২৬ ডিসে, ২০১৪

​​ ​ইন্টারনেট ও আমাদের অনুপকারী জ্ঞানের মাতাল চর্চা

​​কেন যেন আজ হঠাৎ ছেলেবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। জীবনটা কতই না সহজ ছিলো। এই স্মৃতিকাতরতা আমার স্রেফ ভাবাবেগে ডুবে থাকা টাইপ নয়, আমাদের বাল্যের সহজতার সাথে এ সময়কে মেলাতে চেষ্টা করছিলাম। আমার যতটুকু মনে পড়ে, আমার কৈশোরটাও এতটা জটিল ছিলো না। আমার সামনে যা কিছু ঘটনা থাকতো, যে ক'জন মানুষ থাকতো, তাদের প্রতি খেয়াল করে জীবনের রুটিনকে সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করতাম। ওটুকুর মাঝে সহজতা ছিলো জীবনে।

এখনকার জীবনে আমাদের সবারই মনে হয় অনেক অনেক সম্পর্ক ও চাপ। মোবাইল-ফেসবুক-ইন্টারনেটের যুগের যে মানসিক চাপ, তা বোধহয় পূর্বেকার সময়ের মানুষদের সাথে অনেক আলাদা। এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভালো দিকগুলোকে অস্বীকার করছি না, সেসবের জন্যই ব্যবহার করতে আসা আমাদের সবার।



আমি অনেকের সাথেই কথা বলে দেখেছিলাম, মোবাইল যন্ত্রটা আসার পরে সবার জীবনেই কমবেশি অনর্থক জটিলতা এসেছে। কিছু মানুষকে ফোন না দিলে রাগ করে, কিছু অবাঞ্ছিত মানুষ ফোন দিলে রাগ হয়। কিছু লোক আছে এদেশে যারা অযথা ফোন নাম্বার ডায়াল করে কথা বলতে চায়। আশ্চর্য সময়ের প্রাচুর্য এ মানুষগুলোর!  তেমনিভাবে, ফেসবুক হয়ত দূরে চলে যাওয়া অনেককে কাছে এনেছে, কিন্তু কাছের মানুষদেরকেও দূরে ঠেলে দেয়নি কি? একইভাবে নানান দিক থেকে নানান যন্ত্রণাও এসেছে ফেসবুকের ঘাড় ধরে। 'বন্ধু বন্ধু' বলে জিগির তুলেছে ফেসবুক, এখন মোবাইল অপারেটররাও সবাইকে শেখাচ্ছে "বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল"... কী চায় ওরা এভাবে? বিজনেস প্রোফিট করে সমাজকে ধ্বংস করে দিতে? আমরা কী করি? কেন করি? ভেবে দেখি কখনো?

আল্লাহর কাছে চলে যাওয়া এক শাইখের আখিরাতের উপরে লেকচার শুনছিলাম, সেখানে তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান থেকে আমাদের বেঁচে থাকা ইসলামে কেমন করে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফেসবুক আর পত্রিকার কল্যাণে আমরা এখন ভালো জিনিসের চেয়ে অনেক বেশি জানতে পারছি কে কার সাথে ব্যভিচার করছে, কে কত টাকার শাড়ি-গহনা পরছে, কার সাথে কার বিয়ের ভাঙ্গন হয়েছে, কার নতুন গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড কে। অনেক মানুষকে, অনেক তত্বকে, অনেক ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানছি, মস্তিষ্ককে ভার করছি যেগুলো জানার ফলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কোন ন্যুনতম কল্যাণ নেই। এই অনর্থক ও অনুপকারী জ্ঞান আমাদেরকে আখিরাতের আগুণ থেকে বাঁচার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা ছুটছি তো ছুটছিই... কীসের পেছনে, কেন-- সে ভাবান্তর তো নেই কারো!

আমাদের প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'আ করা শিখিয়েছেন আমাদেরকে, যেন আল্লাহর কাছে আমরা "'ইলমান নাফি'আ" চাই, উপকারী জ্ঞান চাই যা দ্বারা আমরা আমাদের দুনিয়াকে কল্যাণময়, সহজ ও আখিরাতকে শান্তিময় করতে পারবো। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও ফাঁদগুলো থেকে, আল্লাহ আমাদেরকে উপকারী জ্ঞান অর্জন করার তাওফিক দিন, যে জ্ঞানে আমাদের কল্যাণ নেই, সেগুলো থেকে আমাদের মুক্তি দিন। নিশ্চয়ই একদম শেষে আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো, এই জীবন তো শুধুই ভ্রম। চলে গেলেই দুনিয়ার সব সাজ-সজ্জা, মেহনত-ভালোবাসা, ক্রোধ-ঘৃণা একদম অর্থহীন হয়ে পড়ে রবে...

[২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে