২৪ জানু, ২০১৪

প্রাইভেসি

​প্রাইভেসি তো আজকাল খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তবে, আমি শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে প্রাইভেসির কথা বলছি না। এইসব অতি-টেকি যুগের আগের আমলের একটা প্রাইভেসি ছিলো না? সেটার কথা মনে পড়লো। টিন-এজের মাঝের দিকে, বন্ধুদের কেউ কেউ একটু বড় হয়ে 'প্রাইভেসি' পেয়ে আলাদা রুম পেতো। ছুটির দিন ক'জন একসাথে হয়ে 'প্রাইভেসি'-পাওয়া বন্ধুদের বাসায় তাদের রুমে যাওয়া হত আড্ডার উদ্দেশ্যে, তখনই জানতাম প্রাইভেসিওয়ালাদের কম্পিউটারে 'হিডেন' কিছু ফোল্ডার অনেকের 'এক্সাইটমেন্ট' থাকতো। এসব জানার পরে এক ধরণের আতঙ্ক থেকে আর কখনো ঐরকম বন্ধুদের ঘরে সেঁধিয়ে যাবার সুযোগ দিতাম না নিজেকে।

 হল লাইফটাকে ভালো লাগত। একটা রুমে চারজন থাকতাম, 'হাইডিং/প্রাইভেসির' বালাই নাই। একবার একজন ভাই বুদ্ধি দিয়েছিলো যেন মনিটরটা দরজামুখী হয় -- তাহলে ক্লিক করায়, ব্রাউজিং করায় সতর্ক থাকা হবে। অনেক বন্ধু মোবাইলে তুখোড় পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখত-- গার্লফ্রেন্ডদের সাথে মেসেজ চালাচালি হয়ত কারণ ছিলো, কে জানে!! বড় পরিবারের সদস্য হওয়ায় দরজা বন্ধ করে থাকার প্র্যাকটিসটা হয়নি কখনো, নিজের একার রুম ছিলো না কোনদিন তাই জানি না এই 'প্রাইভেসি' কেমন ব্যাপার। জীবনের এই পর্যায়ে এসে মনে হয়, সেইটা আমার জন্য একটা নিয়ামত ছিলো। ভার্সিটিতে পা দেয়ার পর থেকে অনুভব করেছিলাম, মোবাইল ফোন কারো হাতে যাওয়ার আতঙ্ক যার কম থাকে, তার মধ্যে ভেজাল কম থাকে, তার 'প্রাইভেসি' টেনশন কম আরকি!

যা হোক, প্রাইভেসি নিয়ে আমার ভাইয়ার একটা কথা আমাকে বেশ চিন্তার খোরাক দিয়েছিলো -- যাদের ব্যক্তিগত জীবন যত বেশি পরিচ্ছন্ন, তাদের আপনজনদের কাছে তাদের লুকানোর বিষয় তত কম। 

তাই, পৃথিবীর নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি মূহুর্তই পৃথিবীর সবার কাছে উল্লেখযোগ্য।

আর আমাদের একেকজনের জীবনের অনেক ঘটনাই লুকিয়ে রাখতেই আমরা চাই, উন্মোচন হয়ে যাওয়ার বিষয়টা আতঙ্কের। যার যত বেশি ভুল কিংবা অপরাধ -- তার আতঙ্ক তত বেশি। একথা আবার এখনকার সময়ে কম খাটে। লোকে নির্লজ্জতা আর পাপ দেখে ফেলার ব্যাপারে ইদানিং বেশিরভাগ মানুষেরই যেন তেমন একটা গা থাকে না, 'হু কেয়ার্স' টাইপের মানসিকতা আরকি! অথচ প্রতিটি পাপ অজস্র সাক্ষী সহকারে ঘটানোর ধৃষ্টটাতা আল্লাহর সাথে কোন মাত্রার 'ড্যাম-কেয়ারনেস', সেইটা সুস্থ মনের লোক মাত্রই অনুমান করতে পারেন। আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন। আখিরাতে তো খারাপ কাজের সাক্ষীরা কেউ কাউকে ছাড় দিবো না!

যে তথাকথিত 'প্রাইভেসি' আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজে সাহায্য করে, সেসব থেকে আল্লাহ যেন আমাদেরকে মুক্তি দেন। আমরা যেন স্বচ্ছ আর সুন্দর চরিত্রের হতে পারি, যারা তাদের নিকটজনদের কাছে নির্ভরতার ও নিশ্চিন্ততার প্রতীক হতে পারে। চারিত্রিক পবিত্রতা এক বিশাল নিয়ামত, তারাই তো আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় যার চরিত্র উত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম চরিত্র অর্জনের তাওফিক দিন।