২৯ ডিসে, ২০১২

গানের আসর, ঘুম ও মৃত্যু


{ ক }

আব্বু-আম্মু রোজা রেখেছিলেন আজ, বয়সের কারণে শারীরিকভাবেও তারা পুরো সুস্থ নন। কিন্তু বাড়ির ছাদের ভয়ঙ্কর শব্দের এই ব্যান্ড শো-তে যেই শব্দ দূষণ তাতে আমারই ঘুম দূরে থাক, মাথা ধরে গেছে। মানুষের ন্যুনতম কোন কমন সেন্স থাকলেও এইরকম অত্যাচার করা সম্ভব হত না।

আল্লাহ এই মানুষরূপী ইতরগুলোকে হিদায়াহ দিন। আধাঘন্টা ধরে বসে বসে প্রার্থনা করছিলাম যে থামবে হয়ত। ছাদভর্তি তরুণ-তরুণীদের উদ্দাম চিৎকারও শুনতে পাচ্ছি। এক নারীকন্ঠ আজকের এই আয়োজনে খুব হ্যাপি হয়েছে বলছে, সবাইকে এরপরের গানে নাচতে আহবান করছে -- হুম, ইতোমধ্যে নারীকন্ঠের হিন্দি গান শুরু হয়েছে।



একটা কথা মনে হচ্ছিল, মানুষ যেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সেভাবেই নাকি কিয়ামাতের দিন উঠবে। যারা মানুষ হজ্বের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় সেই পোশাকে মারা যাবেন, তারা সেভাবেই উঠবেন। যিনি জিহাদের ময়দানে মারা যাবেন, তিনি আল্লাহর নির্দেশে এমনভাবেই তার ক্ষতস্থান থেকে রক্তঝরা অবস্থায় উঠবেন। আল্লাহ জানেন, আমরা জানিনা আমাদের মৃত্যু কেমন করে হবে। সেরা মানুষেরা দু'আ করতেন যেন তাদের মৃত্যু হয় জীবনের সেরা কাজটির সময়। আল্লাহ যেন এমন কোন আয়োজনে আমাদের মৃত্যু না দেন, যার পুরোটাই আল্লাহর স্মরণবিহীন।

মানুষের মৃত্যু তো বলে কয়ে আসে না। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী সত্য, যখন তখন এসে হাজির হয়। যারা চট্টগ্রামের গার্ডার ধ্বসে মারা গিয়েছিলো, তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাপা পড়ে রূহ বিদায় নিয়েছিল, মালাকুল মাওতের সময়নিপুণতা অত্যন্ত সূক্ষ্ম। সেই দায়িত্ব পালন এক মূহুর্ত আগেও হয়না, পরেও হয়না। একটা দু'আ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবারা করতেন নিয়মিত -- "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফিতনাতিল মাহইয়া-ই ওয়াল মামাত"; আল্লাহ আমাদের জীবনের ও মরণের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।

মৃত্যুযন্ত্রনা বড়ই কষ্টের। আমরা সবাই ভুলে থাকি, আমরা বড়ই বোকা, আমরা খুবই নির্বোধ... আল্লাহ আমাদেরকে রহম করুন, মৃত্যুর মতন বিপদে আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন ।

স্বপ্ন কারখানা, রাত ১২টা ২০
২৯ ডিসেম্বর, ২০১২


{ খ }

পাশের বাড়ির ছাদের রাত একটা-দেড়টা পর্যন্ত বিয়ের উন্মাদনার ব্যান্ড শো হলো যেই রাতে, সে রাতেই বিদায় নিলেন আমাদের বাড়ির দোতলায় থাকা একজন ব্যক্তি। সকালে বাইরে যাবার সময় দেখি নিচে কফিন, খাটিয়ায় লাশ, আগরবাতি জ্বলছে। বিকেলে বাসায় ফিরলাম, বিয়ে বাড়ির বিয়ে উপলক্ষে এবার 'ব্যান্ড পার্টি'। ড্রাম, বাঁশির শব্দে এলাকা মাতোয়ারা। আপনাতেই বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।

এই তো জীবন আমাদের, এই সময়ের, এই সমাজের। যখন কেউ তার অর্থ-বিত্তের উত্তাপে বিভিন্ন খেলার কয়েক রাউন্ড ম্যাচের মতন করে বিয়ের অনুষ্ঠান করছে, তখনই কেউ দুনিয়ার জীবন পেরিয়ে চলে যাচ্ছে অনন্তকালের পথে। কী অবস্থায় আছে সেই মানুষের আত্মা তা আমরা জানিনা। সবচাইতে বড় কথা, আমরা ভাবতেও চাইনা আমরাও একদিন মারা যাব।

একটা মৃত্যুকে দেখে আমাদের মনে হয়না, এই পথে একদিন আমরাও পথিক হব। আমাদেরকেও মুখোমুখি হতে হবে এই খাটিয়া, কফিন, কবরের অন্ধকার, কবরের প্রশ্নোত্তর তথা পাশ/ফেল, মাটি চেপে ধরবে আমাদেরকে। প্রচন্ড কঠিন,  যন্ত্রণাময় আর পরীক্ষাময় সেই কবর। নিজেদের জীবনের কাজগুলো ছাড়া আর কিছুই যাবেনা অন্ধকার ঘরটাতে, খারাপ কাজগুলো বিকট রূপ নিয়ে সঙ্গী হবে কিয়ামাত পর্যন্ত। ভালো কাজেরাও সঙ্গী হবে সেখানে। আমরা কি চেষ্টা করছি? একটুও? স্মরণ কি করি মৃত্যুর কথা? অন্ধকার কবরের কথা? একটুও?

স্বপ্ন কারখানা, বিকেল ৫টা ১৫
২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

1 টি মন্তব্য:

  1. ভাইয়া... আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনার লেখাতেই আছে। আমরা মৃত্যুর কথা ভুলে যাই বলেই এত হেলায় ফেলায় আমাদের সময় নষ্ট করি। যে সময়ে আমাদের স্রষ্টার ইবাদাতে থাকার কথা, সেই সময় আমরা আধুনিকতার নানা ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হই :( এটা সত্যিই খুব দু:খজনক।

    উত্তরমুছুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে