১৯ ফেব, ২০১৩

যাপিত জীবনে দিনশেষে উপলব্ধি

জীবন ধরে আমি অপেক্ষা করতাম -- সময় অতিক্রমনের। এইতো ক'টা দিন যাক, এইচএসসি হয়ে যাবে, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে নতুন জীবন, তখন মন দিয়ে নামাজ পড়ব, কুরআন পড়ব, সুন্দর জীবন গড়ব। ভার্সিটিতে ঢুকে নতুন জীবনে কিছুই হয়না ঠিকমতন, সব আউলা ঝাউলা নিয়ম। তাই নতুন গান ধরলাম : এই টার্ম যাক, আগামী টার্মে নিয়মিত থাকব, ক্লাস করব ঠিকমতন, ভালো রেজাল্ট করব, প্রতিদিন জামা'তে নামাজ মিস করব না। আগামী কয়েক মাসে কয়েক পারা কুরআন তাফসির পড়ে ফেলব। হয়নি ঠিকমতন কিছুই। চাকুরি জীবনে এসেও মনে হয়, আরেকটু স্ট্যাবল হই, তখন এই-সেই ঝামেলা কেটে যাবে, এটা-ওটা অর্জিত হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে একটা 'পরম সুন্দর' জীবন কাটাবো। এইরকমের অদ্ভুত কিছু চক্র অনেকের জীবনেই আছে, শুনেছি, জেনেছি, দেখেছি। নতুন করে ক্রমাগত প্ল্যানিং করতে থাকলে জীবনে উন্নতিই হয়। এটা খুবই কল্যাণকর। তবে, একটা পয়েন্টে বোধহয় মিস করতে থাকি আমি সবসময়েই।

গত কয়েকসপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন মনে হচ্ছে, দিন শেষে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কি আমি চিন্তা করে দেখি আজকে কি অর্জন করলাম? আজকে আমি রাতের ঘুমের সময়ই কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ডাকে চলে যেতে কি প্রস্তুত? কত কিছু চলে যায়, কত কিছু হয়ে যায়। এমন করেই এসেছিল জগতে হাজার হাজার কোটি মানুষের প্রাণ। নিজেকে অনেকগুলো প্রশ্ন করার দরকার হয়ে যায় -- আমি কি পেরেছি আজকে সবগুলো ওয়াক্তের নামাজ সঠিক সময়ে সঠিক মনোযোগে ও যত্নে আদায় করতে? মিথ্যা না বলে থাকতে? পেরেছিলাম বাসে উঠে ভাড়াটা বুঝিয়ে দিয়ে নামতে? কথা দিয়ে কি কথা রেখেছিলাম? অন্যের নামে খারাপ বলে আত্মতৃপ্তি নিইনি তো? চেনাজানা লোকের খারাপ দিকগুলো অন্যকে বলে মজা নিয়েছিলাম কি? অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলাম তো? আমি কি আব্বু-আম্মুর সাথে সুন্দরতম ব্যবহারটুকু করেছিলাম? দু'আ করেছিলাম আমার মুসলিম উম্মাহর মজলুম ভাইবোনদের জন্য? দু'আ করেছিলাম নিজের জন্য? আমি কি নিজের তুচ্ছতাকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে তার সাহায্য চেয়েছিলাম? এই জীবনে কী অর্জন করলাম আমি? অন্তরে আমার আল্লাহ ছাড়া দুনিয়া রয়ে গেছে কি? দুনিয়ার মোহ?

জীবন থেকে সময়গুলো বয়েই যায়, কিছুতেই থামে না। আমাদের মতন সময় কাটিয়েছে এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া সবাইই। এই জমিনে সত্যের পথ সবসময়েই কঠিন ছিলো। আজকের কঠিন এই সময় আগামীকাল বন্ধ হয়ে যাবে না। আমাদের প্রতিরোধ শয়তানের সাথে --  কখনো সেইটা নফসের সাথে, কখনো শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা উন্মত্ত অন্য মানুষদের সাথে। শয়তানের সাথে এক আমৃত্যু সংগ্রাম আমাদের। অন্যদিকে এই পর্দার ওপাশেই অনন্ত জীবনের হাতছানি। প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্তত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ভাবতে হবে নিজেকে নিয়ে, নিজের সমালোচনা করতে হবে। গতকালের চাইতে যেন আজকের দিনটা ঠিক থাকে, সেটা নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। নিজেকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। কেননা আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তো হবে খুবই কঠিন! তার আগে যেন নিজে থেকেই সাবধান হয়ে যাই। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
১৯ ফেব্রু, ১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে