কিছুদিন আগে ছেলেবেলার ঘনিষ্টতম বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তার কর্মস্থলে। তার ভার্সিটি লাইফের রুমমেটও সেখানেই কাজ করে। ধরি তার রুমমেটটির নাম আকাশ। দীর্ঘ কয়েক বছরের পরিচিতির জন্য সেই আকাশও বেশ চেনাজানা হয়ে গেছে। আমার বন্ধুটি মাসখানেক আগে বিয়ে করেছে, আকাশও অনেক বছর যাবত প্রেম করছে ক্লাসমেটের সাথে। বিভিন্ন রকম আলাপ আলোচনাতে এটা-ওটা বলতে বলতে হঠাৎ সেদিন ওরা দুই বন্ধু সাংসারিক টাইপ ব্যক্তিগত কিছু আলাপ করছিল আমার সামনে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে আমাকে একা থাকতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে নিরবতা ভঙ্গ করতেই হয়ত, আকাশ বললো,
-- তুমি বিয়ে করবা না? প্রেম তো কর না তাইনা?
আমি পরিশ্রমলব্ধ মুচকি হাসিখানি দিলাম।
-- পছন্দ করো কাউকে? আব্বা আম্মার পছন্দ আছে?।
আমি সংক্ষিপ্ততম ঘাড় একাত-ওকাত করে আলাপ এড়াতে চাইছিলাম।
আমার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে আকাশ বললো, "কিরে তুই কেমন ফ্রেন্ড, ওর জন্য মেয়ে খোঁজ"।
বন্ধু বলে, "ও তো অন্য টাইপের। নামাজি মেয়ে লাগবে।পাওয়া তো মুশকিল..."
আকাশ থুতনির নিচে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ঘসতে প্রায় আধা মিনিট চিন্তাভাবনা করে বললো, "শুনো, তুমি আমার ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টে একটা মেয়ে পাবা, নাম 'ক', নামায-টামায পড়ে, মাথায় কাপড় দেয় বলে জানি। বাসা অমুক জায়গায়..."
আমি অস্বস্তিতে রাস্তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে 'ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন' পড়ছিলাম। বলছিলো, "ফেসবুকে অ্যাক্টিভিটি দেখে পছন্দ হইলে পরে জানায়ো... "
আমি শেষমেষ ওর কাঁধে হাত দিয়ে আলতো করে চাপ দিয়ে বললাম, "বন্ধু, অস্থির হয়ো না। দেখি, আরেকটু অপেক্ষা করি। যদি দরকার পড়েই যায়, তোমাকে জানাবো"।
সেদিনই প্রথম টের পেলাম, জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী খোঁজার জন্য *ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি/ফ্রেন্ড বানানো* জিনিসগুলো বোধহয় ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। আমি টেরই পাইনি এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব। আমি ব্যাকডেটেড মানুষ। কতকিছু দেখেই অবাক হই! আকাশের কথা শুনে প্রতিউত্তরে সেদিন কিছু বলিনি। আমাকে বিবাহিত করানোর জন্য আগ্রহী-শুভাকাঙ্খী ঘনিষ্টতম বন্ধু-আত্মীয়দের মাঝেই তেমন একটা পাইনি, আকাশ "মাথায় কাপড় দেয়া" মেয়ে খুঁজতে চেষ্টা করেছে -- তাও তো কম না!
ব্যস্ত রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একটু যেন হারিয়েই গেলাম সেদিন সন্ধ্যাবেলায়... ভাবছিলাম, জীবনের প্রায় দু'যুগ সময় পেরিয়েও হতভাগা আমি প্রশ্নের উত্তরগুলো খুঁজে বেড়াতাম জীবনের ঘটনাগুলোর, কেন হয়, কেন এই জীবন, কেন এই জীবিকার চেষ্টা, কেন এই ভালোবাসা-সংসার-সহসাই মরে যাওয়া... প্রেমময় ও ক্ষমাশীল আল্লাহ তাঁর অপার রাহমাত দিয়ে যখন আমাকে দূর দিগন্তে আলো দেখিয়ে অন্তরের প্রশান্তিকে চেনার উপায় করে দিয়েছেন, তখন আমি অর্থহীন জীবন যাপন করতে, অশান্ত হৃদয় পেতে, নিশ্চিত হতভাগা হয়ে বারবার ভুল করার দুঃসাহস দেখাতে চাইনা। এই ঔদ্ধত্য যেন আমার কখনো না হয়।
জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি বিয়ে, দ্বীনের অর্ধেক বিয়ে। বিয়ের সাথে জড়িয়ে থাকে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেককিছুই, থাকে সন্তান-সন্ততির প্রশ্ন যারা গড়ে দিবে একটা পার্থক্য, তারা মৃত্যুর পরেও পৌঁছে দিবে কবরে সাদাকায়ে জারিয়ার নিরবচ্ছিন্ন সার্ভিস। এই সিদ্ধান্ত তো কোন ছেলেখেলা না! তবু বুঝি আমরা সবাই-ই অস্থির! হয়ত ভাবিই না, ভাবার ফুরসত পাইনা আমরা!
চলমান অস্থির সমাজে, জীবনসঙ্গী নিয়ে এইসব অস্থির খোঁজাখুঁজির পৃথিবী থেকে মুক্তি পাবার একটা উপায় নিয়ে আলাপ করা অসাধারন একটি লেখা পড়েছিলাম একটা ব্লগপোস্টে। সেই লেখাটা আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছিলো। মিশরীয় বোন মারিয়াম আমির ইবরাহিমিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সুন্দর লেখনীর জন্য উত্তম প্রতিদান দান করুন।
# লেখাটির লিঙ্ক : Hook up with Quran Allah will Hook you Up :: Mariam Amer Ebrahimi :: http://schoolofheart.blogspot.com/2012/09/hook-up-with-quran-allah-will-hook-you.html
MASHALLAH
উত্তরমুছুনShomot
উত্তরমুছুনহুম! কিছু মানুষ অস্থির থাকে আর কিছু মানুষ থাকে আতঙ্কিত। আমি ২য় গ্রুপে পরি। মানসিকতার মিল হবে কিনা এই বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্কের মূল কারণ। কি আর করা! আল্লাহ তা'আলা'র উপর তাওাক্কাল করা!
উত্তরমুছুনআল্লাহ তা'লা যেন তাঁর ঈমান্দার বান্দাদেরকে যোগ্য সঙ্গি দান করেন। আমিন।
"আমি অস্বস্তিতে রাস্তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে 'ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন' পড়ছিলাম।" ---এখানে এই দোয়া পড়ার ফজিলত/কারন কি ?
উত্তরমুছুনভাই, ওই পরিস্থিতিতে আমার উপলব্ধি করার দরকার ছিলো কুরআনের এই আয়াতটার অর্থটুকু। আমি চাইছিলাম আমার সাথে তার কথার ও বিষয়বস্তুর দুরত্ব যেন বৃদ্ধি পায় আর তাই আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব এইটা উপলব্ধির প্রয়োজন ছিলো। কোন দোয়ার ফযিলত জেনে নয় বরং কুরআনের আয়াতের হিসেবে জানা অর্থটুকু স্মরণ করতে এটা পড়েছিলাম। বারাকাল্লাহু ফিক।
মুছুন