২৩ জানু, ২০১৪

কৈশোর-তারুণ্য ও যৌবনের জন্য সহজ পর্নোগ্রাফি

​আপনি শহরের রাস্তায় চলবেন আর আশেপাশের হুড তোলা রিকসায়, সিএনজির দিকে জোড়া নারী-পুরুষের নির্লজ্জতার শঙ্কায় তাকাতে অস্বস্তিতে থাকবেন না -- এমনটা মনে হয় খুব কম মানুষেরই হয় ইদানিং। সেদিন বাসে করে এক তিন রাস্তার মোড় পার হচ্ছি, একদিকে শীতের প্রসাধনীর বিলবোর্ডে অর্ধনগ্ন নারী, চোখ ফিরিয়ে বামে তাকাতেই একটি ফার্নিচারের বড় বিজ্ঞাপন, তাতে এক নারী সি-বিচে আধশোয়া, এবার সামনে তাকাতে আরেকটা পণ্যের একই রকম বিজ্ঞাপন। শেষে জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে হাতের উপরে চোখ স্থির করতে হলো। বিজ্ঞাপনগুলোর অবস্থা এমনই যে বাসের টিকিট বিক্রি করতেও এখন নারীর ছবি থাকে। বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে এক তৈরিপোশাক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন দেখে মনে হয় নারী ছাড়া কেউ পোশাক পরে না আর পড়লেও দেশের নারীরা হয়ত স্লিভ পরেননা। এমনকি, ফার্নিচারেও নারী, ড্রিংসেও নারী -- সকলেই আঁটোসাঁটো পোশাকের, অথবা অর্ধনগ্না। মোবাইল অপারেটরদের বিষয় নিয়ে নতুন করে বলার নেই, তরুণদের ডিজুস করা, বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবলের ট্যাবলেট গিলিয়ে সমাজকে ঘুণপোকা ধরানোর কাজটা ওদের হাতে হয়েছে আজ থেকে দশ বছর আগে থেকেই।

সবখানেই যিনার ছড়াছড়ি --ব্যাভিচার, নির্লজ্জতা। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, টিভির বিজ্ঞাপনে 'এমন নরম কোমল ত্বক শুধু ছুঁতে মন চায়' টাইপের কথা ছিলো বলে  লজ্জা আর অস্বস্তিতে টিভির রুম ছেড়ে চলে যেতাম কেননা হয়ত ভাইয়া, আপু কিংবা আম্মু সামনে থাকত। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের বাসায় কার্টুন দেখতে গিয়ে 'জনি ব্রাভো' অ্যাড দেখেই কখনো দেখার রুচি হয়নি, অপছন্দ করতাম কার্টুনটা। সেই বয়সে আদর্শিক শিক্ষা যতটুকু, তার চেয়ে মনে হয় সেটা ফিতরাতের অংশ যে লজ্জাশীলতা-- তা থেকেই অমন হতো। আমার পড়াশোনাটা আর বেড়ে ওঠা সাধারণ আদর্শহীন এক শিক্ষাব্যবস্থায় যেখানে ধর্ম অনেক দূরের কিছু, কখনো কখনো শুধুই কিছু আচার। ধীরে ধীরে নির্লজ্জতা নিয়ে আমার ডিসেনসিটাইজেশন দেখেই আমি অবাক হয়েছি, ঠিক কবে কোথায় আমার মাঝেই এত বড় একটা পরিবর্তন তথা অবনতি হয়েছে আমি টেরই পাইনি। নিজেকে নিয়ে যখন বিব্রত-লজ্জিত থাকি তখন আশেপাশের কিশোর-তরুণদের মাঝে কিছুক্ষণ থাকলে আমার বাস্তবিক অর্থে দমবন্ধ হয়ে আসে। মাত্র ক'টা বছরে কত বিশাল পরিবর্তন এই সমাজে, এই কিশোরদের কাছেই হয়ে গেছে। আমাদের গন্তব্য কোথায়? ভেবে স্তব্ধ হই।

আমি টিভি দেখিনা ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই। ভালো লাগতো না, সময়ও হয়ে উঠতো না। ভার্সিটি লাইফে হলিউডি মুভি দেখার চেষ্টা করতে গিয়েছিলাম কয়েক মাস, টের পেলাম আমাকে এই জিনিস কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম মুভি দেখার অভ্যাস। হলের টিভিরুমে বলিউডি মিউজিক ভিডিও দেখার সাহস হতো না, অশ্লীলতার এক ভীষণ পর্যায় আইটেমের নামের সবার 'হিট' সংগুলো। আমি জানিনা সবাই কীভাবে পারে, আমার অনেক প্রশ্ন জাগত ঐ বয়সে -- সবার মন কি এতই নিষ্কলুষ? শুধু কি আমারই এইরকম খারাপ লাগে আর ভয় লাগে? তখন চুপচাপ থাকলেও এতগুলো বছর পরে এখন মনে হয়, সম্ভবত ওরা ডিসেনসিটাইজড আর নাহয় মিথ্যুক। তবে, টিভি-মুভি-মিউজিক টাইপের বিনোদন না থাকায় মানসিকভাবে কিছুটা চাপে থেকেছি অনেক বছর, খারাপ লাগত, মনে হতো আমি দ্বীপান্তরের এক যন্ত্রণাবিদ্ধ মানুষ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আল্লাহর কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাকে এই অভ্যাসগুলো থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন বলে হয়ত আজো টিকে আছি। নয়ত এই সমাজের এই নোংরা স্রোতে -- কোথায় হারিয়ে কী করতাম ভেবে শিউরে উঠি।

ক'দিন আগে একটা ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম -- একগাদা চাকুরিজীবি ক্লাসমেট সেখানে থাকে। টিভিতে চলছিলো 'কালারস' নামের চ্যানেলের কীসের যেন পুরষ্কার বিতরনী। সেই টিভি পর্দায় বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে মনে হচ্ছিলো, আর যাই হোক, আমার কয়েক মাসের সংযম ও সাধনা এই কয়েক মিনিটে উড়ে গেলো/যাবে। সেখান থেকে উঠে গেলেও এরপরেও দু'একবার টিভির সামনে দিয়ে যাবার সময় পর্দার দৃশ্য চোখে পড়ায় শেষমেষ বলেই বসলাম, এরকম করে কীভাবে অবলীলায় দেখা যায়? খারাপ লাগা বোধ হয়না? ফ্যামিলি লাইফে কিছু ভালো লাগবে আদৌ? ... নগ্নতা, যিনা এই সমাজে এতই বেশি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে; চোখের পলকে কী ব্যাপক পরিবর্তন আসছে -- এইসব এড়িয়ে যাবার উপায় নেই আমাদের। যারা প্রেমের নেশায় বুঁদ, যারা বিনোদনের নেশায় বুঁদ, কোন অন্যায়-মৃতদেহ তাদের নাড়াতে পারে না। আদর্শ তাদের সহজে স্পর্শ করতে পারে না। তাদের কাছে তাই সমাজের ভালো কিছু আশা করাই অস্বাভাবিক। যেই শিক্ষায় বড় হয়ে সবার অনেক ডিগ্রি হয়েছে, তাতে শুধু টাকার-মেশিন হতে চাওয়া ছিলো, মানুষ হওয়া নয়, আল্লাহর দাস হয়ে পৃথিবীর দাসত্ব থেকে আল্লাহর দাসত্ব করা শেখানো হয়নি। এই ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়েরা নিজ কামনা-বাসনা-অর্থসম্পদ-ফেইম ইত্যাদির কারাগারে বন্দী। তাই মোটাদাগে বললে, আমাদের সমাজ যে পথে হাঁটা ধরেছে তা খুবই ভয়াল পথ।

আমি যখন ইসলামে পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং সর্বোপরি বিয়ে ও ব্যক্তিগত চরিত্র বিষয়ে যা-ই পড়তে যাই; প্রায় সময়েই চোখ ভিজে যায় ইসলামের অপার সৌন্দর্য, স্নিগ্ধতা আর আমাদের সামাজিক জীবনের কদাকার রূপের কথা ভেবে। আমাদের সমাজে হালাল বিয়ে কত কঠিন করে দেয়া আছে তা শুধু একজন মানুষের এক্সপেরিয়েন্স করার বিষয়। আসলেই একটা সত্য কথা, "যে সমাজে বিয়ে কঠিন হয়, সে সমাজে ব্যভিচার সস্তা হয়ে যায়"... যাই হোক, এই বিষয়টাতে বেশ কিছু লেখা বিস্তারিত লিখেছি তাই আর কিছু লেখার আগ্রহ পাইনা আমি। আল্লাহ আমাদেরকে, আমাদের সমাজকে রক্ষা করুন। তবে যারা বিয়েকে জটিল করার পদ্ধতির মাঝে আছেন, আল্লাহ তাদের উপযুক্ত প্রতিদান কড়ায়-গন্ডায় দিবেন, এইটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। হ্যাঁ, হয়ত জলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার চেয়ে ঈমান রাখা এখনো কঠিন হয়নি হয়ত, তাহলে আর ঈমানদার ভাইদের ভয় কীসে? আল্লাহু মুসতা'আন। নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য করা প্রতিটি কষ্টের, ধৈর্যের প্রতিদান আল্লাহ শত-কোটিগুণ বাড়িয়ে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত ও পরম দয়ালু...

1 টি মন্তব্য:

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে