৩০ সেপ, ২০১২

স্বপ্নচারীর স্মৃতিচারণ


আজকে হঠাৎ ব্লগে ঢুকে পরিসংখ্যান দেখে খানিক চমকে উঠে ভালোলাগায় মন ভরে গেল। এরই মাঝে কখন যে ৭২ হাজার বার পড়া হয়ে গেছে আমার লেখাগুলো -- টেরও পাইনি আমি! অথচ, যেদিন ব্লগে একাউন্ট খুলেছিলাম, সেদিন একটা দুঃসাহস ছিল নিজের মাঝে -- জানতাম না কী লিখব, তবে তখন চারিদিকে অজস্র খারাপ কথা, রাজনৈতিক ক্যাচাল, আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালের বেড়াজালে ব্লগ পড়তে বিধ্বস্ত লাগত নিজেকে। মনে হত, যদি একটা সুস্থ জায়গা পেতাম, তাহলে এই জীবনে যে অনেক সুন্দর কিছু কথা আছে, সেগুলো নিয়ে অন্তত একাই লিখে যাব, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক।
সেদিন তাড়াহুড়ো করে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, আমার হয়ত যোগ্যতা নেই খুব বেশি। খুব সুন্দর কিছু করার মতন সামর্থ্য হয়ত নেই আমার। কিন্তু আমারঅনেক আবেগ আছে, প্রবল ভালোবাসা আর আর্তি আছে, বুকে অনেক স্বপ্ন আছে -- আমি সেগুলোতে চারণ করে বেড়াবো, আমি প্রতিটি বর্ণ লিখব স্বপ্ন বুনে। না হোক সেটা দুনিয়ার হিসেবে বড় কিছু -- যদি কোনদিন এই আমি একটা মানুষকে আমার লেখা দিয়ে একটুকু স্বপ্ন দেখাতে পারি, সেটিই হবে আমার প্রাপ্তি... তাই নাম লিখেছিলাম -- স্বপ্নচারী। সেই থেকে 'স্বপ্নচারী' আমার জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে গেলো...

আমি একটা কথা বিশ্বাস করতাম, আজো করি -- মানুষ আসলে সুন্দরকে উপলব্ধি করতে পারেনা, অনুভব করতে পারেনা, তাই তারা অসুন্দরে ডুবে থাকে। কোন সুস্থ মানুষ কি আদৌ খারাপকে নিয়ে মেতে থাকে? আমার সমাজের সবগুলো মানুষ খারাপ হয়ে গেছে -- তা আমি বিশ্বাস করিনা কখনো, আমি বিশ্বাস করি সবার বুকে অনেক ভালোবাসা আছে, সবার মাঝে সুন্দর মণ আছে, তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হলে সেই সুন্দর ভাবনা আর অনুভূতিগুলোকে নাড়াচাড়া করতে হবে। লেখনীও অমনি একটা জিনিস -- অনুপ্রেরণাময় কথা, স্বপ্নময় কথা আমাদেরকে সুন্দর থাকতে উদ্বুদ্ধ করে, সত্যকে আঁকড়ে ধরতে অনুপ্রেরনা দেয়।

স্বপ্নচারীর হয়ে লেখালেখিতে সময়ের স্রোতে দু'টি বছর পেরিয়ে গেছে। একজন লেখক হিসেবে আমি কল্পনার চাইতে বেশি ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমি আমার রবের কাছে ঋণী, আমার পাঠক ভাই ও বোনদের কাছেও ঋণী। যাদের ভালোবাসা আর প্রতিক্রিয়া পেয়ে আমি চিন্তা করতে শিখেছি, ভাবতে শিখেছি, নিজেকে শোধরাতে শিখেছি... অনলাইনে দিনের খানিক সময়টুকুকে আমরা লেখায় আর পাঠে সৃষ্টিশীলতা আর সুন্দরের মাঝে, সুচিন্তার মাঝে কাটিয়েছিলাম বলে বিশ্বাস করি।

কুৎসা রটনায় নয়, খারাপ কথায় নয়, ঘৃণা ছড়িয়ে নয়, বরং ভালোবাসাকে ছড়িয়ে, সুন্দর বোধ আর উপদেশকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিলে, সহমর্মীতাকে অনুপ্রাণিত করলে আমাদের সমাজটা সুন্দর হবে বলে বিশ্বাস করি। প্রতিটি ভালো কাজই গুরুত্বপুর্ণ, সেটা যত ছোটই হোক না কেন। আসলে আমাদের জীবনটা অনেক ছোট। এই সময়ে আরেকজন মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পারি আমরা, সেটাই আসলে নিজেদের জন্য জমা হবে, সেটাই হবে আসল পাওয়া। সুন্দর কথা আর ছোট ছোট ভালোকাজ নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথাগুলো প্রায়ই আমার মনে ভাসে --

[১]“তোমরা সহজ নীতি ও আচরণ অবলম্বন করো, কঠোর নীতি অবলম্বন করো না। সুসংবাদ শুনাতে থাকো এবং পরস্পর ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িও না।”[বুখারী ও মুসলিম]

[২]“কোন সৎকাজকে অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভাই এর সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করার কাজ হয়।”[মুসলিম]

আমার কাছে মনে হয়, সৎকাজে আমাদের প্রবল প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা দরকার। আমাদের মাঝে কোমলতাকে খুবই বেশি জায়গা দেয়া দরকার। আল্লাহ তা'আলা কোমলচিত্ত আর তাই সবকিছুতে তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন।[৩] আমাদের মাঝে যখন কোমলতাকে জায়গা দিতে পারবো, প্রয়োজনে, অন্যায়ের প্রতিবাদে আমরা কঠোরও হতে পারবো। বরং আমার মনে পড়ে হযরত আলী (রা)-এর কথা, যিনি যুদ্ধের ময়দানে তার মুখে থুতু দেয়ার জন্য ধরাশায়ী করে দেয়া শত্রুকেও হত্যা করেননি, পাছে তার ব্যক্তিগত ক্রোধ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাকে অতিক্রম করে যায়! কঠোর হতে কি সাধনা লাগে? যিনি কোমল, তিনি কঠোরতার, ক্রোধের সীমারেখা সহজেই মানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সৎকাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অগ্রসর হবার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হবার সঠিকতা এবং তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সফলদের দলে, তার প্রিয়দের দলে অন্তর্ভুক্ত হবার যোগ্যতা দান করুন। আমরা খুবই ক্ষুদ্র আর দুর্বল মানুষ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা না চাইলে আমাদের আসলে কোন প্রাপ্তি পাওয়ার সুযোগ নেই... আল্লাহ আমাদের রহম করুন।

রেফারেন্সঃ

 [১] রিয়াদুস সলিহীন - ৬৩৭
 [২] রিয়াদুস সলিহীন - ১২১
 [৩] [বুখারী ও মুসলিম] - আত-তারগীব ওয়াত তারহীব - ১৩৮৯


[৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে