৬ জানু, ২০১৪

সফল হতে কী লাগে?

একটি ছোট্ট ব্যক্তিগত উপলব্ধি হলো আজো। হয়ত লেখার মতন তেমন কিছু না, তবুও লিখেই না হয় ফেলি...

আমার ৪ বছরের পিচ্চি ভাতিজিটাকে আদর করার সময় আজ উচু চেয়ারের একদম উপরের সরু কাঠের উপরে তুলে দাঁড় করিয়ে আমি হালকা করে ছেড়ে দিলাম। সে দাঁড়িয়ে থাকলো, থাকতে পারলো। একটা বিশ্বাস ছিলো তার, চাচ্চু ধরে আছে ওকে, পড়বে না। আমাকে বলছিলো, "চাচ্চু, ধরো কিন্তু আমাকে ভালো করে।" সে খেয়াল করেনি আমি হালকা ছেড়ে দিয়েছিলাম ঐ মূহুর্তে, আমার আঙ্গুলগুলো ওর শরীর থেকে দু' এক ইঞ্চি দূরে ছিলো।



ঘটনাটা ছোট। আমার মনের ভেতর একটা ঝড় বয়ে গেলো এরপর বেশ অনেকক্ষণ। আমরা আসলে অনেক কিছুই পারি। আমি ছোটকালে আমার সামর্থ্যের চাইতে বেশি বেশি পেরেছিলাম। প্রাইভেট টিউটরের কথা কল্পনাতেও না এনে দিব্যি গোটা স্কুলের পাঁচটা সেকশনের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে বার্ষিক পরীক্ষাগুলো প্রতি বছর পেরিয়ে আসার তাওফিক আমাকে যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা দিয়েছিলেন -- তখন আমি নেগেটিভ চিন্তাগুলো করতে পারতাম না। আল্লাহ সেই জীবনে এমন দারুণ এক অ্যাপ্রোচ দিয়েছিলেন যে কিছু শেখা আর পারাটা একটা মুগ্ধতার আর বিশ্বাসের ব্যাপার ছিলো। সময়ের স্রোতে আমার এখন অনেক না পারা বিষয়। অনেক ঋণাত্মক চিন্তা আর ব্যর্থতার জাল বেঁধে ফেলেছে। কিছু করতে গেলেই শঙ্কাটাই বেশি হয়। তাই অর্জনের অভাব এবং সেই অভাবকে অনুভব করাটা অনেক বেশি হয়ে গেছে। 

ব্যক্তিগত এই ঘটনাটুকু বলতে চাওয়ার ইচ্ছাই হলো একটা -- আমরা আসলেই অনেক বেশি পারি। আমরা প্রত্যেকেই সম্ভবত কমবেশি এমনই। নয়ত আমাদের একেকটা জীবনে আরো অনেক প্রোডাক্টিভ কাজ থাকতে পারতো, সেই পরিমাণ আমাদের সবারই অনেক কম। আমার পরিষ্কার মনে পড়ে, একবার কঠিন একটা পরীক্ষার আগে একটা মোটিভেশনাল চিঠি পেয়েছিলাম হাতে, তাতে কয়েকটি লাইনে এমন লেখা ছিলো,

"Ignore the negative voice inside you. Work hard to be the best person you can be. If you remain dedicated and work hard, one day you will be amazed by seeing what you can accomplish."

নিজের ভেতর থেকে 'না বোধক' কথাগুলো ঝেড়ে ফেলো। সবচেয়ে সুন্দর আর দারুণ মানুষ হতে চেষ্টা করতে থাকো। যখন তুমি লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং কঠোর পরিশ্রম করবে, একদিন দেখবে তুমি কী অকল্পনীয় প্রাপ্তি তোমার অর্জন হয়েছে..

আমার জীবনে কথাটা সত্য। আজ অবধি আমার ক্ষুদ্র জীবনের সর্বোচ্চ জাগতিক প্রাপ্তির পেছনে এই কথাগুলোর প্রেরণা ছিলো। সত্যিই আল্লাহর কাছে প্রতিদিন অজস্রবার কান্নাকাটি করে আমার আন্তরিক ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা আমাকে আমার জন্য অনেক বড় সফলতাই তখন এনে দিয়েছিলো। দুনিয়ার জীবনটা তবু যেমন, আখিরাতে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টাটুকুই গুণে দেখবেন, তাতে মহান আল্লাহর পুরষ্কারটা পাওয়া যাবে।

আজকে আবার উপলব্ধি করলাম, সীমাবদ্ধতা আর রিসোর্সের অভাব নিয়ে আলাপ করে নয়, বরং যা আছে তা নিয়ে সবসময় আশাবাদী থেকে, স্বপ্নকে বুকে লালন করে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকাই প্রকৃত সফলতা। প্রাপ্তিগুলো একান্তই ব্যক্তিভেদে আলাদা, অনুভূতিগুলোও একান্তই প্রত্যেক মানুষে আলাদা আলাদা। এগিয়ে যাওয়ার এই সুন্দর প্রচেষ্টাটাই পৃথিবীতে আনন্দময়। আল্লাহকে বুকে রেখে কল্যাণের আশায় যা-ই করি, তা নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর, অনেক অনেক সুন্দর!!

[০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে