১৩ জানু, ২০১৫

'ইসলামিক' নারীবাদীদের উচিত যথেচ্ছা সমালোচনা করায় সতর্ক হওয়া

​কিছু ছোটভাই প্রায়ই মজা করতো ফেসবুকে দাওয়াহ নাকি মদের বারে গিয়ে দাওয়াত দেওয়ার মতন। এই ধরণের কথায় আমি "হ্যাঁ/না" টাইপের মতামত প্রকাশ করিনি কখনো। তবে এটা সত্য, ফেসবুকে ভালো কথাতে কখনো কখনো কাজে লাগে, বেশিরভাগ সময়ে লাগেনা। ফেসবুকের সবচেয়ে খারাপ জিনিস হলো এত সহজে লেখা যায় ও ছড়ানো যায় যে সত্য-মিথ্যা, কুতসা, নিন্দা, গীবত, অশ্লীলতা খুব সহজেই দূরে চলে যায়। আবার ভালো কথা বলিয়েরা বলতে বলতে কী বলছেন তা হারিয়ে ফেলেন।

সাধারণত যারা যেমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান, সেগুলো নিয়েই কথা বলেন, এটাই স্বাভাবিক। নারীরা নারীদের নিয়ে বলবেন, টেকনিক্যালরা তাদের টেকনিক্যাল বিষয় নিয়েই বলবেন, ডাক্তাররা ডাক্তারদের নিয়ে বলবেন এটা স্বাভাবিক ও আকাঙ্খিত, অস্বাভাবিক বিষয় নয়।

নারী সমস্যার বিষয়গুলো নিয়ে যদি বলি, তাহলে কিছু বিষয় চলেই আসে প্রাসঙ্গিকভাবে। আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী ও দাসদের প্রতি কখনো ন্যুনতম খারাপ আচরণও করেননি। তিনি সদয় ও দয়ার্দ্র ছিলেন তাদের প্রতি। সেই আদর্শ অনুসরণে এমনটা হতেই পারে যে ঘরের কর্তা বা স্বামী তার স্ত্রীকে রান্নাবান্না করে দিবেন মাঝে মাঝে, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে। কিন্তু তাই বলে নারীবাদীরা এটা চাপিয়ে দিতে পারেন না যে, কোন পুরুষ রান্না-বান্না করতে না পারা বা রান্না না করা তার অযোগ্যতা। কোন পুরুষ যেমন ঘরে বসে থেকে তার স্ত্রীর উপার্জনের দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার রাখে না কেননা সেই দায়িত্ব আল্লাহ পুরুষকে/স্বামীকে দিয়েছেন। স্বামী ঘরে রান্নাবান্না করে স্ত্রীকে খাওয়াবে তা এক অবান্তর ভাবনা। বরং স্বামীর জন্য, সংসারের জন্য এই কাজগুলো করার দায়িত্ব নারীর উপরেই বর্তায়।

ছেলেরা কেন মেয়ের হাগুমুতুর কাঁথা ধুতে পারে না, এই মর্মে পাতার পর পাতা 'ইসলামিক ভাষা' দিয়ে, অপ্রাসঙ্গিক হাদিস দিয়ে, অপ্রাসঙ্গিক কুরআনের আয়াত লিখে তাদের 'দোষী' বলতে পারবে না কেউ। এটা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নয় এবং ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যাও নয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার যে বিষয়গুলো পারস্পারিক ভালোবাসা/সৌহার্দ্য দিয়ে সমাধান হবার কথা সেখানে ব্যর্থতা ও রাগ থেকে অনেকে উদ্ভট লেখালেখি করে থাকেন। তারা তাদের ব্যক্তি জীবনের

 অথচ এসব বিষয়ে  আমাদের ঠিক ততটুকুই লেখা উচিত, যতটুকু ইসলাম বলে। ইসলাম কী বলে সেটা জানতে আলেমদের/স্কলারদের মতামত জানতে হবে, যদু-মদু-কদুরা তাদের মনের ইচ্ছামতন রাগ-ক্ষোভ-জিদ থেকে 'নারী-পুরুষের কর্তব্য' টাইপের চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তা চাপিয়ে দিতে পারেন না, সে অধিকার তাদেরকে আল্লাহ দেননি।

নারীবাদ জিনিসটা খুব অদ্ভুত। প্রচলিত নারীবাদীদের প্রায় সবাই তাদের ঘর-সংসারের কাজে অপটু, অদক্ষ, ব্যর্থ। তাদের অনেকেরই ঘর ভাঙ্গা-- ডিভোর্স, সেপারেশন দিয়ে ভরে থাকা তাদের জীবনাচরণ কোনদিন কেউ শ্রদ্ধা করে না। তবে 'ইসলামিক ফেমিনিজম' জিনিসটা কেমন খিচুড়ি সে সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই। এই ধরণের কোন "টার্মিনোলজির" অবতারণ হাস্যকর ও আজিব। আল্লাহর দেয়া বিধান যে ইসলাম তার পক্ষে থাকাই যথেষ্টভাবে নারীর অধিকার নিশ্চিত করে। একচক্ষু হয়ে ফেমিনিজম প্রমোশনের নামে যা-তা লিখতে থাকা কি আদৌ ইসলামিক? নিঃসন্দেহে যথেচ্ছা লেখালেখি ও চিন্তাচিন্তির ফলাফল ভালো নয়, প্রয়োজন আল্লাহকে চেনা, আত্মিক উন্নয়ন, আদব, আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে জ্ঞান ও উপলব্ধি।

প্রকৃতপক্ষে, আমাদের কুরআন এবং হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝে নেয়া উচিত কার কী করণীয়। পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ 'মূল দায়িত্ব' হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় দিয়েছেন যা আমাদের জেনে নেয়া উচিত। কেউ "ইসলামিক ফেমিনিস্ট" সেজে আজেবাজে ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বললে সেসব বক্তব্যের দায়ভার তাদের নিজেদেরকেই নিতে হবে। ইসলামকে উল্টাপাল্টাভাবে প্রকাশ করার দায়ভার থেকে আল্লাহ আমাদের কাউকে অবশ্যই ছেড়ে দিবেন না।

নারীবাদী চিন্তাধারাগুলো যেন মুসলিম সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানের করার অজুহাতে রিফর্মেশনের নামে ডিফর্মেশন না করে। সমস্যা ইসলামের বিধিবিধানে নেই, এটাই আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান, সমস্যা আমাদের মুসলিমদের মন-মানসিকতায়, সমাজের চাপিয়ে দেয়া সামাজিকতা ও নিয়মকানুনে। আল্লাহ আমাদের হাত ও মুখকে ভুল কথা ও চিন্তা লেখা থেকে সংযত থাকার তাওফিক দিন। আল্লাহ আমাদের ভুলগুলোকে ক্ষমা করুন।

[০৭ জানুয়ারি, ২০১৫]