২ সেপ, ২০১২

জুজুর ভয়

এই জীবনে দুই যুগ পার হবার পর আমি চির আকাঙ্খিত জিনিসটা পেয়েছিলাম। আমার এই জীবনে তা এমন একটা দিকের নির্দেশনা যা বেঁচে থাকার, জীবনকে অর্থপূর্ণ আর কর্মময় করার অনুপ্রেরণা দেয়। মুসলিম পরিবারে মৌলিক ইবাদাতের ব্যাপারে খুব সিরিয়াসভাবে বড় হওয়া সত্বেও কিশোর বয়সে এই দেশের হতভাগা আরো লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের মতন লক্ষ্যহীন এক জীবনে পা দিয়ে ফেলেছিলাম আমি। কেন? কারণ, জীবনে অজস্র উত্তরহীন প্রশ্ন ছিলো, আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন চালানোর অনুপ্রেরণাই ছিলোনা, দিক নির্দেশনা ছিলোনা সেই কঠিন সময়ে গড়ে ওঠার ব্যাপারে। কত ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার মাঝে এই জীবনটাকে নিয়ে বেঁচে সরে এসেছি আল্লাহর অশেষ রহমতে, সেটা আমি জানি। অনেক বৈচিত্র্যময় মতাদর্শ দেখেছি, কোনটাই আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, কারণ তারা সবই আমার কাছে ঠুনকো লেগেছিলো সবসময়।


আল্লাহ একসময় আমাকে কিছু মানুষ চেনালেন, তখন থেকে অজস্র চিন্তাগুলোর কল্পনাতীত মধুর সব সমাধান পেলাম স্কলারদের বদৌলতে আল্লাহর দ্বীনের মাঝে। এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য। কেন আমি একটা কাজ করবো না -- এটা *হারাম* বলে দিলেই হলো? আমি আগের জীবনে যাদের কাছে ইসলাম শিখতাম, তারা এটা হারাম আর এটা হালাল বলে আমাকে শিক্ষা দিতো। অথচ সেই হারাম জিনিসটাকে বহু বছর আমার চারপাশে নিয়েও আমি স্পর্শ না করে ছিলাম তখন পর্যন্ত, কিন্তু এই হারামটা কেন হারাম, কেন তা আমার জীবনের জন্য ক্ষতিকর, ভয়ংকর -- তা আমাকে কেউ বলে নাই। জিজ্ঞাসা করলে আমার *বিশ্বাস' প্রশ্নবিদ্ধ করে সন্দেহের চোখে তাকিয়েছেন তারা বেশিরভাগ। অধিকাংশ প্রশ্ন প্রশ্নই রয়ে যেত।

অন্ধকারের জুজুর ভয়কে ভয় পাইনা, সেটাই বলতে চাইছিলাম। "উনার কথা শুনলে তোমার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে" -- কেন? জীবনের এতগুলো বছর তো সবার কথাই শুনেছিলাম। কুরআন তিলাওয়াত করা, গান গাওয়া, গাঁজার আসরে বসে থাকা  অনেক সময় ধরে, মার্ক্সবাদীদের আসরে সমাজকে বদলে দেবার স্বপ্ন দেখেছিলাম, অর্ধশতের চাইতে বেশি কবিতা লিখেছিলাম, আবৃত্তির আসরে ডুবে ছিলাম বেশ কিছুদিন -- নষ্টের ভয় কীসের আমার? আর কত নষ্ট হতে পারে একটা তরুণ প্রজন্ম যখন তাদের ভার্সিটি লাইফে চারিদিকে নারীর বাহুলগ্না হওয়া, আধুনিক হতে এটা ওটা খাওয়া ছাড়া আর কোন বড় স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেনা। তাদের মাঝে আদর্শকে আঁকড়ে না ধরে বছরের পর বছর বড় হওয়াই তো নষ্ট হবার সুন্দরতম পূর্ণ সম্ভাবনা।

একজন বক্তা আমাকে নষ্ট করে দিবে, এই কথার কাছে মাফ চাই, এর চাইতে খোঁড়া যুক্তি আমার কাছে কখনো হতে পারেনা। having a critical mind is essential for a believer. আমাকে ঈমানের বটিকা খাইয়ে দেয়ার ফলে জীবন ধরে দৌড়াচ্ছি না। শত-সহস্র প্রশ্নের উত্তর পেয়ে, নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেই আমার পরিচিতি মুসলিম হিসেবে দেয়ার হিম্মত করেছি। এখনো আল্লাহ ও তার রাসূলেরই কেবল আনুগত্য করি -- আর কারো না। কেউ আমাকে যা বলবেন, সেটাই একমাত্র সত্য হিসেবে মেনে নেয়ার আগে নিজের বিবেক বুদ্ধির সর্বোচ্চ কাজে লাগাবো ইনশাআল্লাহ।

কারো অন্তরে কী আছে, সেটা শয়তানও জানেনা, অন্য কোন মানুষ তো জানেই না। জানেন কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, ভুলগুলো শুধরে দিন, আমাদেরকে যেন সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন, নফসের দাসত্ব থেকে যেন কেবল তারই দাসত্ব করার তাওফিক দেন, যেন এমনভাবে জীবন পরিচালিত করতে পারি, যাতে মহান রব্বুল আলামীন আমাদের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যান।

এই প্রসঙ্গে অতি দরকারী একটি ভিডিও ক্লিপ -- http://www.youtube.com/watch?v=ftp2qRg2xz4

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে