মাঝে মাঝে আফসোসের ঢেউতে বুক উথাল পাথাল হয়ে যায়। হাইস্কুল লাইফ থেকে ভার্সিটি লাইফটা আসলে আত্মিক উন্নতির একটা চরম সময়। অথচ এই সময়টাতে কত অজ্ঞানতা আর অস্থিরতায় পার করেছি! অথচ এত সুন্দর কিছু দিক নির্দেশনা আছে, যা জীবন, আত্মা আর মনকে শান্ত ও তৃপ্ত করে। হতভাগা আমি সেগুলো সঠিক সময়ে জানতেই পারিনি। কথাগুলো মনে হয়েছিল ক'দিন আগে যখন সন্ধ্যার দিকে ঢাবি এলাকায় গিয়েছিলাম, তখন পথে প্রান্তরে দুঃখজনক, অগ্রহণীয় কিছু দৃশ্য দেখেছিলাম বলে। চারিদিকে ছেলেমেয়েদের উদ্দাম আনন্দের নামে বেহায়াপনাগুলোর সদম্ভ উপস্থিতি দেখে ভয় লেগে গিয়েছিল।
মনে পড়লো আব্দুল নাসির জাংদার 'Fighting Temptation' আলোচনাটির কথা, যেখানে তিনি সূরা ইউসুফের ২৩ নাম্বার আয়াত নিয়ে আলাপ করছিলেন। মিশরের যে ব্যক্তি ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কিনেছিলেন, তিনি উচ্চ পদমর্যাদার আর অভিজাত লোক ছিলেন। তার স্ত্রী [বাইবেলে যে যালিখা নামে উল্লেখিত] একদিন ইউসুফ (আ)-কে একা পেয়ে তার মনের খারাপ ইচ্ছাকে চরিতার্থ করতে চেয়েছিলো। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
♥"যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, "চলে এসো"। ♥ [সূরা ইউসুফ ২৩]
মুফাসসিরগণ বলেন, এইসময় ইউসুফ আলাইহিস সালামকে সদর দরজা থেকে অনেকগুলো দরজায় তালা দিয়ে তারপর এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেন তিনি পালাতে না পারেন। এরকম অসহায়ত্বে তিনি কী করেছিলেন? আল্লাহ সেটাও বলেছেন একই আয়াতে,
♥ ' ইউসুফ বললো, "আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন। (আর আমি এ কাজ করবো!) এ ধরণের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারেনা। ' ♥ [সূরা ইউসুফ ২৩]
আলোচনায় শুনেছিলাম, এখান থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে, যত কঠিন সিচুয়েশনই হোক, *আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াই হচ্ছে প্রধান কাজ*। তখন ইউসুফ আলাইহিস সালাম জানতেন বিশাল বাড়ির ফটকগুলো সব বন্ধ, তবু তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দরজা পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিলেন। আল্লাহই তাকে উদ্ধার করেছিলেন সেই কঠিন বিপদ থেকে। তেমনিভাবে, পরবর্তীতে যখন সমগ্র শহরের অভিজাত সুন্দরী নারীরাও একজোট হয়ে তাদের কথা মেনে না নেওয়ার কারণে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে লাঞ্ছিত করতে চেয়েছিল, তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলেন এর চাইতে কারাগারই তার কাছে প্রিয়, তবু এই অন্যায় ও অপরাধকে তিনি মেনে নিতে চাননি। [১] এই বিষয়টা নিয়ে খুব সুন্দর আলোচনা শুনেছিলাম সেদিন ইমাম সুহাইব ওয়েবের আলোচনায়।
আল্লাহ আমাদের বলেছেনঃ
"…নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য…"[সূরা আনআম - ১৫১]
"মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে… " [সূরা আন নূর :৩০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –
দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি শর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আমি তার পরিবর্তে তাকে সুদৃঢ় ঈমান দান করবো, যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করবে। [২]
আমাদেরকেও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে যেকোন বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার আশেপাশে এলেই, তারপর সাধ্যমতন সর্বোচ্চটুকু করতে হবে সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে -- আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। চারিদিকের এইরকম অনাচারের কালচারের মাঝে বেহায়াপনা দেখলে চোখটা বন্ধ করে প্রার্থনা করা যেতে পারে আল্লাহর কাছে, 'হে আল্লাহ! আপনি আমার জীবনসঙ্গীটিকে যেখানেই রেখেছেন, তাকে আপনি আপনার আশ্রয়ে রাখুন, অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন'। আপনার জীবনসঙ্গীটাও হয়ত আপনার জন্য এরকম সময়ে আপনার জন্যই দু'আ করবেন, আল্লাহর স্মরণে রত হবেন আপনার দু'আর উসিলায়। হতেই পারে এমনটা... কতই না সুন্দর সেই প্রার্থনার বেলা!
অস্থির এই সমাজের তরুণ ভাইবোনদের অন্তর সঙ্গী/সঙ্গিনীর জন্য অস্থির না হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় রত হোক, যেন তারা জীবনে একজন চক্ষু শীতলকরা মানুষ পান, সেই মানুষটির কাছেও যেন তারা চোখ জুড়ানো মানুষ হন। সেই সুন্দর দু'আ পড়তে পারি আমরা সবসময়েই --
"রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াযিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্কুররাতা আ'ইয়ুনিন ওয়া জা'আলনা লিল মুত্তাক্কিনা ইমামা"।
♥ "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।" ♥ [সূরা ফুরক্কানঃ ৭৪]
বিষয়ভিত্তিক আরো লেখাঃ
- ফেসবুকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নির্লজ্জতার প্রসার
- ক্রিকেট ম্যাচ, চিয়ার গার্ল এবং আমাদের ডিসেনসিটাইজড হওয়া
রেফারেন্সঃ
[অডিও] ইমাম সুহাইব ওয়েব :: Zina : The disease with a thousand faces
[ভিডিও] আব্দুল নাসির জাংদা :: Fighting Temptation
[১] মহিমান্বিত কুরআন -- সূরা ইউসুফঃ ৩৩
[২] তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন। সংগ্রহ : তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন [সূরা আন-নূর ৩০ নং আয়াতের তাফসীর]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে