১১ আগ, ২০১৪

সুখ কোথায়?

​একদম সুনসান নিরবতা মনে হয় ঢাকা শহরে হয়ে ওঠে না। তিলোত্তমা নগরীতে​ সবসময়েই​ অনেক লোকের আনাগোনা চলতেই থাকে। একটু জায়গা পেলেই যেন মাটি ফুঁড়ে জেগে উঠে ডেভেলপার কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট। নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে নতুন কিছু সংসার --নতুন দম্পতি, পুরোনো দম্পতি, ব্যাচেলর। ​যেকোন এক ​নির্ঘুম রাতে জেগে উঠে আলো-আঁধারির মাঝে জানালা দিয়ে, বারান্দা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলেই অন্য কাউকে পাওয়া যায় দূরে কোথাও -- এক টুকরো মোবাইলের আলোতে জেগে থাকা কিশোর, কিশোরী। অথবা হয়ত কোন তরুণ বা তরুণী। এভাবেই অপচয় হয় কৈশোরের, তারুণ্যের।

যে রাতকে তিঁনি বিশ্রামের জন্য রাহমাত হিসেবে দিয়েছেন, সেই রাতে মোবাইল প্রজন্ম জেগে থাকে নিতান্ত অশান্তিতে। সাথে থাকে নিজেকে নেটওয়ার্ক কানেক্টেড রাখার এক অদম্য প্রয়াস, হয়ত চেনা-অচেনা কোন বিপরীত লিঙ্গের কাউকে কাছে না পাওয়ার এক বুক তৃষ্ণা। খানিক আগেই হয়ত সে টেলিভিশন বন্ধ করে বারান্দায় এলো, কিংবা ঘরের জানালার পাশে... এতক্ষণ টিভিতে গান দেখছিলো, নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ রোমান্স, নাচানাচি, গাছ-পালা-সমুদ্র-পাহাড়ে গান গাওয়া... অথচ ওদের তুলনায় নিজের জীবনটা কেমন একঘেয়ে, বাড়ি আর কলেজ/ভার্সিটির এক বৃত্ত-- এমনটা ভেবে আবার অস্থির হয় সেই তরুণ বা তরুণী। এমন সময় মোবাইল অপারেটর এসএমএস দেয়, বন্ধু হতে চাইলে/পেতে চাইলে অমুক-তমুক ডিজিট চাপুন... সেই তারুণ্য আরো অস্থিরতায় ডুবে যায়। অপেরা, মজিলা কিংবা গুগল ক্রোমে ফেসবুক ডট কমে লগিন করে নিউজ ফিডে দেখতে পায় বন্ধুরা আজ সন্ধায় 'হ্যাং আউটে' ছিলো, কিংবা একটা কাপলের আপলোড করা সেলফি, আজ তারা কেএফসি/পিজ্জা হাটে গিয়েছিলো! দু'জনের হাসিমুখ ছবি দেখে তারুণ্যে একাকীত্বের জোয়ার আসে... কাউকে পাওয়ার তৃষ্ণা জাগে আরো... শয়তান তার বুকে জ্বালা দিতে থাকে, আরও আরো জ্বালা... আরো আরো একাকী ফিলিংস। তার একবার হয়ত মনে হলো, অপরাধ অনেক করেছি, অনুতপ্ত হয়ে একটু নামাজ পড়ি, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে যদি তাও বুকটা হালকা হয়! পরক্ষণেই শয়তান মনে করিয়ে দেয়, সারাদিন কোন নামাজই পড়েনি, এখন এই তাহাজ্জুদে দাড়ালে আর কী এমন হবে, আল্লাহ তো আমার দোয়া কবুল করবে না! অথচ, আরেকটু হলেই হয়ত তার  অন্তরে প্রশান্তির স্রোত বয়ে যেত, এক অন্য আনন্দের স্বাদ আস্বাদন করতো তার হৃদয়। আরেকটু হলেই এই জীবনের অর্থটা সার্থক করার এক অনুভূতির দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত...

সমাজের কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন এমনি নাগরিক জীবনে বহুমুখী অস্থিরতায় জ্বলে চলেছে। প্রতিটি বুকে অনেক জ্বালা। মেয়েবন্ধু/ছেলেবন্ধুর জ্বালা, একাকীত্বের জ্বালা, অভিভাবকের অমতের জ্বালা, ইন্টারনেটে ফটো ও ভিডিও আপলোড হওয়া অন্তরঙ্গ মূহুর্তগুলোর জ্বালা... জ্বালামুক্তির সেই সহজতম উপায়টি থেকে শয়তান আরো আরো দূরে সরায়। পাপের সমুদ্রে পাপাচারী আত্মাগুলো আরো ডুব দেয়... গহন ডুব। রাতে ইউটিউবে গিয়ে ভিডিও চালানো, কিংবা কোন মেয়ের ইনবক্সে গিয়ে মেসেজিং... আরো আরো গহীনে পাপাচার...

এমন সময় হয়ত এমন এক তরুণ/তরুণীর ঘুম ভাঙ্গলো যে ওযূ সেরে বারান্দায় তোয়ালেতে মুখ মুছতে গিয়ে দেখলো দূরে কোথাও মোবাইল ফোনের আলো, কেউ জেগে আছে। কিবলামুখী হয়ে হাত বেঁধে স্থির দাঁড়ানো অশ্রুসিক্ত মানুষের সলাতের প্রশান্তিটা কেউ বুঝতেও পারবে না। একই জগতে বসবাস, অথচ কত যেন ব্যবধান! একই অ্যাপার্টমেন্টে থেকেও কী ভীষণ পার্থক্য দুই স্রোতের দুই জগতের। যখন ইনভলভ হতে হতে, ঝামেলায় অস্থির হয়ে কেউ নির্ঘুম রাত কাটায় শরীর-মনের প্রশান্তিহীনতায়, তখন সারা পৃথিবীকে পেছনে ফেলে প্রকৃত শান্তির অবগাহনে সিক্ত হয়ে আল্লাহর বান্দা তার আত্মাকে আরো উচ্চ মাকামে নিয়ে যাওয়ার পথে ব্যস্ত... প্রকৃত শান্তি, প্রকৃত মুক্তি, প্রকৃত সুখ তো সেই হৃদয়েই... হ্যাং-আউট, বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডসদের মাঝে ডুবে থাকা প্রাণেরা কী আদৌ টের পায় জগতে কত শান্তি আছে কত সহজে?

রাত্রির প্রথম প্রহর
০৪ আগস্ট, ২০১৪

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে