৯ এপ্রি, ২০১৩

হাজার বছর এই বাংলার মাটি মুসলিমদের রক্তে আর অশ্রুতে ভেজা

মাত্র কয়েকশত বছর পেছনে তাকাই? বৃটিশরা যখন এই ভূখন্ড কব্জা করে নিলো, তখন অন্যায়-অত্যাচারে কিন্তু কিছু লোক হাত মিলিয়েছিলো, তারা জমিদার হয়েছিলো, নীলকর হয়েছিলো -- তারাই সুবিধাভোগী ও অন্যায়কারী স্থানীয় লোক। সাধারণ মানুষ তখনো যন্ত্রণাদগ্ধ ছিলেন, অর্থনৈতিক-সামাজিক-ধর্মীয়ভাবে তারা শোষিত ছিলেন। মাওলানা হাজী শরীয়তুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিদ'আত-শিরকমুক্ত সমাজ গঠনে, দাওয়াতের আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে। মানুষকে জ্ঞানের আলোয় মুক্ত করার এই আন্দোলনের নেতা ২০ বছর মক্কায় সেরা আলেমদের ছাত্র ছিলেন। তার পুত্র পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২) সেই আন্দোলনকে তরান্বিত করেন যিনি নিজেও মক্কায় পড়াশোনা করেন অনেকগুলো বছর। ফরায়েজি আন্দোলনে তিনি ইংরেজদের ও তাদের সমর্থনকারী জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ দেন। মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়ার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর (রাহিমাহুল্লাহ) যিনি কুরআনের হাফিজ ছিলেন। মুসলিমদের দাড়ির উপরে খাজনা ছিলো তখন। তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ন অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর বৃটিশ সৈন্যর তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের অক্রমন করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেনি; তিতুমীর (রাহিমাহুল্লাহ) শহিদ হন। পরবর্তীতে ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলনের এমন অনুপ্রেরণা থেকেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ হয়। এমন মানুষদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়েই ব্রিটিশরা ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে যায়, অবশেষে ভারতবর্ষ ছাড়ে ১৯৪৭ সালে।


বাংলার এই মাটি অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা শান্তিপ্রিয় লোকদের মাটি। এখানে হিন্দু-মুসলিম ছিলো শত-সহস্র বছর, রায়ট হয়নি কখনো, ইতিহাসে পাইনি। নতুন করে মিথ্যে গল্প বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবেনা, কোন্দল লাগানোর এই প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাবে ইনশাআল্লাহ। এই শান্তিপ্রিয় সহাবস্থান ঐতিহাসিক। এই মাটিতে আছে শোষিত নিপীড়িত মানুষের রক্ত, অশ্রু। এই মাটি শাহজালাল, শাহপরান, শাহমখদুম, বায়েজিদ বোস্তামী (রাহিমাহুমাল্লাহ) এবং আরো হাজার আউলিয়াদের দাওয়াত এই মাটির মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে আছে। এই দেশের মানুষ ইসলাম অতটা গভীর করে হয়ত জানেন না, হয়ত তারা অনেক বিদ'আতে লিপ্ত আছেন অজ্ঞতার কারণে। কিন্তু এদেশের মানুষের রয়েছে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি অকৃত্রিম গভীর ভালোবাসা। রাসূল(সা) অপমানিত হলে তাদের কলিজায় আঘাত লাগে, ঈমান জেগে ওঠে। এই মানুষদের বিভ্রান্ত করা এতই সোজা? অথচ গোটা পৃথিবীর কোথাও উগ্র নাস্তিকদের স্থান হয়নি। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে তাদের অস্তিত্ব, তারা হয়েছে বিতাড়িত, তারা ইসলামবিদ্বেষী ও তারাই শেকড়কাটা। এই শেকড়কাটাদের ফলাফল হয় আবু লাহাবের মতন লা'নাতপ্রাপ্ত হয়ে। ধ্বংস তারা হবেই, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের স্থান হবে নিকৃষ্টতম।

যখন কোন পাথর ভাঙ্গা হয়, তখন শেষ আঘাতটিতে আসলে ভাঙ্গেনি, প্রথম থেকে প্রতিটি আঘাত তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। আবার গড়ে ওঠাও তেমনি, ধীরে ধীরে বীজ থেকে চারাগাছ মহীরূহ হয়। তিতুমীরের কথা সত্য হয়েছিলো, বাংলার মানুষ মুক্ত হয়েছিলো। আমরাও উগ্র নাস্তিকমুক্ত দেশ গড়ব। আমাদের কাজ দাওয়াহ। প্রতিদিন প্রতিটি মানুষকে অল্প অল্প করে হলেও দ্বীনের দিকে আনতে চেষ্টা করতে হবে। একটা হাসি, একটা উপকার, রাসূল(সা)-এর হাদিস, সাহাবাদের জীবনী ছড়িয়ে দিতে হবে চারপাশে। পরিবর্তন একদিন আসবেই এই মাটিতে, বড় আকারে; হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস আমাদের। আখিরাতের সফলতা তো মু'মিনদেরই, যত কষ্ট হোক, ত্যাগ হোক -- আল্লাহ যেন যোগ্যতা দিয়ে সেই দলে আমাদেরকে রাখেন।

০৯ এপ্রিল, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে