১ জুন, ২০১২

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর


আমাদের চারপাশের মানুষগুলো থেকে আমরা কিছু মানুষ মনে হয় বুকের ভিতরে একটু ভিন্ন কিছু নিয়ে বেঁচে থাকি। এই বেঁচে থাকাতে জীবন-জীবিকার প্রতিদিনের যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া যায় না, একটা অন্যরকম প্রেরণা নিয়ে বেঁচে থাকা হয়। সেই প্রেরণা আত্মায় শান্তিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার। যখন আমাদেরই বন্ধু-আত্মীয়-কলিগ দারুণ কিছু ভোগ্যপণ্য গাড়ি-বাড়ি-শপিং করে আনন্দে গান ভাঁজতে ভাঁজতে বাড়ি ফেরে, চ্যানেলে দুইটা খুনের ঘটনা দেখে জগতকে গালি দিয়ে শাপ-শাপান্ত করে ঘুমাতে যায় -- তখন আমার ভাইবোনদের আত্মায় থাকে মহান আল্লাহর নাম। সমাজের সর্বস্তরে সবাই যখন যেকোন উপায়ে টাকা কামানো মূল লক্ষ্য হিসেবে ছুটতে থাকে -- তখনো আমরা প্রচন্ড চুজি হয়ে ভাবতে থাকি এই কলুষ বলয় থেকে কীভাবে বের হবো। কীভাবে এখানে স্থাপন করবো সবার জন্য কল্যাণময় একটা সিস্টেম।

কোথা থেকে আসে এই প্রেরণা? 

এই এক অনিন্দ্যসুন্দর জিনিস। এই প্রেরণা বয়ে আসে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। সুন্দর মানুষদের কাছ থেকে সুন্দর কথাগুলো শিখে, সুন্দর ঐশীগ্রন্থের সুন্দর জীবনবোধ-চেতনা, ঐহিক-পারলৌকিক চিন্তায় আমূল বদলে যাওয়া মানুষদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম শেখে -- ছড়াতে থাকে পরের প্রজন্মে ... এই চেতনাতে আছে নোংরামি-কলুষতাময় সিস্টেমকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সুন্দরকে তাতে *প্রতিস্থাপিত* করা। একটা খারাপকে আমরা শুধু ভেঙ্গে দিতে চাইনা, আমরা সেখানে স্থাপন করি সুন্দরকে।

আমি সত্যি একটা ব্যাপার ভেবে অবাক হই, আমরা কেউ কারো সাথে দলভুক্ত হয়ে হয়ত মিটিং মিছিল করে চিন্তা করিনা আমরা কোনদিন, কিন্তু আমাদের দ্বীন আমাদের সবাইকে একই কাতারে নিয়ে আসে যেখানে আমরা একই দ্যোতনায় চিন্তা করি। যেই জিনিসটা এই সমাজের আর দশটা মানুষকে শত-সহস্রদিন মিটিং-মিছিল সভা করে করতে হয়, কেননা মানব সৃষ্ট "আইডোলজি" তো অমনই একটা জিনিস। অথচ মহান আল্লাহর জীবনবিধানটার স্পর্শে এভাবেই বদলে যায় সবাই, হয়ে যায় একই মিছিলের অংশ, সবার লক্ষ্য একই মঞ্জিলে, সবার স্বপ্নগুলোর শেষটা একইরকমঃ শান্তি-মুক্তি-পরমানন্দ।

কিন্তু আরেকটা ব্যাপার ভাবছিলাম আজ সকালে, আমাদের প্রজন্ম ভোগে-উন্মত্ততায় ছুঁয়ে যাচ্ছে নোংরামির সর্বোচ্চ সীমানায়, তাদেরকে দিক দেখানো যাচ্ছেনা, সেই প্রাণের শক্তির যেন বড় অভাব! আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষেরা অমন আদর্শিক অবস্থানকে আঁকড়ে ধরার জন্য প্রাণান্ত হননি, আমরা হয়েছি। আমরা আপনাতেই হয়েছি কারণ স্রোত বয়ে যাচ্ছে বিপরীতে প্রবল বিক্ষুব্ধ শক্তিতে। আমাদের লক্ষ্য সোজা, সেখানে যেতে হলে শক্ত কোন একটা অবলম্বন আঁকড়ে ধরতে হবে, তারপর আমরা এই স্রোতকেই উলটে দিবো। সবাইকে নিয়ে যাবো মুক্তির সেই মঞ্জিলের দিকে।

কিন্তু কীভাবে? শত শত বছরের মুঘল-সেন-পাল-ইংরেজ-পাক সাম্র্যাজ্যের গোলামী করা এই মানুষগুলো অস্তিত্ব আর প্রয়োজনের সংজ্ঞাই ঠিকমতন বুঝে না। স্রেফ কীভাবে এই সমাজের ভয়ংকর খুন-যখম-দুর্নীতির পথ রুদ্ধ করে সুখ আনা উচিত যেটাই অনুভব করতে পারেনা। তাদেরকে স্রোত চেনাবে কে? সম্ভব?

এইখানেই আমাদের ছোট ছোট আত্মাগুলোর দ্বায়িত্ব বেড়ে যায় অনেক অনেক বেশি। আমাদের দরকার নিজেদের পাওয়ার হাউস বানিয়ে ফেলা। ছোট দেহে অনেক শক্তি, প্রাণের শক্তি, জ্ঞানের শক্তি -- যেই শক্তি আমাদের সর্বশক্তিমানের পাঠানো গ্রন্থ থেকে উৎসারিত। আর সেই পাওয়ার হাউসগুলো একটু একটু করে চেতনা এনে দিবে তার পরিবার, বন্ধুমহলে। সমাজের সুন্দর আর আদর্শ উদাহরণ হবে এই তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের দল।

সেই কত বছর আগে মরুর বুকে ঘুটঘুটে অন্ধকারময় চেতনার সমাজেই ফুটেছিলো তীব্র আলোকজ্বল অবয়ব, আলোকিত এক সমাজের আদর্শ স্বরূপ। সেই আলোকে আমাদের হৃদয়ে আর চেতনায় ধারণ করতে পারলে বঙ্গোপসাগরের উপকূলের এই পলিমাটিতে জ্বলে ওঠা আলোকছটার সাথে একাত্ম হতে চাইবে আফ্রিকা-ইউরোপ-আমেরিকার আলোকিত মানুষেরা, এক উম্মাহ তখন ভোগ-নিপীড়ন-শোষণময় সমাজকে একসাথে মিলেমিশে বদলে রূপ দেবে শান্তির পৃথিবীর...

এই স্বপ্নকে সত্য করতে চাওয়ার সুন্দর প্রচেষ্টাতেই ছোট্ট জীবনের সার্থকতা। পুরষ্কার যেদিন দেয়া হবে, সেদিনের সত্যিকারের গর্বিত হবার মূহুর্তটি যেন আল্লাহ আমাদেরকে দান করেন...

1 টি মন্তব্য:

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে