২০ ডিসে, ২০১২

অন্তহীন ধৈর্যযাত্রা

সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আমার খুব অদ্ভুত আর গভীর একটা উপলব্ধি হচ্ছিলো। বারবার ফিরে ফিরে আমার মনে হচ্ছিলো, জীবনে একবার যখনই নিয়াত করেছি সবকিছু বুঝে -- আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হবো না। তখন থেকেই আসলে আমার ধৈর্যের সীমাহীন পথে পা রাখা শুরু হয়েছে। আল্লাহর বান্দা হবার জন্য অনন্ত ধৈর্যধারণ আসলে অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেমন এই ব্যাপারটা? হযরত নূহ আলাইহিস সালাম নাকি প্রায় সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াত দিয়েছিলেন উনার কওমকে, বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪০ জোড়া ঈমানদার নারী-পুরুষ। হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে সবাই ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল রোগাক্রান্ত অবস্থায়, একদিকে রোগ, অন্যদিকে আশেপাশে কেউ না থাকা। অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার -- উনি ধৈর্যহারা হননি।
আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তায়েফের মানুষরা কী অমানুষিক নির্যাতন করেছিলো ! তিনি নবুওয়াত পাওয়ার পরে আসলে পরিষ্কার হলো -- সমগ্র পৃথিবীতে যত মানুষ আসবে, তাদের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধেই। তিনি সেই বিশাল দায়িত্বকে তার ভালোবাসা, ধৈর্য, নেতৃত্ব দিয়ে পূরণ করেছেন। তায়েফের রক্তাক্ত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনো আশাবাদী ছিলেন, এদের পরের প্রজন্ম থেকে অন্তত মানুষরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে! তিনি আশাহত হননি। তাদের প্রতি আন্তরিক ছিলেন, তাদেরকেই ফিরে ফিরে জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে আনতে দাওয়াত দিয়েছেন, আল্লাহর একত্ববাদের কথা জানিয়েছেন। ইসলামের ছায়াতলে আসার জন্য জানিয়ে গিয়েছেন। আরবের মরুর বুকে ফোটা সেই ফুল যুগ-যুগান্তরে লোক-লোকান্তরে ছড়িয়ে গিয়েছে আজ। পৃথিবীর আনাচে কানাচে প্রিয় নবীর সেই বাণী ছড়িয়ে গেছে। তিনি সেই সবরের শিক্ষা দিয়ে গেছেন আমাদেরকে। নিজ জীবন দিয়ে শিখিয়েছিলেন।

আমরা আসলে কখনো সংখ্যানির্ভর ছিলাম না। সংখ্যায় মুসলিমদের গোণা হয়না। সংখ্যা হিসেব করলে অস্ত্রহীন, সমাজের উপেক্ষিতদের সংগরিষ্টতায় মাত্র ৩১৩ জন ঈমানদার কাফিরদের বিশাল বাহিনীর আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে সাহস করতেন না। তাদের অন্তরে ছিলো আল্লাহর প্রতি নিখাদ, নিষ্কলুষ ভালোবাসা আর বিশ্বাস, যা তাদের নির্দ্বিধায় ও নিঃশঙ্কোচে যেকোন ত্যাগকে মেনে নেয়ার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ করেছিলো। আর তারা আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন দৃষ্টান্ত। আমরা সেই জাতি। আমাদের আদর্শ অস্থির হয়ে হতাশ হবার না। আল্লাহ আমাদের অন্তরের আর্তিগুলো দেখেন, আমাদের কতটা গভীর অনুভূতি আর বিশ্বাস তার প্রতি --সেটাই দেখেন। একজন হতদরিদ্র শতচ্ছিন্ন পোশাকের ঈমানদার ভিখিরি এই পৃথিবীর সবচাইতে অর্থ ও ক্ষমতাশালী ঈমানবিহীন কাফিরের চাইতে আল্লাহর কাছে অকল্পনীয় রকমের প্রিয়।

ভালোবাসার মানুষদেরকে হাতে ধরে টেনে আনার চেষ্টা করতে হবে আপ্রাণ --সুন্দর কথায় আর কাজ দিয়েই। সমাজে শয়তানের কাজের জয়জয়কার হবে। কিন্তু সেই কারণে হতাশার টোনে কথা বলে আরেকজন ঈমানদার ভাইয়ের দৃঢ়তাকে নষ্ট করা যাবে না। আমাদের লক্ষ্য ক্রমাগত কাজ করে যাওয়া, মালাকুল মাওতকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নির্দেশ পালন করতে আসার পূর্ব পর্যন্ত ব্যস্ত জীবন আমাদের। ফলাফল ঐ পারে... ওই শান্তির দেশে পাওয়া যাবে।

এই জীবনের পরে যেই শান্তি পাওয়া, সেটা শেষ হবেনা, ঐ শান্তি আমাদের জন্য ফুলের, ফলের, সুগন্ধের, সম্মানের, আয়েশি বিছানার, প্রিয়জনদের সান্নিধ্যের এবং আমাদের সবচাইতে আকাঙ্খিত সেই মূহুর্ত -- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি পাবার জীবন। তাই, শুধুই কাজ করে যাওয়া, হাসিমুখে, নিঃশঙ্কোচে, নির্দ্বিধায় ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখান।

রেফারেন্স

২০ ডিসেম্বর, ২০১২ ঈসায়ী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে