১৪ এপ্রি, ২০১৩

এই শহর, এই নতুন বছর, এই উদ্দামতা

এই নগরীতেই আমার জন্ম, এখানকার আলো-বাতাস, ধুলোমাখা রাস্তায় পা মাড়িয়েই আমার বেড়ে ওঠা। একটা কাজে বেরিয়েছিলাম সকালে। রাস্তায় আজকে যে নারকীয় অভিজ্ঞতা হলো, তা আগে কখনো হয়নি। আসরের আগে ফেরার পথে প্রবল জ্যামে বারবার বাস হার্ডব্রেক করছিলো। একবার তো সামনে সিটে বাড়ি খেয়ে নাক দিয়ে রক্ত পড়লো। রুমাল চেপে বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। সামনে অনেকদূর রাস্তার সকল বাস-ট্রাক থেমে আছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম আশেপাশে কনসার্ট হচ্ছে তাই এত জ্যাম। ফুটপাথে হাঁটার উপায় নেই, প্রচন্ড ভীড়। এতগুলো নানান বয়সের কপোত-কপোতী ও অন্যান্যরা এই গরমে, ধুলোয়, রাজপথের নোংরা পরিবেশে কেন কষ্ট করে দাঁড়িয়ে ছিলো/পথ চলছিলো?

লম্বা একটা পথ হেঁটে ফেরার সময় মনে হলো পথে নারী উপস্থিতি পুরুষের চাইতে অনেক বেশি ছিল। হাঁটার সময় খেয়াল হচ্ছিলো যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা 'পুরুষ' একদৃষ্টিতে কোন মেয়ে পড়লেই তাকিয়ে ছিলো, বলাই বাহুল্য লক্ষ্য তাদের আধুনিকা শাড়ি পরিহিতারা। সবকিছু চিন্তা করে কেমন দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। যেই ব্যাপারটা আমি টের পাচ্ছি, সেটা ঐ মেয়েটা বা তার সাথের সঙ্গী টের পাচ্ছেনা, তা কী করে হতে পারে? এই স্বেচ্ছা প্রদর্শনের মাঝে কী আনন্দ থাকতে পারে, আমার বোধগম্য হয়না। প্রায় আধাঘন্টা হেঁটে আগানোর জন্য রিকসা খুঁজছিলাম এমন সময় পিচ্চি কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে, একদম ছোট্ট মেয়েদের পোশাকে আবেদনময়তা কেন সৃষ্টি করার চেষ্টা হলো যা দিয়ে তাদের বড়দের মতন করে ভাবতে হয়?

দীর্ঘ সময় ধরে দৃষ্টি অবনত করতে করতে রিকসায় বসে একসময় তা দু'হাতের আঙ্গুলেই স্থির করতে বাধ্য হলাম। প্রচন্ড উদ্দাম অস্থিরতা আশেপাশের রিকসাগুলোতেও, পথচলায়। অনেক কিছু ভেবে একসময় চোখে পানি চলে এলো। আমি জানি, যারা এসব অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছে তাদের আত্মায় কোন প্রশান্তি নেই, তারা অশান্তির এক চেইন রি-অ্যাকশনে জীবনকে সঁপে দিয়েছে। আমি জানি, একেকটা পাপ আরো অজস্র পাপের জন্ম দেয়, একেকটা মিথ্যা অজস্র মিথ্যার জন্ম দেয়। প্রতিটি পাপ মানুষের অবস্থানকে নীচ থেকে নীচুতর করে, আল্লাহর সাথে দুরত্ব ক্রমশঃ বাড়াতেই থাকে। পাপ করতে করতে একসময় তা অন্তরকে পাথরের মতন কঠিন করে দেয়। সেই অন্তর তখন আল্লাহর স্মরণে বিনীত হয়না, সেই অন্তর তখন ইস্তিগফার করতে পারেনা, সেই অন্তরে তখন সুকুন আসে না। সলাতে দাঁড়ালে প্রখর রৌদ্রেও তারা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর ফাগুনের হিমেল হাওয়ার স্পর্শ পাওয়ার অনুভূতি হৃদয়ে পায়না।

আফসোস! আমার ক্ষমতা নেই এই ভুল পথে পাগলের মতন ছুটতে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু করার। আমার নিজেরই যুঝতে যুঝতে একসময় ক্লান্তি চলে আসে, গভীর থেকে অনুভব করি যে এক আল্লাহর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা। হিদায়াতের মালিক কেবল তিনিই। তিনি আমাকে দয়া করেই এই উপলব্ধিটুকু দিয়েছেন। এই ভীড়ের উচ্চকিত হাসির আর্তনাদে, মোটর সাইকেলের ভুম-ভুম আতঙ্কময় শব্দের মাঝেও ভাবছিলাম আল্লাহ নিশ্চয়ই অজস্র মানুষ এখনো এই পৃথিবীতে জাগরূক রেখেছেন যারা ফিতনা-ফাসাদের মাঝেও আল্লাহকে স্মরণকরে, তাকে ভয় করে, তাকে ভালোবেসে, তার কাছেই একদিন ফিরে যেতে হবে ভেবে নিজেদের অন্তরকে ও শরীরকে পবিত্র রাখে। আল্লাহ সেই মানুষদের প্রতি রাহমাত বর্ষণ করুন। আল্লাহ এই গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের হিদায়াহ দিন। এমন সমাজে থেকে তেমন কিছু করতে না পারার অপরাধে যেন আল্লাহ আমাদেরকে পাকড়াও না করেন। হে রাহমান! আমাদের সমাজকে আপনি রক্ষা করুন!

[১৪ এপ্রিল, ২০১৩]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে