১৮ মার্চ, ২০১৪

বাবা-মা ও স্ত্রীর অধিকার

​​​​আজকে একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম যার বিষয়টা বেশ আগ্রহ উদ্দীপক ছিলো - "বাবা-মা ও স্ত্রীর অধিকার", এতে বক্তব্য রেখেছিলেন ড এম সাইফুল্লাহ। প্রথমে প্রায় দেড় ঘন্টা আলাপে কুরআন এবং হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আব্বা-আম্মার অবস্থানটা এতই উঁচুতে থাকাটা পরিষ্কার করলেন যে মাঝে মাঝে অতীত জীবনের জন্য চোখ মুছতে হয়েছে, অন্তর কেঁপেছে নিজ জীবনের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা ভেবে... তবে, স্ত্রীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টা খুব অল্প আলোচনা করে 'টি ব্রেক' হওয়ায় কিঞ্চিত হতাশ হয়েছিলাম কারণ সেটা ভালো করে জানাও খুব জরুরি মনে করেছিলাম...

বিরতির পর ছিলো 'কোশ্চেন-আন্সার' সেশন। এসময় সেই হতাশা কেটে গিয়েছে সুন্দর সেশনটির কারণে। উপস্থিত ভাই ও বোনদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের মধ্যকার সমন্বয় করতে যে কষ্ট করতে হয় ছেলেদের, কিংবা স্বামী-শশুর-শাশুড়ি নিয়ে মুসলিমাহ মেয়েদের যে কষ্ট করতে হয় সেসব ব্যাপারে কিছু অসাধারণ প্র্যাকটিক্যাল টিপস দিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় শাইখ সাইফুল্লাহ। শিখেছি অনেক কিছু, উপলব্ধি আর অনুধাবনের অংশে যোগ হয়েছে অনেক বেশি, আলহামদুলিল্লাহ।

অনুষ্ঠানে হালকা নাশতা আর পানি ছিল, একটা নোটবুক আর কলমও উপহার হিসেবে দিয়েছিলো আয়োজক আইসিডি। উপহার পাওয়া সেই নোটবুকে কুরআন-হাদিসের আলোকে হওয়া মনোমুগ্ধকর আলোচনা থেকে আমার শেখা কিছু ছোট ছোট পয়েন্ট তুলে রেখেছি --

- বাবা মায়ের সাথে ইহসান করা উচিত। খুবই সুন্দর আচরণ করতে হবে যা হবে দয়া আর ভালোবাসাপূর্ণ। তাদের মনে কষ্ট হতে পারে এমন আচরণ কিছুতেই করা যাবে না।
- যদি চাই আমাদের দোয়াগুলো আল্লাহ কবুল করুক, তাহলে আব্বা-আম্মাকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে।
- দুনিয়ার বুকে দীর্ঘ হায়াত পেতে চাইলে আব্বা-আম্মাকে সন্তুষ্ট রাখা উচিত।
- রিযিকে প্রশস্ততা পেতে হলে আব্বা-আম্মাকে খুশি রাখার চেষ্টা করা দরকার।
- নিজের সন্তানের কাছে যদি ভালো ব্যবহার পেতে চাই, আব্বা আম্মার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
- পুত্রসন্তান হিসেবে আমি এবং আমার সকল সম্পদেই রয়েছে আমার পিতার সম্পূর্ণ অধিকার।
- পিতামাতার অবাধ্যতা আমাদেরকে পৃথিবীর বুকেই দ্রুত আজাবপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দেয়।

- আব্বা-আম্মা যদি মারা যান তবে কয়েকটি কাজ করা উচিত: (১) তাদের জন্য দু'আ করা, (২) তাদের হয়ে অন্যদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া, (৩) তাদের অসিয়ত পূর্ণ করা, (৪) তাদের যারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন ছিলেন তাদের খোঁজখবর নেয়া ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

- ছেলেদের জন্য স্ত্রী হলো দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ সম্পদ, সন্তানরা পিতামাতার শ্রেষ্ঠ উপার্জন।
- স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অন্যকে দোষারোপ করার অভ্যাস না থাকা উচিত।
- নিজের কোন চাহিদা থাকা সত্বেও যদি অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার অভাব পূরণকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে আল্লাহর কাছ থেকেই উত্তম প্রতিদান পাওয়া যাবে।
- সময়ের সাথে সাথেই স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কটি প্রগাঢ় হয়, যে অনুভূতিটাকে 'রাহমাহ' বলা হয়েছে।
- কারো কোন বক্তব্য না শুনে তার ব্যাপারে কোন অভিযোগ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়।
- কারো মৃত্যুর আগে তার সম্পদ বন্টনের কোন ধরণের সুযোগ নেই।
- অধিকার দাবী করা যেতেই পারে, তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না। অন্যদের প্রতি উত্তম আচরণ ও তাদের অভাবপূরণের চেষ্টা করা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার উত্তম উপায়। যে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করে, আল্লাহ তাকে রহম করেন।

আলোচনা শুনে টুকে নেয়া এই নোটে কোন ভুল থাকলে তার দায় একান্তই আমার। আল্লাহ আমার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে সবার সাথে শেয়ার করার সদিচ্ছাটুকু কবুল করে নিন। [১৭ মার্চ, ২০১৪]