২৫ মার্চ, ২০১৪

শূণ্যতা-পূর্ণতা আর সৌম্য বিশালতায় প্রশান্তির আলাপ

সলাত শেষ হয়ে গেলে যখন সবাই মসজিদ থেকে চলে যায়, মসজিদের ভেতরের অংশের পেছন দিকে বসে মিম্বারের সামনে রেখে গোটা মসজিদের সৌম্য বিশালতাকে দেখতে আমার ভালো লাগতো। কেমন যেন প্রাণের শূণ্যতা তৈরি হয়, এবং সেই শূণ্যতা এক অদ্ভুত পূর্ণতা পায় একটা নির্ভরতায়। এই অনুভূতিটা মসজিদে বসে যতটা হয়, অন্য কোথাও হয় না। এক অদ্ভুত প্রশান্তি জনশূণ্য মসজিদে তিলাওয়াতের প্রতিধ্বনিতে হয়, যার তুলনা করার মতন অন্য কিছু পাইনি কোনদিন...

আমি শহরের বাইরে 'ট্র্যাভেলিং করতে' খুব বেশি ঘুরতে যাইনি। সবাই দলবেঁধে অনেক জায়গায় যায়, মজা করে, ছবি তোলে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লাইক কমেন্ট নেয় -- এই বিষয়গুলো কেন যেন আমাকে তেমন একটা টানেনি। কিন্তু আমি জেনেছি যে একটানা শহুরে জীবনে বা পারিবারিক জীবনে অনেক কাজকর্ম করতে করতে চাপে পিষ্ট হয়ে গেলে একটু 'রিল্যাক্সড' হওয়া প্রয়োজন, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তা উপকারী...

আমি আলহামদুলিল্লাহ আজীবনই বড় বড় মসজিদগুলোতে সলাত আদায়ের যে সুযোগ পেয়েছিলাম, সেখানে সলাতের পরে একটু বসে থেকে আল্লাহর স্মরণ করতে করতে নিজের তুচ্ছতাকে তার হাতে সোপর্দ করে ভারমুক্ত হতাম। হয়ত হৃদয়ের ক্লেশ-কষ্ট-ক্লান্তি-দুঃখগুলো আল্লাহর কাছেই ঝেড়ে ফেরা যায় মসজিদ থেকে, তাই 'আউটিং' করার সময়-সুযোগ না পাওয়াটা আফসোসে পরিণত হয়নি।

অনেক মানুষকেই দেখি সলাতের পরে মসজিদে চুপচাপ বসে চাইতে থাকেন, কাঁদতে থাকেন। তখন অনুভূতি হয়, কারা আসলেই অনেক সম্পদশালী। যেই মানুষগুলো এভাবে চাইতে পারেন, কান্নাকাটি করতে পারেন, তাদের গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর কাছে কোনমাত্রায়, তা ভাবলে নিজেকে কেমন তুচ্ছাতিতুচ্ছ সত্ত্বা বলে মনে হয়! আমি ব্যক্তিগতভাবে চেনা অনেকের জীবনে দেখেছি তারা চাওয়ার বিনিময় পেয়েছেন, অনেকে পার্থিব কিছু হয়ত পাননি, ঈমানকে পেয়েছেন আরো মজবুত করে! এই কারণেই হয়ত অভিজ্ঞ মানুষদের মুখে শোনা যায়, 'আল্লাহর কাছে চাওয়ার মতন চাইতে হয়'। আমাদের চারপাশে কত সাধারণ পোশাকে এমন অনেক আল্লাহর প্রিয় কিছু অসাধারণ মানুষ লুকিয়ে আছে! আফসোস! আমরা তাদের হয়ত আলাদা করে চিনিও না...

[২৪ মার্চ, ২০১৪]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে