২৮ ডিসে, ২০১২

এত সুর আর এত গানে উদাসীর একাকীত্ব



আজ সারাদিন অন্য কিছু চিন্তা ভর করে ছিলো মাথায়। দিনশেষে বাসায় ফিরলাম খানিকক্ষণ আগে, পাশের বিল্ডিং নানা রঙের আলোয় আলোকসজ্জিত, গান চলছে শাফিনের "কখনো কি তোমার মনে পড়েনা", হিন্দি সিনেমার "থারাসা দিলমে দে জাগাদু" -- বিয়ে বাড়ি, বিয়ের আসর। দু'জন মানব-মানবী জীবনের বাকিটা পথ একসাথে পাড়ি দেবার আয়োজন। অনেক অর্থব্যয়, জাঁকজমক, গানের আয়োজন -- বন্ধু-আত্মীয়দের দাওয়াত, খানাদানা, নতুন পোশাকে সবাই আয়োজিত... হয়ত রাতে ডিজে হবে, এখনকার বিয়েতে এমনই হয়। কেউ হয়ত নতুন এই দম্পতির জন্য প্রাণভরে দোয়া করেনা, অনেক 'উইশ' করে। দুআ করার শান্ত সময় কোথায় এই কোলাহলে, উত্তাল উচ্ছ্বাসে? 

আমার ছোটকালের কিছু স্মৃতি মনে পড়লো। তখন আমার কিশোর বয়স। বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে খুবই অশান্তি লাগত। প্রকট প্রসাধনে চকচকে আপু/আন্টির দল, মুখে অনেকপ্রস্ত অনেককিছু মাখানো, তাদের সাথে দামী জামাকাপড়ে আবৃত ভাই-চাচারা। চেনাজানা মানুষগুলো অচেনা হয়ে যেত। একবার এক বড় ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম -- দিদ্দি তেরা দিবার দিবানা টাইপের গান, ইয়াশিকা ক্যামেরায় আমাদের ৪-৫ বছরের বড় ভাইরা কিছু আপুদের সাথে একই ফ্রেমে থাকার চেষ্টার মাঝে আমি পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি সবসময়েই পেছনে থাকতাম। অনর্থক কাজগুলোতে টান পেতাম না, একাকীত্ব আর গানের সুরে প্রচন্ড শূণ্যতা থাকায় চোখে পানি চলে এসেছিল। লুকিয়ে চোখ মুছেছিলাম। এরপরেও আরো কয়েকটা এমন অনুষ্ঠান, ভার্সিটিতে হলের কাছাকাছি হওয়া কনসার্টের সুরের ঝংকারেও আমার সবসময় শূণ্যতা কাজ করত, প্রচন্ড কষ্টবোধ হত। সবাই যখন 'হেব্বি নাচানাচি' করত, তখন আমার বিষাদ লাগত অর্থহীনতায়।  পালিয়ে থাকার অভ্যাসটা ধীরে ধীরে প্রকট হয়েছিল সেই কিশোর বয়স থেকেই -- বুঝতে পারছিলাম ধীরে ধীরে, এই জিনিসগুলো অনর্থক লাগত আমার। আল্লাহ একসময় আমাকে পথ দেখালেন, সত্যিই বুঝতে পারলাম, সেই শূণ্যতা বোধকরি সবারই হবার কথা, কিন্তু যারা এই অনুভূতিগুলোর চাইতে বেশি দাম দেয় নিজের ইন্দ্রিয়ানুভূতির সুখকে, তারা হয়ত ডিসেনসিটাইজড হতে থাকে। জানিনা আমি...

আমি জানি এই তীব্র বাদ্যযন্ত্র আর "কখনো কি তোমার মনে পড়েনা, ও হৃদয়হীনা" টাইপের গানের লিরিকগুলো মনকে ভ্রষ্ট করে, মিথ্যে শূণ্যতা ঠেলে দেয় প্রেম-প্রেম অনুভুতিতে, শারীরিক-মানসিক পাপের দিকে। আমার কাছে গানকে এড়িয়ে চলার কারণ এটাই ছিল। কেউ যতদিন গানের এই ভ্রমের মায়াজাল থেকে বের না হবে, সে কখনো জানবে না হৃদয়জুড়ে শূণ্যতার জায়গাতে আসলে মানব-মানবী দিয়ে পূর্ণ হয়না, নেচে গেয়ে পূর্ণ হয়না -- হৃদয়ে শূণ্যে আসলে জায়গা দিতে হয় অন্তরতম জন -- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে। তার স্মরণে এই শূণ্য জায়গা পূর্ণ হয়, এই একাকীত্বগুলো ভালোবাসার অনুভূতিতে, শান্তির আর সাকিনাতে ভরপুর হয়।

কোন বইতে যেন পড়েছিলাম, মনে নেই ঠিক। জেনেছিলাম, জান্নাতে যাবার আগে এই শূণ্য অন্তর কখনই পূর্ণতা পাবে না। কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সান্নিধ্যে ও ভালোবাসাতেই এই অন্তরের অনুভূতিরা পূর্ণতা পাবে। এই দুনিয়াতেও কেবল তার স্মরণেই অন্তরে শান্তি আসে, অন্তর পূর্ণতা পায়। এই দুনিয়া তো বিভ্রমমাত্র, বিভ্রম এই প্রেম, কাম, ক্রোধ। অবধারিত মৃত্যুর পরে এই দুনিয়ার কাটিয়ে যাওয়া জীবনকে আমাদের মনে হয় আমরা হয়ত দিনের একটা অংশ কাটিয়ে এসেছিলাম মাত্র। কেন আমরা এত বিভ্রমে জড়াই? কেন জেনে, বুঝেও ভুল করি এত -- ক্রমাগত?


ফেবুলাপ, রাত ৭টা ৫২ মিনিট
২৮ডিসেম্বর, ২০১২ ঈসায়ী 

1 টি মন্তব্য:

  1. আম্মুর কিছু কথায় এ বিষয়টা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছিলাম। আম্মুর সাথে একমত না হয়ে পারিনি। আজীবনের জন্য যে বন্ধন তার শুরুটাই যদি হয় অ-ইসলামিক আনুসঠিকতা দিয়ে সে সম্পরকের মাঝে আল্লাহ তা'লা'র রহমতের আর কতটুকুই বা আশা করা যায়! আল্লাহ তা'লা গাফুরুর-রাহীম বলেই রক্ষা যে তিনি যাকে চান ভুল করার পরও তাকে হিদায়াত দান করেন।

    আল্লাহ তা'লা যেন আমাদেরকে ভুল পথ বর্জন করার তওফিক দান করেন।

    উত্তরমুছুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে