৬ ফেব, ২০১৩

কী করে সফল হব এ জীবনে?

জীবনে উন্নতি করা এবং সফল হওয়াই বোধহয় আমার জীবনের লক্ষ্য -- এমন একটা ভুল জীবনবোধে আমরা ডুবে থাকি বুঝে বা না বুঝে। আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য তো কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাহ করা, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই দুনিয়ার জীবন তো ক্ষণিকের বিভ্রম -- এখানে আমাদের উদ্দেশ্যই আখিরাতের জীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহ। আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট পারিবারিক, সামাজিক অবস্থানে জন্মগ্রহণ করেছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাকে পাঠাবেন কোথায়, তা তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি কাউকে হয়ত আর্থিক সংকটের পরিবারে পাঠিয়েছেন, কাউকে তিনি পাঠিয়েছেন পারিবারিক সমস্যাগ্রস্ত জায়গাতে, কাউকে তিনি দিয়েছেন শারীরিক সীমাবদ্ধতা। এগুলোকে সাথে নিয়েই আমরা জীবনযাপন করি, প্রতিটি দিন অতিক্রান্ত করি সংকট নিরসনের জন্য। অথচ নিশ্চিত, আমাদের জীবন কখনই সমস্যাহীন থাকবে না। প্রতিদিন থাকবে নানান রকম পরীক্ষা। তাইতো, হাল ছেড়ে হতাশ হওয়ার কথা না একজন মু'মিনের।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

[১] “মুমিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্যের ব্যাপার এরূপ নয়। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে সে আল্লাহর শোকর করে। তাতে তার মঙ্গল হয়। আবার ক্ষতিকর কোন কিছু হলে সে ধৈর্যধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।” [মুসলিম]

[২] “মুসলিম বান্দার যে কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা হোক না কেন, এমনকি কাঁটা বিঁধলেও, তার কারণে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।” [বুখারী, মুসলিম]

জীবনের যেই মূহুর্তটাই আসুক, এটা আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্যই পাঠিয়েছেন, তার একান্ত ইচ্ছাতেই হয়েছে। তিনি চান, আমার কষ্টের মূহুর্তে আমরা সবর করি এবং তার স্মরণে আরো নিকটবর্তী হই, আমাদের গুনাহগুলো মাফ হোক, আমরা যেন তার আরো কাছে যেতে পারি। একটা সময় আমাদের উপরে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে আরো মজবুত ঈমান দান করবেন -- ফলস্বরূপ জান্নাত দান করবেন। আমাদের জীবনে হারাবার কিছু নেই। এটা সত্যি, প্রচেষ্টা করতে থাকলে যোগ্যতা অর্জন করলে আল্লাহ আমাদেরকে পার্থিব সফলতারও চূড়ায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আখিরাত, আমাদের ঘরে জান্নাতে ফিরে যাওয়াই আমাদের স্বপ্ন।

-- দুনিয়া ও আখিরাত দু'টোতেই সফল হতে পারলে তো খুবই উত্তম। সে সফল।
-- দুনিয়াতে কষ্ট করে জীবনধারণ করে আখিরাতে মুক্তি পেলেও সেও সফল।
-- যে দুনিয়াতে অনেককিছু পেল, আখিরাতের জন্য কিছু অর্জন করতে পারল না -- সে বিফল, সে মূর্খ, সে হতভাগা।

অনেকে মনে করি, যেহেতু নামাজ পড়লাম আর পড়াশোনা করলাম সুতরাং এবার ভালো রেজাল্ট করা আমার অধিকার হয়ে গেছে। অনেকেই ভাবি, কিছু একটা পাওয়ার জন্য যখন অনেক দোয়া করেছি, স্যাক্রিফাইস করেছি, মনে হয় এবার এটা পাবই, আল্লাহ দিবেনা কেন? তখন না পেলে যেন জীবনের অনেক কিছু উলটপালট হয়ে যায়। কোন ছেলেকে পেতে কোন মেয়ে অনেক দোয়া করলো, যখন শেষ পর্যন্ত হলো না তখন সে ভাবতে শুরু করে, আল্লাহ আমাকে ভালো জীবন দিবেন না! (আল্লাহ মাফ করুন)। জীবনের উদ্দেশ্য যখন আল্লাহর ইবাদাহ, তখন প্রতিটি মূহুর্তেই তো সেটা করতে পারাই সফলতা। নিরাশ হবার কোন সুযোগ তো নেই আমাদের। আল্লাহ বলেছেন :

 "..আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।" [সূরা ইউসুফ ৮৭] 

হয়ত হতাশ হয়ে পড়া মূহুর্তগুলোর আগ পর্যন্ত আমাদের কাজগুলো অকল্যাণময় না, আমাদের স্মরণেও আল্লাহ থাকেন। কিন্তু দুর্বল মূহুর্তটাতেই শয়তান আমাদেরকে হতাশ করে দেয়, পথভ্রষ্ট করে দেয়। সমস্ত জীবন ধূলিস্মাৎ করে দেয় এক ওয়াসওয়াসাতেই। আমাদের যদি আল্লাহর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকে, কাজের উদ্দেশ্য যদি ভুল না হয় -- তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব না।

♥ "(হে মুহাম্মাদ) আপনি বলে দিন! হে আমার (আল্লাহর) বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।" -- [সূরা আয-যুমারঃ৫৩]

♥  "সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।" [সূরা বাকারা : ৫২]

♥  "তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।..." [সূরা গাফির - ৬০]

আমরা তো মুসলিম, আমাদের জীবনের সবই তো অর্জন। যার হৃদয়ে যত বেশি আল্লাহর স্মরণ, যার জীবনের কাজে যত বেশি আল্লাহর আনুগত্য -- তিনিই তো আল্লাহর বেশি প্রিয়, তিনি তো বেশি সফল! এই মানুষটি হতে পারেন একজন বৃদ্ধ রিকসাচালক, আমরা টেরও পাইনা আলোকিত হৃদয় হয়ত লোকটির শতচ্ছিন্ন তেল চিটচিটে পাঞ্জাবির নিচেই সযত্নে রক্ষিত। অথচ আমরা মূলত তাদেরকেই দাম দেই পৃথিবীর জীবনে -- যারা পোশাক-আশাকে চকচকে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে বেশি। আমাদের তো তাদেরকেই ভালোবাসার কথা ছিল যারা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়, যারা বেশি তাকওয়াসম্পন্ন। তাদের সাথেই আমাদেরকে জুড়ে রাখার কথা। ব্যক্তিজীবনে আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কিছু প্রয়োজন আছে কি? তিনি যদি আমাদের অন্তর জুড়ে থাকেন, আমাদের জীবনের কেন্দ্রে থাকেন, আমরাও তার প্রিয় হয়ে থাকব। কোন বাধা নেই, নিয়ম নেই, এক্ষুনি ফিরে যেতে পারব আল্লাহর কাছে, আরো নিকটতম হতে পারব তাকে স্মরণে, তার নির্দেশ পালনে। সঠিকভাবে সালাহ আদায়ে, বিনম্র আচরণে, সৎকাজের নির্দেশদানে, অসৎকাজের প্রতিবাদে, মানুষের উপকার করে, আব্বা আম্মার প্রতি ভালোবাসা দিয়ে, বেশি বেশি সাদাকাহ করে, পথে চলার সময়ে, রাতে ঘুমানোর আগে কুরআন থেকে আপনমনে তিলাওয়াত করার মতন আরো শত-সহস্র উপায়ে আমরা আল্লাহর আরো নৈকট্যলাভ করতে পারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

[৩] “মহান আল্লাহ বলেনঃ বান্দা আধ হাত আমার দিকে এগিয়ে এলে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়িয়ে যাই।”♥ [বুখারী]

 নির্ঘন্ট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে