২১ ডিসে, ২০১২

মানসিকভাবে ডাউন টাইম চললে কী করা যেতে পারে?

মানসিক আপ আর ডাউনের মাঝে মনে হয় সবারই বসবাস। আজকে একটা ধাক্কা পেরিয়ে এসে আবিষ্কার করলাম, জীবনের সবকিছুই আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। জীবনের ঘটনাগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর আচরণ যখনই বদলে যায়, তখনই ঘটনা আরো জটিল হয়ে যায়। তাই, নিজেদের অন্তরের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এই বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা উল্লেখ করব।


মানসিক ও আত্মিক অবস্থা যখন খারাপ যাবে, সেই সময়ের একটা টিপস হচ্ছে -- তখন অবশ্যই নিজের চাইতে মূর্খ কারো সাথে আলাপ করা যাবেনা। অবশ্যই স্পিরিচুয়ালি উত্তম মানুষদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে হবে, নতুবা চুপ থাকতে হবে। আমি দেখেছি, যখন দুনিয়াবী ক্ষুদ্র সমস্যাতে ডুবে যাই, বিব্রত হয়ে আতঙ্কিত হয়ে যাই, অনেক চিন্তিত হয়ে যাই -- তখন দিশেহারা হওয়া সবচাইতে বোকার পরিচয়। আমরা কমবেশি সবাই এই বোকার দলেই পড়ি।

অন্তঃকরণের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। অন্তঃকরণকে আরবিতে কালব (পরিবর্তনশীল) বলা হয়েছে এ কারণেই যে, তা দ্রুত পরিবর্তনশীল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

অন্তঃকরণকে কালব বলা হয়েছে বেশি বেশি পরিবর্তন হবার কারণে। অন্তঃকরণের উদাহরণ হলো একটি পাখির পালকের মত যা গাছের ডালে ঝুলানো আছে, বাতাসে সেটিকে এদিকে সেদিকে ঘুরাচ্ছে। [১]

কঠিন সময়গুলোতে স্মরণ করা দরকার -- আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। আরো সুন্দর কথা হলো আমরা কখনই জানিনা আমার জন্য আসলে আগামীতে কল্যাণকর কিছু নাকি অকল্যাণকর কিছু আছে। এই বিষয়গুলোই আমাদের না দেখা জ্ঞান। সেই জগতকে আমরা জানিনা, দেখিনা। 'আলিমুল গইব' যিনি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, তিনিই আমাদের সবকিছু জানেন, তার নির্দেশেই ঘটে পৃথিবীর সবকিছুই। আর তিনি যখন তার একজন বান্দাকে কোন অবস্থার মুখোমুখি করিয়েছেন, তার অর্থই হলো -- সেই অবস্থাটিতে তিনি বান্দার জন্য উপায়ও রেখে দিয়েছেন। যেন আমরা সেই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে, প্রার্থনা করে তার সাথে সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করতে পারি।

তাই যেকোন সমস্যাতেই তার কাছে সাহায্য চাওয়াই আমাদের সবচাইতে উত্তম এবং সঠিক কাজ। আল্লাহ ছাড়া আর কেউই আমাদেরকে সাহায্য করতে পারেন না। আর আল্লাহই আমাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে ঈমানের পরীক্ষা করে থাকেন, আমরা যেন সেই সময়গুলো তার সন্তুষ্টি নিয়ে কাটিয়ে যেতে পারি -- তাই দু'আ করতে হবে। কেবলমাত্র দু'আ আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

হাতে সময় পেলে স্কলারদের আলাপ শোনা যেতে পারে, আত্মার শান্তি আনয়নকারী বই, কুরআনুল কারীম পড়তে বসে পড়া যেতে পারে। তাদের গভীর জীবনবোধ থেকে উৎসারিত একেকটি বাক্য জীবনের মূল উদ্দেশ্যটিকে মনে করিয়ে দেয়। দুনিয়ার যাবতীয় ভোগ-বিলাস, আরাম-খাদ্য সবকিছুর চাইতেই আল্লাহর স্মরণ তো তার সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা শ্রেষ্ঠ কাজ। আর একজন স্পিরিচুয়ালি হাই বা অপেক্ষাকৃত দ্বীন ভালো বোঝা মানুষটির সাথে আলাপেই কেবল এই বিষয়গুলো উঠে আসবে জীবনের কঠিন সময়ের আলাপে। একজন মানুষ আসলে কারো জন্য অনেক বেশি কিছু করে দিতে পারেনা। সাথে সাথে থাকতে পারে, দু'টি কথা বলে দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারে বড়জোড়।

কিন্তু সূরা আসর থেকে শিখেছিলাম -- সমস্ত মানুষ ক্ষতির মাঝে নিমজ্জিত কেবলমাত্র তারা ছাড়া যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে। সেই সাথে যারা অন্যকে সৎকাজের নির্দেশ দিয়েছে ও সবর করার পরামর্শ দিয়েছে। আল্লাহকে ভালোবাসা মানুষরা আমাদেরকে সবর করতে বলে, আমাদেরকে দিশেহারা অবস্থা থেকে শান্ত থাকার জন্য উৎসাহিত করে, বুঝিয়ে দেয় এইসব খারাপ সময় পেরিয়ে যাবেই। কিছুতেই যেন পরের জীবনের ক্ষতিকর কিছু হয়ে না যায়।

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এমন রাহমাত হয়ে যাবার তাওফিক দেন -- আমরা যেন ঈমানকে শক্ত করে ধরে সৎকাজ করি আর অন্যদেরকে সবরের এবং সৎকাজের উপদেশ দিতে পারি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে কেবলমাত্র তার সন্তুষ্টি অর্জনের জীবন দান করুন এবং তিনি যেন আমাদের মৃত্যুর সময় আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।

  রেফারেন্স 
  [১] আহমাদ ৪/৪০৮, সহীহ আল জামে ২৩৬৫ :: উৎস - মুহাম্মাদ শাইখ আল মুনাজ্জিদ, গ্রন্থ - ঈমানী দুর্বলতা
  [ইবুক] আল ইয বিন সালাম : Trials and Tribulations -- বইটি ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাজের সংযুক্তি সহ প্রকাশিত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে