এই সময়ের প্রতিটা দিনই বেঁচে থাকা যেন আতঙ্কময়। পত্রিকার পাতা খুললেই খুন, ধর্ষণ, গুম, হত্যা নতুন করে বলে দেয়না সমাজের পরিস্থিতি। তার উপরে প্রতিটি পদেই রয়েছে ঘুষ-সুদ, ক্ষমতাধরদের মদদপুষ্ট লোকদের নির্লজ্জ ক্ষমতা প্রদর্শন ও দুর্নীতি। পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে মানুষ দেশের চলমান পরিস্থিতির উপর হতাশা প্রকাশ করেন অবলীলায়। বেশিরভাগ মানুষ মোটেই আশাবাদী না। তারা বুঝেন যে দেশের সবাই-ই প্রায় চোর। কেউ সুযোগ পেলে দুইটা টাকা মেরে দিতে ছাড়েন না। তাই এই দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন ঢুকে গেছে। আইন আছে, প্রয়োগ নেই, পুলিশ আছে, তার উপরে জনগনের আস্থা নেই। ঘুরে ফিরে এই হতাশা আর নিরাশার দুষ্টচক্র থেকে বের হবার পথ কোথায় আমাদের? ছেলে-মেয়ে, প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্কগুলো একেকটা নতুন নতুন পত্রিকার শিরোনামের জন্ম দিচ্ছে। পরকীয়া প্রেমের ফলে মারা যাচ্ছে মায়েরই সন্তান। এমন অজস্র নিরাশার গল্প চারপাশে।
এসবের মাঝে যারা একটুখানি আশার আলো খুঁজতে চান, যারা চান এই সমাজটা বদলে যাক -- তাদের কী হবে? আমি বহু বয়েসের বহু মানুষকে এই প্রশ্নটা করেছি -- বাসের সহযাত্রীকে, পথচারীকে, অফিসের কলিগ আর বন্ধুদেরকে। তাদের সবার উত্তর অনেকটা এরকমঃ"এই দেশের মানুষ খুবই খারাপ, এদের দিয়ে কিছু হবেনা। নেতারা খারাপ, সবাই দুর্নীতি করে। মানুষ সবাই নিজেরটা বুঝে, বাড়ি-গাড়ি করতে চায় সবাই। এই সমাজ বদলাবে না।"
উত্তর শুনে হতাশা আমাকে গ্রাস করে ফেললেও আমি কিছুতেই মানতে রাজি হইনি। কিছু ব্যবসায়ী মিডিয়া বদলে যাবার নামে নতুন ভন্ডামির ব্যবসা শুরু করেছিলো। আদতে সমগ্র জাতির মাঝে বদলে যাবার কোনই লক্ষণ পাওয়া যায়নি, বরং 'বদলে যাও, বদলে দাও' শ্লোগান শুনলেই জনগনের বিরক্তি বেড়ে গেছে।
অথচ এমন সব ভাবনার মাঝে যখন সেদিন সুদূর কানাডার এক অচেনা ছোটবোনের দশ মিনিটের একটা বক্তব্য শুনলাম সেদিন ইউটিউবে, আমি অন্যরকম এক অনুপ্রেরণা পেলাম। মাত্র ১৭ বছর বয়েসের সেই মেয়েটার কথায়, চিন্তা-চেতনায় যেই সৌন্দর্য্য আর বদলে দেওয়ার প্রত্যয় -- সেইটা শুধু মুখের শ্লোগান না, সেটা অনুভূতি আর উপলব্ধির গভীর থেকে উৎসারিত।
আলোচনার এক পর্যায়ে বক্তা বলছিলো একটা গল্প -- হামিং বার্ড আর বনে আগুণ লাগার গল্পঃ
একটা বনে আগুন লেগেছে। সমস্ত বন তোলপাড়, সব প্রাণিরা এসে ভীড় করেছে আগুণের চারপাশে। সবাই হা-হুতাশ করছে এখন কী হবে ভেবে। সেই বনের পাশে একটা খাল ছিলো। বনের একটা হামিংবার্ড ছুটে গেলো সেই খালে, তার ছোট্ট ঠোঁটে পানি নিয়ে এসে ফেলেছিলো আগুনে, তারপর আবার ছুটে যাচ্ছিলো খালে, আবার পানি এনে আগুনে ফেলে দিচ্ছিলো। হামিংবার্ডের এই কাজ দেখে অন্য জন্তু-জানোয়ারগুলো অবাক! সবাই জানে সবচাইতে ছোট্ট পাখি এই হামিংবার্ড, তাই ওকে তাচ্ছিল্যভরে একজন জিজ্ঞেস করলো -- "তুমি এটা কী করছো হামিং?"। ছোট পাখিটি উত্তর দিলো, "আমার সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব, আমি ততটুকুই করছি"।
বক্তব্যের এই অংশে সুন্দর এই গল্পটা শোনার সময় কেন যেন এই পর্যায়ে এসে আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো। আসলেই তো, আমার জীবনে আমি আমার যোগ্যতার কতখানি কী করেছি? অমল আলবাজ নামের বোনটি সুন্দর কবিতা আবৃত্তি পারে, তাই সে তার সাথে হৃদয় জাগানিয়া বক্তব্য দিয়ে অন্যদের প্রাণকে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছে। সে সফল হয়েছে। আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি ছোটবেলা থেকেই জানতাম আমি একটু চিন্তা করতে পারি, আমি লিখতে পারি। তাই স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্নকে শব্দের খামে ভরে পৌঁছে দিতে চেয়েছি আমার ভাইবোনদের মাঝে।
আমরা যদি পরিবর্তন চাই সমাজে, নিজেই হবো সেই পরিবর্তন, আমরা যদি সমাজকে সুন্দর করে চাই, নিজেই হবো সেই সুন্দর। আমরা অন্যদের কাছে নিজের জন্য যেমনটা চাই, আগে নিজেই সেই আচরণ করবো সবার সাথে।
কে বলেছে আমরা পারিনা? আমরা যদি অমন একশ প্রাণ আমাদের সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিই, আমরা অবশ্যই আরো অন্তত একহাজার প্রাণকে উদ্বোধিত করতে পারবো, অনুপ্রেরণা দিতে পারবো, হাসি এনে দিতে পারবো তাদের মুখে। আমরা নতুন প্রজন্ম, আমরা নতুন প্রাণের শক্তি। আমরাই পারব ইনশাআল্লাহ। অতীতের ইতিহাস দেখলে আমরা দেখতে পাবো, এই পৃথিবীর বড় বড় পরিবর্তন সবসময় অল্প কিছু মানুষই এনেছে, তারা সবসময়েই মানুষ ছিলো, খুব সুন্দর, প্রাণোচ্ছ্বল, স্বপ্নবাজ আর কর্মঠ কিছু মানুষ!
আনুসঙ্গিক লিঙ্কঃ
অমল আহমেদ আলবাজের ইউটিউব ভিডিওঃ TEDxIB@YORK
এসবের মাঝে যারা একটুখানি আশার আলো খুঁজতে চান, যারা চান এই সমাজটা বদলে যাক -- তাদের কী হবে? আমি বহু বয়েসের বহু মানুষকে এই প্রশ্নটা করেছি -- বাসের সহযাত্রীকে, পথচারীকে, অফিসের কলিগ আর বন্ধুদেরকে। তাদের সবার উত্তর অনেকটা এরকমঃ"এই দেশের মানুষ খুবই খারাপ, এদের দিয়ে কিছু হবেনা। নেতারা খারাপ, সবাই দুর্নীতি করে। মানুষ সবাই নিজেরটা বুঝে, বাড়ি-গাড়ি করতে চায় সবাই। এই সমাজ বদলাবে না।"
উত্তর শুনে হতাশা আমাকে গ্রাস করে ফেললেও আমি কিছুতেই মানতে রাজি হইনি। কিছু ব্যবসায়ী মিডিয়া বদলে যাবার নামে নতুন ভন্ডামির ব্যবসা শুরু করেছিলো। আদতে সমগ্র জাতির মাঝে বদলে যাবার কোনই লক্ষণ পাওয়া যায়নি, বরং 'বদলে যাও, বদলে দাও' শ্লোগান শুনলেই জনগনের বিরক্তি বেড়ে গেছে।
অথচ এমন সব ভাবনার মাঝে যখন সেদিন সুদূর কানাডার এক অচেনা ছোটবোনের দশ মিনিটের একটা বক্তব্য শুনলাম সেদিন ইউটিউবে, আমি অন্যরকম এক অনুপ্রেরণা পেলাম। মাত্র ১৭ বছর বয়েসের সেই মেয়েটার কথায়, চিন্তা-চেতনায় যেই সৌন্দর্য্য আর বদলে দেওয়ার প্রত্যয় -- সেইটা শুধু মুখের শ্লোগান না, সেটা অনুভূতি আর উপলব্ধির গভীর থেকে উৎসারিত।
আলোচনার এক পর্যায়ে বক্তা বলছিলো একটা গল্প -- হামিং বার্ড আর বনে আগুণ লাগার গল্পঃ
একটা বনে আগুন লেগেছে। সমস্ত বন তোলপাড়, সব প্রাণিরা এসে ভীড় করেছে আগুণের চারপাশে। সবাই হা-হুতাশ করছে এখন কী হবে ভেবে। সেই বনের পাশে একটা খাল ছিলো। বনের একটা হামিংবার্ড ছুটে গেলো সেই খালে, তার ছোট্ট ঠোঁটে পানি নিয়ে এসে ফেলেছিলো আগুনে, তারপর আবার ছুটে যাচ্ছিলো খালে, আবার পানি এনে আগুনে ফেলে দিচ্ছিলো। হামিংবার্ডের এই কাজ দেখে অন্য জন্তু-জানোয়ারগুলো অবাক! সবাই জানে সবচাইতে ছোট্ট পাখি এই হামিংবার্ড, তাই ওকে তাচ্ছিল্যভরে একজন জিজ্ঞেস করলো -- "তুমি এটা কী করছো হামিং?"। ছোট পাখিটি উত্তর দিলো, "আমার সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব, আমি ততটুকুই করছি"।
বক্তব্যের এই অংশে সুন্দর এই গল্পটা শোনার সময় কেন যেন এই পর্যায়ে এসে আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো। আসলেই তো, আমার জীবনে আমি আমার যোগ্যতার কতখানি কী করেছি? অমল আলবাজ নামের বোনটি সুন্দর কবিতা আবৃত্তি পারে, তাই সে তার সাথে হৃদয় জাগানিয়া বক্তব্য দিয়ে অন্যদের প্রাণকে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছে। সে সফল হয়েছে। আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি ছোটবেলা থেকেই জানতাম আমি একটু চিন্তা করতে পারি, আমি লিখতে পারি। তাই স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্নকে শব্দের খামে ভরে পৌঁছে দিতে চেয়েছি আমার ভাইবোনদের মাঝে।
আমরা যদি পরিবর্তন চাই সমাজে, নিজেই হবো সেই পরিবর্তন, আমরা যদি সমাজকে সুন্দর করে চাই, নিজেই হবো সেই সুন্দর। আমরা অন্যদের কাছে নিজের জন্য যেমনটা চাই, আগে নিজেই সেই আচরণ করবো সবার সাথে।
- আমাদের মাঝে যারা গান গাইতে পারে, তারা হয়ত সুন্দর, অনুপ্রেরণাময় গান গেয়ে উদ্বোধিত করতে পারে অন্য আরো অনেককে।
- যারা সুন্দর করে কথা বলতে পারে, তারা সবাইকে ডাকবে সুন্দরের পথে তাদের কথা দিয়ে, বক্তব্য দিয়ে।
- যারা অভিনয় করতে পারে, আঁকতে পারে, তারা সৃষ্টিশীলতায় ছড়িয়ে দিবে তাদের ভিতরের স্বপ্নগুলো।
- যারা অন্যের সাথে মিশতে পারে, তারা ছুটে যাবে আরো শত-সহস্র মানুষের কাছে, ভাগাভাগি করে নিবে তাদের কষ্টগুলো, স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দিবে তাদের মাঝে।
কে বলেছে আমরা পারিনা? আমরা যদি অমন একশ প্রাণ আমাদের সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিই, আমরা অবশ্যই আরো অন্তত একহাজার প্রাণকে উদ্বোধিত করতে পারবো, অনুপ্রেরণা দিতে পারবো, হাসি এনে দিতে পারবো তাদের মুখে। আমরা নতুন প্রজন্ম, আমরা নতুন প্রাণের শক্তি। আমরাই পারব ইনশাআল্লাহ। অতীতের ইতিহাস দেখলে আমরা দেখতে পাবো, এই পৃথিবীর বড় বড় পরিবর্তন সবসময় অল্প কিছু মানুষই এনেছে, তারা সবসময়েই মানুষ ছিলো, খুব সুন্দর, প্রাণোচ্ছ্বল, স্বপ্নবাজ আর কর্মঠ কিছু মানুষ!
আনুসঙ্গিক লিঙ্কঃ
অমল আহমেদ আলবাজের ইউটিউব ভিডিওঃ TEDxIB@YORK
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে