২৬ ডিসে, ২০১২

কষ্টের সাথে কীভাবে স্বস্তি থাকে?


 ♥ "নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে"
-- [সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৬]

এই আয়াতটা অনেক জায়গাতে উল্লেখ হতে দেখেছি, অর্থ ঠিক বুঝতাম না। আজকে কষ্টে অনন্যোপায় হয়ে সূরা ইনশিরাহ এর উপরে ইমাম সুহাইব ওয়েবের আলোচনা শুনতে বসলাম শুধু এই আয়াত দুইটার অর্থ জানবো বলে। মাত্র দু'টি আয়াতের অনন্য সৌন্দর্যে আমার অন্তরাত্মা প্রশান্ত হয়ে গেছে যার শাব্দিক ও অলংকারিক সৌন্দর্যের কথা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব না। আমি আমার শেখা কয়েকটি চিন্তা ও অনুভূতির কথা বলতে চাই --

প্রথমে উল্লেখ আছে "ফা ইন্নামা'আল উসরি ইয়ুসরান"। পরের আয়াতে আছে "ইন্নামা'আল উসরি ইয়ুসরান"।

এই ফা আগে আসার ব্যাপারটার আলোচনাটা দারুণ!

একই আয়াত দু'বার পুনরাবৃত্তি করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেয়া বার্তাটার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। এই আয়াত দু'টো সমস্ত উম্মাহর জন্যও প্রযোজ্য।

সবচাইতে সুন্দর জিনিস লেগেছে আমার কাছে, শেষের 'ইয়ুসরান" বা দুই যবর এর ব্যাপারটাতে। এই দুই যবর জিনিসটা শব্দটার সার্বজনীন ব্যাপ্তিকে বুঝায়। এখানে 'আল উসর' যেমন সব ধরণের কষ্ট/পরীক্ষা, তেমনি 'ইউসরন' দিয়েও কেবল চলমান কষ্ট/পরীক্ষার স্বস্তিকে বুঝায় না, বরং তা সার্বজনীন স্বস্তি/প্রশস্ততা।

হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একবার আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা) রোমানদের সাথে যুদ্ধে মুসলিমরা কেমন দুঃখ-কষ্ট ও ভয়ের সম্মুখীন হচ্ছিলো তা লিখেছিলেন চিঠিতে, উত্তরে উমার (রা)-এর লেখা কথাগুলোর একটা ছিলো, ঈমানদাররা সবসময়েই কোন না কোন পরীক্ষা, বিপদাপদ, কষ্টের সম্মুখীন হয় যখন তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে কেবলমাত্র আল্লাহই পারেন তাদের এই কঠিন সময়কে সহজ করে দিতে।

এই আলোচনাটিতে আমার মনটাকে দ্রবীভূত করে দিয়েছে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটা কথা যেখানে তিনি বলেছেন, ঈমানদাররা তাদের ঈমানের পরীক্ষা দিতে দিতে, দিতে দিতে এমন একটা অবস্থায় চলে যায়, যখন সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেয়। তখন তার অন্তরে অনুভব করে ঈমানের গভীর আর পূর্ণাঙ্গ স্বাদ, আল্লাহর কাছে সে ফিরে পায় আশা, তার বিশ্বাস, নির্ভরতা।

ঈমানদারদের আত্মার এই পরিতৃপ্তির এই অসাধারণ মাত্রাটা আর কে বুঝবে তিনি ছাড়া যিনি এমন অবস্থায় পড়েছেন আর আল্লাহর উপরেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী। আল্লাহ আমাদের জন্য দ্বীনের পথে চলা সহজ করে দিন।

স্মরণ করতে পারি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার একটি হৃদয়গ্রাহী উদ্ধৃতিকে --

 “ঈমানদারদের জীবন ক্রমাগত বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করানো হয় তাদের ঈমানকে বিশুদ্ধ এবং তাদের পাপকে মোচন করানোর জন্য। কারণ, ঈমানদারগণ তাদের জীবনের প্রতিটি কাজ করেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য; আর তাই জীবনে সহ্য করা এই দুঃখ-কষ্টগুলোর জন্য তাদের পুরষ্কার দেয়া আল্লাহর জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়।”
– ইমাম ইবনে তাইমিয়া
[মাজমু'আল ফাতাওয়া : ভলিউম ১৮/ ২৯১-৩০৫]


রেফারেন্সঃ

২৬ ডিসেম্বর, ২০১২

1 টি মন্তব্য:

  1. " ঈমানদাররা তাদের ঈমানের পরীক্ষা দিতে দিতে, দিতে দিতে এমন একটা অবস্থায় চলে যায়, যখন সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেয়।"
    কি করলে আল্লাহর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সপে দিয়েছি কিনা বুঝতে পারবো।

    উত্তরমুছুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে