সকালে ভোরের আলো ফুটছিলো যখন, তখন স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলাম। খুব সম্ভব কলেজে পড়ি তখন, কোন স্যার হয়ত বলেছিলেন যা আমার মনে পড়ে এমন করে -- "জীবনকে এমন করে গড়বে যেন তুমি যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, তখন যেন এই অনুভূতিটা নিয়ে যেতে পারো যে এই পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করে রেখে গেলে।"
.... সেই বয়সেও আমি ছিলাম অনুপ্রেরণার কাঙ্গাল, সেক্যুলার সিস্টেমের পড়াশোনায় অন্তরের বেড়ে ওঠার জন্য কথার খুবই অভাব, কিন্তু এই স্বপ্নময় কথাটুকু আমাকে খুব আলোড়িত করেছিলো। আমি তখন জানতাম আমার যোগ্যতা খুবই কম। তবু পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করার ব্যাপারটাকে এমন করে বুঝলাম যে, আমি যদি অন্তত নিজে খারাপ না হই, আরেকটা মানুষের সাথে কথায়-কাজে যদি খারাপ কিছু না দিই, যদি খারাপ কাজ না করি -- তাহলে আমি তো এই পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করে রেখে যেতে পারব। মনে আছে, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে কেউ যদি সিগারেটের ফিল্টারটা ফেলে দেয় জলন্ত অবস্থায়, আমি খুব কমই দু'তিন কদম এগিয়ে গিয়ে হলেও না নিভিয়ে পার হয়েছি। অতশত বুঝতাম না, আমি শুধু জানতাম এই পৃথিবীকে একটু সুন্দর করতে হবে। একটা স্মৃতি আমাকে শক্তি যোগায়-- আমি জীবনে যতগুলো প্রতিষ্ঠান পেরিয়েছি অন্তত কখনো পিয়ন, মালী, আরদালি টাইপের মানুষগুলোর উছ্বসিত ভালোবাসা আমি পেয়েছি, যখন অনেক বছর পরেও যাই, সমসাময়িক ছাত্রদের কেউ তেমন করে না চিনলেও তারা ভালোবাসায় আমাকে সবসময় ভরিয়ে দিয়েছেন। এই স্মৃতিচারণের দরকার ছিলো নিজেকে খুঁজে পেতে। জানি, জীবনের সবসময় সমান যায় না কারো। কখনো আনন্দময়, কখনো যন্ত্রণাময় পরীক্ষার -- যা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির এক নিদর্শন। আমি কী, তার মূল পরিচয় আমার কঠিন সময়টা।
আমি এখন যা, এবং আমার স্বপ্ন -- এই দুয়ের মাঝের অংশটাই আমার কাজ, একখনকার পরবর্তী আমি। আসলে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আমি যা হতে চাই, যা ভালোবাসি, আমি ক্রমে তার দিকেই এগিয়ে যাব। এখনকার আমি ভুল হতে পারি, বোকা হতে পারি, তবে যদি চেষ্টা করি, একদিন নিশ্চয়ই উন্নত কিছু হবো, সুন্দর কিছু হব। কখনো কখনো ভেঙ্গে পড়া মানুষের জন্য শুধু এতটুকু অনুপ্রেরণাও যথেষ্ট হয় -- তার জীবনটা অর্থহীন না, সে এখনো সুন্দর কিছু করতে পারে। এই অনুপ্রেরণা দিতে কাউকে মিথ্যা বলতে প্রয়োজন নেই। শুধু যদি এমনটাও স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় যে তার ভালো কাজটুকুই এই জগতের জন্য একটাও অবদান, তার সুন্দর কথা, সুন্দর কাজ, হাসিমুখ, খারাপকে এড়িয়ে চলা, সত্যকে আঁকড়ে ধরে মিথ্যাকে বিদায় দেয়া -- এটুকুও জীবনে কত পরিবর্তন এনে দিতে পারে, সে ঐ মানুষটাই বুঝবে। হয়ত এই একটা পদক্ষেপ হতে পারে সহস্র মাইলের অগ্রযাত্রার শুরু। আজকের এই মানুষটি হতে পারে আগামী দিনের উমার, আলী, ফাতিমা, খাদিজা, আসমা, আয়িশা, আবু বকর, উসমান, খালিদ, উসামা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-দের মতন সুন্দর কিছু মানুষ। হয়ত আপনার হাতেই তার যাত্রা শুরু হতে পারে।
স্বপ্নকে কখনো অবজ্ঞা করতে নেই, এই স্বপ্নই আরেকজনের সাথে আমাদের পার্থক্য গড়ে দেয়। পরম আরাধ্য জিনিসটাই আমাদের স্বপ্ন, আমরা তার জন্য নিজেকে গড়ে তুলি। কারো ভালো করতে না পারলেও অন্তত খারাপ না করার চেষ্টা অন্তত করি, একটা হাসিমুখ ভালো কথা বলি? হয়ত তা আমাদের আখিরাতে কিছু একটা গড়ে দিবে। আর দুনিয়াতেও এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের অন্তরকে আরো আলোকিত করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। সকল কিছুই যেই পবিত্র সত্ত্বার হাতে, যিনি রাজাধিরাজ, পরম শক্তিশালী ও সর্বজ্ঞানী, সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া 'তালা তার ভালোবাসা ও রাহমাত আমাদের উপরে ঢেলে দিন, আমাদের জীবনকে কবুল করে নিন।
[২৪ এপ্রিল ২০১৩]
.... সেই বয়সেও আমি ছিলাম অনুপ্রেরণার কাঙ্গাল, সেক্যুলার সিস্টেমের পড়াশোনায় অন্তরের বেড়ে ওঠার জন্য কথার খুবই অভাব, কিন্তু এই স্বপ্নময় কথাটুকু আমাকে খুব আলোড়িত করেছিলো। আমি তখন জানতাম আমার যোগ্যতা খুবই কম। তবু পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করার ব্যাপারটাকে এমন করে বুঝলাম যে, আমি যদি অন্তত নিজে খারাপ না হই, আরেকটা মানুষের সাথে কথায়-কাজে যদি খারাপ কিছু না দিই, যদি খারাপ কাজ না করি -- তাহলে আমি তো এই পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করে রেখে যেতে পারব। মনে আছে, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে কেউ যদি সিগারেটের ফিল্টারটা ফেলে দেয় জলন্ত অবস্থায়, আমি খুব কমই দু'তিন কদম এগিয়ে গিয়ে হলেও না নিভিয়ে পার হয়েছি। অতশত বুঝতাম না, আমি শুধু জানতাম এই পৃথিবীকে একটু সুন্দর করতে হবে। একটা স্মৃতি আমাকে শক্তি যোগায়-- আমি জীবনে যতগুলো প্রতিষ্ঠান পেরিয়েছি অন্তত কখনো পিয়ন, মালী, আরদালি টাইপের মানুষগুলোর উছ্বসিত ভালোবাসা আমি পেয়েছি, যখন অনেক বছর পরেও যাই, সমসাময়িক ছাত্রদের কেউ তেমন করে না চিনলেও তারা ভালোবাসায় আমাকে সবসময় ভরিয়ে দিয়েছেন। এই স্মৃতিচারণের দরকার ছিলো নিজেকে খুঁজে পেতে। জানি, জীবনের সবসময় সমান যায় না কারো। কখনো আনন্দময়, কখনো যন্ত্রণাময় পরীক্ষার -- যা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির এক নিদর্শন। আমি কী, তার মূল পরিচয় আমার কঠিন সময়টা।
আমি এখন যা, এবং আমার স্বপ্ন -- এই দুয়ের মাঝের অংশটাই আমার কাজ, একখনকার পরবর্তী আমি। আসলে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আমি যা হতে চাই, যা ভালোবাসি, আমি ক্রমে তার দিকেই এগিয়ে যাব। এখনকার আমি ভুল হতে পারি, বোকা হতে পারি, তবে যদি চেষ্টা করি, একদিন নিশ্চয়ই উন্নত কিছু হবো, সুন্দর কিছু হব। কখনো কখনো ভেঙ্গে পড়া মানুষের জন্য শুধু এতটুকু অনুপ্রেরণাও যথেষ্ট হয় -- তার জীবনটা অর্থহীন না, সে এখনো সুন্দর কিছু করতে পারে। এই অনুপ্রেরণা দিতে কাউকে মিথ্যা বলতে প্রয়োজন নেই। শুধু যদি এমনটাও স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় যে তার ভালো কাজটুকুই এই জগতের জন্য একটাও অবদান, তার সুন্দর কথা, সুন্দর কাজ, হাসিমুখ, খারাপকে এড়িয়ে চলা, সত্যকে আঁকড়ে ধরে মিথ্যাকে বিদায় দেয়া -- এটুকুও জীবনে কত পরিবর্তন এনে দিতে পারে, সে ঐ মানুষটাই বুঝবে। হয়ত এই একটা পদক্ষেপ হতে পারে সহস্র মাইলের অগ্রযাত্রার শুরু। আজকের এই মানুষটি হতে পারে আগামী দিনের উমার, আলী, ফাতিমা, খাদিজা, আসমা, আয়িশা, আবু বকর, উসমান, খালিদ, উসামা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-দের মতন সুন্দর কিছু মানুষ। হয়ত আপনার হাতেই তার যাত্রা শুরু হতে পারে।
স্বপ্নকে কখনো অবজ্ঞা করতে নেই, এই স্বপ্নই আরেকজনের সাথে আমাদের পার্থক্য গড়ে দেয়। পরম আরাধ্য জিনিসটাই আমাদের স্বপ্ন, আমরা তার জন্য নিজেকে গড়ে তুলি। কারো ভালো করতে না পারলেও অন্তত খারাপ না করার চেষ্টা অন্তত করি, একটা হাসিমুখ ভালো কথা বলি? হয়ত তা আমাদের আখিরাতে কিছু একটা গড়ে দিবে। আর দুনিয়াতেও এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের অন্তরকে আরো আলোকিত করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। সকল কিছুই যেই পবিত্র সত্ত্বার হাতে, যিনি রাজাধিরাজ, পরম শক্তিশালী ও সর্বজ্ঞানী, সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া 'তালা তার ভালোবাসা ও রাহমাত আমাদের উপরে ঢেলে দিন, আমাদের জীবনকে কবুল করে নিন।
[২৪ এপ্রিল ২০১৩]