১১ ফেব, ২০১৫

আপনার জীবনে উত্তম পরামর্শক না থাকলে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন

​​​স্বাভাবিক জীবন, শান্ত-স্থির জীবন আমরা একেকটা মানুষ খুব বেশি সময় ধরে পাইনা। দুনিয়ায় আমাদের জীবনকে উথাল-পাথাল করা ঘটনা, ভয়-শংকা করার মতন ঘটনা জীবনে লেগেই থাকে। এ সময়গুলোর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো -- 'উত্তম পরামর্শক'। আমি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে গভীরভাবে শিখেছি, "আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো"[১] টাইপের আদেশের একটি গভীর উপকার/প্রয়োজন/আবেদন স্পষ্ট টের পাওয়া যায় যখন আমরা সমস্যাগ্রস্ত হই।

আশেপাশে যখন অদূরদর্শী ও জ্ঞানহীন (unwise) মানুষ ঘিরে থাকে, তখন একটা মানুষ তার সময়োচিত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত সহজে নিতে পারে না। আমাদের সবসময়েই প্রয়োজন কিছু উত্তম সঙ্গী, পরামর্শদাতা। এই মানুষগুলো বলবে 'হক' ও 'সবরের' কথা যা আল্লাহ আমাদেরকে সূরা আল-আসরে বলেই দিয়েছেন। অথচ সঙ্গীর ব্যাপারে আমরা অসচেতন থাকি বলে 'উত্তম পরামর্শকের' অভাবে আমরা এমন সিদ্ধান্ত থেকে বরং দূরে সরে যেতে থাকি যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য উত্তম হতে পারতো। অনৈসলামিক জীবনবোধসম্পন্ন বয়ষ্ক মানুষগুলো তাদের রাগ-ক্ষোভ মেশানো অবিবেচনাপূর্ণ পরামর্শ, উপদেশ দিয়ে অনেক সময়েই সমস্যাগ্রস্ত মানুষটার জীবনকে আরো বেশি জটিল করে ফেলেন। ফলে বিপদগ্রস্ত মানুষটি আরো বেশি বিপদে পতিত হয়।

মানুষ বা 'ইনসান' তো ভুলে যায়, বিস্মরিত হয়, এটাই মানুষের জন্য স্বাভাবিক। তাই তার প্রয়োজন নিয়মিত স্মরণিকা নেয়া। রিমাইন্ডার দেয়ার মাঝে উপকার থাকে মু'মিনের জন্য। তাই আমাদের মতন মানুষগুলোর খুব প্রয়োজন উত্তম সঙ্গী, উত্তম পরামর্শক যারা হকের কথা বলবে, সবরের কথা বলবে।

'সবরুন জামিল' বা সুন্দর সবর তো সেটিই যা কষ্টকর সময়ের তথা বিপদের প্রথম মূহুর্তে ধারণ করা হয়। সবরের সৌন্দর্য আমরা হয়ত ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝতে পারিনা যতক্ষণ রাগ, ক্ষোভ, হতাশা আমাদেরকে অধৈর্যের ফলস্বরূপ আরো বড় বড় বিপদে, সমস্যায়, যন্ত্রণায় জর্জরিত না করে। সবর করার বিষয়টা ক্রমাগত প্রচেষ্টার, ক্রমাগত নিজেকে উৎসাহ দিয়ে এই চেষ্টা অক্ষুণ্ণ রাখার...

এই যেমন চাকুরি-না-পাওয়া অভাবে থাকা বন্ধু কিছু টাকা সুদী ব্যাঙ্কে 'ডিপিএস' করলে মাসে মাসে 'ইন্টারেস্ট' পাবে বলে আনন্দিত হলে, হক কথা বলা সঙ্গী তাকে নিরস্ত করবে সুদের(রিবা/ইন্টারেস্ট) কুফল বুঝিয়ে, আল্লাহর সাবধানবাণী জানিয়ে। বন্ধু যখন ক্লাসমেটের সাথে/কলিগের সাথে কিছুসময় আলাপ করতে করতে তার দিকে আকৃষ্ট হতে থাকবে, সৎবন্ধু তাকে পরামর্শ দেবে তৃতীয় সঙ্গী শয়তানকে প্রশ্রয় না দিতে... এমন শত-সহস্র উদাহরণ হতে পারে!

সূরা কাহাফে তো আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছেন [২] তাদের সঙ্গী হতে যারা আল্লাহকে ডাকে। এমন মানুষগুলো হেব্বি ড্যাশিং চেহারা ও স্ট্যাটাসের না হলেও তাতে যেন আমরা বিকর্ষণ না অনুভব করি সে কথাও আমাদেরকে বলে দেয়া হয়েছে। এমন আদেশ-নির্দেশগুলো আমাদের সামনে উত্তম পরামর্শক, সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টাকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়।

আল্লাহ যেন আমাদেরকে সেই মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা 'হক' ও 'সবরের' কথা বলবে এবং আমাদেরকে এমন মানুষদের সঙ্গী হবার তাওফিক দান করুন যারা 'হক' ও 'সবরের'  কথা বলবে। আল্লাহ আমাদেরকে বুদ্ধিমান, চিন্তাসম্পন্ন মু'মিন হবার তাওফিক দান করুন যারা দ্বীনের পথে অটল থাকতে আমৃত্যু মুজাহাদা করবে।

নির্ঘন্ট:

[১] "হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক"। [আত-তাওবাহ, ৯: ১১৯]
[২] "আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।" [সূরা কাহফ: ২৮]

# লেখার অনুপ্রেরণা:
উস্তায নুমান আলী খানের একটি ভিডিও, Importance of Good Company :  https://www.youtube.com/watch?v=T_DMb8o32c8

[০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫]