৬ মার্চ, ২০১২

পৃথিবীটা কার তোমার না আমার বলে দাও


এক গায়কের একটা গানের কথা প্রায়ই আমার কানে আসে পথে ঘাটে। আমার বোন একদিন এই গানটা গুনগুন করেছিলো বলে ওকে বিব্রত করার একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা, গানের এই লাইনটার মানে বলতো?" বেচারী প্রথমে আমার প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো কিছুক্ষণের জন্য। কারণ সে চিন্তা করতে গিয়ে দেখলো যে গায়কের চিৎকার করে বলা এই কথার বিশেষ কোন মানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এইটা যে আদৌ কোন প্রশ্ন হতে পারে, তাও আবার সেইটা গানে গাওয়া যেতে পারে নাকি যে "পৃথিবীটা কার তোমার না আমার বলে দাও"। 


এই পৃথিবী যে আল্লাহ ছাড়া কারো না সেইটা রাস্তার কোণে পড়ে থাকা ছালছাড়া কুকুরেও বুঝে, বিপুল অর্থশালী বিল গেটস সাহেবও বুঝে। কিন্তু গানের কোন এক প্রেমিকাকে এই জাতীয় প্রশ্ন করার হেতু কী -- সেইটা গায়ক [বা প্রেমিক] জানে। তবে আমার বোন তার উত্তর দিতে পারে নাই কিছুতেই। বরং পরবর্তীতে আমার সামনে এইটা গাইতে ধরলে কন্ঠ নামিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে গাইতে ধরে। অর্থহীন কথা দিয়ে গান গাওয়া আমার কাছে হাস্যকর রকম ফালতু লাগে। 

এই কথাগুলো যে বললাম তার উদ্দেশ্যটা ছিলো অন্যরকম, তবে গানের আলোচনাটাও খারাপ হলো না। কারণ এতে "পৃথিবীটা কার" এই চিন্তাটা সবার করার একটা উসিলা পাওয়া গেলো। একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে পৃথিবী আসলে প্রেমিক প্রেমিকা কারও না তবে নিজ জীবনের জন্য এটা প্রত্যেকের নিজেরই। আর সেই পৃথিবী সে দেখে বা এক্সপ্রেরিয়েন্স করে তার যেই দৃষ্টিভঙ্গি তার উপর দিয়ে  

আজ একটা মহান চিত্রকর্ম পেয়েছি ইন্টারনেটে। খুবই মজা পেয়েছি। ছবিতে একজন গন্ডার চিত্রকর দেখা যাচ্ছে। যার হাতের দক্ষতা চমতকার তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তার করা কাজের ফলাফলে বিশাল ভয়াবহতা !! 


সমস্ত ছবিতেই শিল্পী গন্ডার ভাইয়া সাদা রঙের একটা ত্রিকোনাকার জিনিস মাঝামাঝি রাখছেন। তার অসামান্য অংকনের ফলে চিত্র অনেক সুন্দর হচ্ছে। কিন্তু তার এই চিত্রাঙ্কনের যারা সমঝদার -- তারা জানেন তার ছবির সীমাবদ্ধতা তার আঁকার দক্ষতায় না, বরং তার দৃষ্টির সীমাবদ্ধতায়। 

আমার মনে হচ্ছিলো, আমাদের সমাজে আমরা যখন চলি, তখন এরকম ব্যাপারই হয়। ব্যক্তিগত থেকে জাতীয় পর্যায়ে এমনই হয় প্রায় সবার। হয়ত নিজের আচরণ অনেক পরিশ্রমলব্ধ, কিন্তু তাতে কাজ হয়না। কারণ চিন্তার ধরণে গোলমাল থাকে। তারা জানেন না তাদের সীমাবদ্ধতার কথা, দক্ষতায় না, বরং তার দৃষ্টির সীমাবদ্ধতার মাঝে -- যে কারণে সবকিছুতে তারা ভজঘট পাকাতে থাকেন। 

আমাদের আত্মাকে আগে সীমাবদ্ধতামুক্ত করা দরকার, স্বচ্ছ করা দরকার। জীবনের উদ্দেশ্য আর কাজের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে পরিষ্কার থাকা দরকার। তারপর দৃষ্টিকে করতে হবে পরিষ্কার -- অহিংস, অহিংস্র। এরপরেই সফলতা বা ফলাফল আশা করা যেতে পারে। এই সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হবার আগে সফলতার আশা করা কেবলই বোকার মতন কাজ হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে