১৫ ফেব, ২০১২

নুমান আলী খান : লক্ষ তরুণের অনুপ্রেরণা

দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকলে শক্তিশালী লোহাতেও মরিচাতে পড়ে ক্ষয়ে যায়। একজন মুসলমানের ঈমানের যত্ন না নিলে তেমনি ক্কালবের উপরে প্রলেপ পড়ে যায়, নষ্ট হয়ে যেতে থাকে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস -- আমাদের আত্মা। এই ব্যাপারটা নিজ জীবনে উপলব্ধি করেছি জীবনে আমি। একটা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও পরিবারের বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়ে একটা সময় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম নিজের কাছ থেকেই। কোন কাজেই শান্তি পেতাম না, কোন কিছুতেই স্বস্তি পেতাম না ।

এমন এক সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রাহমাতে ক'জন মানুষের সাথে পরিচয় হয় আমার। সেই সময়টাকে আমি আমার জীবনের "রেঁনেসা" বলে মনে করি। তাদের মাধ্যমে আমি অনলাইনের বিশাল রিসোর্সের খোঁজ পাই। চিনতে পারি আত্মিক জ্ঞানের শিক্ষকদের, আল্লাহর দ্বীন নিয়ে পড়াশোনা করা আর সেই সুন্দরতম জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেয়ার মহান কাজে ব্রতী কিছু স্কলারকে। আমার প্রথম উস্তাদ ছিলেন নুমান আলী খান। তারপর ধীরে ধীরে চিনলাম ইমাম সুহাইব ওয়েব, ডক্টর বিলাল ফিলিপস, ইয়াসির ফাজাগা, ইউসুফ এস্তেত, তারিক রামাদান, হামযা ইউসুফ, আবদুল নাসির জান্দা, উয়িসাম শারিফ, খালিদ ইয়াসিন, আসিম আলহাকিম এবং ইয়াসমিন মোজাহেদ এবং আরো অনেককে। আমার ক্ষুদ্র জীবনের ক্ষুদ্র আত্মা এক অন্য দিগন্তের খোঁজ পায় সেদিন থেকে। আল্লাহ তাদের সবাইকে কবুল করে নিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাদের জায়গা বরাদ্দ করে দিন।

উস্তাদ নুমান আলী খানের কথা আলাদা করে না বললেই না। দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুতে আমার মনে হতো -- এটা কেন এমন, ওটা কেন অমন হয়, কেন এসব এমন হয়না, সবকিছু এরকম কেন হয় টাইপের। আমি নিশ্চিত জানতাম যে এইসবের পরিষ্কার উত্তর আমাদের রব আল্লাহ তা'আলার দেওয়া জীবনবিধানে পরিষ্কারভাবেই আছে। কিন্তু সেগুলো কীভাবে বুঝতে হয়, কীভাবে মনের এই সময়গুলোকে "ডিল" করতে হয় তা জানতাম না। যেহেতু প্রশ্নগুলো দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির যার সাথে আত্মিক বিশ্বাস যুক্ত -- এমন মানুষ পাইনি যারা অমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। কিন্তু নুমান আলী খানের অল্প কিছুক্ষণের কয়েকটা ভিডিও দেখেছিলাম। আমার মনে জেগে ওঠা সাধারণ ও সমস্যামূলক অনেক জিজ্ঞাসার অসাধারণ সুন্দর সমাধান পেয়েছিলাম তার কথাতে।

আমার জীবনের একটা অভিজ্ঞতা হলো -- সাধারণত কিশোর-তরুণরা গড়ে ওঠার সময়ে দ্বীন-ইসলাম সংক্রান্ত প্রচুর প্রশ্নের সম্মুখীন হই মনে মনে। হতে পারে সেটা পর্দা নিয়ে, কোন ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন নিয়ে, ফিকহ অথবা থিওলোজি সংক্রান্ত প্রশ্ন, হয়ত কোন অশ্লীল বিষয়কে কীভাবে ডিল করতে হবে তা নিয়ে, অথবা কীভাবে দান করতে হয়, নিয়্যাত কেমন থাকা উচিত -- এরকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে করে। অথচ এই বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীরা উত্তর না পেয়ে শেষে ভুল করতে থাকে। একদিন হয়ত তাদের ইচ্ছেটাই হারিয়ে যায়... কুরআনের স্বতঃস্ফূর্ত পড়াশোনা, ইসলামেকে তরুণ প্রজন্মের কাছে সুন্দর করে উপস্থাপনার আয়োজন বাংলাদেশে, আমাদের সমাজে খুবই কম। এই অদ্ভূত অবস্থায় আমার মতন ছেলেদের জন্য অশেষ রাহমাত অনলাইনের রিসোর্সে পাওয়া স্কলাররা -- যারা তরুণ প্রজন্মের সাথে খোলামেলা আলাপ করেন, কীভাবে চিন্তা করতে হবে শেখান, কীভাবে ভাবতে হয় সেটা শেখান। আর সেগুলোর ভিডিও অ্যাভেইলেবল পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। বস্তুতঃ হিদায়াতের মালিক তো একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা।

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কসমূহঃ
ফেসবুক পেইজঃ নুমান আলী খান 
লেকচার ডাউনলোড লিঙ্কঃ নুমান আলী খান কালেকশন [অডিও এবং ভিডিও] 
ড্রিম তাফসীরের ওয়েবসাইটঃ লিঙ্গুইস্টিক মিরাকল 
সমস্ত ভিডিও এখানে পাবেনঃ ইউটিউব লিঙ্ক 
নুমান আলী খানের সমস্ত অডিও লেকচার
লেকচার কালেকশন হালাল টিউব চ্যানেল :: নুমান আলী খান


নুমান আলী খান আমার জীবনে পাওয়া সেরা বক্তাদের একজন, যার কথার ভঙ্গি আর শব্দচয়নে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। সুবহানাল্লাহ!! উনি এত সুন্দর করে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা দেন। আমি বিয়ে বিষয়টা নিয়ে সবার মতই বেশি এক্সাইটেড এবং কনফিউজড ছিলাম। যদিও এই সংক্রান্ত বিষয়ে তাফসীরগ্রন্থ পড়েছিলাম কয়েকটা, তাতে অনেক বিষয় ছিলো আলোচনায় -- কিন্তু সেই জিনিসগুলোকে মাথায় নিয়ে আসলে কীভাবে চিন্তা করতে হবে আমার প্রতিদিনের জীবনে সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না বা বুঝতে পারছিলাম না। নুমান আলী খানের হেলদি ম্যারেজ একটা অসাধারণ আলোচনা। আমি অনেকবার শুনেছিলাম এবং আমার প্রাথমিক ধারণাটা আলহামদুলিল্লাহ পরিষ্কার হয়ে যায় -- কী কর্তব্য, কী দ্বায়িত্ব একটি পারিবারিক জীবনে।

উস্তাদ নুমান আলী খানের বক্তব্যের সুন্দর দিক হলো, তিনি সাধারণ আর সরল ভাষায় তরুণদের বোধগম্য হবার মতন করে বিষয়গুলো আলোচনা করেন। আমি দেখেছি, আলহামদুলিল্লাহ একেকটা লেকচার শোনার পর আমার মধ্যে ওই বিষয়ক খটকা এবং প্রশ্ন থাকেনা এবং পালন করার ব্যাপারে সন্দেহ আর অজুহাত থাকেনা। হয়ত এইটুকু বুঝতে হলে আমাকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তে হতো। আলোচনা শোনার অর্থ পড়াশোনা কমিয়ে দেয়া নয়, পড়াশোনা তো আমাদের আবশ্যকীয় দ্বায়িত্ব। কিন্তু মুমিনদের সাথে দ্বীন নিয়ে আলোচনা আমাদের জন্য কল্যাণকর হয়, বোধকে সুন্দর করে, ঈমানকে সুদৃঢ় করে।

নুমান আলী খানের ইসলাম এবং ইগো ভিডিও লেকচারটিকে বর্তমানকালের সেরা ১০ টি ভিডিওর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট মুসলিমম্যাটারস । এছাড়াও এই সরল, সাদামাটা, হাস্যোজ্বল লোকটার আলোচনা বিশ্বজুড়ে তরুণদের ইসলামের জন্য উদ্বোধিত করে, অনুপ্রাণিত করে, আগ্রহী করে দ্বীনের প্রতি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মও ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে তিনি DREAM নামের তাফসীর কোর্স নিয়ে সম্পূর্ণ সময় দিচ্ছেন। এই তাফসীর কোর্সের অসাধারণ দিক হলো কুরআনুল কারীমের শাব্দিক অলংকার আর ব্যবহারের অনুপম সৌন্দর্য পরিষ্কার হয় আমাদের কাছে। নুমান আলী খানকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেই সুন্দর যোগ্যতা দিয়েছেন, তার একটা প্রয়াস এই তাফসীর কন্টেন্টগুলো। আল্লাহ উস্তাদ নুমান আলী খানকে কবুল করুন, তার যোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিন, তার মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতকে আরো ছড়িয়ে দিন বিশ্বের এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে।


নুমান আলী খানের বায়োগ্রাফিঃ

নুমান আলী খান একজন মুসলিম দা’ঈ । কুরআনের জ্ঞানে তার অসাধারণ গভীরতা এবং সুন্দর উপস্থাপনা শৈলীর কারণে সমগ্র বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষাভাষী অনেক ইসলাম অনুরাগী তরুণ প্রজন্ম তার অসাধারণ আলোচনা থেকে উপকৃত হচ্ছে নিয়মিত। নুমান আলী খান যুক্তরাস্ট্রে অবস্থিত বাইয়্যিনাহ ইনস্টিটিউট [ওয়েবসাইট] নামক একটি আরবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের CEO এবং প্রতিষ্ঠাতা। বায়্যিনাহ এর কোর্স "ফান্ডামেনটালস অফ ক্লাসিক্যাল এরাবিক" এবং "ডিভাইন স্পিচ" এর প্রধান বক্তা।

আরবি ভাষার উপরে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে। যেখানে তিনি তার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি আরবি ব্যাকরণ শিখেন পাকিস্তানে। সেখানে তিনি ১৯৯৩ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় জাতীয় পর্যায়ের মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্থান দখল করেন। কিন্তু আরবিতে তার গভীর পড়াশোনা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টর আব্দুস সামি এর তত্বাবধানে। ডক্টর আব্দুস সামি পাকিস্তানের ফয়্সালাবাদের কুরআন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ যিনি মাঝে মাঝে আমেরিকাতে যেতেন আরবি শিক্ষা এবং কুরঅনের তাফসিরের উপরে গভীরতাপূর্ণ বক্তব্য রাখতে। তার অধীনে পড়াশুনায় নুমান আলী খান আরবি ভাষা ও ব্যাকরণের উপরে তীক্ষ্ম এবং গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি পরবর্তীতে ডক্টর আব্দুস সামির কাছে আরো উপকৃত হন তার সম্পূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আত্মস্থ করে, তিনি ডক্টর সামির করা কাজগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন তার নিজের ছাত্রদের উপকারের জন্য।

তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাস্ট্রে আধুনিক এবং ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষাদান শুরু করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৭ বছর ধরে নুমান আলী খান নাসাউ কমিউনিটি কলেজে মডার্ন শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি "মডার্ন স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ক্লাসিক্যাল অ্যারাবিক" শেখান দেশজুড়ে। তিনি মূলত তার দাওয়াত প্রচার করে থাকেন ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে। তিনি ICNA আয়োজিত কনভেনশনে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। নুমান আলী খান ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন -- জীবন, পরিবার এবং ইসলামী মূল্যবোধের উপরে তিনি আলোকপাত করে থাকেন।

বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেছেন বিভিন্ন জায়গায় ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সাত বছরের বড় একটি প্রজেক্টে। এই প্রজেক্টে কুরআনের শাব্দিক শৈল্পিক সৌন্দর্যকে মূল ধরে ইংরেজিতে তাফসির সিরিজ করা হচ্ছে, যার নাম DREAM প্রোগ্রাম। এই তাফসীর সিরিজের বিভিন্ন কন্টেন্ট রেকর্ডিং Linguistic Miracle ওয়েবসাইটটিতে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট এবং অডিও ফরম্যাটে পাওয়া যাচ্ছে।

# তথ্যসূত্রঃ  উইকিপিডিয়া  বাইয়্যিনাহ ডট কম

২টি মন্তব্য:

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে