ইমাম সুহাইব ওয়েব, আমার প্রিয় একজন মানুষ। তাকে সামনাসামনি কোনদিন
দেখিনি, তবে তার কাছে শিখেছি অনেক কিছু, পেয়েছি অনেক অনুপ্রেরণা। তিনি
জন্মেছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পরিবারে, এখন তিনি একজন আমেরিকান মুসলিম
চিন্তাবিদ, প্রশিক্ষক এবং ইমাম। বড় একজন ইমাম হয়েও তরুণ প্রজন্মকে তিনি
কাছে টেনে আনতে পেরেছেন নিজস্ব দক্ষতায়, ক্যারিশমাটিক আচরণে আর ভালোবাসায়।
মার্কিন তরুণ-তরুণীরা যাদের আলোচনায়, ব্যাখ্যায়, উপস্থাপনায় ইসলামের
মোহনীয়তা খুঁজে পেয়েছে, ডুবেছে মুগ্ধতায় -- সেই বিদগ্ধ জ্ঞানের মানুষদের
মাঝে ইমাম সুহাইব ওয়েব একজন।
সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে তার অজস্র শিক্ষানবীসের দল। ইমাম সুহাইব সোশাল নেটওয়ার্ক ফেসবুক এবং টুইটারে বেশ নিয়মিত থাকেন, তিনি তার সাথে আলোচনায় সবাইকে সুযোগ দেন। তাকে তাই অনেকে বলে থাকেন -- "তরুণদের ইমাম"। সাম্প্রতিক সময়ে নুমান আলী খান এবং আব্দুল নাসির জান্দার সাথে "Amazed By The Quran" নামের একটা আয়োজনে অংশগ্রহণ করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন কুরআনের গভীর সৌন্দর্য্য নিয়ে। এমন আয়োজন সমগ্র আমেরিকাতেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। থেকে অনেক দূরে থাকলেও কুরআন নিয়ে নুমান আলী খান, আব্দুল নাসির, সুহাইব ওয়েবদের অসাধারণ সেইসব আলোচনা দেখে উপকৃত হই আমরাও।
এক নজরে ইমাম উইলিয়াম সুহাইব ওয়েব
-- ইমাম সুহাইব ওয়েব ইসলামিক জ্ঞানের পীঠস্থান বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।
-- হিফজুল কুরআন।
-- ট্রেডিশনাল ইসলামিক সাইন্সের কয়েকটি বিভাগে তিনি ইজাজাত গ্রহণ করেছিলেন।
-- তিনি রয়্যাল ইসলামিক স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের ২০১০ সালে তৈরি করা এক তালিকায় মুসলিম বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী ৫০০ জনের তালিকায় উল্লেখিত হন।
-- ইমাম সুহাইব ওয়েব ভিন্নধারার ব্লগ সুহাইব ওয়েব ডট কমে লিখেন যে ব্লগটি ২০০৯ সালে ব্রাস ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ড পায় এবং ২০১১ সালেই সে ব্লগে প্রতিমাসে হিট ছিলো ১ মিলিয়ন
-- সুহাইব ওয়েব ব্লগে কুরআনের দারস পাওয়া যায় [ভিডিও, অডিও এবং লেখ্যরূপ]
-- ২২ মিনিটের এই ভিডিওটা মুসলিমম্যাটারস ওয়েবসাইটের জরিপে এইসময়ের টপটেন ইসলামিক লেকচার ভিডিওতে স্থান দিয়েছে। [সাত মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভিডিও]
-- সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগঃ ফেসবুক পেজ | টুইটার
কিছু দারুণ লিঙ্ক
-- ইমামের সকল তাফসীর আলোচনা
-- দারসুল কুরআনঃ সূরা আল-আসর
-- দারসুল কুরআনঃ সূরা আত-তাকাসুর
-- দারসুল কুরআনঃ সূরা আত-ত্বীন
-- সূরা ফাতিহার উপরে বাইশ পর্বের আলোচনা
-- উস্তাদ খুররাম জাহ মুরাদের "ইন দা আর্লি আওয়ার্স" বইটির উপরে প্রাণবন্ত আলোচনাঃ প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
ইমাম সুহাইব ওয়েব বড় হয়েছিলেন এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক পরিবারে। কিশোর বয়েসে হিপ-হপ মিউজিক নিয়ে কাটাতেন, ছিলেন DJ। কিন্তু এমন সময়ে তিনি কুরআনের সন্ধান পেলেন, উইলিয়াম ওয়েব কুরআনের সৌন্দর্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ২০ বছর বয়েসে ইসলাম গ্রহণ করেন। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ক্যারিয়ার ফেলে তিনি তার ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন কুরআন নিয়ে পড়াশোনায়।
ইসলাম গ্রহণের পর একজন সেনেগালি শাইখের কাছে সুহাইব ওয়েব ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম ও আরবি নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। সেই শিক্ষার ফলে স্থানীয় ইমাম হবার যোগ্য হলে তিনি ওকলাহোমা শহরের বেশ কিছু কমিউনিটিতে তিনি তখন ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্বপালন করতে থাকেন। ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ওকলাহোমাতে সুহাইব ওয়েব ব্যাচেলর ডিগ্রি গ্রহণ করেন। যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ও কমিউনিটিতে ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পরে বিশ্বখ্যাত আল-আজহার ইউনিভার্সিটিতে সুহাইব ওয়েব ইসলামিক আইনের উপরে পড়াশোনা শুরু করেন। ২০০৪ সালে তিনি তার স্ত্রী এবং সন্তানদের সহ কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। তার স্ত্রী একজন মালয়েশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী মুসলিমাহ এবং তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আরবি ভাষার উপরে পড়াশোনার পরে তিনি আল-আজহারের দারুল ইফতা আল মাসরিয়াহতে মুফতি হিসেবে এবং সেখানকার ইংরেজি ট্রান্সলেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
ইমাম ওয়েব এরই মাঝে কুরআনের হিফয সম্পন্ন করেন। তিনি ইসলামিক সাইন্সের বিভিন্ন শাখার আলেমদের কাছে তিনি ইজাজাহ প্রাপ্ত হন। ইমাম সুহাইব ওয়েব আমেরিকান মুসলিম পরিচয়কে শক্তিশালী করার জন্য জোর প্রচেষ্টা করছেন। আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটি যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, একজন আমেরিকান হিসেবে এবং প্রকৃত ইসলামিক জ্ঞান দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
চল্লিশোর্ধ ইমাম সুহাইব ওয়েব এখন যুক্তরাস্ট্রের রোজবেরিতে নিউ ইংল্যান্ডের সবচাইতে বড় মসজিদ ইসলামিক সোসাইটি অফ বোস্টন কালচারাল সেন্টারের [ISBCC] আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে রয়েছেন ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে। সেখানে তিনি জুমু'আর নামাযের খতীবে হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। একজন ইমাম হিসেবে সুহাইব ওয়েবের ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা মসজিদকেন্দ্রিক করে তুলেছে সবাইকে। তিনি প্রচলিতধারার ইমামদের মতন খুব রাশভারী, গম্ভীর প্রকৃতির নন, বরং তিনি মুসলিমদেরকে আল্লাহর দ্বীনের কথা বোঝানোর প্রয়োজনে দেশের পপ কালচারের ট্রেডিশন, ফুটবল টুর্নামেন্টের কথা, টোয়াইলাইট সিরিজের ভ্যাম্পায়ারের রোমান্সের কথাও উল্লেখ করেন। আর তার এই আচরণ একটা নির্দিষ্ট চিন্তা ও পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করেই। সেই পরিকল্পনার ফলাফল পরিষ্কার, বোস্টনের মানুষদের কাছে এই মসজিদ সমগ্র জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, "ইমাম সুহাইব নতুন ইমামদের মাঝে একটা নতুন যুগের পথিকৃত যিনি ক্লাসিকাল ইসলামিক জ্ঞান রাখেন, যার জন্ম এবং গড়ে ওঠা আমেরিকায় এবং যিনি তরুণদেরকে বুঝতে ও বুঝাতে পারেন।" ISBCC দীর্ঘদিন যাবত তার মতন একজন ইমামকে খুঁজছিলো যিনি বোস্টনের বৈচিত্র্যপূর্ণ মতের মানুষদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন এবং নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
ইমাম ওয়েব, সুহাইব ওয়েব ডট কম নামের একটা ওয়েবসাইট চালু করেন যার স্লোগান হলো "your virtual mosque", যেখানে এখন ২০ জনের মতন মুসলিম স্কলার রয়েছেন যারা সমসাময়িক পাশ্চাত্য সমাজের আলোকে উদ্ভূত বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেন যেমন -- জিহাদ, ডেটিং, সেক্স, মিউজিক, মেয়ে, ওয়েস্টার্ন ছুটির দিনগুলো পালনের বিষয়েও। এই আলোচনাগুলো বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহকে সাহায্য করছে সমস্যা সমাধানের আইডিয়া দিয়ে, ইসলামকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ফলে সন্দেহ-সমস্যা দূরীভূত হয়ে আত্মবিশ্বাস প্রোথিত হচ্ছে মুসলিম-মুসলিমাহদের হৃদয়ে।
সুহাইব ওয়েব ভিন্ন ধর্মের মানুষদের কাছেও নিয়মিত দাওয়াত প্রচার করে থাকেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন নওমুসলিম ভাইবোনেরা তাদের মসজিদে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন -- বিগত একবছরের বেশি সময় ধরে আমি ফেসবুক ও টুইটারে এটা নিয়মিত খেয়াল করেছি। যদিও তিনি একটা বিশাল তাঁবুর নিচে নানান ধর্ম, চিন্তা, বিশ্বাসের মানুষদের জায়গা দিয়ে তাদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেন, ইসলামের জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে মত গড়ে তোলেন; তবুও সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে "হোমোফোবিক মৌলবাদী ইমাম" অ্যাখ্যা দিয়ে বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়েছে।
আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য ইমাম সুহাইব ওয়েবদের মতন মানুষদেরকে রাহমাত হিসেবে কবুল করে নিন যারা আমাদেরকে দেখাবেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো সেই পথ। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ এইসব মানুষদের কাছ থেকে আরো উজ্জীবিত হবার তাওফিক দিন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই লেখার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে চেষ্টাটুকু কবুল করে নিন।
তথ্যসূত্রঃ
-- সুহাইব ওয়েব ডট কম/বোস্টনের-নতুন-ইমাম
-- ISBCC [ইসলামিক সোসাইটি ফর বোস্টন কালচারাল সেন্টার]
-- উইকিপিডিয়া/সুহাইব_ওয়েব
-- মুসলিমম্যাটারস ডট অর্গ ওয়েবসাইট
সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে তার অজস্র শিক্ষানবীসের দল। ইমাম সুহাইব সোশাল নেটওয়ার্ক ফেসবুক এবং টুইটারে বেশ নিয়মিত থাকেন, তিনি তার সাথে আলোচনায় সবাইকে সুযোগ দেন। তাকে তাই অনেকে বলে থাকেন -- "তরুণদের ইমাম"। সাম্প্রতিক সময়ে নুমান আলী খান এবং আব্দুল নাসির জান্দার সাথে "Amazed By The Quran" নামের একটা আয়োজনে অংশগ্রহণ করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন কুরআনের গভীর সৌন্দর্য্য নিয়ে। এমন আয়োজন সমগ্র আমেরিকাতেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। থেকে অনেক দূরে থাকলেও কুরআন নিয়ে নুমান আলী খান, আব্দুল নাসির, সুহাইব ওয়েবদের অসাধারণ সেইসব আলোচনা দেখে উপকৃত হই আমরাও।
এক নজরে ইমাম উইলিয়াম সুহাইব ওয়েব
-- ইমাম সুহাইব ওয়েব ইসলামিক জ্ঞানের পীঠস্থান বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।
-- হিফজুল কুরআন।
-- ট্রেডিশনাল ইসলামিক সাইন্সের কয়েকটি বিভাগে তিনি ইজাজাত গ্রহণ করেছিলেন।
-- তিনি রয়্যাল ইসলামিক স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের ২০১০ সালে তৈরি করা এক তালিকায় মুসলিম বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী ৫০০ জনের তালিকায় উল্লেখিত হন।
-- ইমাম সুহাইব ওয়েব ভিন্নধারার ব্লগ সুহাইব ওয়েব ডট কমে লিখেন যে ব্লগটি ২০০৯ সালে ব্রাস ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ড পায় এবং ২০১১ সালেই সে ব্লগে প্রতিমাসে হিট ছিলো ১ মিলিয়ন
-- সুহাইব ওয়েব ব্লগে কুরআনের দারস পাওয়া যায় [ভিডিও, অডিও এবং লেখ্যরূপ]
-- ২২ মিনিটের এই ভিডিওটা মুসলিমম্যাটারস ওয়েবসাইটের জরিপে এইসময়ের টপটেন ইসলামিক লেকচার ভিডিওতে স্থান দিয়েছে। [সাত মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভিডিও]
-- সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগঃ ফেসবুক পেজ | টুইটার
কিছু দারুণ লিঙ্ক
-- ইমামের সকল তাফসীর আলোচনা
-- দারসুল কুরআনঃ সূরা আল-আসর
-- দারসুল কুরআনঃ সূরা আত-তাকাসুর
-- দারসুল কুরআনঃ সূরা আত-ত্বীন
-- সূরা ফাতিহার উপরে বাইশ পর্বের আলোচনা
-- উস্তাদ খুররাম জাহ মুরাদের "ইন দা আর্লি আওয়ার্স" বইটির উপরে প্রাণবন্ত আলোচনাঃ প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
ইমাম সুহাইব ওয়েব বড় হয়েছিলেন এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক পরিবারে। কিশোর বয়েসে হিপ-হপ মিউজিক নিয়ে কাটাতেন, ছিলেন DJ। কিন্তু এমন সময়ে তিনি কুরআনের সন্ধান পেলেন, উইলিয়াম ওয়েব কুরআনের সৌন্দর্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ২০ বছর বয়েসে ইসলাম গ্রহণ করেন। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ক্যারিয়ার ফেলে তিনি তার ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন কুরআন নিয়ে পড়াশোনায়।
ইসলাম গ্রহণের পর একজন সেনেগালি শাইখের কাছে সুহাইব ওয়েব ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম ও আরবি নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। সেই শিক্ষার ফলে স্থানীয় ইমাম হবার যোগ্য হলে তিনি ওকলাহোমা শহরের বেশ কিছু কমিউনিটিতে তিনি তখন ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্বপালন করতে থাকেন। ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ওকলাহোমাতে সুহাইব ওয়েব ব্যাচেলর ডিগ্রি গ্রহণ করেন। যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ও কমিউনিটিতে ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পরে বিশ্বখ্যাত আল-আজহার ইউনিভার্সিটিতে সুহাইব ওয়েব ইসলামিক আইনের উপরে পড়াশোনা শুরু করেন। ২০০৪ সালে তিনি তার স্ত্রী এবং সন্তানদের সহ কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। তার স্ত্রী একজন মালয়েশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী মুসলিমাহ এবং তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আরবি ভাষার উপরে পড়াশোনার পরে তিনি আল-আজহারের দারুল ইফতা আল মাসরিয়াহতে মুফতি হিসেবে এবং সেখানকার ইংরেজি ট্রান্সলেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
ইমাম ওয়েব এরই মাঝে কুরআনের হিফয সম্পন্ন করেন। তিনি ইসলামিক সাইন্সের বিভিন্ন শাখার আলেমদের কাছে তিনি ইজাজাহ প্রাপ্ত হন। ইমাম সুহাইব ওয়েব আমেরিকান মুসলিম পরিচয়কে শক্তিশালী করার জন্য জোর প্রচেষ্টা করছেন। আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটি যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, একজন আমেরিকান হিসেবে এবং প্রকৃত ইসলামিক জ্ঞান দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
চল্লিশোর্ধ ইমাম সুহাইব ওয়েব এখন যুক্তরাস্ট্রের রোজবেরিতে নিউ ইংল্যান্ডের সবচাইতে বড় মসজিদ ইসলামিক সোসাইটি অফ বোস্টন কালচারাল সেন্টারের [ISBCC] আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে রয়েছেন ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে। সেখানে তিনি জুমু'আর নামাযের খতীবে হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। একজন ইমাম হিসেবে সুহাইব ওয়েবের ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা মসজিদকেন্দ্রিক করে তুলেছে সবাইকে। তিনি প্রচলিতধারার ইমামদের মতন খুব রাশভারী, গম্ভীর প্রকৃতির নন, বরং তিনি মুসলিমদেরকে আল্লাহর দ্বীনের কথা বোঝানোর প্রয়োজনে দেশের পপ কালচারের ট্রেডিশন, ফুটবল টুর্নামেন্টের কথা, টোয়াইলাইট সিরিজের ভ্যাম্পায়ারের রোমান্সের কথাও উল্লেখ করেন। আর তার এই আচরণ একটা নির্দিষ্ট চিন্তা ও পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করেই। সেই পরিকল্পনার ফলাফল পরিষ্কার, বোস্টনের মানুষদের কাছে এই মসজিদ সমগ্র জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, "ইমাম সুহাইব নতুন ইমামদের মাঝে একটা নতুন যুগের পথিকৃত যিনি ক্লাসিকাল ইসলামিক জ্ঞান রাখেন, যার জন্ম এবং গড়ে ওঠা আমেরিকায় এবং যিনি তরুণদেরকে বুঝতে ও বুঝাতে পারেন।" ISBCC দীর্ঘদিন যাবত তার মতন একজন ইমামকে খুঁজছিলো যিনি বোস্টনের বৈচিত্র্যপূর্ণ মতের মানুষদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন এবং নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
ইমাম ওয়েব, সুহাইব ওয়েব ডট কম নামের একটা ওয়েবসাইট চালু করেন যার স্লোগান হলো "your virtual mosque", যেখানে এখন ২০ জনের মতন মুসলিম স্কলার রয়েছেন যারা সমসাময়িক পাশ্চাত্য সমাজের আলোকে উদ্ভূত বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেন যেমন -- জিহাদ, ডেটিং, সেক্স, মিউজিক, মেয়ে, ওয়েস্টার্ন ছুটির দিনগুলো পালনের বিষয়েও। এই আলোচনাগুলো বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহকে সাহায্য করছে সমস্যা সমাধানের আইডিয়া দিয়ে, ইসলামকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ফলে সন্দেহ-সমস্যা দূরীভূত হয়ে আত্মবিশ্বাস প্রোথিত হচ্ছে মুসলিম-মুসলিমাহদের হৃদয়ে।
সুহাইব ওয়েব ভিন্ন ধর্মের মানুষদের কাছেও নিয়মিত দাওয়াত প্রচার করে থাকেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন নওমুসলিম ভাইবোনেরা তাদের মসজিদে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন -- বিগত একবছরের বেশি সময় ধরে আমি ফেসবুক ও টুইটারে এটা নিয়মিত খেয়াল করেছি। যদিও তিনি একটা বিশাল তাঁবুর নিচে নানান ধর্ম, চিন্তা, বিশ্বাসের মানুষদের জায়গা দিয়ে তাদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেন, ইসলামের জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে মত গড়ে তোলেন; তবুও সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে "হোমোফোবিক মৌলবাদী ইমাম" অ্যাখ্যা দিয়ে বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়েছে।
আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য ইমাম সুহাইব ওয়েবদের মতন মানুষদেরকে রাহমাত হিসেবে কবুল করে নিন যারা আমাদেরকে দেখাবেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো সেই পথ। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ এইসব মানুষদের কাছ থেকে আরো উজ্জীবিত হবার তাওফিক দিন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই লেখার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে চেষ্টাটুকু কবুল করে নিন।
তথ্যসূত্রঃ
-- সুহাইব ওয়েব ডট কম/বোস্টনের-নতুন-ইমাম
-- ISBCC [ইসলামিক সোসাইটি ফর বোস্টন কালচারাল সেন্টার]
-- উইকিপিডিয়া/সুহাইব_ওয়েব
-- মুসলিমম্যাটারস ডট অর্গ ওয়েবসাইট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে