অনলাইনও অ্যাক্টিভিজম (ব্লগিং/ফেসবুকিং) করে সমাজ বদলানো যায়? আমার মনে হয় যায়না, যায়নি। মানুষ সবসময় নিজের কথা শুনতে পছন্দ করে। অনলাইনে সবাই তার পছন্দের দিকেই এগিয়ে যায়। যে ১৮+ জোকসের উদগ্র কামনা শরীর-মনে অনুভব করে, তাকে ইবনে তাইমিয়া, হাসান আল বাসরি বা ইবনুল কাইয়্যিমের অন্তরালোকিত উদ্ধৃতি সামনে ধরলেও চোখ পেরিয়ে মনে যাবেনা -- তা বলা যায়। যে মিথ্যাকেই আপন করে নিয়েছে, সে সত্যকে কখনই বুঝতে চাইবেনা। অন্তরের গভীরে যেই রোগ, তা কী করে সারবে চোখের দেখায়?
অনলাইনকে আমার কাছে অনেকটা এক্সিবিশানের মতন লাগে। এখানে বড় জোর একটা বিষয়কে সাজিয়ে রেখে দেয়া যেতে পারে। কারো পছন্দ হলে সে যেন এসে আপনাতেই খুঁজে নেবে, ভালো লাগলে তা থেকে গ্রহণ করবে। কিন্তু চয়েস/সিদ্ধান্ত নেবার কাজটা মানুষ নিজেই করে। মানুষ নিজের অজান্তেই এখন সমাজের দাসত্ব করে, অর্থের দাসত্ব করে, সেলিব্রেটিদের দাসত্ব করে, শরীরের চাওয়ার দাসত্ব করে -- এখানে তর্ক করার ভ্রষ্টতা কেবল নিজেকেই ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। মূর্খের সাথে তর্ক করার চাইতে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। সূরা আসর থেকে সময়ের গুরুত্বের শিক্ষা পাই, হেলায় কাটানো যাবেনা। সূরা আ'লা থেকে শিক্ষা পাই কাউকে স্মরণ করিয়ে দেয়া উপকারি হলে তাকে করাতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ভালো কাজ করতে গিয়ে খারাপ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়াই উচিত -- এমনটাই শিখিয়ে গেছেন স্কলাররা।
আমাদের সময় কি এতটাই ফেলনা? আমাদের মুখনিঃসৃত, হাত এবং কীবোর্ড দিয়ে বেরিয়ে আসা শব্দগুলো কি অযথাই? অথচ এটা সেই সময়, যেই সময়ে কে কতটা অর্জন করতে পারলো, কতটা আন্তরিকতা আর শ্রম দিয়ে, গভীরভাবে -- সেটাই আমাদের অনন্তকালের ভবিষ্যতকে প্রতিষ্ঠিত করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তো জানিয়ে দিয়েছেন :
♥ "সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।" ♥
--[সূরা আল-আসর: ১-৩]
ক'দিন আগে তিন চার বছর আগের ইমেইল আর ফেসবুকে মেসেজ-পোস্ট পড়তে গেলাম। নিজের সেই সময়ের ভাষার ব্যবহার আর চিন্তাগুলো দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। সিরিয়াস টাইপের খারাপ লাগা যাকে বলে। সেদিন থেকে একটা অনুভূতি আমাকে বেশ তাড়ায়, তা হলো -- এমন কিছু যেন না বলি বা লিখি যা খুবই যাচ্ছেতাই। একসময় বন্ধুদেরকে খোঁটা মেরেও বেশ অনর্থক কথাবার্তা লিখতাম।
অনেকগুলো বছর পর কী হলো? সেই বন্ধু, সেই সম্পর্ক, সেই ইমোশোন কখন হারিয়ে গেছে -- কারও সাথে কয়েকবছর দেখা/কথা না হলেও আমার সেই আপত্তিকর শব্দগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। এমন অনেক কথা, যা আমি বলতে পছন্দ করিনা এখন। এমন অনেক চিন্তা, যা আমি এখন ভাবতেও চাইনা। আমি তো বদলেছি, আমার ফেলে রাখা পদচিহ্ন বদলায়নি। আমার সেই লিখে রাখা শব্দগুলো রয়ে গেছে কোন একটা সার্ভারে। হয়ত এই সভ্যতা ধ্বংস হবার পূর্ব পর্যন্ত রবে। আমাদের জীবনটাও এমন না অনেকটা? এই মূহুর্তখানি একসময় অতীত হয়ে যাবে। আমার নোংরা, তিক্ত, জঘন্য আচরণগুলো যদি মাটির সাথে, মানুষের জীবনের সাথে লেপ্টে থাকে -- আমি যদি না থাকি, সেই আফসোস সামলাতে পারব তো? পৃথিবীর সবকিছু থেকে মুছে গেলেও তো সেগুলো কিরামান-কাতিবিনের কাছে লিপিবদ্ধ রয়ে যাচ্ছে। আমরা কি কখনো একা? কখনো কি আমরা গোপন আদৌ? এটা কি খেয়াল রাখা উচিত না সবারই?
অনলাইনও অ্যাক্টিভিজম (ব্লগিং/ফেসবুকিং) করে সমাজ বদলানো যায়? আমার মনে হয় যায়না, যায়নি। মানুষ সবসময় নিজের কথা শুনতে পছন্দ করে। অনলাইনে সবাই তার পছন্দের দিকেই এগিয়ে যায়। যে ১৮+ জোকসের উদগ্র কামনা শরীর-মনে অনুভব করে, তাকে ইবনে তাইমিয়া, হাসান আল বাসরি বা ইবনুল কাইয়্যিমের অন্তরালোকিত উদ্ধৃতি সামনে ধরলেও চোখ পেরিয়ে মনে যাবেনা -- তা বলা যায়। যে মিথ্যাকেই আপন করে নিয়েছে, সে সত্যকে কখনই বুঝতে চাইবেনা। অন্তরের গভীরে যেই রোগ, তা কী করে সারবে চোখের দেখায়?
অনলাইনকে আমার কাছে অনেকটা এক্সিবিশানের মতন লাগে। এখানে বড় জোর একটা বিষয়কে সাজিয়ে রেখে দেয়া যেতে পারে। কারো পছন্দ হলে সে যেন এসে আপনাতেই খুঁজে নেবে, ভালো লাগলে তা থেকে গ্রহণ করবে। কিন্তু চয়েস/সিদ্ধান্ত নেবার কাজটা মানুষ নিজেই করে। মানুষ নিজের অজান্তেই এখন সমাজের দাসত্ব করে, অর্থের দাসত্ব করে, সেলিব্রেটিদের দাসত্ব করে, শরীরের চাওয়ার দাসত্ব করে -- এখানে তর্ক করার ভ্রষ্টতা কেবল নিজেকেই ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। মূর্খের সাথে তর্ক করার চাইতে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। সূরা আসর থেকে সময়ের গুরুত্বের শিক্ষা পাই, হেলায় কাটানো যাবেনা। সূরা আ'লা থেকে শিক্ষা পাই কাউকে স্মরণ করিয়ে দেয়া উপকারি হলে তাকে করাতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ভালো কাজ করতে গিয়ে খারাপ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়াই উচিত -- এমনটাই শিখিয়ে গেছেন স্কলাররা।
আমাদের সময় কি এতটাই ফেলনা? আমাদের মুখনিঃসৃত, হাত এবং কীবোর্ড দিয়ে বেরিয়ে আসা শব্দগুলো কি অযথাই? অথচ এটা সেই সময়, যেই সময়ে কে কতটা অর্জন করতে পারলো, কতটা আন্তরিকতা আর শ্রম দিয়ে, গভীরভাবে -- সেটাই আমাদের অনন্তকালের ভবিষ্যতকে প্রতিষ্ঠিত করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তো জানিয়ে দিয়েছেন :
♥ "সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।" ♥
--[সূরা আল-আসর: ১-৩]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে