চোখের সামনে ক্রমাগত অজস্র অন্যায়, মিথ্যা, কাম, ক্রোধ আর হিংসার জয় ও সদম্ভ আধিপত্য দেখে মন খারাপ হয়ে যায় প্রতিদিন। ভাবছিলাম, আমি জানি, এই কোটি কোটি মানুষের মাঝে আমি খুব ক্ষুদ্র একটা স্বত্ত্বা। আমি কি পারব এই দুনিয়ায় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে? আমি কি পারব এই অন্ধকারের মাঝে আলোকে স্থাপিত করতে? হয়ত আমি জ্বলে ওঠার আগেই নিঃশেষ হয়ে যাব, পারব কি সত্যিই কিছু করতে? পরক্ষণেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা মনে হলো। তার মন-প্রাণ কতই না সুন্দর ছিল, তিনি ছিলেন এই সৃষ্টিজগতের রাহমাতস্বরূপ, যিনি আরবের মানুষদের কাছে আল-আমিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন নবুওয়াতের পূর্ব পর্যন্ত; অথচ শুধুমাত্র আল্লাহর দ্বীনের কথা বলার কারণেই তাকে কতরকম অপবাদ দেয়া হয়েছিল, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা তাকে সইতে হয়েছিল অবিরত, একদম নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকেও। তবু তিনি নিঃশঙ্কোচে, নির্দ্বিধায় মানুষের উপকার করতেন, ভালোবাসতেন তাদের অন্তরের পরিবর্তনের আশা করে। কিয়ামাত পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বজাহানের মানুষের মুক্তির পথের দিশার জন্য তিনি চিন্তা করতেন, সে সুবিশাল দায়িত্বও তার কাঁধেই ছিল। তিনি সেই চাপে পিষ্ট হয়ে হারিয়ে যাননি, আমাদের মতই মানবজীবন ধারণ করেছেন -- শুধু কাজগুলো করেছিলেন সুনিপুণ করে। আমরা তো সেই মহান মানুষটারই অনুসারী, তাঁর আদর্শ, চরিত্র আর কর্মের অনুসারী।
...........................
এটুকু লিখতেই এইমাত্র আমার একজন কলিগের স্ট্রোকের খবর পেলাম। বয়স তার পঁয়ত্রিশের মতন হবে। কর্মচঞ্চল, হাসিখুশি লোকটা গতকাল রাত থেকে সিসিইউতে ভর্তি। সবাই খবরটাতে খুব অবাক হচ্ছে। আমার মনে হলো, আমাদের জীবনটা আসলে খুবই ছোট, আর আমাদের জীবনের শেষটাও অবধারিত, যার সময়টা কেবল আমাদের জীবনের মালিক, আল্লাহ জানেন। তাই, কোন বিশাল কিছু করে ফেলাতেই না, বরং আমাদের কাজটুকু মূলত নিজ নিজ সামর্থ্যের সম্পূর্ণটা উজাড় করে দেয়া। মনের মধ্যে যেন অজুহাত নিয়ে ঘুরে না বেড়াই, সন্দেহ আর নোংরামি না থাকে, ক্রোধ আর হিংসা, মিথ্যার প্রতি ভালোবাসা, খারাপ লোকের প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা না থাকে। সৎ ও সুন্দরকে যেন সবসময় সমর্থন করি, ছড়িয়ে দিই, আর অন্যায়কে যেন সবসময় প্রতিহত করি সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপায়ে।
আর এই প্রসঙ্গে হাদিসটি মনে পড়ে যায়--
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ♥♥ “আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও দেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করেন।” ♥♥ [মুসলিম]
# রেফারেন্স: রিয়াদুস সলিহীন -৭
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে